এ্যাকুরিয়ামের মাছের কথা বললে আমাদের মনে প্রথম যে মাছটির ছবি আসে সেটি হলো গোল্ড ফিশ। কারণ বর্তমানে সবচাইতে জনপ্রিয় মাছের মধ্যে গোল্ড ফিশ একটি।
গোল্ড ফিশ একটি বিদেশি প্রজাতির বাহারি মাছ। সাধারণত শখের বশে বাসার এ্যাকুরিয়ামে মানুষ গোল্ডফিশ রাখে।
নামকরণ:
গোল্ডফিশের রঙ স্বর্ণের মত চকচকে। তাই এর নামকরণ হয়েছে গোল্ড ফিশ।
বৈজ্ঞানিক নাম:
এর বৈজ্ঞানিক নাম Carassius auratus.
পরিবার:
গোল্ডফিশ মূলত স্বাদু পানির মাছ।
এটি সিপ্রিনিফর্মেস বর্গের অন্তর্গত সিপ্রিনিডে পরিবারের মাছ।
পাশাপাশি এই মাছ কার্প পরিবারের অপেক্ষাকৃত ছোট সদস্য।
প্রজাতি:
বিশ্বজুড়ে গোল্ডফিশের প্রায় ১২৫টি প্রজাতি রয়েছে।
তবে এ্যাকুরিয়ামে পালন করা জনপ্রিয় প্রজাতিগুলো হলো- কমেট, অয়াকিন, জাইকিন, সাবানকিন, ওরান্ডা, ব্ল্যাকমোর, ফান্টাইল, রুইকিন, রানচু ইত্যাদি।
উৎপত্তির আদিস্থান:
গোল্ডফিশ মূলত পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের মাছ। তবে বর্তমান বিশ্বের সর্বত্রই এটি পাওয়া যায়।
আকার-আকৃতি:
লম্বায় এই মাছ ১৪ ইঞ্চি বা ৪০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে।গোল্ডফিশ খুবই ছোট একটি মাছ। তবে প্রাকৃতিক পরিবেশে জলশয়ে যদি একে ছেড়ে দেওয়া হয় এটি আকারে আরও বড়ও হতে পারে। এখন পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে বড় গোল্ডফিশের আকার ৪৮ সেমি।
গঠন:
গোল্ড ফিশ বিভিন্ন রঙের হয়ে থাকে। যেমন- সাদা, হলুদ, কমলা, লাল, বাদামী। আবার কালো রঙের বিভিন্ন সমন্বয়ও হতে পারে।
গোল্ডফিশের দুই ধরণের দৈহিক কাঠামো হয়ে থাকে। ডিম্বাকৃতির এবং লাম্বাকৃতির।
বিভিন্ন ঘাত-প্রতিঘাত, দেহের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতার দিক থেকে লম্বা দৈহিক কাঠোমোর মাছগুলো শক্ত হয়ে থাকে।
বৈশিষ্ট্য (অভিযোজন ক্ষমতা):
দেহের রোগ প্রতিরোধ এবং অভিযোজন ক্ষমতায় গোল্ড ফিশ অন্যান্য মাছের থেকে এক ধাপ এগিয়ে।
মানুষসহ অধিকাংশ প্রাণী যেখানে অক্সিজেন ছাড়া কয়েকে মিনিটের মধ্যে মারা যায়, সেখানে বরফ ঢাকা জলাভূমিতেও এই মাছ মাসের পর মাস বেঁচে থাকতে পারে।
গবেষণায় দেখা গেছে, বরফশীতল পানিতে বাঁচতে গোল্ডফিশ শরীরের ল্যাকটিক এ্যাসিড এ্যালকোহলে রুপান্তর করে ফেলতে পারে।
সাধারণত অক্সিজেনের অভাবে শরীরে ল্যাকটিক এ্যাসিড তৈরি হয়। কোন প্রাণী যদি এই ল্যাকটিক এসিড শরীর থেকে বের না করতে পারে তাহলে কয়েক মিনিটের মধ্যেই সে মারা যাবে।
কিন্তু গোল্ডফিশ এই ল্যাকটিক এ্যাসিডকে অ্যালকোহলে পরিবর্তন করে বেঁচে থাকতে পারে। প্রতিকূল পরিবেশে বেঁচে থাকার জন্য গোল্ডফিশ এই অভিযোজন ক্ষমতাকে ব্যবহার করে।
স্মৃতিশক্তি:
প্রচলিত রয়েছে গোল্ডফিশের স্মৃতিশক্তি খুবই কম। অনেকের মতে গোল্ড যেকোন বিষয় মাত্র ৩ সেকেন্ড মনে রাখতে পারে।
তবে গবেষণায় দেখা গিয়েছে যেকোন ঘটনা প্রায় ৩ মাস পর্যন্ত গোল্ডফিশ তার স্মৃতিতে ধারণ করতে পারে।
এই মাছ বিভিন্ন আকার ও শব্দের মধ্যেও পার্থক্য করতে পারে।এছাড়া বিশেষভাবে প্রশিক্ষণ দিলে গোল্ড ফিশ বিভিন্ন রঙের আলোকসংকেত অনুযায়ী প্রতিকৃয়া দেখাতে সক্ষম হয়।
দৃষ্টিশক্তি:
গবেষণায় দেখা গেছে, গোল্ডফিশের ৪ প্রকারের শঙ্কু কোষ থাকে। যেগুলো যথাক্রমে ভিন্ন ভিন্ন রঙ সংবেদনশীল: লাল, সবুজ, নীল এবং অতিবেগুনী।
এইসব রঙের সমন্বয়ে এই মাছ যেকোন কিছু দেখতে পায়।
বসবাস:
প্রাকৃতিকভাবে স্বাদু পানি বা পুকুরের পানিতে এই মাছ বাস করে।
খাদ্যাভ্যাস:
প্রাকৃতিক ভাবে এই মাছ পানিতে থাকা অন্যান্য মাছ এবং পোকামাকড় খেয়ে জীবন ধারণ করে।
এ্যাকুরিয়ামে পালনের ক্ষেত্রে, গোল্ডফিশ যেকোন ধরণের খাবার খায়। তবে আমিষ জাতীয় খাবারে প্রাধান্য দেওয়া উচিত।
বংশবিস্তার:
সাধারণত বসন্তে গোল্ড ফিশের প্রজনন ঘটে। ডিম পাড়ার মাধ্যেমে এরা বংশবিস্তার করে থাকে।
১২ ঘন্টা থেকে ১ দিনের মধ্যে স্ত্রী মাছ ডিম ছাড়ে। ৪৮ থেকে ৭২ ঘন্টার মধ্যে এগুলো ছড়িয়ে পড়ে। এরপর পুরুষ মাছ ডিমগুলি নিষিক্ত করে।
নিষিক্ত ডিমগুলি আঠালো হয়। যার কারণে জলজ গাছের পাতায় আটকে যায়। ২ দিন পর ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়।
প্রথম দিকে মাছের বাচ্চাগুলো মাছের গুড়ো খাবার খায়। পরে জলজ উদ্ভিদ ছাড়াও প্রায় সবকিছুই খেতে শুরু করে।
বাচ্চা মাছগুলির প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে স্বগোত্রীয় রঙ ধারণ করতে ১ বছর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। এর আগ পর্যন্ত তারা ধাতব বাদামী রঙের থাকে।
আয়ুষ্কাল:
একটি গোল্ড ফিশ ২৫ বছর পর্যন্ত বাঁচে। যুক্তরাজ্যের নর্থ ইয়র্কশায়ারে ১৯৯৯ সালে একটি গোল্ড ফিশ ৪৩ বছর বয়স পর্যন্ত বেঁচে ছিল। এটি ছিল গোল্ডফিশের আয়ূষ্কালের রেকর্ড।
বাজার মূল্য:
গোল্ড ফিশ মাছের রঙ যেমন সোনালী বর্ণের ঠিক তেমনি সোনার মত এর দাম। আমাদের দেশে গোল্ড ফিশের আকার এবং প্রজাতি অনুসারে দামের ভিন্নতা দেখা যায়।
সাধারণত ৫০ টাকা থেকে শুরু করে ২৫০০ টাকা বা এর অধিক পর্যন্ত দামের গোল্ড ফিশ পাওয়া যায়। তবে উচ্চমানের গোল্ডফিশের দাম অনেক বেশি। যা বাংলাদেশে খুবই নগণ্য।
২০১৮ সালে চীন থেকে আমদানি হওয়া লাইভ গোল্ডফিশের বাজার ছিল ১.২ মিলিয়ন। কিন্তু উচ্চ মানের মাছের জাতের দাম আরও বেশি, ১২৫ ডলার থেকে ৩০০ ডলার পর্যন্ত হয়ে থাকে।
এ্যাকুরিয়াম প্রেমীদের কাছে গোল্ডফিশ খুবই জনপ্রিয় একটি মাছ। ঘর কিংবা অফিসের সৌন্দর্য্য বৃদ্ধিতে অনেকেই এটি পালন করে থাকেন। এ্যাকুরিয়ামে গোল্ড ফিশ ঘরে যেন এক অন্যরকম পরিবেশ সৃষ্টি করে। তাই দিনদিন এর জনপ্রিয়তা বেড়েই চলেছে।