অর্কিড উদ্ভিদ বা ফুলের মধ্যে এমন এক ধরণের আকর্ষণীয়তা রয়েছে যা দূর থেকেও যেকোন মানুষের নজর কাড়ে। এর বিভিন্ন রঙে, নানা রকম আকারে, সুগন্ধে ছড়িয়ে রয়েছে শুধুই মুগ্ধতা।
চীনা দার্শনিক কনফুসিয়াস অর্কিডকে সেরা ফুল নামে আখ্যায়িত করেছেন।
গাছের প্রতি মানুষের ভালোবাসা যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। তাই শৌখিন মানুষদের বাগান করার প্রতি আলাদা ঝোক থাকে।
মফস্বল এলাকায় বাড়ির আঙ্গিনায় বাগান করা সম্ভব হলেও ইট পাথরের শহরে তেমন সুযোগ থাকে না।
তাই শহুরে মানুষদের জন্য বারান্দায় কিংবা জানালার পাশে লাগানো উপযোগী ফুলের গাছ অর্কিড।
আমাদের আজকের প্রতিবেদন অর্কিড উদ্ভিদ নিয়ে।
নামকরণ:
অর্কিডের ইংরেজী Orchid.
বৈজ্ঞানিক নাম:
এর বৈজ্ঞানিক নাম Orchidaceae.
পরিবার:
উদ্ভিদটি অ্যাস্টারাসি পরিবারের অন্তর্গত সপুষ্পক পরজীবী কিংবা মৃতজীবী উদ্ভিদ।
প্রজাতি:
অর্কিডের ক্ষেত্র বিশাল। এই পৃথিবীতে বর্তমানে প্রায় ৯০০ রকমের ২১,৯৫০ থেকে ২৬,০৪৯টি গৃহীত প্রজাতি রয়েছে।
বিভিন্ন প্রকার অর্কিডের মধ্যে রয়েছে-
সিমবিডিয়াম: এই ধরনের অর্কিড ফুলের হালকা সবুজ পাপড়ি, তাতে গাঢ় গোলাপি ছোঁয়া থাকে। সিমবিডিয়াম এই প্রজাতির সৌন্দর্য্য তাক লাগিয়ে দেওয়ার মতো।
সার্কোকিলাস: এই ধরনের প্রজাতির ফুলের পাপড়ি সাদা। মাঝে হলুদ এবং লাল রঙের ছোঁয়া থাকে।
ফ্যালেনপসিস: গোলাপী ও সাদা রঙের চোখজুড়ানো মিলমিশে ফ্যালেনপসিস নজর কাড়ে সকলের।
Dendrobiumবা ডেনড্রোবিয়াম: সবচেয়ে জনপ্রিয় এই প্রজাতির গোলাপী, সাদা, হলুদরঙা এই অর্কিড পাওয়া যায় সর্বত্র।
Cattleya trianae Orchidবা ক্যাটেলেয়া: এই প্রজাতির ফুলের হলুদ রঙ দেখতে বড় স্নিগ্ধ। তার সঙ্গে মিলেমিশে রয়েছে গাঢ় গোলাপী। যা একে আরও অনন্য করে তুলেছে।
অর্কিডের মূল উৎপত্তিস্থল কোথায় তা বলা যায় না। তবে সাধারণত পাহাড়ি অঞ্চলে এদের দেখা মেলে বেশি।
প্রাপ্তিস্থান:
হিমালায়ের পাদদেশ থেকে শুরু করে থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, মেক্সিকো, অষ্ট্রেলিয়ার মত পাহাড়ি সব দেশে কমবেশি অর্কিডের জন্ম হয়।
আমাদের বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চলেও এই উদ্ভিদের দেখা পাওয়া যায়।
আকার-আকৃতি:
অর্কিডের নির্দিষ্ট কোন আকার-আকৃতি নেই। একেক প্রজাতির ফুল বা গাছ একেক রকম দেখতে হয়। তাদের আকৃতিতেও থাকে বিভিন্ন পার্থক্য।
গঠন ও বৈশিষ্ট্য:
অর্কিড মূলত পরজীবী উদ্ভিদ। কিছু কিছু প্রজাতি রয়েছে যেগুলো মাটিতেও জন্মায়। তবে এদের সংখ্যা খুবই নগণ্য। অধিকাংশ উদ্ভিদই অন্য উদ্ভিদের আশ্রয়ে বেঁচে থাকে।
যেসব প্রজাতি মাটিতে জন্মায় তাদেরকে পার্থিব বা ভুমিজ অর্কিড বলা হয়।
আর যেসব প্রজাতি অন্য গাছে জন্মায় তাদেরকে পরাশ্রয়ী অর্কিড বলা হয়।
অর্কিড গাছ বেশি রোদ বা কড়া রোদ সহ্য করতে পারে না। যেমন সকাল বেলার মৃদু রোদ সহ্য করতে পারলেও দুপুরের কড়া রোদ এই উদ্ভিদের জন্য খুবই খারাপ।
তাই এমন স্থান বিবেচনা করে এই গাছ লাগানো উচিত।
ফুল:
অর্কিড গাছটি এত জনপ্রিয় মূলত এর ফুলের জন্যই। এই উদ্ভিদের ফুলগুলো অত্যন্ত দৃষ্টিনন্দন এবং অনন্য। এসব ফুল রঙিন, সুমিষ্ট ঘ্রাণ এবং বহুলবিস্তৃত হয়ে থাকে।
ফুলের ধরনের উপর ভিত্তি করেও অর্কিডের নানারকম পার্থক্য রয়েছে।
কিছু আছে গাছের গোড়া থেকে নতুন কান্ড বের করে এবং গাছের অগ্রভাগে গিয়ে ফুলের স্টিক বের হয় যাতে ফুল ধরে।
অর্কিডের বিভিন্ন রঙে, নানা রকম আকারে, সুগন্ধে ছড়িয়ে রয়েছে শুধুই মুগ্ধতা
আবার কিছু প্রজাতি রয়েছে যাদের পুরো গাছটিই একটি কান্ডবিশিষ্ট। কিন্তু কান্ডের পাশ থেকে যে পাতা গজায়, সেই প্রত্যেক পাতার পাশ থেকে আবার ফুলের স্টিক বের হয়। একটি গাছে ৪-৫ টি ফুলের স্টিক বের হয়।
অর্কিড মিডিয়া বলতে বোঝায় যার উপর নির্ভর করে উদ্ভিদটি জন্মে। এক্ষেত্রে নারিকেলের ছোবড়া মিডিয়া হিসাবে বেশ কার্যকর। বাংলাদেশে নারিকেলের ছোবড়া বেশ সহজলভ্য।
ছোবড়া ছাড়াও অর্কিডের টবে ঝাশা ইটের খোয়া, কাঠকয়লা ও কাঠের বাকলের টুকরা ব্যবহার করা হয়।
উপকারিতা:
গবেষণায় জানা গেছে, অর্কিড শুধু সৌন্দর্য্য বর্ধনের জন্যই নয় এর বিভিন্ন ভেষজ গুণ রয়েছে। এছাড়াও এটি সুগন্ধী হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
আমাদের মধ্যে ছোট-বড় অনেকেরই ভ্যানিলা ফ্লেভারের খাবার পছন্দ। মজার ব্যাপার হচ্ছে এই ভ্যানিলা ফ্লেভার বা ভ্যানিলা এ্যাসেন্স আসলে এক প্রজাতির অর্কিড থেকে তৈরি।
এই উদ্ভিদের একটি প্রজাতি রয়েছে যেটায় সীমের মত ফল জন্মায়। এই ফলের বীজ থেকেই ভ্যানিলা এ্যাসেন্স তৈরি করা হয়। যা সারাবিশ্বে ব্যপক সমাদৃত।
বাংলাদেশে অর্কিড গাছের মূল্য:
সাধারণত পাইকারি মূল্যে প্রতি স্টিক অর্কিডের দাম ২০-৩০ টাকা।
আর প্রজাতি ভেদে এর মূল্য ৩০০,৪০০ এবং ৫০০ টাকা পর্যন্তও হতে পারে।
এই উদ্ভিদের দামের পার্থক্য মূলত ফুলের সৌন্দর্য্য, সুগন্ধী এবং চাষ পদ্ধতির উপর ভিত্তি করে নির্ধারণ করা হয়।
সাধারণত মার্চ, এপ্রিল, মে এই তিন মাস বাজারে প্রচুর অর্কিড গাছ পাওয়া যায়।