আক্কেল দাঁত কখন উঠে? দাঁত ব্যাথা হলে করণীয়

আক্কেল দাঁত কখন উঠে? দাঁত ব্যাথা হলে করণীয়
আক্কেল দাঁত কখন উঠে? দাঁত ব্যাথা হলে করণীয়

‘দাঁত থাকতে দাঁতের মর্ম বুঝা’ এই এক কথার মাধ্যমেই বোঝা যায় দাঁতের গুরুত্ব কতটা। কিন্তু আমরা কি জানি শিশুর দুধ দাঁতের যত্ন কিভাবে নিতে হয়? কিংবা আক্কেল দাঁত কি? এবং আক্কেল দাঁত কখন উঠে? এই দাঁত উঠার সময় ব্যাথা করে কেন?

এর পাশাপাশি আরও কিছু প্রশ্ন চলেই আসে। আঁকাবাঁকা বা হলদে দাঁত থেকে মুক্তির উপায় কি? ছাই, লবণ বা মেসওয়াক কোনটি দাঁতের পক্ষে ভালো। দাঁত নিয়ে এমন নানা প্রশ্নের উত্তর নিয়েই আজ আমাদের প্রতিবেদন-

নিয়মিত দাঁত ব্রাশ:

দাঁতের যত্ন নেওয়ার প্রথম ও প্রধান পদক্ষেপটি হচ্ছে নিয়মিত দাঁত ব্রাশ করা। কিন্তু দিনে কয় বেলা এবং কখন দাঁত ব্রাশ করা উচিত?

এমনসব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন ঢাকা ডেন্টাল কলেজের সহকারী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আব্দুল মুত্তালিব মালিক। তিনি বলেছেন দিনে ২ বার ব্রাশ করতে হবে। এবং সেটা প্রতিদিন সকালে নাস্তা খাওয়ার পরে এবং রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে।

এই দাঁত ব্রাশের কাজটি তিনি ২-৫ মিনিটের মধ্যেই সেরে ফেলার পরামর্শ ‍দিয়েছেন। এমনভাবে ব্রাশ করতে হবে যেন দাঁতের প্রতিটি কোণা পরিষ্কার হয়।

দাঁত ব্রাশের ক্ষেত্রে সঠিক টুথব্রাশ বাছাই করাটাও জরুরি। এজন্য ভাল মানের নরম ব্রেসেলের টুথব্রাশ বেছে নিতে হবে। শক্ত ব্রেসেলের কারণে দাঁত ও মাড়ির স্থায়ী সমস্যা হতে পারে। আরেকটি মনে রাখার মতো বিষয় হচ্ছে- কোন টুথব্রাশ ৩ মাসের বেশি ব্যবহার করা উচিত নয়।

তবে ৩ মাসের আগেই যদি ব্রেসেলস ক্ষয়ে যায় তাহলে সেটা সাথে সাথেই বদলাতে হবে।

  • প্রতিবার ব্যবহারের পর টুথব্রাশের মুখ ক্যাপে আটকে রাখবেন এবং ব্যবহারের আগে ও পরে ভালোভাবে ধুয়ে নিবেন।

টুথপেস্ট কোনটা বাছাই করা উচিত?

এই ব্যাপারে দন্ত চিকিৎসক মি. মুত্তালিব বলেছেন, বাজারের যেকোন টুথপেস্টই দাঁত পরিষ্কার করতে পারে। তবে চেষ্টা করুণ একই ধরণের পেস্ট বারবার ব্যবহার না করে ভিন্ন ভিন্ন পেস্ট অদলবদল করতে।

যেমন- ১ মাস আপনি যদি কোন সাদা পেস্ট ব্যবহার করেন এরপরের মাসে জেল এবং তার পরের মাসে হারবাল বা আয়ুর্বেদিক কোন পেস্ট ব্যবহার করতে পারেন।

ছাই, লবণ, মেসওয়াক নাকি মাজন?

যদি টুথব্রাশ-পেস্ট না থাকে সেক্ষেত্রে মেসওয়াক বা দাঁতন ব্যবহার করতে পারেন। তবে এসব উপকরণ দিয়ে পেছনের দিকের দাঁতগুলো ভালোভাবে পরিষ্কার করা যায় না। তাই টুথব্রাশ ব্যবহারেরই পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

আবার অনেকেই দাঁত পরিষ্কার করতে মাজন, লবণ, কয়লা, ছাই কিংবা মাটিও ব্যবহার করে থাকেন। এগুলো ব্যবহারে দাঁত প্রথমে অনকে ঝকঝকে সাদা মনে হলেও এর প্রভাবে দাঁতের এনামেল ক্ষয় হয়ে যায়।

এনামেল হচ্ছে দাঁতের উপরের শক্ত আবরণ। এটি ক্ষয়ে গেলে দাঁত হলদে ও ভঙ্গুর হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে দুইবেলা দাঁত ব্রাশ করার পাশাপাশি প্রতিবার খাওয়ার পর লবণ-পানি অথবা মাউথওয়াশ দিয়ে কুলকুচি করে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন দন্ত চিকৎসক মুত্তালেব।

এছাড়া দাঁতের কোণায় খাবার আটকালে ফ্লস করতে বলেছেন তিনি। তবে টুথপিকের মতো ছুঁচালো জিনিস এড়িয়ে যাওয়াই ভাল।

আক্কেল দাঁত কি?

আক্কেল দাঁত বলতে বোঝায় মুখের একদম শেষ মাথায় উপরে-নিচে দুইপাশের মোট ৪ টি দাঁতকে। সাধারণত ১৮-২৫ বছর বয়সের মধ্যে যেকোন বয়সে আক্কেল দাঁত উঠে।

আক্কেল দাঁতের অবস্থান
আক্কেল দাঁতের অবস্থান

মুখে ৩২ টি দাঁত ধরার জায়গা না থাকলে আক্কেল দাঁত উঠার সময় অসহ্য ব্যাথা অনুভূত হয়। কারণ বেরিয়ে আসার মতন কোন জায়গা পায় না। অনেক সময় অপারেশন করেও ওই দাঁতের জন্য জায়গা করে দিতে হয়।

হলদে দাঁত ঝকঝকে করবেন কিভাবে?

দাঁতের রঙ হলদে হয়ে গেলে বা ছোপ ছোপ দাগ পড়লে স্কেলিং ও পলিশিং এই দুইটি পদ্ধতি ব্যবহার করে দাঁত ঝকঝকে করা যায়। আবার অনেক সময় ব্লিচিং করেও রঙ ফিরিয়ে নিয়ে আসা সম্ভব বলে ড. মুত্তালেব জানিয়েছেন।

দাঁতে ক্যাভিটি বা গর্ত ‍সৃষ্টি হলে ফিলিং করা হয়। তবে এই গর্ত যদি মজ্জা পর্যন্ত পৌছে যায় তাহলে রুট ক্যানেল করতে হয়।

আঁকাবাঁকা দাঁত সোজা করার উপায়:

যাদের দাঁত আঁকাবাঁকা বা গঠনে ত্রুটি রয়েছে তাদের দাঁতের রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুকি বেশি থাকে। তাই যত দ্রুত সম্ভব দাঁতের গঠন ঠিক করে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

ড. মুত্তালেব মালিকের পরামর্শ- দাঁতের কোন সমস্যা থাক বা না থাক ৬ মাস পর পর দাঁত বিশেষজ্ঞের মাধ্যমে দাঁতের পরীক্ষা করিয়ে নিতে হবে। দীর্ঘদিন দাঁতের সমস্যা পুষে রাখলে তা থেকে মুখের ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

চকলেট কি দাঁতের কোন ক্ষতি করে?

চকলেট দাঁতের জন্য ‍খুবই ক্ষতিকর। এছাড়াও বার্গার, পিৎজা, চিপস-বিস্কিট, চা-কফি, কোক-ফান্টা-চুইংগাম এই সব খাবারই দাঁতের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক খারাপ। কারণ এগুলোয় থাকা কার্বোহাইড্রেট ও অতিরিক্ত চিনি দাঁতের ক্ষয়ের বড় কারণ।

আর যদি খেতেই হয় তাহলে খাবার পরপরই মাউথওয়াশ কিংবা পানি দিয়ে মুখ পরিষ্কার করে ফেলুন। তা না হলে দাঁতের ফাঁকে ফাঁকে এসব খাবার জমে থেকে প্রচুর ব্যাকটেরিয়া জন্মাবে। এবং সেখান থেকে ক্যাভেটি বা গর্তের সৃষ্টি হবে আর দাঁত দুর্বল হয়ে পড়বে।

ফলে অনেক ঠান্ডা, গরম বা টক খাবার খাওয়া মাত্রই দাঁত শিরশির করে উঠবে।

ধুমপান, চুন, গুল, পান:

দাঁতের জন্য সবচেয়ে খারাপ হলো ধুমপান, ‍চুন, জর্দা, গুল, পান। কারণ এগুলো থেকে দাঁতের ক্ষয় তো হয়ই, সাথে সাথে মুখে ক্ষত এমনকি মুখের ক্যান্সার পর্যন্ত হতে পারে।

আবার আমাদের অনেকর অভ্যাস- মাংস খাবার পর আয়েশ করে শক্ত শক্ত হাঁড় চাবানো কিংবা দাঁত দিয়ে আঁখ চিবিয়ে খাওয়ার। আবার অনেক সময় দেখা যায় অনেকেই কোন কিছুতে গিঁট বেঁধে গেলে সেটা খুলতে দাঁত ব্যবহার করেন। কেও কেও ঘুমের ঘোরে দাঁতে দাঁত ঘষেন। এসব অভ্যাস দাঁতকে দুর্বল করে দিতে পারে।

শিশুর দুধের দাঁতের যত্ন:

দাঁতের যত্ন শুরু করতে হবে একদম শিশুকাল থেকেই। আর সেই দায়িত্ব মা-বাবা বা অভিভাবকের।

সাধারণত ৬ মাস বয়সের পর থেকেই শিশুর দুধ দাঁত উঠা শুরু করে।

  • এসময় শিশু প্রতিবার দুধ খাওয়ার পর পানি খাইয়ে দিতে বলেছেন দন্ত বিশেষজ্ঞরা।যেসব শিশু দুধ খেতে খেতে ঘুমায় তাদের মাথার কাছে পানির ফিডার রাখতে পারেন। পানি খাওয়ালে শিশুর মুখের দুধ ধুয়ে যায়।

  • দিনে কয়েকবার পাতলা নরম কাপড় লবণ-পানি তে ধুয়ে শিশুর দাঁত মুছে দেওয়া যেতে পারে।

  • শিশু যখন বুঝতে শিখে- সাধারণত ২ বছর বয়স থেকে তাকে ‍নিজ হাতে ব্রাশ করার প্রশিক্ষণ দেওয়া উচিত।

প্রথমে টুথপেস্ট ছাড়া দাঁত মাজার নিয়ম শিখাতে হবে। বোঝাতে হবে যেন পেস্ট খেয়ে না ফেলে।

আরো পড়ুন:
দাঁত ভাল রাখার জন্য ডাক্তারের কিছু পরামর্শ 
ঘুম থেকে ওঠার পর চোখ-মুখে ফোলা ভাব কেন হয়? 
গুসবাম্প কি? ঠান্ডা বা ভয়ে শরীরের লোম দাঁড়িয়ে যাওয়ার পেছনে ব্যাখ্যা কি?

শিশুদেরকে আইসক্রিম, চকলেট বা মিষ্টি শর্করা জাতীয় খাবার যত কম খাওয়ানো যায় ততই মঙ্গল। কারণ এসব খাবার দাঁতে লেগে থেকে শিশুর দাঁতকে ক্ষয় করে ফেলতে পারে। যার প্রভাব থাকে দীর্ঘমেয়াদী।

দাঁত সুস্থ্য রাখতে:

  • দাঁত সুস্থ্য রাখতে ক্যালসিয়াম, ভিটামিন এ, সি, ডি যুক্ত খাবার এবং আঁশযুক্ত খাবার বাছাই করতে হবে।

  • দুধ, ডিম, ফুলকপি, বাধাকপি, টমেটো, আমলকি, পেয়ারা বাদাম সামুদ্রিক মাছ ইত্যাদি খাবার দাঁতের জন্য ভাল। তাই এগুলো বেশি করে খেতে হবে।

  • এছাড়া প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি খেতে হবে।

দাঁতের চিকিৎসা কিছুটা ব্যয়বহুল। কিন্তু এই ব্যয় অনেকটাই নির্ভর করে আপনি দাঁতের সমস্যার কোন পর্যায়ে ডাক্তারের কাছে গিয়েছেন তার উপর।

তাই দেরি না করে আজ থেকেই সচেতন হোন; দাঁত থাকতে দাঁতের মর্যাদা দিন।

subscribe to our youtube channel 2

শেয়ার করুন -

উত্তর দিন

আপনার মন্তব্য লিখুন
আপনার নাম লিখুন