পৃথিবীর প্রতিটি জিনিসেরই কিছুনা কিছু মূল্যায়ন রয়েছে। যদিও এই সকল জিনিসের ভ্যালু নির্ভর করে তার, চাহিদা কার্জ ক্ষমতা, এছাড়া সহজলভ্যতা সহ আরো কিছু বিষয়ের উপর। আজ আমরা কথা বলবো আমাদের বিশ্বের সবচাইতে দামি কিছু তরল পদার্থ সম্পর্কে।
হিউম্যান ব্লাড–
পৃথিবীর প্রায় সকল প্রাণীর জীবিত থাকার পেছনে রক্তের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রক্ত শুধুমাত্র যে আমাদের শরীরের অক্সিজেন চালনা করে তা কিন্তু নয়।
বরং এর ভেতরে থাকা এক ধরণের সাদা কোষ শরীরের যেকোন ব্যাথা নিরাময়ে কাজ করে থাকে।
তাছাড়া এটি দেহের পরিত্যাক্ত তরল পদার্থ গুলোকে আলাদা করে দেহ চালনার শক্তি উৎপাদন করে।
সাধারণত আমাদের দেহে নিজ থেকেই রক্ত উৎপন্ন হয়ে নিজেদের চাহিদা পুরণ করে থাকে।
তবে ক্ষেত্র বিশেষে অনেকেরই আলাদা রক্তের প্রয়োজন হয়।
যেমন- বিভিন্ন বড় ধরনের অপারেশন, ব্লাড ক্যান্সার অথবা ডাইলাইসিস সহ আর বেশ কিছু কারনে।
মানব দেহের ভেতরে থাকা অতিমূল্যবান এই পদার্থকে প্রায় বেশির ভাগ মানুষই বিনামূল্যে বিভিন্ন সময়ে দান করে থাকেন।
তাই বলে আপনি ভাববেন না আপনি খুব সহজেই রক্তকে বিনামূল্যে পেয়ে যাবেন। কারন এর মূল্য ধরা হয় অন্য ক্ষেত্রে।
রক্তের ব্যাগ, রক্ত হিমাগারে সংরক্ষণ, তাছাড়া সেই রক্ত গুলো ঠিক রয়েছে কিনা। সেটি যাচাই করার জন্য ল্যাবে পরীক্ষা করানো হয়।
আর এই সকল জিনিসের রক্ষণাবেক্ষণের পর প্রতি গেলন রক্তের দাম ধরা হয়েছে ১৫০০ ইউএস ডলার।
মারকিউরি –
পর্যায় সারণিতে থাকা প্রতিটি উপাদানের রয়েছে নিজস্ব কাঠামো এবং বৈশিষ্ট। তবে এর মধ্য থেকে আবার সর্বাধিক ব্যাতিক্রমধর্মী পদার্থ হিসেবে ধরা হয় মারকিউরি বা পারদকে।
পারদ হয়তো পৃথিবীর বুকে থাকা একমাত্র পদার্থ যাকে আমরা ধাতুও বলে থাকি। যাকে সবথেকে বেশি দেখা যায় শরীরের তাপমাত্রা মাপার থার্মোমিটার যন্ত্রে।

তাছাড়া আধুনিক বিজ্ঞানের বিভিন্ন কাজে ব্যবহার সহ। স্বর্ণ থেকে অন্যান্য ধাতু অথবা পাথর থেকে সিলভার আলাদা করার জন্য পারদ ব্যবহার করা হয়।
চাহিদার তুলনায় এই পদার্থটি ততটা না থাকায় বাজারে বেশ চড়া মূল্যে একে ক্রয় করতে হয়। জানা যায়, এক গেলন পারদের বর্তমান বাজার মূল্য হচ্ছে প্রায় ৩ হাজার ইউএস ডলার।
ইনসুলিন –
শব্দটির সাথে হয়তো আমরা কম বেশি সকলেই পরিচিত। কেননা আমাদের পরিবার বা বংশ কেউ না কেউ অবশ্যই রয়েছে যার শরীতে ডায়াবেটিস আছে।
যেহেতু এই রোগ প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম চলতে থাকে তাই পরিবারের জ্যেষ্ঠ কোন সদস্যের ডায়াবেটিস হলে তার ছেলে বা মেয়ে অথবা নাতি-নাতনিদের ডায়াবেটিস ধরা পরার বিষয়টি অনেকটাই স্বাভাবিক।
আর এই ডায়াবেটিস নিয়ত্রণে রাখার মূল ঔষধ টি হচ্ছে ইনসুলিন। আপনারা হয়তো জেনে থাকবেন ডায়াবেটিস মানে হচ্ছে দেহে গুলুকজ বা সুগারের মাত্রা বেরে যাওয়া।
আর এই মাত্রাতিরিক্ত সুগার কে নিয়ত্রণ করবার জন্য দেহে ইনসুলিন দেয়া হয়।

১০০ বছর পূর্বে স্যার ফ্রেডরিক জি বান্টিং (Sir Frederick G Banting) এবং তার কিছু সদস্য মিলে ১৯২১ সালে ইউনিভার্সিটি অফ টরেন্টো তে এই প্রতিষেধক আবিষ্কার করেছিলেন।
সেই থেকে আজ অব্দি একে মানুষের কল্যাণের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। যা হয়তো কোটি কোটি মানুষের জীবনকে বাঁচিয়ে রাখছে।
জানা যায়, বর্তমানে ১ গেলন ইনসুলিনের দাম হচ্ছে ১৩১০০ ইউএস ডলার।
চ্যানেল নাম্বার ৫ –
মূলত এটি হচ্ছে একটি পারফিউম। যাকে ১৯২১সালে কোকো চ্যানেল নামে একজন তৈরি করেন।
ধারণা করা হয় কোকো চ্যানেলের পছন্দের নাম্বারটি ছিল ৫।
তাই তিনি তার প্রডাক্টে তার নাম এবং পছন্দের সংখ্যা মিলিয়ে নাম রাখেন চ্যানেল ৫।

চ্যানেল ৫ হয়তো পৃথিবীর প্রথম কোন কোম্পানি যারা তাদের প্রডাক্ট গুলো বিক্রির জন্য ১৯৩৭ সালে এডভারটাইজ প্রচার করা শুরু করেছিলেন।
যা হয়তো ঐ সময়ের প্রেক্ষিতে পুরোটাই অকল্পনীয়। বর্তমানে এটি বিশ্বের দামি পারফিউম হিসেবে বিবেচিত, যার প্রতি গেলনের দাম হচ্ছে প্রায় ২৩ হাজার ডলার।
হরশো ক্রাব ব্লাড –
কাকড়া আমরা সবাই কম বেশি চিনে থাকি। বিশেষ করে কিছু বছর ধরে কাকড়ার বিভিন্ন রেসিপি অথবা একে বিদেশে রপ্তানি করে আমাদের দেশ প্রচুর পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা হচ্ছে।
কিন্তু আপনি কি জানেন কাকড়ার ভেতরে এক ভিন্ন প্রজাতি রয়েছে যাদের রক্ত নীল? অথবা এই কাকড়ার রক্ত কেনই বা পৃথিবীর সবথেকে দামি তরল পদার্থ গুলোর একটি?
কাকড়ার রক্তে অসাধারণ ক্ষমতার লিমিউলাস থাকায় এটি যে কোনো ধরণের ব্যাকটেরিয়া এবং বিষাক্ত পদার্থ থেকে খুব সহজেই নিজেদের রক্ষা করতে পারে। যে কারনে এখন পর্যন্ত এর রক্তের দাম সবচাইতে বেশি।
আরো পড়ুন – এ্যাকুরিয়ামের জন্য জনপ্রিয় মাছ – গোল্ড ফিশ মশা – অতি ক্ষুদ্র অথচ বিষ্ময়কর এক প্রাণী হোয়াইট হাউসে ভূত এর উপদ্রব!
তাছাড়া কাকড়ার রক্ত নীল রঙের হবার ব্যাপারে বিজ্ঞানীরা বলেন, সাধারণ ভাবে মেরুদন্ডী প্রাণীদের শরীরে হিমোগ্লোবিনে লোহার (আয়রন) উপস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে রক্তে অক্সিজেনকে পরিবহণ করে থাকে। কিন্তু কাকড়াদের ক্ষেত্রে এই ব্যপারটি ঘটে সম্পূর্ণ ভিন্ন ভাবে।
কাকড়াদের হিমোসায়ানিনের মাধ্যমে রক্তের মধ্যে অক্সিজেন পরিবহন করার ফলে সেখানে তামার উপস্থিতি থাকায় কাকড়ার রক্ত নীল দেখায়।

উল্লেখ্য, এই হরশো ক্রাব মূলত আমেরিকা এবং মেস্কিকোর কিছু অঞ্চলে দেখতে পাওয়া যায়।
জানা যায় বর্তমানে কাকড়ার এই নীল রঙের রক্তের প্রতিগেলনের দাম হচ্ছে ৫৩ হাজার ইউএড ডলার।
স্যানেক্স ভ্যানম –
সাপ সম্পর্কে হয়তো আপনাদের নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেবার কিছুই নেই।
এই প্রাণীটি যতটানা হিংস্র তার থেকেও বিষাক্ত হচ্ছে এর বিষ।
সাপের বিষে থাকে সাইনোটক্সিন এবং নিউরোটস্কিন। তাছাড়া এর ভেতরে জিঙ্ক সালফাইডের অস্তিত্য লক্ষ্য করা যায়।
এই সকল পদার্থগুলো যখন মানব দেহে প্রবেশ করে তখন দেহের ভেতর অনেকটাই ব্যাতিক্রম ধর্মীস্বভাব লক্ষ্য করা যায়।
যার ফলে সাপে কামড়ানোর পরে দ্রুত চিকিৎসা না করানো হলে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটে থাকে।
আর সেই সময়ে দেহ থেকে সাপের বিষের ক্ষমতা ধ্বংস করে দেবার জন্য চিকিৎসকরা সাপে কাটা রোগীদের উপর অ্যান্টিভেনাম ব্যবহার করেন।
তাছাড়া আশার বাণী হচ্ছে পৃথিবীতে থাকা সকল সাপের বিষই অত্যধিক বিষাক্ত নয়। মাত্র গুটি কয়েক প্রজাতির সাপের বিষ রয়েছে যা খুবই ভয়াবহ।
বর্তমান বিজ্ঞানের যুগে সাপের এই সকল বিষকে সংরক্ষণ করে সেগুলো চিকিৎসার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে।
জানা যায় সাপের বিষের ভেতরে অহানিয়াম নামে এক ধরণের প্রোটিন রয়েছে, যা মানব দেহের ব্যাথা নিরাময় সহ বেশ কিছু কাজে ব্যবহার করা হয় ।

তাই এশিয়া সহ বিভিন্ন স্থানে সাপ পুষে তার থেকে বিষ সংগ্রহ করে বিক্রি করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, বিশ্ব জুড়ে বর্তমানে প্রতি গেলন সাপের বিষের মূল্য হচ্ছে ১৫৩ হাজার ডলার।
হর্স সিম্যান –
আপনারা হয়তো জেনে থাকবেন উন্নত বিশ্বের বিভিন্ন দেশগুলোতে ঘোড়ার দৌড় প্রতিযোগিতা একটি জনপ্রিয় ইভেন্ট।
যেখানে এক একটি ঘোড়ার পেছনে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলারের বেট মানে বাজি ধরা হয়।
তাই এই সকল ঘোড়াগুলো যেন জন্ম থেকেই সুস্থ সবল, এবং খুবই দ্রুত গতির হতে পারে।
এর জন্য শক্তিশালী পুরুষ ঘোড়ার বীর্যকে বিক্রি করা হয়।,
এবং সেগুলো স্ত্রী ঘোড়ার দেহে পুষ করে তার থেকে নতুন ঘোড়া বের করে আনা হয়।
বিষয়টিকে আপনি খানিকটা মানুষের টেস্ট টিউব ব্যাবির সাথেও তুলনা করতে পারেন।
বর্তমান রেসিং হর্স প্রস্তুতের জন্য এই পদ্ধতি বেশ জনপ্রিয় ।
কেননা এতে করে সদ্য জন্মানো ঘোড়ার ছানাও আগে থেকে অনেকটা চতুর থাকে। তাছাড়া সেগুলো ঘোড়াদৌড় প্রতিযোগিতায় বেশ পারদর্শী হয়।
উল্লেখ্য, ঘোড়ার প্রতি এক গেলন বীর্যের দাম হচ্ছে প্রায় ৪.৭ মিলিয়ন ডলার।
স্কোর পিয়ান ভ্যানম –
আমাদের দেশে বিচ্ছু খুবি দুর্লভ একটি প্রাণী হলেও বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তেই একে দেখতে পাওয়া যায়।
