বিভিন্ন স্থানে সময়ের পার্থক্য কেন থাকে?

বিভিন্ন স্থানে সময়ের পার্থক্য কেন থাকে_
বিভিন্ন স্থানে সময়ের পার্থক্য কেন থাকে_

পৃথিবীর একেক স্থানে এই মুহুর্তের সময় একেকরকম। স্থানভেদে বিভিন্ন দেশে সময়ের পার্থক্য থাকে। কিন্তু কেন?

আজ আমরা জানবো বিভিন্ন স্থানে সময়ের পার্থক্য কেন থাকে এ সম্পর্কে।

এই তথ্য সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এবং বুঝতে হলে প্রথমেই আমাদের তিনটি জিনিস সম্পর্কে জেনে নিতে হবে। সেগুলো হলো-

১. দ্রাঘিমা রেখা: পৃথিবীকে পূর্ব থেকে পশ্চিমে ৩৬০টি কাল্পনিক রেখা দিয়ে বিভক্ত করা হয়েছে। যেখানে উত্তর মেরু এবং দক্ষিণ মেরু সংযুক্ত। এই প্রতিটি কাল্পনিক রেখাকে Longitude বা দ্রাঘিমা রেখা বলা হয়।

যুক্তরাজ্যের লন্ডন শহরের অদূরে অবস্থিত গ্রিনিচ শহরের মান মন্দির বরাবর পৃথিবীর ০° মূল মধ্যরেখা বা দ্রাঘিমা রেখা হিসেবে ধরা হয়েছে।

২. স্থানীয় সময়: কোন স্থানের দ্রাঘিমা রেখাতে সূর্যের অবস্থানের উপর নির্ভর করে সেই স্থানের সময় নির্ধারণ করা হয়। এই পদ্ধতিতে সময় নির্ধারণকে স্থানীয় সময় বলা হয়।

সূর্য যখন ঠিক মাথার উপরে অবস্থান করে ওই সময়টায় স্থানীয় সময় সাধারণত দুপুর ১২টা হয়।

আর এই মধ্যাহ্ন সময় হতে দিনের অন্যান্য অংশের সময় নির্ধারণ করা হলে তাকে বলা হয় স্থানীয় সময়।

তাই এই পদ্ধতি অনুযায়ী, একই দ্রাঘিমা রেখায় অবস্থিত প্রতিটি অঞ্চলের স্থানীয় সময় সমান।

৩. প্রমাণ সময়: কোন একটি দেশের রাজধানী কিংবা তার মধ্যভাগে অবস্থিত দ্রাঘিমা রেখা অনুসারে ওই দেশের সময় নির্ধারণ করার পদ্ধতিকে প্রমাণ সময় বলা হয়ে থাকে।

এক্ষেত্রে লক্ষণীয়, প্রতিটি দ্রাঘিমা রেখার জন্য সময়ের পার্থক্য ৪ মিনিট হয়ে থাকে।

বাংলাদেশের মধ্যভাগ দিয়ে ৯০° দ্রাঘিমা রেখা অতিক্রান্ত হয়েছে।

সুতরাং, গ্রীনিচ সময় হতে বাংলাদেশ সময়ের মধ্যে পার্থক্য (৯০×৪)=৩৬০ মিনিট অর্থ্যাৎ ৬ ঘন্টা।

আবার অপরদিকে সৌদি আরবের মধ্যভাগ দিয়ে ৪৫° দ্রাঘিমা রেখা অতিক্রান্ত করেছে। তাই সৌদি আরবের সাথে বাংলাদেশ সময়ের পার্থক্য (৪৫×৪)=১৮০ মিনিট অর্থ্যাৎ ৩ ঘন্টা।

অর্থাৎ, বাংলাদেশে যখন বিকেল ৫টা বাজে তখন সৌদি আরবের সময় দুপুর ২ টা।

স্থানীয় সময় এবং প্রমাণ সময়ের পার্থক্য কেন থাকে?

স্থানীয় সময় এবং প্রমাণ সময়ের পার্থক্য হলো স্থানীয় সময় নির্দিষ্ট স্থানের উপর অতিক্রান্ত হওয়া দ্রাঘিমা রেখা অনুসারে নির্ধারণ করা হয়।

অপরদিকে প্রমাণ সময় দেশটির মধ্যভাগ কিংবা গুরুত্বপূর্ণ শহরের উপর দিয়ে অতিক্রান্ত হওয়া দ্রাঘিমা রেখা অনুযায়ী নির্ধারিত হয়ে থাকে।

স্থান অনুযায়ী সময়ের পার্থক্য:

দ্রাঘিমা রেখা সমুহের একক হল ডিগ্রী (x°)। যেমন- ০°, ১৫°, ৩০°, ৬০° দ্রাঘিমা রেখা…..

কাল্পনিক ৩৬০টি বা ৩৬০° দ্রাঘিমা রেখাকে মূল মধ্যরেখা থেকে পূর্ব দিকে ১৮০° এবং পশ্চিমে ১৮০° বিভক্ত করা হয়েছে।

পৃথিবী তার নিজ অক্ষের ৩৬০° পশ্চিমে-পূর্ব দিকে প্রতি ২৪ ঘন্টায় ১বার ‍ঘুরে আসে।

এই হিসেবে ৩৬০° কোণে ঘুরে আসতে পৃথিবী সময় নেয় ২৪ ঘন্টা × ৬০ মিনিট= ১৪৪০ মিনিট। ১৪৪০ মিনিটকে ৩৬০ দিয়ে ভাগ করলে পাই ১৪৪০÷৩৬০=৪ মিনিট।

সুতরাং, প্রতি ডিগ্রী দ্রাঘিমা রেখার পার্থক্য বা দূরত্বের জন্য ৪ মিনিট সময় প্রয়োজন হয়।

এই দ্রাঘিমা রেখার প্রতি ডিগ্রীকে ৬০ মিনিটে ভাগ করা হয়, আবার ৬০ সেকেন্ডে ভাগ করা হয়। কারণ দ্রাঘিমা রেখার প্রতি মিনিট দূরত্বের জন্য ১ সেকেন্ড সময় লাগে।

জেনে রাখা ভাল দ্রাঘিমার দুরত্বের মিনিট আর ঘড়ির সময়ের মিনিট কিন্ত একই বিষয় নয়।

স্থানভেদে সময়ের পার্থক্যের তালিকা
স্থানভেদে সময়ের পার্থক্যের তালিকা

পৃথিবী তার নিজ অক্ষে পশ্চিম-পূর্ব দিকে ঘুরার কারণে ভৌগলিক অবস্থানের দিক থেকে পূর্বদিকের স্থান বা দেশগুলোয় আগে দিন হয়।

এবং পশ্চিম দিকের স্থান বা দেশ গুলোয় পরে দিন হয়। আর একারণেই স্থানভেদে বিভিন্ন স্থানের সময়ের পার্থক্য লক্ষ করা যায়।

উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যে, বাংলাদেশের পূর্বদিকে অবস্থিত ভারতের ত্রিপুরা এবং মিজোরাম রাজ্যে ও মিয়ানমারে আগে সকাল হয় এবং তার পরে বাংলাদেশে সকাল হয়।

অন্যদিকে আবার বাংলাদেশের পশ্চিমে অবস্থিত ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে বাংলাদেশের পরে সকাল হয়।

আবার বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঢাকা শহরের পূর্ব দিকে অবস্থিত নারায়ণগঞ্জ জেলায় আগে সকাল হয় তারপর ঢাকায়।

আর পশ্চিম দিকে অবস্থিত মানিকগঞ্জে সকাল হয় ঢাকায় সকাল হবার পরে।

আরো পড়ুন:
দিনপঞ্জিকার বিবর্তন – যেভাবে এল আজকের এই ক্যালেন্ডার!
বিদ্যুৎ শক্তি আবিস্কার

দ্রাঘিমা রেখা অনুযায়ী বিভিন্ন জায়গায় ভিন্ন ভিন্ন সময় হয়ে থাকে। তাই পৃথিবীর কোথাও রাত থাকলে অন্যকোথাও হয়ে থাকে দিন।

একারণেই বিশ্বের প্রতিটি দেশ এবং স্থানভেদে সময়ের পার্থক্য লক্ষ করা যায়।

curious

শেয়ার করুন -

উত্তর দিন

আপনার মন্তব্য লিখুন
আপনার নাম লিখুন