যেকোন ধরনের বর্জ্যই বোঝা নয়, সম্পদ। বর্জ্য থেকে তেল, গ্যাস সহ ১০টি বস্তু উদ্ভাবন করা সম্ভব। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ফেলনা এইসকল ময়লা-আবর্জনাকে রুপান্তর করা যেতে পারে প্রয়োজনীয় বিভিন্ন বস্তুতে।
নতুন উদ্ভাবন দ্বারা তা প্রমাণ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল এর দুই শিক্ষার্থী এইচ. এম. রঞ্জু এবং পীযুষ দত্ত।
রাজধানীর মাতুয়াইলে তাদের বসানো প্ল্যান্ট থেকে বর্জ্য থেকে তেল, গ্যাস, বিদ্যুৎ, জ্বালানি তেল, রান্নার তেল ও জৈব সার সহ ৮-১০টি প্রয়োজনীয় বস্তু।
বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে কাজ চলছে দুনিয়া জুড়ে। বিশেষ করে প্লাস্টিক বর্জ্য নিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে বড় বড় রাষ্ট্রকেও।
গবেষণা বলছে ১৯৯০ সালে দেশে দৈনিক বর্জ্য উৎপাদন হতো ৬,৪৯৩ মেট্রিক টন। পরের ৩১ বছরে যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩২১৬৫ মেট্রিক টন।
বর্জ্যের উৎপাদন যদি এই গতিতেই বাড়তে থাকে তাহলে ২০২৫ সাল নাগাদ এর পরিমাণ বেড়ে দাঁড়াবে ৪৭ হাজার মেট্রিক টনে।
বিপুল এই বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ভুমিকা রাখতেই রাজধানীর মাতুয়াইলে ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল এর তৃতীয় বর্ষের দুই শিক্ষার্থী পীযুষ ও রঞ্জু তৈরি করেছেন একটি প্ল্যান্ট।
এর জন্য ব্যয় হয়েছে প্রায় ২৬ লাখ টাকা। যার ৪০ শতাংশই এসছে টিউশনির টাকা, পারিবারিক সহায়তা ও ঋণ থেকে।
বাকি টাকা একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সহায়তায় পাওয়া যায়।
উদ্ভাবক ও শিক্ষার্থী এইচ. এম. রঞ্জু খানের ভাষায়, “আমি শুনেছিলাম যে সুইজারল্যান্ড নাকি বিদেশ থেকে বর্জ্য আমদানি করে। আমি খুবই অবাক হয়ে ভেবেছিলাম একটা দেশ কিভাবে এবং কেন এতকিছু থাকতে বর্জ্য পদার্থ আমদানি করবে।”
“তখন থেকেই এই ব্যাপার নিয়ে আমার কৌতুহল জাগে। এরপর আমি এই কথা বন্ধু পীযুষকে জানাই। এরপর থেকেই বর্জ্য নিয়ে আমাদের যাত্রা শুরু।”
এক প্ল্যান্টেই পচনশীল ও অপচনশীল বর্জ্য দুটি আলাদা রিএ্যাক্টরে দেওয়া হয়। যেখানে বর্জ্য থেকে তেল, গ্যাস সহ উৎপাদিত হয় আরও কয়েক ধরনের তেল।
এই দুই তরুণ গবেষকের দাবি তাদের প্ল্যান্ট থেকে যে পরিমাণ জ্বালানি তেল ও বায়ুফুয়েল উৎপাদন সম্ভব তা দেশীয় আমদানির ২৫ শতাংশেরও বেশি।
এখানে উৎপাদিত গ্যাস বাড়িতে ব্যবহারের যোগ্য। এছাড়াও এগুলো এলপিজি এবং সিএনজিতেও রূপান্তর সম্ভব।
ইউরিয়া সহ কয়েক ধরনের জৈব সারও পাওয়া যায় এই প্ল্যান্ট থেকে।
একইসাথে এই বায়োপ্রডাক্ট দিয়ে বিদ্যুৎ, এক্টিভেটেড কার্বন, হাইড্রোক্লোরিক এসিড, ড্রাই আইস ও মোম উৎপাদন করাও সম্ভব।
পীযুষ দত্ত জানিয়েছেন, “যদি আমরা সরকারি সহায়তা কোন প্ল্যান্ট পাই তাহলে আমরা আরো বেশি জায়গা পাবো। এবং চেষ্টা করবো বর্জ্য থেকে তেল, গ্যাস ছাড়াও আরও ভাল কিছু উদ্ভাবন করার।”
বর্জ্য থেকে তেল, গ্যাস উৎপাদনের এই সম্পূর্ণ প্রকল্পটি তত্ত্বাবধান করছেন উদ্ভাবকদের দুইজন শিক্ষক- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগের প্রভাষক মো. সাজেদুল ইসলাম।
তিনি বলছেন, “এই প্রকল্পের সমস্ত ধারণা প্রাথমিক ভাবে অ্যানালাইসিস করা হয় সেসব আমাদের ডিপার্টমেন্টেই। এবং এগুলোর ফলাফলও সন্তোষজনক। ফ্লোরাইড যখন বেশি পরিমাণে আসা শুরু হয় তখন এগুলো পরবর্তী গবেষণার জন্য বিসিএসআর এ পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে যে ফলাফল আসবে তা জেনে আমরা এই উদ্ভাবন সম্পর্কে আরও বিস্তারিতভাবে বলতে পারবো।”
ব্লুমবার্গের এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে মাতুয়াইলের স্যানিটারি লেন্ড ফিল্ড প্রতি ঘন্টায় ৪হাজার কেজির মতো মিথেন গ্যাস উৎপন্ন করে। যা নষ্ট করছে বায়ুমন্ডলের ভারসাম্য।
সেখানে দুই শিক্ষার্থী এই উদ্ভাবনের ফলে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আমাদের জন্য অভিশাপ না হয়ে আশীর্বাদ হতে পারে।