ঘড়ি আবিষ্কার এর ইতিহাস

ঘড়ি আবিষ্কার এর ইতিহাস
ঘড়ি আবিষ্কার এর ইতিহাস

সময় আমাদের জীবনের সবচাইতে মূল্যবান জিনিসগুলোর মধ্যে একটি। এজন্যই হয়তোবা প্রবাদ বাক্যে বলা হয়ে থাকে সময়ের কাজ সময়তেই ভাল। সময় নির্ধারণের জন্য আমরা ঘড়ি ব্যবহার করি। আর এই ঘড়ি আবিষ্কার এর ইতিহাস বহু পুরানো।

মানব সভ্যতার শুরু থেকে বিভিন্ন ভাবে মানুষ সময় গণনা করে আসছে। যার সর্বশেষ ফল হচ্ছে ঘড়ি।

আজ আমরা কথা বলবো কিভাবে সময় পরিমাপকারী যন্ত্র ঘড়ি আবিস্কার করা হয়েছিল সেসম্পর্কে, এবং আমাদের বিশ্বের সবচাইতে দামি ঘড়ি সম্পর্কে।

সূর্যঘড়ি:

পৃথিবী শুরুর লগ্ন থেকে মানুষ সময় গণনা করতেন সূর্যের আলো এবং রাতের তারা কে কেন্দ্র করে।

এ পদ্ধতিতে তৈরি ঘড়িটি ছিল সূর্যঘড়ি কিংবা ছায়া ঘড়ি। এটিই ছিল পৃথিবীর প্রথম যান্ত্রিক ঘড়ি।

আনুমানিক প্রায় সাড়ে ৫ হাজার বছর পূর্বে মিসর এবং ব্যাবিলনে এই ঘড়ি আবিষ্কার হয়েছিল।

বহু পুরানো এই ঘড়িটি এখনো টিকে আছে। তবে এর সেকেন্ড কিংবা মিনিট কোন কাটাই নেই, এমনকি নেই কোনো টিকটিক শব্দও।

‘সূর্যঘড়ি’ তৈরি করতে সেইসময় একটি খোলা জায়গায় কাঠের লাঠি পুঁতে রাখা হতো।

সেই কাঠের লাঠিকে ঘিরে মাটিতে ছোট বড় কতগুলো চক্র এঁকে দেওয়া হতো।

চক্রগুলোর ওপর বিভিন্ন রকম সংকেত দেওয়া থাকত, যা দিয়ে নানা প্রহর বোঝানো হতো।

লাঠিটির উপর সূর্যের আলো পরার কারণে লাঠির ছায়া মাটির ওপর পড়ত, আর সেই ছায়া যে চিহ্নর উপর পরতো তা দেখে সঠিক সময় নির্ধারণ করা হতো।

এমন একটি ঘড়ি আজো এই বিংশ শতাব্দিতেও কিন্তু বার্লিন মিউজিয়ামে সংরক্ষিত রয়েছে।

তারাঘড়ি:

সূর্যঘড়ি শুধুমাত্র সূর্যের আলোর মাধ্যমে সময় পরিমাপ করা যেত। যা শুধু দিনের বেলাতেই প্রযোজ্য।

কিন্তু এরপর মানুষের মাথায় এলো রাতের বেলা কিভাবে সময় গণনা করবে।

তারপরই জার্মানরা তারা ঘড়ি আবিষ্কার করলো।

জার্মানীদের চোখ গেল রাতের আকাশে। তারা রাতের আকাশের মাঝে এমন এক নক্ষত্রের খোঁজ করতে লাগল, যা হবে নির্দিষ্ট এবং সবসময় এক দিক থেকে অন্যদিকে যাতায়াত করবে।

অবশেষে পেয়েও গেলেন তেমন একটি নক্ষত্র। নক্ষত্রটি দেখতে ছিল খুবই উজ্জ্বল আর একটু লম্বা।

সেই নক্ষত্রটি প্রতিদিন আকাশের উত্তর দিকে ওঠে এবং আস্তে আস্তে দক্ষিণ দিক বরাবর এগিয়ে যায়।

 শুধু এটাই নয় এটি মেরুকে কেন্দ্র করে অবিকল ঘড়ির কাঁটার ন্যায় ঘুরতে থাকে। যার মাধ্যমে অনায়াসে সময় নির্ধারণ করা যায়। এর নাম দেওয়া হয় ‘ক্যাসিওপিয়া’।

যেটি দেখতে অবিকল ইংরেজি ‘D’ অক্ষরের মতো।

অবলিক্স:

সূর্যঘড়ি, তারাঘড়ি ছাড়াও সময় গণনার সর্বাধিক পুরাতন পদ্ধতির আরও একটি ঘড়ি আবিষ্কার করেছিল মিশরীয়রা, যেটির নাম ছিল অবলিক্স।

জানা যায় প্রায় ৩ হাজার ৫০০ বছর পূর্বে তৎকালীন মানুষরা এই পদ্ধতি ব্যবহার করে সময়কে গণনা করতেন।

সেসময় তারা দিনকে ১০ ঘন্টায়, তাছাড়া সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্তকে ১ ঘন্টা করে দুই ঘন্টায় ভাগ করেছিলেন।

ফলে মোট ২৪ ঘন্টার ভেতরে মিশরীয়রা দিনেক ১২ ঘন্টায় এবং রাতকে ১২ ঘন্টায় ভাগ করেছিলেন।

আর এই সকল পদ্ধতির জন্যও তারা কাঠ কিংবা হাড় ব্যবহার করতেন।

৬০ বেস সিস্টেমের ঘড়ি:

এরপরে খ্রীষ্টপূর্ব ২ হাজার বছর পূর্বে সামারিয়ান্সরা ৬০ বেসের সিস্টেম চালু করেন,

যার মাধ্যমে আজ আমরা ১ ঘন্টা সমান ৬০ মিনিট এবং ১ মিনিট সমান ৬০ সেকেন্ড বিবেচনা করি।

ক্লক:

অতপর ১১ শতকের দিকে আরাবিক ইঞ্জিনিয়ার আলমুরা দিগিয়ার ক্লক ঘড়ি আবিষ্কার করেন।

ওয়াটার ক্লক:

খ্রীস্টপূর্ব ১৪০০ সালের দিকে গ্রিক সম্প্রদায়রা প্রথম ওয়াটার ক্লক বা পানি ঘড়ি আবিষ্কার করেন।

যে পদ্ধটিতে একটি ফানেলের ভিতরে পানি ভরে রাখা হতো। আর সেই ফানেলটির নিচে লাগানো হতো একটি সরু পাইপ।

ফানেল থেকে পানি সরু পাইপ বেয়ে একটি জারে জমতো। সেই জারটির মধ্যে রাখা থাকতো হাল্কা একটি কর্ক।

আর পাত্রটির অন্য প্রান্তে লাগিয়ে দেওয়া হতো দাঁতযুক্ত একটি সময় নির্দেশক কাঁটা।

আরো পড়ুন: বিভিন্ন স্থানে সময়ের পার্থক্য কেন থাকে? দিনপঞ্জিকার বিবর্তন – যেভাবে এল আজকের এই ক্যালেন্ডার!

ফানেল হতে ধীরে ধীরে পানি চলে যেত জারে। এবং জারে যত বেশি পানি পড়ত কর্ক ততই উপরে ভেসে উঠত।

আর একইসঙ্গে সময় নির্দেশক কাটাটিও ঘুরতে আরম্ভ করত, যা বলতে পারত সঠিক সময়।

গ্রিকরা এই ঘড়ির নাম দিয়েছিল ‘ক্লিপসেড্রা’।

বালুঘড়ি:

জানা যায় ঐ সময়ে সমুদ্রের জাহাজগুলোর ভেতরে সময় গণনার জন্য আওয়ার গ্লাসের ব্যবহার করা হত।

যা ছিল বালু ভর্তি একটি কাচের বোতল। এই বোতলটির ছিল দুটি অংশ।

যখন এর একটি অংশ বালু দিয়ে ভরে যেত, তখন বোতলটিকে উল্টো করে রাখলে সেটি আবারো পূর্বের অবস্থায় ফিরে আসতো।

যার মধ্যবর্তী সময় ছিল ১ ঘন্টা।

ক্যান্ডেল ক্লক:

এবং ১৬শ শতাব্দিতে জাপান এবং চীনে ক্যান্ডেল ক্লক অর্থ্যাৎ মোম ঘড়ি আবিষ্কার করা হয়।

এই ক্যান্ডেল ক্লকগুলোর বিশেষত্ব হচ্ছে মোমবাতির আগুনের উপর নির্ভর করে এখানে সময় গণনা করা হত।

মোমবাতিকে যখন জ্বালানো হতো তখন সেটি আস্তে আস্তে গলতে থাকতো যা দেখে তখন সময়ে বলা হতো।

এরপরে ১৫৮০ সালে গ্যালেলিও দেখলেন পেন্ডুলামের ঘূর্ণয়ন ব্যবহার করে সঠিক সময় নির্ধারণ করা সম্ভব।

তখন তিনি বলেছিলেন এই পদ্ধতি ব্যবহার করে সময় গণনাকারী যন্ত্র বানানো যেতে পারে।

প্যান্ডুলাম ঘড়ি:

যার কিছু দশক পরেই ১৬৬৫ খ্রীষ্টাব্দে নেদারল্যান্ডের একজন বিজ্ঞানী প্যান্ডুলাম ঘড়ি আবিষ্কার করেন।

যদিও সেই ঘড়ি একিউরিসিটিতে প্রায় ১০ সেকেন্ডের তফাৎ ছিল।

পোর্টেবল ঘড়ি বা পকেট ওয়াচ:

১৭ খ্রীষ্টাব্দে পোর্টেবল ঘড়ি আবিষ্কার করা হয় যাকে আমরা পকেট ওয়াচ নামে চিনে থাকি।

অতঃপর ১৮৪০ সালে ইলেক্ট্রনিক ঘড়ি আবিষ্কৃত হয়।

এবং ১৯২০ সালে ক্রিষ্টাল ঘড়ি বানানো হয়। যেখানে ক্রস ক্রিস্টালের ভ্রাইবেশনকে ইলেক্ট্রনিক ভাবে কনভার্ট করে সময়কে নির্ধারণ করা হত।

ডিজিটাল ঘড়ি:

এরপর সর্বশেষ অটোমিক ক্লক বা ডিজিটাল ওয়াচ আবিষ্কার হয়।

উল্লেখ্য, এখন পর্যন্ত আমাদের বিশ্বের সবচাইতে দামি ঘড়ির ব্রান্ডটি হচ্ছে পাটেক ফিলিপ ব্র্যান্ড এবং সর্বাধিক দামি ঘড়িটি হচ্ছে Graff Diamonds যার দাম হচ্ছে প্রায় ৫৫ মিলিয়ন ইউএস ডলার।

পৃথিবীর সবচাইতে বড় ঘড়িটি হচ্ছে abraj al bait towers, যাকে আমরা মক্যাক্লক টাওয়ার নামেই জেনে থাকি।

curious

শেয়ার করুন -

উত্তর দিন

আপনার মন্তব্য লিখুন
আপনার নাম লিখুন