আমেরিকা-রাশিয়া-চীন, বিশ্ব রাজনীতির ‘বারমুডা ট্রায়াঙ্গল’ এর বিপাকে দিশাহারা ভারত!

আমেরিকা-রাশিয়া-চীন, বিশ্ব রাজনীতির ‘বারমুডা ট্রায়াঙ্গল’ এর বিপাকে দিশাহারা ভারত!
আমেরিকা-রাশিয়া-চীন, বিশ্ব রাজনীতির ‘বারমুডা ট্রায়াঙ্গল’ এর বিপাকে দিশাহারা ভারত!

বিশ্ব রাজনীতির এক ত্রিমুখী ধাঁধার মধ্যে বিপাকে পড়েছে ভারতের পররাষ্ট্রনীতি। যাকে কূটনৈতিক ত্রিভুজ নামেই অভিহিত করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। আর এই ত্রিমুখী চাপে পড়ে দিশেহারা ভারত।

সম্প্রতি ইউরোপ এবং আমেরিকার মধ্যে সংগঠিত বেশ কয়েকটি বৈঠকের পর এই সঙ্কটের প্রাসঙ্গিকতা যেন আরও বেশি করে টের পাচ্ছে দেশটি।

আমেরিকা-রাশিয়া-চীন, এই ৩ শক্তিধর রাষ্ট্রের পারস্পরিক সম্পর্কের ওঠাপড়ার সঙ্গে জড়িয়ে যাচ্ছে ভারতের স্বার্থ। আর এজন্যই এখন দিশেহারা ভারত।

কূটনৈতিক সূত্রের খবর অনুসারে— কৌশলগত, বাণিজ্যিক, অর্থনৈতিক এবং প্রতিরক্ষা— সর্ব ক্ষেত্রেই এই পারস্পরিক সম্পর্কের ছায়া পড়ছে।

প্রথমত, আমেরিকা-রাশিয়া দেশ দুটির সম্পর্ক অথৈ পানিতে। সম্প্রতি সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বৈঠকে বসলেও সে বরফ গলার কোন সম্ভাবনা দেখা যায়নি।

দ্বিতীয়ত, ইউরোপ যত রাশিয়াকে জঙ্গি সামরিক রাষ্ট্র হিসেবে দাগিয়ে দূরে সরিয়ে দিতে চাইছে, মস্কো ততোই কাছে ঘেঁষছে চীনের বেইজিংয়ের।

তৃতীয়ত, যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনের সঙ্গে চীন এবং রাশিয়ার সম্পর্ক ক্রমশ খারাপ হয়েই চলেছে।

আর তাদের এই বিচিত্র পরিস্থিতিতে দিশেহারা ভারত  দাঁড়িয়ে রয়েছে কেন্দ্রবিন্দুতে।

সাম্প্রতিক জি-৭, আমেরিকা-ইইউ এবং আমেরিকা-ন্যাটো বৈঠক হতে একটি তথ্য সকলের সামনে উঠে আসছে; তাহলো, পশ্চিমের চীনাবিরোধী সমস্ত ধরণের পরিকল্পনাতে সঙ্গী হিসেবে ভারতকে রাখা হচ্ছে। কোয়াড যার একটা বড় উদাহরণ।

কিন্তু এক্ষেত্রে এটাও ভারত তথা নয়াদিল্লিকে মাপতে হচ্ছে যে, আমেরিকার প্রবল চীন-বিরোধিতার জাহাজে চড়াটা কতটা বাস্তবসম্মত এবং উচিত কার্য হবে!

৫ গুণ বেশি শক্তিধর প্রতিবেশী দেশ চীনের সঙ্গে প্রবল সঙ্কট সৃষ্টি হলে, তখন ওয়াশিংটনের ওপর কতটা নির্ভর করা যাবে, তা নিয়েও যথেষ্ট সংশয়ে রয়েছে সাউথ ব্লক।

আমেরিকার এই যুদ্ধে নিজেরা শামিল না হয়ে বরং একটি চাঁছাছোলা চীন-নীতি যদি ভারত নিজেরাই তৈরি করতে পারে, তবে সেটা হবে দ্বিপাক্ষিক এবং আঞ্চলিক স্তরে ভারতের জন্য ভাল।

আবার অন্যদিকে অস্ত্রসরঞ্জাম আমদানি এবং প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি সমন্বয়ের প্রশ্নে রাশিয়া হলো ভারতের সুপ্রাচীনতম মিত্র।

কিন্তু এদিকে ভারত-আমেরিকার ঘনিষ্ঠতা বাড়তে দেখে সেই রাশিয়াও যে খুশি নয় তা সহজেই বুঝা যাচ্ছে।

আমেরিকান নেতৃত্বাধীন কোয়াড-এর প্রকাশ্য সমালোচনা করার মাধ্যমে মস্কো পৃথকভাবে ভারত প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল এর পৃথক কৌশল রচনা করতে চায়।

রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতানুসারে, একপ্রান্তে আমেরিকার নেতৃত্বাধীন পশ্চিমি বিশ্ব এবং অপরপ্রান্তে চীন-রাশিয়া— আসন্ন পররাষ্ট্রনীতি যদি স্পষ্ট ২ ভাগ হয়ে যায়, তবে ভারতের কূটনৈতিক দর কষাকষির সম্ভাবনাও সীমিত হয়ে যাবে। আর তখন অবশ্যই এই পরিস্থিতির ফায়দা তুলতে চাইবে চীন এবং পাকিস্তান।

আরো পড়ুন:
পুতিন-বাইডেন এর আলোচনায় যে সকল বিষয় প্রাধান্য পেলো 
ইরানের পারমাণবিক কেন্দ্রে হামলা, শীর্ষ বিজ্ঞানীকে খুন; সবই করেছে ইসরায়েল- মোসাদ’
কলোনিয়াল পাইপলাইনের সাইবার হামলায় থমকে গেল মার্কিন জ্বালানি খাত: জরুরি অবস্থা জারি

ভারতের নিকট সবচেয়ে সুবিধাজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে যদি আমেরিকা এবং রাশিয়া দেশ দু’টির মধ্যে কিছুটা বোঝাপড়া তৈরি হয়। সে ক্ষেত্রে রাশিয়ার চীন-নির্ভরতাও কমে যাবে

ওয়াশিংটনের জন্যও রাশিয়া-চীনের যৌথ শত্রুতা মোটেই কাম্য নয়। তারচেয়ে বরং কেবলমাত্র চীনের দিকেই নিজেদের নিশানা স্থির রাখলে তা অধিক কার্যকরী হবে।

কারণ রাশিয়া এখনও সম্পূর্ণ একা আমেরিকার মতো দেশকে চাপে ফেলার মতো বড় শক্তিধর নয়।

তবে কূটনৈতিক সূত্রানুযায়ী, ভারত চাইলেও বিভিন্ন কারণবশত রাতারাতি আমেরিকা-রাশিয়ার করমর্দন ঘটছে না। ফলে এই চাপ আপাতত বহাল থাকবে ভারতেরই ওপর। আর তা চিন্তা করেই বর্তমানে দিশেহারা ভারত।

subscribe to our youtube channel 2

শেয়ার করুন -

উত্তর দিন

আপনার মন্তব্য লিখুন
আপনার নাম লিখুন