ঘাস আমাদের সকলেরই অতি পরিচিত একটি উদ্ভিদ। বাড়ির উঠান থেকে শুরু করে খেলার মাঠ, নদীর পার, বিল কোথায় নেই এই উদ্ভিদ?
ছোট্ট এই উদ্ভিদটি অতি পরিচিত হলেও এর সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান বা ধারণা খুবই কম।
আজকে আমাদের আলোচনার বিষয়বস্তু ঘাস নিয়ে।
ঘাস এমন এক উদ্ভিদ যা মাটির একদম কাছেই জন্মে। এদের পাতা খুবই সরু হয়।
নাম:
ঘাসের ইংরেজী নাম Grass.
বৈজ্ঞানিক নাম:
এর বৈজ্ঞানিক নাম Poaceae.
পরিবার:
ঘাস একটি সপুষ্পক উদ্ভিদ। এরা Poaceae পরিবারের অন্তর্গত।
উৎপত্তির আদিস্থান:
সমগ্র পৃথিবীর সবুজাংশের প্রায় ২০ শতাংশই ঘাস দ্বারা আবৃত।
তবে প্রকৃতপক্ষে উদ্ভিদটির উৎপত্তি কবে, কোথায় তা সম্পর্কে তেমন কোন তথ্য পাওয়া যায় নি। পৃথিবীর সর্বত্রই এটি জন্মায় বিধায় এর নির্দিষ্ট উৎপত্তিস্থল সম্পর্কে এখনো অজানা।
প্রাপ্তিস্থান:
এটি এমন একটি উদ্ভিদ যা না চাইতেই পৃথিবীর যেকোন স্থানে জন্মে। বাড়ির আশেপাশে, বিলে, যেকোন ফাঁকা জায়গা পেলে এরা প্রাকৃতিক ভাবেই জন্মে।
বরফে ঢাকা তুষার অঞ্চল, মরুভূমি এমনকি পানিতেও লতির মত ঘাস জন্মে।
তবে এখন বিভিন্ন প্রয়োজনে এই উদ্ভিদটির চাষের প্রচলন শুরু হয়েছে।
যার কারণ হচ্ছে এটি খুবই উপকারী এবং সম্ভাবনাময় একটি উদ্ভিদ।
প্রজাতি:
এখন পর্যন্ত পৃথিবীতে এর ১০ হাজার ধরণ ও প্রকারের প্রজাতি পাওয়া গেছে।
এদের মধ্যে রয়েছে দূর্বা, লেমন গ্রাস তাছাড়া ধান,গম,ভুট্টা ইত্যাদি শষ্য কিন্তু ঘাস জাতীয় গাছের প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত।
জেনে হয়তো অবাক হবেন, বাঁশ এবং আঁখ জাতীয় গাছকেও ঘাসেরই একটি প্রজাতি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
বর্তমানে চাষ করা হয় এমন কিছু প্রজাতির ঘাসের নাম হচ্ছে পাকচং, জার্মান ঘাস, নেপিয়ার ঘাস, জারা ঘাস ইত্যাদি।
আকার-আকৃতি:
এই উদ্ভিদটির নির্দিষ্ট কোন আকার আকৃতি নেই। একেক প্রজাতি ঘাসের আকার একেক রকম।
একেবারে মাটির সঙ্গে মিশে থাকা ১/২ সেমি এর ঘাস যেমন রয়েছে তেমনি রয়েছে বাঁশ গাছের মত উঁচু লম্বা প্রজাতি।
প্রজাতি গোত্র অনুসারে এরা ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে।
গঠন ও বৈশিষ্ট্য:
এটি একটি সপুষ্পক উদ্ভিদ। এদের কান্ড খুবই নরম হয়।
কিছু কিছু ঘাসের কান্ডও থাকে না। শুধুমাত্র পাতা থাকে। পাতাগুলি হতে পারে একেবারেই নরম আবার হতে পারে রুক্ষ।
বাঁশ, আঁখ জাতীয় গাছগুলো লম্বা হলেও এরা মহীরুহের মত অত বিশাল বা শক্ত কান্ডবিশিষ্ট হয় না।
তবে উদ্ভিদটির জন্মানো, বেড়ে ওঠা এবং এদের দৈহিক বৈশিষ্টের সঙ্গে মাটির বেশ ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে। অর্থ্যাৎ যেখানকার মাটি যেরকম সেখানকার ঘাস সেই মাটির উপর নির্ভর করেই জন্মায়।
ঘাসের বিস্তার খুবই দ্রুত গতিতে ঘটে। গাছগুলোর একটি অবাক করা বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এরা প্রায় অবিনশ্বর।
অনেক ক্ষেত্রেই মাটির নিচে এদের ভাজক কলা অঞ্চল বা মেরিস্টেম থাকে। যার কারণে এরা ক্ষতস্থানে নতুন করে পাতা গজাতে সক্ষম।
ফুল– এটি সপুষ্পক উদ্ভিদ, তবে সব প্রজাতি ফুল ফোটাতে পারে না। ঘাস ফুলের মধ্যে রয়েছে পুত্তলিকা, রেইনলিলি, পিটুনিয়া, ভৃঙ্গরাজ, ডায়ান্থাস ইত্যাদি।
ঘাস সপুষ্পক উদ্ভিদ
লাল, গোলাপী, হলুদ, সাদা গাছ এবং প্রজাতি অনুসারে একেক ফুলের একেক রকম রং।
ফল– এই উদ্ভিদের ফলও রয়েছে। ধান, গম, যব, ভুট্টা, বিভিন্ন রকম ডাল এসব শষ্য ঘাস ফলেরই সবচেয়ে বড় উদাহরণ।
বীচ– ফুল-ফলের পর ঘাসের বীচও হয়।
উপকারিতা:
ঘাস খুবই উপকারী একটি উদ্ভিদ। বিভিন্ন প্রয়োজনে এদের কাজে লাগানো যায়।
এর গুরুত্ব বুঝতে পেরে আজকাল মানুষ এর চাষও করে থাকে। যেখান থেকে চাষীরা নিজেদের প্রয়োজন মেটানোর পাশাপাশি এগুলো বিক্রি করে প্রচুর টাকা উপার্জন করে।
ভেষজ গুণ- এটি প্রচুর ভেষজ গুণসম্পন্ন এক উদ্ভিদ। রোগ নিরাময় কিংবা রুপচর্চা বিভিন্ন কাজে এই উদ্ভিদের ব্যপক ব্যবহার হয়ে আসছে প্রাচীনকাল থেকে।
* কোন কোন ঘাসজাতীয় উদ্ভিদ শরীরের রক্ত পরা বন্ধ করতে তাৎক্ষণাত কাজ করে। যেমন-দূর্বা ঘাস।
* ভৃঙ্গরাজ স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি, চুল বৃদ্ধি এবং নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে।
* এছাড়াও তরি-তরকারিতে ব্যবহার, শারীরিক বিভিন্ন উপকারে, পোকা-মাকড় তাড়াতে ইত্যাদি বিভিন্ন কাজে লাগে।
গবাদি পশুর খাদ্য– গবাদি পশুর খাদ্য হিসেবে ঘাস খুবই উপকারী একটি গাছ।
গ্রামে-গঞ্জে এখনো গবাদি পশুদের মাঠে ছেড়ে দেওয়া হয় মাঠ চষে ঘাস খাওয়ার জন্য।
একারণে বর্তমানে পশুর খাবারযোগ্য ঘাসের চাষও করা হচ্ছে। এবং এগুলো বিক্রয় করে চাষীরা লাভবান হচ্ছেন।
সার তৈরি– সার তৈরিতে ঘাসের ভুমিকা অবর্ণনীয়। শুকনো ঘাস কিংবা পঁচিয়ে এটি সার প্রস্তুতের জন্য উপযুক্ত করে নেওয়া হয়।
ঘর সাজানোর সামগ্রী তৈরি- উন্নয়ন এবং সৃজনশীলতার কারণে পৃথিবী এখন অনেক এগিয়ে গেছে। ফেলনা জিনিসপত্র কিংবা অতি হেলায় জন্মানো ঘাসকেও এখন বিভিন্ন ভাবে কাজে লাগানো যায়।
বর্তমানে বিভিন্ন প্রসসিংয়ের মাধ্যমে ছোট্ট এই উদ্ভিদ থেকে ঘর সাজানোর সামগ্রী থেকে শুরু করে বিভিন্ন উপকারী জিনিসপত্র তৈরি করা হয়।
কাগজ তৈরি– বাঁশ কিংবা আঁখের ছোবড়া থেকে কাগজ তৈরির পদ্ধতি তো বেশ পুরোনো।
তবে বর্তমানে শুধুমাত্র বাঁশ এবং আঁখের ছোবড়া দিয়েই নয় অন্যান্য বিভিন্ন প্রজাতির ঘাস থেকেও কাগজ উৎপাদন করা হয়।
অন্যান্য– এসকল জিনিস তৈরি ছাড়াও পরিচিত এই উদ্ভিটির আরও প্রচুর উপকারিতা রয়েছে।
* যেমন-ক্রিকেট, টেনিসের কোর্ট কিংবা গলফ্ খেলার মাঠে প্রচুর ঘাসের প্রয়োজন হয়। সেক্ষেত্রে সেখানে গাছটির ব্যপক ভূমিকা রয়েছে।
* এছাড়াও জ্বালানী এবং ঘরের ছন হিসেবে শুকনো ঘাস, বিভিন্ন বড় বড় লন এমনকি পোশাক তৈরিতেও এখন ঘাসের ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়।
* সম্প্রতি গবেষকরা বলছে ঘাস থেকে ভবিষ্যতে বায়োফুয়েল তৈরি করা যাবে।
কারণ আগুন লাগলে বা লন মোয়িং করলেও এই উদ্ভিদ ধ্বংশ হয়ে যায় না। ক্ষতস্থান থেকে আবার নতুন পাতা গজায়।
আরো পড়ুন: অ্যালোভেরা বা ঘৃতকুমারী সর্বাধিক পরিচিত ভেষজ উদ্ভিদ চন্দন গাছ; অতি সুগন্ধীযুক্ত একটি উদ্ভিদ" /> নিম গাছ – নানান উপকারীতায় সমৃদ্ধ এক উদ্ভিদ
আর গবেষকদের ধারণা, এই অবিনশ্বরতার সুযোগ নিয়ে ভবিষ্যতে নিশ্চিন্তে বায়োফুয়েল চালিত অতি-আধুনিক লন-মোয়ার ব্যবহার করবে মানুষ, যার দ্বারা কর্তিত ঘাস থেকেই তৈরি হবে বায়ো-ফুয়েল।
বাড়ির পাশের আঙ্গিনাতেই জন্মায় এই উদ্ভিদটি। পৃথিবীর মাটিতে আমরা যেখানেই পা রাখিনা কেন সব জায়গাতেই ঘাসের দেখা পাবো।
এত পরিচিত হওয়া সত্ত্বেও উদ্ভিদ এতদিন ছিল অবহেলিত। বর্তমানে আস্তে আস্তে এর গুরুত্ব বাড়ছে।