শিকারি পাখি শঙ্খ চিল

শিকারি পাখি শঙ্খ চিল
শিকারি পাখি শঙ্খ চিল

জেলে যেমন পুকুরে জাল দিয়ে মাছ শিকার করে ঠিক তেমনি শঙ্খ চিল পাখি পুকুরের মাছ শিকার করে তাদের লম্বা পায়ের নখ দিয়ে।

তাই শঙ্খ চিলের নামের আগে শিকারি শব্দটির উল্ল্যেখ রয়েছে। অর্থ্যাৎ এটি শিকারি পাখি।

নামকরণ:

শঙ্খের মত সাদা বলে এই পাখিটির নাম শঙ্খ চিল পাখি।

এই পাখির ইংরেজি নাম Brahminy Kite.

Red Backed Sea-Eagle নামেও এরা পরিচিত।

বৈজ্ঞানিক নাম:

এই পাখির বৈজ্ঞানিক নাম Haliastur Indus.

পরিবার:

শঙ্খ চিল পাখি চিল পরিবারের অন্তর্ভুক্ত একটি পাখি। এটি অ্যাক্সিপিট্রিডি পরিবারের সদস্য।

আবাস্থল:

উপমহাদেশের ভারত, অষ্ট্রেলিয়া, ইন্দোনেশিয়া এবং দক্ষিণ-পূ্র্ব এশিয়া সহ বিভিন্ন জায়গায় পাখিটিকে দেখা যায়।

বাংলাদেশেও শঙ্খ চিল একটি অতি পরিচিত পাখি। এটি আমাদের সুলভ পাখি। অর্থ্যাৎ ১২ মাসই এই পাখি আামাদের দেশে বাস করে।

সুলভ হওয়ার কারণে এই পাখিকে বাংলাদেশের বিভিন্ন বন-জঙ্গল, ঝোপঝাড় কিংবা জলাশয়ের আশেপাশে উড়তে বা বসে থাকতে দেখা যায়।

আকারআকৃতি:

শঙ্খ চিল পাখি দৈর্ঘ্যে ৭৬ থেকে ৮৪ সেমি পর্যন্ত হয়ে থাকে। এর গড় দৈর্ঘ্য ৪৮ সেমি।

পাখিটির ডানা ৩.৬-৪.১ ফুট হয়ে থকে। এবং এর ওজন প্রায় ৩২০-৬৭০ গ্রাম পর্যন্ত হতে পারে।

গঠন বৈশিষ্ট:

শঙ্খ চিলের মাথা, ঘাড়, বুক, পেটের তলা’র পালক যার উপর মরিচা ধরা খাড়া ছোট রেখা থাকে যা শঙ্খের মত সাদা হয়ে থাকে।

এদের প্রাথমিক পালকই কেবলমাত্র কালো রঙের হয়ে থাকে।

ঠোঁট হয় অত্যন্ত ছোট আকারের, এবং লেজ সবসময় গোলাকার ডগাযুক্ত হয়ে থাকে।

এদের ডানায় থাকে লাল রং, সর-রং, বাদামি এবং কালো রঙের মিশ্রণ।

এবং এদের দেহের নিচের দিক বহু রেখা সম্বলিত হয়ে থাকে।

এই পাখির লেজ এবং ডানা সবসময় একই দৈর্ঘ্যের হয়। একারনেই হয়তো এদের নাম দেওয়া হয়েছে শঙ্খচিল!

কিন্তুি এই পাখির ২টি ডানা এবং এর শরীরের অন্যান্য অংশের রং খয়েরী।

স্ত্রী-পুরুষ ভেদে এই পাখিটির চেহারায় আলাদা কোনো পার্থক্য নেই। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির পুরো দেহের রং বাদামি।

স্ত্রী পাখি পুরুষ পাখির তুলনায় আকারে বড় হয়।

নীল আকাশে ডানা মেলে ভেসে থেকে চলে এই পাখি।

মাছ ধরার নৌকা বা ট্রলারের দেখা পেলে তাদের পিছু পিছু ছুটতে থাকে শঙ্খ চিল।

এরা নাকি সুরে ‘কাইই কাইই’ শব্দ করে ডাকে।

বাসস্থান:

নদী-নালা কিংবা জলাশয়ের আশেপাশে এদের বেশি দেখা যায়।

উপকূলীয় এলাকা, পেরাবন, ধানক্ষেত, নদীর মোহনা, জলাভূমি, আবর্জনার স্তুপ এবং জেলে পল্লীতে এরা বিচরণ করে থাকে।

খুবই উচু স্থানে বাসা বাঁধে শঙ্খ চিল। যেগুলোর উচ্চতা ভূমি থেকে ৫ থেকে ৩০ মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে।

প্রধানত ছোট ছোট ডাল-পালা এবং শুকনো পাতা দিয়ে তারা নিজেরাই তৈরি করে।

একই নীড়েই তারা বছরের পর বছর ধরে বাস করে।

গ্রামে এদের জোড়ায় জোড়ায় দেখতে পাওয়া যায়।

জলাশয়ের পাশে, সুন্দর বনের বড় বড় ঝাঁকে শঙ্খ চিলের বাস।

খাদ্যাভ্যাস:

পাখিটির খাদ্য তালিকায় রয়েছে মাছ, কাকড়া, ব্যাঙ, টিকটিকি, ছোট পোকা-মাকড়, মুরগির ছানা, রোগা কিংবা ছোট পাখি, ফেলে দেওয়া আবর্জনা এবং ছোট সাপ।

শিকার:

শঙ্খ চিল পাখি আকাশে বৃত্তাকারে উড়ে উড়ে শিকারের সন্ধান করে।

যদি মাছের সন্ধান পায় দ্রুত পানিতে নেমে পায়ের ধারালো নখ দিয়ে ছোঁ মেরে মাছ শিকার করে।

আরো পড়ুন:
নিশাচর প্রাণী হিসেবে পরিচিত পেঁচা পাখি
হামিং বার্ড (Humming Bird)
বাংলাদেশের জাতীয় পাখি; দোয়েল পাখি

পাখিটি সাপ শিকার করে খুবই অভিনব পদ্ধতিতে। কারণ সাপ একটি বিষাক্ত প্রাণী।

মূলত সাপ শিকার করার আলাদা কৌশল তাদের জানা আছে। সাপ কামড় দেওয়ার আগেই তারা সাপটিকে গিলে ফেলে।

প্রজনন:

এই পাখিটির প্রজনন কাল আবহাওয়া-পরিবেশ ভেদে একেক স্থান অনুসারে একেক সময়ে হয়ে থাকে।

ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল মাস হচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ায় শঙ্খ চিল পাখির প্রজনন ঋতু। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াতে আগষ্ট থেকে অক্টোবর এবং পশ্চিম অস্ট্রেলিয়াতে এদের প্রজনন সময়কাল হচ্ছে এপ্রিল থেকে জুন মাসে।

শঙ্খ পাখি একবারে দুটি করে ডিম পাড়ে। ডিমে তা দিয়ে ডিম ফুটে বাচ্চা বের করতে স্ত্রী পাখিটি সহায়তা করলেও পুরুষ পাখি এবং স্ত্রী পাখি দুজনে মিলে একত্রে বাচ্চা বড় করে তোলে।

ডিম থেকে পাখির বাচ্চা ফুটে বের হতে ২৬ থেকে ২৯ দিন পর্যন্ত সময় নেয়।

ছানারা ৪০-৫৬ দিনের ভেতরেই উড়তে পারে। এবং ২ বছর বয়সে একটি শঙ্খ চিল পাখি প্রাপ্ত বয়স্ক হয়।

আয়ুষ্কাল

চিল জাতীয় এই পাখির আয়ুষ্কাল ১১ থেকে ১২ বছর পর্যন্ত হয়ে থাকে।

বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই এরা বিপদমুক্ত বলে বিবেচিত।

বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনেও এই প্রজাতির পাখিটি সংরক্ষিত রয়েছে।

বাংলায় শঙ্খ চিল পাখিকে নিয়ে রয়েছে বিভিন্ন গান, কবিতা। যা কালজয়ী বিখ্যাত কবিরা লিখে গেছেন।

তেমনি কবি জীবনান্দ দাশের কবিতায়-

“আবার আসিব ফিরে ধানসিঁড়িটির তীরে-এই বাংলায়,
হয়তো মানুষ নয়-হয়তো বা শঙ্খ চিল শালিখের বেশে।।”

curious

শেয়ার করুন -

১ মন্তব্য

  1. পাখিটির সম্পর্কে জেনে অনেক ভাল লাগল। চিলের সম্পর্কে অনেক কিছুই জানা ছিল না। লেখাটি দারুন হয়ছে। এমন সুন্দর লেখা আরও দেখতে চাই।

উত্তর দিন

আপনার মন্তব্য লিখুন
আপনার নাম লিখুন