এসি কিনার আগে কি কি বিষয় জানা দরকার?

এসি কিনার আগে কি কি বিষয় জানা দরকার?

গরমের স্বস্তি মানেই এয়ার কন্ডিশনার বা এসি। বাহিরে তাপদাহের কবল থেকে এসে এসি রুমে ঢুকলে নিমিষেই যেন শরীর জুড়িয়ে যায়। আজকাল কম-বেশি সবার বাসাতেই এসি দেখা যায়। অনেকেই আগ্রহী হয়ে উঠেছে এসি কিনার প্রতি। তবে যারা নতুন কিনবেন তাদের এসি কিনার আগে কিছু কিছু তথ্য জেনে রাখা প্রয়োজন।

এসি এখন আর বিলাসবহুল দ্রব্য নয় বরং এসি এখন নিত্যপ্রয়োজনীয় বস্তুতে পরিণত হয়েছে। আর আগের তুলনায় বেশি সহজলভ্য এবং দামেও অনেক সস্তা হয়ে গিয়েছে। তাই যে কেউই কিনতে পারে।

তবে এসি কিনার আগে কিছু বিষয় আগে থেকে জানা ভালো। তাহলে সাশ্রয়ী মূল্যে ভালো এসি কিনা সম্ভব হবে। এবং এসি কিনতে যাওয়ার সময় কোন সমস্যা হবে না।

একটা এসি কিনতে যাওয়ার সময় নানান ধরণের প্রশ্ন মাথায় আসতে পারে। যেমন- কোন এসি কিনবেন? স্লিট এসি নাকি উইনডো এসি? তারপর কত টনের এসি কিনবেন? ১ টন? ১.৫ টন নাকি ২ টান?

এ সমস্ত সমস্যা মিটে গেলে আবার আরও একটি সমস্যা দেখা দেয়। আর সেটি হচ্ছে ইনভার্টার এসি কিনবেন নাকি নরমাল এসি কিনবেন?

আজ আমাদের প্রতিবেদন এই সকল বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা নিয়ে।

প্রথমেই জানা যাক এসি সম্পর্কে।

এসি ২ প্রকার-  ১ –  Split AC এবং ২ – Window AC.

Window AC: –

নাম শুনেই আন্দাজ করা যায় এটা কিরকম হতে পারে। এটা একটা বড় সাইজের ইউনিট হয় যেটা ঘরের কোন জানালাতে ফিট হয়ে যায়। তবে এক্ষেত্রে আপনার জানালাটা ব্লক হয়ে যাবে আর ওই জায়গাতে ফিট হয়ে যাবে এসি।

এর অর্ধেক অংশ ঘরের ভিতরে থাকবে এবং বাকি অর্ধেক বাইরের দিকে থাকবে। তবে সমস্যা হলো এরকমও রুম আছে যেখানে একটিও জানলা নেই। আবার এমন অনেকেই আছেন যারা জানালা ব্লক করতে চান না।

তখন সেক্ষেত্রে আপনাকে বাছাই করতে স্প্লিট এসি।

Split AC:- 

স্প্লিট এসির ক্ষেত্রে একটা ইনডোর ইউনিট হয় আরেকটা আউটডোর ইউনিট। অর্থ্যাৎ ঘরে রাখার জন্য একটা ইউনিট এবং বাইরে রাখার আরেকটা ইউনিট থাকে।

ইনডোর ইউনিটে লাগানো থাকে ইভাপোরেটর আর আউটডোরে কনডেনসার।

স্প্লিট এসির ইনডোর ইউনিট ঘরের যেকোন জায়গায় সেট করা যায়। অন্যদিকে আউটডোর ইউনিটকে আপনি আপনার বাড়ির বাইরের কোন দেওয়ালের সঙ্গে কিংবা ছাদেও ফিট করে দিতে পারেন।

তবে একটা জিনিস খেয়াল রাখতে হবে যে – আউটডোর ইউনিটের পাশে যেন অনেকটা ফাঁকা জায়গা থাকে। একটু বেশি জায়গার দরকার হয়। তা না হলে হিটটা তাড়াতাড়ি ছড়িয়ে পড়তে পারে না।

এক্ষেত্রে ইনডোর ইউনিট এবং আউটডোর ইউনিটের মধ্যে যে পাইপ লাইনটা থাকে সেটাকে আপনার দেওয়ালের মধ্য দিয়ে একটা ছোট্ট ফুটা করে নিয়ে যাওয়া হয়। একারণে আজকাল বেশির ভাগ মানুষ স্প্লিট এসি কিনতেই বেশি পছন্দ করে।

কত টনের এসি কিনা উচিত?

কোন এসি কিনবেন এটা ঠিক করে ফেলার পরই যে প্রশ্নটা আসবে সেটা হচ্ছে কয় টনের এসি ঘরের জন্য উপযুক্ত হবে?

এটা জানার আগে চলুন জেনে নিই টন কি সে সম্পর্কে।

যদি বলা হয় ১ টনের এসি তাহলে আপনাকে বুঝে নিতে হবে, একটি রুমের মধ্যে ১ টন বরফ রেখে দিলে সেটা যত তাড়াতাড়ি আপনার রুমকে ঠান্ডা করতে পারবে ওই এসির ক্ষমতাও ঠিক ততটাই।

তার মানে যা বোঝা যাচ্ছে তা হচ্ছে, যত বেশি টনের এসি আপনি কিনবেন আপনার রুম তত তাড়াতাড়ি ঠান্ডা হবে।

কিন্তু যদি ছোট রুম এর মধ্যে আপনি বেশি টনের এসি লাগান সেক্ষেত্রে সেই রুমটা তাড়াতাড়ি তো ঠান্ডা হবেই একই সঙ্গে আপনার ইলেক্ট্রিক বিলও অনেক বেশি হয়ে যাবে।

এজন্য যখনই আপনি কোন এসির টন নির্ধারণ করবেন তখন আপনাকে দেখতে হবে যে আপনার রুমের পরিমাপ কতটুকু।

কারণ ছোট রুমের মধ্যে যদি আপনি বেশি টনের এসি ব্যবহার করেন তাহলে আপনার এ্যানার্জিও লস হবে এবং তার সাথে সাথে আপনার বিদ্যুৎ বিলও বাড়তে থাকবে। তাছাড়া বেশি টনের এসির দামও বেশি হয়।

এসি কিনার আগে কি কি জানা দরকার?

আপনার রুম যদি-

  • ১০০ স্কয়ার ফিট থেকে ছোট হয় তবে ১ টন বা তার কম এসিই যথেষ্ঠ।

  • যদি ১০০-১৫০ স্কয়ার ফিটের মধ্যে হয় তাহলেও ১ টনের এসি হলেই হবে।

  • রুম যদি ১৫০-২০০ স্কয়ার ফিটের হয় তবে সেক্ষেত্রে ১.৫ টন এসি লাগাতে হবে।

একারণে যখন আপনি এসি কিনতে যাবেন তখন প্রথমেই আপনি দোকানীকে আপনার ঘরের স্কয়ার ফিট পরিমাণটা জানিয়ে দিবেন। তাহলে তারাই হিসাব করে বলে ‍দিতে পারবে আপনার কত টনের এসি লাগবে।

এসির স্টার কি?

এসির ক্ষেত্রে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে। সেটি হলো স্টার বা তারকা চিহ্ন। বিভিন্ন তারকা চিহ্নিত এসি রয়েছে। ১ স্টারের এসি পাওয়া যায়, ২ স্টারের এসি পাওয়া যায় ৩, ৪ এমনকি ৫ স্টারের এসিও মার্কেটে পাওয়া যায়।

তো এখন প্রশ্ন হলো আপনার ক্ষেত্রে কোনটা কেনা উচিত?

এই স্টারগুলো কিন্তু কুলিং এর উপর কোন প্রতিক্রিয়া দেখায় না। অর্থ্যাৎ এরকম নয় যে ১ স্টারের এসি কম ঠান্ডা করবে আর ৫ স্টারের এসি বেশি।

এই স্টারগুলো দ্বারা মূলত বুঝা যায় যে আপনার ইলেক্ট্রিক বিল কতটা আসবে। অর্থ্যাৎ স্টার যত বেশি হবে বিদ্যুৎ বিল ততই কম আসবে। আর স্টার যত কম হবে তত বেশি বিদ্যুৎ বিল আসতে থাকবে।

আমরা সবাই জানি, এসি কিনাটা খুব কষ্টকর কিছু নয়। তবে এসি চালানোটা কিংবা এটি মেনটেইন করাটাই অধিক কষ্টকর, অনেক ব্যয়বহুল হয়ে যায়। তাই এসি কিনার আগে এসব ব্যপার গুলো খুব ভালোভাবে মাথায় রাখা উচিত।

তবে আরও একটি বিষয় রয়েছে। যদি আপনি ক্রমাগত এসি না চালান তবে কিন্তু আপনার বেশি স্টারে এসি কোন লাভ নেই। কারণ বেশি স্টারের এসির দাম অনেক বেশি হয়।

একারণে ৫ তারকা এসি কিনতে আপনাকে যে অতিরিক্ত টাকাটা খরচ করতে হবে সেই টাকাটা আপনি বিদ্যুৎ বিল বাঁচিয়ে খুব তাড়াতাড়ি তুলে নিতে পারবেন না।

একারণে যারা খুব বেশিক্ষণ এসি চালায় তাদের জন্যই ৫ তারকার এসি নেওয়া লাভজনক। যারা কম চালায় তাদের ক্ষেত্রে ৫ তারকা খুব একটা কার্যকর নয়।

কোন কোম্পানির এসি ভালো?

সবকিছু জেনে নেওয়ার পর এবার আপনাকে জানতে হবে যে কোন এসির কোম্পানিটি ভালো। এর জন্য আপনাকে খোঁজ নিতে হবে আপনার এলাকার খুব কাছে বা আশেপাশে কোন কোম্পানির এসির সার্ভিস সেন্টার রয়েছে।

এসি কেনার ক্ষেত্রে অনলাইন একদম উপযুক্ত নয়। কারণ অনলাইনে হয়তো আপনি খুব কম দামে এসি কিনে নিতে পারবেন, তবে যদি কোন সমস্যার সৃষ্টি হয় তখন উপযুক্ত কোন সার্ভিসিং সেন্টারের কাছে নিতে পারবেন না। তাই সরাসরি দোকানে গিয়ে কিনে আনাই ভালো।

আরো পড়ুন:
এসি দুর্ঘটনা এড়াতে যেসব তথ্য জেনে রাখা দরকার 
বিশ্বে সবচেয়ে বেশি ঘূর্ণিঝড় বঙ্গোপসাগরেই কেন তৈরি হয়?

আর সার্ভিস সেন্টার দেখা হয়ে গেলে এবার আপনি সিদ্ধান্ত নিন যে কোন কোম্পানির এসি আপনার কিনা উচিত। এক্ষেত্রে আপনি প্রতিটি কোম্পানির গ্রাহকসংখ্যা এবং তাদের ফিডব্যাক দেখেও সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।

প্রকৃতি বড়ই উত্তপ্ত হয়ে গেছে এবছর। গরমে সবার হাঁসফাঁস অবস্থা। এর মধ্যে আবার বিজ্ঞানীরা জানিয়েছে যে, এই গরম কমবার নয় বরং উল্টো বছর বছর বাড়তে থাকবে। তাই এসি কিনাটা এখন বাঞ্চনীয় হয়ে দাড়িয়েছে।

সবশেষে আশা করি, আমাদের এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে আপনারা উপকৃত হবেন।

আর ‍জানতে পারবেন এসি কিনার আগে ঠিক কোন কোন বিষয়গুলো মাথায় রাখা উচিত। এবং তা জেনে নিজের ঘর বা অফিসের জন্য উপযুক্ত এসিটি বাছাই করে নিতে পারবেন।

subscribe to our youtube channel 2

শেয়ার করুন -

উত্তর দিন

আপনার মন্তব্য লিখুন
আপনার নাম লিখুন