বায়তুল মোকাররম মসজিদের ইতিহাস – যেভাবে এটি জাতীয় মসজিদ হয়ে উঠলো

বায়তুল মোকাররম মসজিদের ইতিহাস - যেভাবে এটি জাতীয় মসজিদ হয়ে উঠলো
বায়তুল মোকাররম মসজিদ

বাংলাদেশের জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম। ঢাকার অতিব্যস্ত অঞ্চল পল্টন এলাকায় এটি অবস্থিত। প্রথমে পারিবারিক উদ্যোগে নির্মাণ করা হলেও ধীরে ধীরে এটি বাংলাদেশের জাতীয় মসজিদ হয়ে উঠেছে।

কিন্তু এর পেছনের গল্প কি???

আজ আমরা তারই ইতিহাস সম্পর্কে জানবো –

৬০ বছরেরও বেশি সময়পূর্বে একটি পরিবারের উদ্যোগে প্রায় সাড়ে ৮ একর জমির ওপর নির্মাণকরাহয় এই মসজিদ। যা  বাংলাদেশের সকল মুসলিমদের কাছে এক অন্যরকম মর্যাদার স্থান হয়ে উঠেছে।

পারিবারিক উদ্যোগে তৈরি এই মসজিদ

বায়তুল মোকাররম মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছে মক্কার কাবা ঘরের আদলে। যেকারণে এটি চারকোনা আকৃতির। পুরোনো এবং নতুন ঢাকার মিলনস্থল পল্টন এলাকায় এই মসজিদটি তৈরি করা হয়েছিল সেই সময়।

জানা যায় বর্তমানে এই মসজিদে একসঙ্গে ৪০ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে সক্ষম। তাছাড়া বাংলাদেশের বৃহত্তম এই মসজিদের ইতিহাস এবং গুরুত্ব নিয়ে অনেক বইও প্রকাশিত হয়েছে।

বায়তুল মোকাররম মসজিদ নির্মাণের উদ্যোগ

পাকিস্তান আমলে ঢাকায় বড় শিল্প উদ্যোক্তা বাওয়ানি পরিবারের পক্ষ থেকে এতবড় মসজিদটি নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়।

১৯৫৯ সালে ‘বাওয়ানি জুট মিলস’ এর মালিক উর্দূভাষী আব্দুল লতিফ বাওয়ানি ও তার ভাতিজা ইয়াহিয়া বাওয়ানি ‘বায়তুল মুকাররম মসজিদ সোসাইটি’ গঠন করে এই মসজিদ নির্মাণের প্রকল্প হাতে নিয়েছিলেন।

ইতিহাসবিদ শরীফ উদ্দিন আহমেদকর্তৃক সম্পাদিত ঢাকা কোষ-থেকে জানাযায়, ১৯৬০ সালের ২৭শে জানুয়ারি আব্দুল লতিফ বাওয়ানি মসজিদ নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন।

বায়তুল মোকাররম মসজিদের ইতিহাস - যেভাবে এটি জাতীয় মসজিদ হয়ে উঠলো
নব নির্মিত মসজিদটির একটি ছবি।

তার ২ বছর পর ১৯৬২ সাল নাগাদ মসজিদ নির্মাণেরমূল কাজ মোটামুটি শেষ হয়। তবে সম্পূর্ণ মসজিদের কাজ শেষ হয় ১৯৬৮ সালে। পাকিস্তানের সিন্ধুর একজন স্থপতি এ এইচ থারানি  মসজিদটির নকশা প্রণয়ন করেছেন।

মসজিদের জায়গা – 

ইসলামিক ফাউণ্ডেশন এই বায়তুল মোকাররম মসজিদের ইতিহাস নিয়েই একটি বই প্রকাশ করেছে। বইতে বলা হয়েছে, প্রায় সাড়ে ৮ একর জমির ওপর এই মসজিদ নির্মাণ করা হয়।

সেই ষাটের দশকের শুরুতে এই জায়গা অধিগ্রহণ করার পর যখন বায়তুল মোকাররম মসজিদ নির্মাণের কাজ আরম্ভ করা হয়, তখন সেখানে একটি বড় পুকুরও ছিল। যেটা ঐ সময়ে পল্টন পুকুর নামে পরিচিত ছিল।

পুকুরটি ভরাট করে তার পর বায়তুল মোকাররম মসজিদের নির্মাণ কাজ আরম্ভ করা হয়েছিল।

পল্টনে এই মসজিদ নির্মাণের কারন – 

কিছুক্ষণ আগেই বলেছিলাম বায়তুল মোকাররম মসজিদটি নির্মিত হয়েছে পল্টন এলাকায় যেটি পুরোনো ঢাকা এবং নতুন ঢাকার মিলনস্থল।

মসজিদনির্মাণ নিয়ে লেখক ওসমান গণি বলেছেন, এই মসজিদ নির্মাণের অনেক আগে থেকেই আমাদের ঢাকার সীমানা বাড়তে থাকে, নতুন ঢাকা  দিনে দিনে আরো বড় হতে শুরু করে। ফলে পুরোনো এবং নতুন- উভয় স্থানের ঢাকার মানুষের চলাচলের কথায় এই স্থান নির্বাচনের ক্ষেত্রে বড় বিবেচনার বিষয় ছিল বলে তিনি মনে করেন।

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বায়তুল মোকাররম মসজিদের ঐ জায়গাটিকে তখনকার পরিস্থিতি অনুযায়ী নগরীর কেন্দ্রস্থল হিসাবেও বিবেচনা করা হয়েছিল। বিভিন্ন সূত্রের মাধ্যমে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তারা এমনটাই ধারণা করছেন।

মসজিদের ভিতরে কি আছে?

বায়তুল মোকাররম মসজিদটি প্রথমে ৩০ হাজার মুসল্লীর নামাজ আদায়ের সুযোগ রেখে নির্মাণ করা হয়েছিল।

পরবর্তীতে ২০০৮ সালে এসে সৌদি সরকারের অর্থায়নে মসজিদিটির সম্প্রসারণ করা হয়েছে। সম্প্রসারণের পর মসজিদটিতে একসঙ্গে ৪০,০০০ মানুষের নামাজ আদায়ের সুযোগ সৃষ্টি হয়।

মসজিদের মূল ভবন ৮ তলাবিশিষ্ট, যা মাটি থেকেপ্রায় ৯৯ ফুট উঁচু। ৮ তলা এই মসজিদের সবচেয়ে নিচের তলায় মার্কেট এবং গুদাম ঘর রয়েছে।

দোতলা থেকে আরম্ভকরে ৬ তলা পর্যন্ত প্রতিটি তলায় নামাজ পড়া হয়। আর খতিব বা ইমাম নামাজ পড়ান ২ তলাহতে।

বায়তুল মোকাররম মসজিদের ইতিহাস - যেভাবে এটি জাতীয় মসজিদ হয়ে উঠলো
মসজিদের ভেতরের অংশ

মসজিদের ৩ তলার উত্তরপাশে নারীদের নামাজ পড়ার ব্যবস্থা করাহয়েছে। সেখানে একত্রে ১৫০০ নারী নামাজ আদায় করতে পারেন। উত্তর, দক্ষিণ এবং পূর্ব দিক দিয়ে বায়তুল মোকাররম মসজিদের অভ্যন্তরে প্রবেশ করা যায়।

বায়তুল মোকাররমের খতিব বা ইমাম হচ্ছেন মিজানুর রহমান। তিনি বলেছেন, শুক্রবার জুম্মার নামাজে এই মসজিদে উপচে পড়া ভিড় হয়। আর প্রত্যেক ঈদে ৫টি করে জামাত অনুষ্ঠিত হয় এবং প্রতি জামাতেই হাজার হাজার মানুষ অংশ গ্রহণ করে।

তিনি উল্লেখ করেছেন,এখনদেশি-বিদেশি অনেক পর্যটকও আসেন বায়তুল মোকাররম মসজিদ দর্শন করবার জন্য।

 কেননা বায়তুল মোকাররম মসজিদের মূল নকশা বা স্থাপত্য শৈলীর মধ্যেএক ভিন্ন ধরণের আকর্ষণ রয়েছে।

প্রথম রোজা থেকেই মসজিদ কর্তৃপক্ষ ইফতারের আয়োজন করে থাকে। সরকারের ইসলামিক ফাউন্ডেশন এই ইফতার মাহফিল আয়োজনের সম্পূর্ণ অর্থায়ন করে।

বায়তুল মোকাররম মসজিদে সিনিয়র খতিব মিজানুর রহমান বলেছেন, রমজান মাসে প্রতিদিন প্রায় ৫ হাজার মানুষের ইফতারের আয়োজন করা হয় এখান থেকে। ধনী-গরীবসর্বস্তরের মানুষ মসজিদেএক সাথে বসে ইফতার করে থাকেন।

কিন্তু করোনা ভাইরাসের ভয়ংকর পরিস্থিতির কারণে গত বারের মতো এবারও ইফতারের আয়োজন বন্ধ রাখা হয়েছে।

সাধারণতশেষ ১০ রোজায় শেষ রাতে তাহাজ্জুদের নামাজের জামাতের আয়োজনও করা হয়।

মসজিদেরখতিব মিজানুর রহমান জানিয়েছেন, তাহাজ্জুদের নামাজেও অনেক মুসল্লি অংশগ্রহণ করেন। সকল কার্যক্রমই গত বছর থেকে সীমিত পরিসরে করা হচ্ছে করোনা মহামারির কারণে।

প্রতি ঈদের পাঁচ জামাতে বায়তুল মোকাররম মসজিদে লাখো মানুষ নামাজ আদায় করেন।

কিন্তুদেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ব্যাপকহারে বৃদ্ধিপাওয়ায় ধর্ম মন্ত্রণালয় তারাবিহর নামাজ সহ অন্যান্য নামাজও সীমিত পরিসরে রাখার নির্দেশনা দিয়েছে।

তাতে বলা হয়, তারাবিহর নামাজ আদায়ে খতিব, ইমাম, হাফেজ এবং খাদিমসহ সর্বোচ্চ ২০ জন মুসল্লি অংশ গ্রহণ করতে পারবেন। এছাড়াও মহামারি পরিস্থিতির কারণেএবার সাধারণ মানুষের জন্য ইফতার মাহফিলের আয়োজন করাও সম্ভব হচ্ছে না।

বায়তুল মোকাররমের আরেকজন খতিব জানিয়েছেন, তারা রমজান শুরুর অনেক আগেথেকেই তারাবিহসহ বিভিন্ন কর্মসূচির ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।

কারণ যুগযুগ ধরে তারাবির নামাজের সবথেকে বড় জামাত বায়তুল মোকাররম মসজিদে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।

তিনি বলেছেন, করোনাভাইরাস মহামারি ভয়ানক পরিস্থিতিতে গতবছরের মতো এবছরও বায়তুল মোকাররমে তারাবির নামাজ এবং রমজান উপলক্ষে প্রতিদিন দুপুরে এবং বিকেলে ধর্মীয় আলোচনা সীমিত পরিসরে করতে হচ্ছে।

subscribe to our youtube channel 2

শেয়ার করুন -

উত্তর দিন

আপনার মন্তব্য লিখুন
আপনার নাম লিখুন