বিশ্বে সবচেয়ে বেশি ঘূর্ণিঝড় বঙ্গোপসাগরেই কেন তৈরি হয়?
আসছে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস। একারণে চারদিকে কয়েকদিন ধরে বেশ গরমও পড়েছে। আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন ঘূর্ণিঝড় ইয়াস তৈরি হচ্ছে বঙ্গোপসাগরে। আমরা ইতোমধ্যে দেখেছি মৌসুমী ঘূর্ণিঝড়গুলোর অধিকাংশই বঙ্গোপসাগরে তৈরি হয়। কিন্তু আমরা কি কখনও ভেবে দেখেছি বিশ্বে সবচেয়ে বেশি ঘূর্ণিঝড় বঙ্গোপসাগরেই কেন হয়?
আজ আমাদের প্রতিবেদন এই বিষয়টি নিয়ে। আমরা জানবো ঘূর্ণিঝড় কি? কেন হয়? কীভাবে সমুদ্রে এটা উৎপন্ন হয় এ সংক্রান্ত আরও নানা বিষয় সম্পর্কে এবং কেনইবা পৃথিবীর বেশিরভাগ ঘূর্ণিঝড় বাঙ্গোপসাগরেই হয় তা সম্পর্কে।
চলুন প্রথমেই জেনে নিই ঘূর্ণিঝড় কি সেই সম্পর্কে-
ঘূর্ণিঝড়কি?
প্রচুর পরিমাণে যখন বাতাস একটি নিন্মচাপকে কেন্দ্র করে তার চারদিকে ঘুরতে থাকে তখন তাকে আমরা সাইক্লোন বা ঘূর্ণিঝড় বলে থাকি।
এই ঘূর্ণিঝড় পৃথিবীর বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন নামে পরিচিত। আমরিকায় একে বলা হয় হ্যারিকেন। জাপান এবং চায়নাতে বলা হয় টাইফুন। এবং অস্ট্রেলিয়াতে একে উয়েলি উয়েলিস বলা হয়ে থাকে।
ঘূর্ণিঝড়কখনহয়?
সূর্যরশ্মি যখন পৃথিবীর উপর পরে তখন তা ভূপৃষ্ঠ এবং সমুদ্রপৃষ্ঠকে উত্তপ্ত করে। তবে ভূপৃষ্ঠ থেকে সমুদ্রপৃষ্ঠ বেশিক্ষণ তাপ ধরে রাখতে পারে।
যখন পৃথিবীপৃষ্ঠ উত্তপ্ত হয় তখন তার আশেপাশে থাকা বাতাসও উত্তপ্ত হয়ে যায়।
আমরা জানি যে বাতাস হালকা হয় এক্ষেত্রেও ঠিক তাই। এই উত্তপ্ত বাতাস হালকা হয়ে উপরের দিকে উঠে যেতে থাকে। এবং বায়ুমন্ডলের যত উপরে যায় তত সেটা শীতল হয়ে ঘনীভূত হতে শুরু করে এবং এক পর্যায়ে মেঘ তৈরি করে।
কিন্তু নিচের যে জায়গা থেকে বাতাসটা উত্তপ্ত হয়ে উপরে উঠেগিয়েছিল সেই জায়গাতে একটা নিন্মচাপের সৃষ্টি হয়। এবং আশেপাশে থাকা ঠান্ডা বাতাস সেই উত্তপ্ত জায়গাটিকে ভরাট করার জন্য খুব দ্রুতগতিতে চলে আসে। যার ফলে বাতাস খুব শক্তিশালী গতিতে প্রবাহিত হতে থাকে।
উত্তপ্ত জায়গায় ওই ঠান্ডা বাতাস এসে ভরাট হয়ে যাবার পর তা ভূপৃষ্ঠ এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের সংস্পর্শে এসে আবারও উত্তপ্ত হয়ে যায়। তারপর পুণঃরায় বায়ুমন্ডলের উপরের দিকে উঠতে শরু করে এবং মেঘ তৈরি করে। আর এই চক্রটা ক্রমাগত চলতে থাকে।
তার সাথে পৃথিবীর ঘূর্ণনের জন্য Coriolis Force তৈরি হয়। যা ওই বাতাসকে প্রভাবিত করতে শুরু করে। Coriolis Force উত্তর গোলার্ধে বাতাসকে বাম দিকে deflect বা পরিবর্তন করে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে ডান দিকে।
একারণে উত্তর গোলার্ধে যত সাইক্লোন বা ঘূর্ণিঝড় তৈরি হয় তার ঘূর্ণন এন্টি ক্লকওয়াইজ অর্থাৎ ঘড়ির কাটার বিপরীত দিকে হয়। আর দক্ষিণ গোলার্ধের সাইক্লোনে যে ঘূর্ণন তৈরি হয় তা ক্লকওয়াইজ অর্থ্যাৎ ঘড়ির কাটার দিকে হয়।
বাতাসের নিন্মচাপ এবং Coriolis Force এর কারণে যে ঠান্ডা বাতাস উত্তপ্ত নিন্মচাপ এলাকার দিকে ছুটে যায় তা ওই নিন্মচাপ এলাকাকে কেন্দ্র করে চারিদিকে প্রবল গতিতে ঘুরতে থাকে।
আর এর সেন্টারকে সাইক্লোন বা ঘূর্ণিঝড়ের আই বলা হয়ে থাকে। যে অঞ্চলে সাইক্লোনের আই থাকে সেই অঞ্চলের মানুষ বুঝতেও পারে না যে তারা ঘূর্ণঝড়ের কেন্দ্রে রয়েছে। কিন্তু ওই সাইক্লোনের আইকে কেন্দ্র করেই চারদিকে বাতাস প্রবল গতিতে ঘুরতে থাকে।
আর এই বায়ু প্রবাহের বেগ যখন ঘন্টায় ৬৩ কিলোমিটার পার হয়ে যায় তখন একে Tropical Storm বলা হয়। কিন্তু যখন বায়ু প্রবাহ ঘন্টায় ১১৯ কিলোমিটারের বেশি হয়ে যায় তখনই Tropical Cyclone বলা হয়। তবে খুব চরম পর্যায়ে গেলে এই বায়ু প্রবাহের বেগ ঘন্টায় ২৪০ এমনকি ৩২০ কিলোমিটারও পার হয়ে যেতে পারে।
কিন্তু এতোবড় ঝড়কে পরিচালনা করার জন্য একটা শক্তির প্রয়োজন হয়। আর ঘূর্ণিঝড় এই শক্তি পায় সমুদ্রের পানির উষ্ণতা থেকে। একারণে ঘূর্ণিঝড় সমুদ্রপৃষ্ঠ ছেড়ে যখন আস্তে আস্তে স্থলের দিকে এগুতে থাকে ততই তার প্রভাবও ধীরে ধীরে কমে যেতে থাকে।
এবং স্থলভাগে পৌছানোর পর সাইক্লোন ধীরে ধীরে নিজে থেকেই শেষ হয়ে যায়।
আর এ কারণেই সাইক্লোনের প্রভাব উপকূলবর্তী অঞ্চলে বেশি হয়।
এবার আমরা জানার চেষ্টা করবো যে অন্যান্য সমুদ্রের তুলনায় এত ঘন ঘন এবং এত বড় বড় ঘূর্ণিঝড় বঙ্গোপসাগরেই কেন তৈরি হয়?
সবচেয়েঘূর্ণিঝড়বঙ্গোপসাগরেইকেনতৈরিহয়?
পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি ঘূর্ণিঝড় বঙ্গোপসাগরেই কেন হয় এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে জানা গেছে-
এর প্রথম কারণ হলো এখানে তাপমাত্রার পার্থক্য অনেক বেশি। একারণে নিন্মচাপ খুব সহজেই তৈরি হয়ে যায়।
তবে এটা কেন হয়?
এর কারণ হলো বঙ্গোপসাগরেই এক জায়গায় অনেক নদীর মোহনা রয়েছে। যেমন- গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র, পদ্মা ইত্যাদি।
একারণে মিষ্টি জলের পরিমাণ এখানে অনেক বেশি। আর এই মিষ্টি জল সমুদ্রের উপরিভাগে থাকে। সমুদ্রের নোনাজলের তুলনায় মিষ্টি জল তাড়াতাড়ি উত্তপ্ত হয়ে যায়।
একারণে তাপমাত্রার পার্থক্য অনেক বেশি হয়। আর যেখানে উত্তপ্ত জল থাকবে সেই জায়গার উপরের বাতাসও সেইভাবে গরম হতে থাকবে। আর বাতাস গরম হলে তৈরি হবে নিন্মচাপ।
আর একারণেই আমরা এই এলাকাতে একটা না একটা বড় ঘূর্ণিঝড়ের সম্মুখীন হতে দেখে থাকি।
পদ্ধতিগতভাবে এসব ঘূর্ণিঝড় আমাদের প্রত্যেকের জীবনের উপর একটা প্রভাব ফেলে যায়। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ঘূর্ণিঝড়ের মধ্যে ২৬টা ঘূর্ণিঝড়ই এই বঙ্গোপসাগর থেকেই তৈরি হয়েছিল।
গত বছরের ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের যে ভয়ঙ্গকর রূপ আমরা দেখেছি এবারের ঘূর্ণিঝড় ইয়াসও হতে পারে তেমনই মাত্রার কিংবা তার থেকে কম বা বেশি। যা নিয়ে হয়তো আমরা সবাই অনেক চিন্তিত।
আপনাদের নিকট অনুরোধ অযথা চিন্তা না করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে প্রস্তুত হয়ে থাকুন। এবং প্রতিনিয়ত আবহাওয়ার খবর রাখুন। আর আবহাওয়াবিদদের নির্দেশাবলি মেনে চলুন। কারণ তারা কখনও ভুল তথ্য দেয় না।
You should participate in a contest for probably the greatest blogs on the web. I’ll recommend this web site!