তেল উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত- পাম গাছ

তেল উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত- পাম গাছ
তেল উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত- পাম গাছ

পাম গাছ এমন একটি উদ্ভিদ যেটি তেল উৎপাদন সহ বিভিন্ন কাজে বিশ্বব্যাপী ব্যপক সমাদৃত। এই উদ্ভিদের বহু গুণ রয়েছে।

আজ আমাদের প্রতিবেদন পাম গাছ নিয়ে।

বৈজ্ঞানিক নাম:

এই উদ্ভিদের বৈজ্ঞানিক নাম এলিইসগিনিসিস।

প্রজাতি:

পুরো বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন জাত মিলিয়ে প্রায়  ২,৬০০ প্রজাতির পাম উদ্ভিদ রয়েছে।

বিভিন্নরকম পাম গাছগুলোর মধ্যে রয়েছে-

Coconut Palm, Needle Palm, Foxtail Palm, Bismarck Palm, Bismarck Palm.

ইতিহাস:
পাম উদ্ভিদের উৎপত্তিস্থল পশ্চিম আফ্রিকা। জানা যায়, প্রায় ৫ হাজার বছর পূর্বে আফ্রিকা মহাদেশে পাম গাছের চারার সন্ধান মিলে।

১৯১১ সালে মালয়েশিয়াতে Scotsman William Sime এবং Henry Darby নামক দুই ব্যাক্তি পাম চাষের প্রর্বতন করেন।

এরপরে ১৯১৭ সালে মালয়েশিয়ানরা প্রথম বানিজ্যিক ভাবে পাম চাষ শুরু করেন। বর্তমানে মালয়েশিয়ায় পাম তেল শিল্পে ৩লক্ষ ৫০ হাজারেরও বেশি শ্রমিক কর্মরত।

বাংলাদেশে পাম গাছ:

বাংলাদেশে পাম গাছ আসে ১৯৭৮ সালে। প্রথম দফা পাম বীজ আনা হয় মালয়েশিয়া থেকে। পলিথিন ব্যাগে ঢাকা এই বীজ থেকে চারা ‍উৎপাদন করা হয় বোটানিক্যাল গার্ডেনে।

এরপর থেকে বাংলাদেশেও পাম চাষের যাত্রা শুরু হয়।

১৯৭৯ সালে মালয়েশিয়া ও নাইজেরিয়া থেকে আনা চারা দ্বারা প্রথম পাম চাষ শুরু হয়।

১৯৭৯ সালে কক্সবাজার এবং সিলেট বনবিভাগকে ছয় মাস বয়সের চারা রোপণের জন্য সরবরাহ করা হয় ।

১৯৮১ সালে কক্সবাজারে ৩২৫ একর, চট্টগ্রামে ২৭৯ একর এবং সিলেটে ১৮০ একর মিলে মোট ৭৮৪ একর পাম চাষের আওতায় আনা হয়।

প্রাপ্তিস্থান:

সাধারণত গ্রীষ্ম-মন্ডলীয় অঞ্চলে পাম গাছ জন্মায়।

ইউরোপ, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, দক্ষিণ আমেরিকা, আফ্রিকা, ভারত, অষ্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডের মত দক্ষিণাংশের দেশগুলোয় পাম উদ্ভিদ জন্মায়।

পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে এই গাছটির চাষাবাদ করা হলেও, এশিয়া মহাদেশে এর উৎপাদন অধিক মাত্রায় লক্ষ করা যায়।

আকার-আকৃতি:

প্রজাতি ভেদে পাম গাছ বিভিন্ন আকারের হয়ে থাকে।

গঠন ও বৈশিষ্ট্য:

পাম গাছ হচ্ছে এক প্রকার ফলজ উদ্ভিদ।  যা দেখতে অনেকটা খেজুর গাছের মত। এবং এর ফলগুলো দূর থেকে দেখলে খেজুরের মত বলেই মনে হয়।

  • ফুল পাম উদ্ভিদের ফুল রয়েছে, যা খুবই ছোট। এগুলো হলুদ বা হালকা সবুজ রঙের হয়ে থাকে।

  • ফল পাম গাছে ফল জন্মায়। এগুলো ছোট বলের মত। খেজুরের মত দেখতে।

পাকলে পাম ফল খয়েরী রঙে রূপ নেয়।

এই পাম ফল থেকেই পাম তেল উৎপাদন করা হয়।

  • পাম তেলপাম ফল হতে উৎপাদন করা সম্ভব। এই তেলকে বলা হয় পাম ওয়েল।

গুণাগুন ও উপকারিতা:

পাম উদ্ভিদ যা বিভিন্ন ভেষজ উপকারে আসা সহ পাম তেল তৈরির প্রধান উপাদান।

পাম ফলের প্রচুর গুণাগুণ ও উপকারিতা রয়েছে। পাম সাধারণত বাংলাদেশের বৃক্ষ নয়। তবে বর্তমানে এটি বাংলাদেশেও চাষ করা হচ্ছে। চলুন জেনে আসি পাম ফলের উপকারিতা ও গুণাগুণ সম্পর্কে।

১। পাম ওয়েল শরীরে রক্ত জমাট বাধার প্রবণতা হ্রাস করে, যার ফলে হৃদরোগের ঝুকি হ্রাস পায়।

২। এই তেল ব্যবহারে রক্তের মোট কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি পায় না।

৩। পাম ওয়েল ধমনীতে প্লাক গঠনে সাহায্য করে না।

৪। পাম ফল থেকে যে তেল পাওয়া যায় তা সম্পূর্ণ কোলেস্টেরল মুক্ত ভোজ্য তেল।

৫। পাম তেলের জারণরোধী ভূমিকা রয়েছে যে কারনে পাম তেল দেহের কোষগুলোর বয়ো বৃদ্ধি প্রক্রিয়া প্রতিহত করতে সক্ষম।

৬। ক্যান্সার রোধ করতে পাম ওয়েল সহায়তা করে থাকে।

৭। পাম গাছ এর পাতা জমিতে সার হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।

৮। হজমে সহায়তা করে

৯। চুল এবং ত্বকের জন্য বেশ উপকারি

১০। দেহের বিভিন্ন ভিটামিনের ঘাটতি পুরণ করে থাকে।

১১।মস্তিষ্ককে দ্রুত কাজ করতে সাহায্য করে।

পাম ফল এবং পাম তেল
পাম ফল এবং পাম তেল

তাছাড়া, এই পাম গাছগুলো একটি সাধারণ গাছের তুলনায় প্রায় ১০ গুণ বেশি কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করে একই পরিমাণে অক্সিজেন নিষ্কাশন করে।

যা হয়তো ভবিষ্যতে মানব জীবনকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি বিষয়।

পাম গাছের চারা প্রস্তুত পদ্ধতি:

পাম গাছের চারা প্রস্তুতের জন্য সাধারণত দুইটি পথ অবলম্বন করা হয়ে থাকে।

যার একটি হচ্ছে গাছ থেকে স্ত্রী ফুলগুলো পরাগায়ণ করার মাধ্যমে।

আর অপরটি হচ্ছে পানিতে ভিজিয়ে পাম ফলগুলো ৪০ থেকে ৪৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ২৪ ঘন্টা পানিতে ভিজিয়ে।

১ ঘন্টা রৌদ্রে শুকিয়ে সেগুলোকে বস্তাজাত করে রেখে দিলে সেখান থেকে মাত্র ৩০ দিনের মধ্যে পাম বীজ অংকুরিত হয়।

অংকুরিত বীজগুলো বাছাই করে সেগুলো একটি পলিথিনের প্যাকেটে রোপন করা হয়।

৬ থেকে ৯ মাসের ভেতরে চারাগুলো বেশ বড় হয়ে উঠলে সেগুলোকে পাম চাষের জন্য নির্দিষ্ট জায়গায় নিয়ে লাগানো হয়।

পাম গাছ আর অন্যান্য গাছের মধ্যে একটি বড় ধরনের তফাৎ হচ্ছে, পাম গাছ অংকুরিত হবার পর থেকে এই গাছগুলোকে রোপনের আগ পর্যন্ত যে পরিমাণে সার এর পেছনে খরচ করা হয়, তা অন্যান্য গাছের তুলনায় অতি নগণ্য।

পাম গাছের অর্থনৈতিক গুরুত্ব:

শুনে হয়তো আপনি অবাক হবেন একটি পাম গাছের চারা রোপনের মাত্র ৩ বছরের মাথায় ফল দেয়া শুরু করে।

যা কিনা প্রায় একটানা ৩০ থেকে ৪০ বছর পর্যন্ত স্থায়ী হয়। তাই অল্প সময়েই পাম গাছ থেকে অধিক উপার্জন করা সম্ভব।

তাছাড়া, এক একটি পূর্নবয়স্ক গাছ থেকে খরচ বাদে মাসে ১ হাজার টাকার বেশি লাভ করা সম্ভব। যেখান থেকে প্রতি বছর হেক্টর প্রতি ১০ থেকে ১৬ টন ভোজ্য তেল পাওয়া যায়।

একটি পরিবারের সারা বছরের তেলের চাহিদা মেটাতে দুইটি পাম গাছই যথেষ্ট।

  • মালয়েশিয়া এই বৃক্ষ চাষের মাধ্যমে প্রতি বছর প্রায় ৬.৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের অধিক আয় করছেন।

  • পাম তেল উৎপাদনের জন্য সবার শীর্ষে রয়েছে তাদেরই পার্শ্ববর্তী দেশ ইন্দোনেশিয়া। ।

  • প্রতিবছর ইন্দোনেশিয়া পাম তেল বিক্রি করে প্রায় ১৫ থেকে ২০ বিলিয়ন ডলার আয় করে থাকে।

  • পৃথিবীর পাম তেলের শতকরা ৮৪ ভাগ তেল প্রডিউস করে থাকে এই মালয়েশিয়া এবং ইন্দোনেশিয়া দেশ দুইটি।

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে পাম গাছের অবস্থান

বাংলাদেশ কৃষি তথ্য সার্ভিসের বর্ণনা অনুযায়ী আমাদের দেশের সর্বস্থানই পাম চাষের জন্য বেশ উপযোগী।

বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত ২২ ভাগ পাম তেলের চাহিদার ভেতরে নিজস্ব ভাবে মাত্র ১ ভাগ পূরণ করে থাকে। আর বাকি ২১ ভাগই বহিরাগত দেশ থেকে আমদানি করা হয়।

আরো পড়ুন:
অতি পরিচিত উদ্ভিদ – ঘাস
অ্যালোভেরা বা ঘৃতকুমারী সর্বাধিক পরিচিত ভেষজ উদ্ভিদ
নিম গাছ – নানান উপকারীতায় সমৃদ্ধ এক উদ্ভিদ

তাই এই পাম চাষ হয়তো ভবিষ্যতে আমাদের দেশের কৃষিখাতের জন্য বিরাট এক সাফল্য বয়ে আনতে পারে।

পাম গাছ খুবই উপকারী একটি উদ্ভিদ। কিন্তু এই উপকারের সুযোগ নিয়ে বর্তমানে মানুষ এই উদ্ভিদ অতিরিক্ত পরিমাণে কর্তন করতে শুরু করেছে।

তাই, ভবিষ্যতে বিলুপ্ত হবার আগেই আমাদের এই উদ্ভিদ রক্ষণে এগিয়ে আসা উচিত।

curious

শেয়ার করুন -

উত্তর দিন

আপনার মন্তব্য লিখুন
আপনার নাম লিখুন