লোহা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একটি নিত্যপ্রয়োজনীয় পদার্থ। খুব মজবুত হওয়ায় বর্তমানে প্রায় বেশির ভাগ জিনিস তৈরিতেই লোহা ব্যবহার করা হচ্ছে।
বিশাল বিশাল স্থাপনা থেকে শুরু করে ছোট্ট ব্যবহার্য বস্তু সবকিছুতেই রয়েছে লোহার ব্যবহার। এমনকি আমাদের সাথে থাকা ছোট হাত ঘড়িতেও লোহার অস্তিত্ব বিদ্যমান।
আর তাই আজ আমাদের আলোচনা ফ্যাক্টরিতে কিভাবে লোহা তৈরি করা হয় সেসম্পর্কে। এছাড়াও এ সম্পর্কিত কিছু তথ্য নিয়ে –
লোহা হলো সর্বাধিক ভারী ধাতব মৌলিক পদার্থ যা মানসম্মত পারমাণবিক প্রজ্জ্বলনের মাধ্যমে একটি নক্ষত্রে তৈরি হয়েছে।
এতে রয়েছে সর্বাধিক সুদৃঢ় নিউক্লিয়াস।
একে সংশ্লেষণ করার জন্য যে শক্তির প্রয়োজন তা আমাদের পৃথিবীতে সুলভ নয়।
লোহা হচ্ছে একটি ধাতব মৌলিক পদার্থ, যার পারমাণবিক সংখ্যা ২৬, পারমাণবিক ভর ৫৫.৮৫।
এর রাসায়নিক চিহ্ন হচ্ছে Fe বা (Ferrum) আয়রন এবং লোহা পানি থেকে ৭.৮৫ গুণ ভারি।
লোহার স্ফুটনাঙ্ক ২৮৬২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, গলনাঙ্ক ১৫৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
প্রকৃতি থেকে লোহাকে মুক্ত অবস্থায় অর্থ্যাৎ সরাসরি পাওয়া যায় না। আকরিক থেকে লোহা নিষ্কাশন করা হয়।
লোহার মূল প্রধান আকরিক গুলো হলো, ম্যাগনেটাইট (Magnetite, Fe3O4), হেমাটাইট (Hematite, Fe2O3), সিডারাইট (Siderite, FeCO3), আয়রন পাইরাইটিস (Iron Pyrites, FeS2)।
সমগ্র বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে প্রচুর লোহার আকরিক পাওয়া যায়।
এছাড়াও জানা যায়, সম্পূর্ণ পৃথিবীতে লোহার পরিমাণ শতকরা ৪.১২ ভাগ।
বর্তমানে আমরা যেসকল লোহা ব্যবহার করে থাকি সেগুলো হচ্ছে ঢালাই লোহা, স্টিল লোহার মত বিভিন্ন লোহা।
বিভিন্ন ধরণের লোহা –
ঢালাই লোহা এক প্রকার অশুদ্ধ লোহা। এরমধ্যে ২ থেকে ৪.৫ শতাংশ কার্বন থাকে।
এছাড়া সামান্য পরিমাণে সিলিকন [Si], ফসফরাস [P], সালফার [S] এবং ম্যাঙ্গানিজ [Mn], থাকে।
ছাঁচে ঢালাই করা দ্রব্য, যেমন- লোহার নল, উনুনের শিক, আলোক স্তম্ভ প্রভৃতি প্রস্তুতিতে ঢালাই লোহা ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এছাড়া রড, আয়রন এবং ইস্পাত প্রস্তুতিতে ঢালাই লোহার অধিকাংশ অংশ ব্যবহৃত হয়।
অন্যদিকে স্টিল এর মধ্যে কার্বনের পরিমাণ ০.১৫ থেকে ১.৫ শতাংশ থাকে।
স্টিলকে লোহিত তপ্ত করে পানিতে ডুবিয়ে আবার ২০০ °C — ৩৫০ °C উষ্ণতায় উত্তপ্ত করলে এর নমনীয়তা এবং দৃঢ়তা বৃদ্ধি পায়।
এই পদ্ধতিকে ইস্পাতের পান দান বলা হয়ে থাকে।
রেল এবং ট্রামলাইন, গাড়ি, জাহাজ, যন্ত্রপাতি, ছুরি-কাঁচি, ব্লেড, কৃষি কাজের জন্য লাঙ্গলের ফলা, ট্রাক্টর, করাত, স্থায়ী চুম্বক, সেতু, গাড়ির স্প্রিং প্রভৃতিতে স্টিল ব্যবহার করা হয়।
এছাড়া স্টিলের সঙ্গে সামান্য পরিমাণ অন্য ধাতুর মিশ্রণ করে বিভিন্ন রকম সংকর স্টিল উৎপন্ন করা হয়।
যেমন –
নিকেলস্টিল
স্টেইনলেসস্টিল
ডুরায়রনস্টিল
ম্যাঙ্গানিজস্টিল
টাংস্টেনস্টিল ইত্যাদি।
এবার চলুন জেনে নেওয়া যাক খনি থেকে লোহার আকরিক সংগ্রহ করে তাকে বিভিন্ন প্রসেসিং এর মাধ্যমে কিভাবে লোহা তৈরি বা রূপান্তরিত করা হয় সেসম্পর্কে।