বিমান কোন তেলে চলে তা কি আপনি জানেন? জেনে অবাক হবেন বিমান চলে কেরোসিনে।
অবাক হচ্ছেন তাই না? আমরা সকলেই জানি বিমান চলে জেট ফুয়েলে। কিন্তু এই জেট ফুয়েল কোন আলাদা জ্বালানী নয়। বরং এটা হচ্ছে জেট এ্যা-ওয়ান (Jet A-1) কেরোসিন।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে কেন বিমান চলে কেরোসিনে? কেন এতে কেরোসিন ব্যবহার করা হয়?
কেরোসিন কম তাপমাত্রায় ও জমে যায় না, এজন্যই বিমানে গ্যাসোলিনের পরিবর্তে ব্যবহৃত করা হয় কেরোসিন!
জ্বালানী হিসেবে বিমানে কেরোসিন ব্যবহার করা হয় চারটি কারণে-
কেরোসিন তরল থেকে বরফ হতে যে তাপমাত্রার প্রয়োজন হয় সেটা হচ্ছে -৪০থেকে -৪৮ সেলসিয়াস পর্যন্ত।
বিমান যখন ভূমি থেকে আকাশের অনেক উঁচুতে উঠে যায় তখন কেরোসিনের বদলে যদি গ্যাসোলিন ব্যবহার করা হয় তাহলে তা জমে বরফ হয়ে যাবে।
আর আর এজন্যই জেট এ্যা-ওয়ান কেরোসিন ব্যবহার করা হয় বিমানে।
কেরোসিনের ফ্ল্যাশ পয়েন্ট গ্যাসোলিনের তুলনায় অনেক বেশি।
ফ্ল্যাশ পয়েন্ট হচ্ছে সেই তাপমাত্রা যেখানে দাহ্য কোন পদার্থ জ্বলে উঠে এবং বাষ্পে রূপান্তরিত হয়। মূলত বিমানের আকাশে উড়া এবং দ্রুত গতি অর্জনের জন্য ফ্ল্যাশ পয়েন্ট অনেক জরুরি।
আর কেরোসিনে অকটেনের পরিমাণ বেশি থাকায় গ্যাসোলিনের চেয়ে দ্রুত গতি অর্জনে সাহায্য করে।
কেরোসিন গ্যাসোলিনের তুলনায় অনেক বেশি পাতলা এবং মোলায়েম।
মূলত ঘন কোন জ্বালানী যদি বিমানে ব্যবহৃত হয় তাহলে সেই জ্বালানী বিমানের ইঞ্জিনের যন্ত্রাংশের কার্যকরী ক্ষমতা অনেকটা কমিয়ে দিতে পারে।
অন্যদিকে কেরোসিন কম ঘনত্ব এবং অনেক পাতলা হবার কারণে অনেক উচুতে ঠান্ডা আবহাওয়ায় যাওয়ার পরেও জমে যায় না।
যে কারণে কেরোসিন বিমানের ইঞ্জিনের বিভিন্ন যন্ত্রাংশের সাথে পুরোপুরিভাবে খাপখাইয়ে নিতে পারে।
সাধারণত বিমানের জ্বালানী অনেক বেশি লাগে। সেক্ষেত্রে গ্যাসোলিন অত্যন্ত ব্যয়বহুল।
আর খরচ কম হবার কারণে গ্যাসোলিনের বদলে এখন প্রায় সব বিমান চলে কেরোসিনে।
এবার প্রশ্ন হচ্ছে কেরোসিন দিয়ে বিমান চালানোর পরেও বিমানে চড়ে কোথাও যেতে কেন এত টাকা খরচ হয়?
যেসকল খুব দূরে যাতায়াত করে তাদের বেশিরভাগ বিমানই বোয়িং ৭৪৭। আর এই বিমানগুলো সাধারণত ভূমি থেকে প্রায় ৩৫ হাজার ফুট উপরে উড্ডয়ন করে থাকে।
প্রতি ৪ সেকেন্ডে ১ লিটার করে তেল পুড়ে। তাই এই উড়োজাহাজটির ১ কিলোমিটার দূরত্ব যেতে প্রায় ১২ লিটার তেল প্রয়োজন।
যদিও একটা বোয়িং ৭৪৭ বিমানে একবারে ২ লাখ ৩৮ হাজার ৬০৪ লিটার তেল নিয়ে যাত্রা করে।
হিসাব করে দেখা যায় যদি কোন ফ্লাইট টানা ১০ ঘন্টার হয়ে থাকে তাহলে বিমানটির ১ লাখ ৫০ হাজার তেলের প্রয়োজন হবে।
এখন ভেবে দেখুন একটা সাধারণ কার গাড়িতে ৩-৪ জন মানুষ বসতে পারে। আর ঘন্টায় ৪ লিটার তেল পুড়িয়ে মাত্র ২৫ মাইল যেতে পারে।
আর অপরদিকে একটা বিমান ৫৫০ মাইল পাড়ি দেয়। তাই এর জন্য খরচা তো একটু বেশি পোহাতেই হবে।
বিমান নিজে নিজে চালু হতে পারে না:
আমরা অনেকেই হয়তো টিভি, ভিডিও কিংবা সিনেমায় দেখেছি বিমানে একটি উড়োজাহাজ যখন রানওয়েতে দাড় করানো থাকে তখন পাশেই একটা ছোট গাড়ির সাথে সংযুক্ত তারের মতো একটা কিছু থাকে যা বিমানের সাথে যু্ক্ত করা হয়।
অনেক মানুষ ভাবেন যে ছোট্ট ওই গাড়ি দিয়ে আসলে বিমানে তেল ঢুকানো হয়। কিন্তু এটা সত্য নয়।