মহাত্মা গান্ধী – ভারতীয় রাজনীতির এক উজ্জ্বল নক্ষত্র

মহাত্মা গান্ধী – ভারতীয় রাজনীতির এক উজ্জ্বল নক্ষত্র
মহাত্মা গান্ধী – ভারতীয় রাজনীতির এক উজ্জ্বল নক্ষত্র(Mohandas Karamchand Gandhi), outside 10 Downing Street, London. He is in London to attend the Round Table Conference on Indian constitutional reform. (Photo by Central Press/Getty Images)

মহাত্মা গান্ধী ভারতের অন্যতম সেরা ব্যাক্তিত্ব এবং রাজনীতিবিদ। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের অগ্রগামী ব্যাক্তিদের মধ্যে একজন অন্যতম আধ্যাত্মিক নেতা।

পৃথিবীতে যুগে যুগে এমন কিছু মানুষ জন্মান যাদের নেতৃত্ব ও দর্শন পাল্টে দেয় গোটা দুনিয়াকে। যারা অন্ধকারে হাজির হন আলোর মশাল হাতে।

যারা নিজের জীবনের সবটুকু দিয়ে রচনা করে যান মানব কল্যাণের বাণী। ঠিক এমনই একজন মানুষ হলেন মহাত্মা গান্ধী ।

শান্তির স্বপক্ষে দাড়িয়ে তিনি পৃথিবীতে স্থাপন করে গেছেন অন্যরকম এক দৃষ্টান্ত।

তিনি ছিলেন অহিংস মতবাদ ও সত্যাগ্রহ আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা। অহিংস আন্দোলনের মাধ্যমে তিনি পুরো ভারতবর্ষকে করেছিলেন ঐক্যবদ্ধ।

স্বৈরশাষনের বিরুদ্ধে মানুষের চেতনাকে করেছিলেন জাগ্রত। আর সেই সাথে মানুষকে নিয়ে গিয়েছিলেন সত্য ও ন্যায় এর পথে। গণতন্ত্র ও মানবতার দিকে।

পরিচিতি:

মাহাত্মা গান্ধীর প্রকৃত নাম মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী। যদিও মহাত্মা গান্ধী নামেই তিনি বেশি পরিচিত।

তাঁর পিতার নাম করমচাঁদ গান্ধী। এবং মাতার নাম পুতলিবাই।

করমচাঁদ গান্ধী এবং পুতলিবাই দম্পতির কনিষ্ঠপুত্র গান্ধীজি।

মহাত্মা গান্ধীর নাম ছিল মোহন দাস। গুজরাটের একটি প্রথা রয়েছে। সেটি হলো পুত্র সন্তানের নামের সঙ্গে পিতার নাম থাকতে হয়। আর সেই প্রথা অনুসারে পুরো নাম হলো মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী।

জন্মগ্রহণ:

মহাত্মা গান্ধী ১৮৬৯ সালের ২রা অক্টোবর গুজরাটের পোরবন্দরে এক হিন্দু মোধ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।

ছেলেবেলা:

ছেলেবেলায় গান্ধীজি বাবা-মায়ের সঙ্গে পোরবন্দরে ছিলেন। সেখানকার পাঠশালায় তাঁর প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয়।

যখন তাঁর বয়স ৭ বছর তখন বাবা রাজকোটে বিচারপতি নিযুক্ত হন।

প্রথমে রাজকোটের এক পাঠশালায় এবং পরে হাইস্কুলে ভর্তি হলেন তিনি।

ছাত্রজীবন:

ছাত্র হিসেবে মহাত্মা গান্ধী খুব একটা মেধাবী ছিলেন না। ছাত্রজীবনের অনেকটা সময় তিনি পার করেন পোরবন্দর আর রাজকোটে।

রোজকোটের স্থানীয় এক স্কুল থেকে ইতিহাস, ভূগল ও গণিতের প্রাথমিক শিক্ষা পান তিনি।

তারপর কোনরকমে গুজরাটের ভবনগরে অবস্থিত সামালদাস কলেজ থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।

তারপরেই বিলেতে গিয়ে ব্যারিস্টারি পড়ার প্রবল ইচ্ছা হয় গান্ধীজির।

কিন্তু তাঁর পরিবারের সকলেই নিরামিষভোজী এবং রক্ষণশীল হওয়ায়- ছেলে বিলেতে গিয়ে বংশের নিয়মকানুন সম্পূর্ণরূপে ভুলে যেতে পারে এই আশংকা করে শুরুতে কেউই তাঁকে বিলেতে যাওয়ার অনুমতি দিতে রাজি হন নি।

পরবর্তীতে তাঁর বড় ভাই তাঁকে ব্যারিস্টারি পড়ার অনুমতি দেন, কিন্তু মায়ের কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকেন তিনি।

জৈন সন্ন্যাসী বেচার্জীকে সম্মুখে রেখে তিনি তাঁর মায়ের নিকট শপথ করেছিলেন যে তিনি মাংস, মদ এবং উচ্ছৃঙ্খলতা ত্যাগ করে হিন্দু নৈতিক উপদেশ পালন করে চলবেন।

এ শর্ত মেনেই ১৮৮৮ সালের ৪ঠা সেপ্টেম্বর ১৮ বছর বয়সে ব্যারিস্টারি পড়ার জন্য ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনে চলে যান মহাত্মা গান্ধী ।

এবং সেখানে তিনি মাকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি নিষ্ঠাভরে পালন করেন। তিনি লন্ডনের গুটিকয়েক নিরামিষ খাবার বিক্রি করে এমন দোকান থেকে নিয়মিত আহার করতেন।

শুধুমাত্র তাঁর মায়ের কথায় সাধারণ নিরামিষভোজী জীবনযাপন নয় এছাড়াও তিনি এ বিষয়ে পড়াশোনা করে একান্ত আগ্রহী হয়ে নিরামিষ আহার গ্রহণ করতেন।

সেখানে থাকাকালীন তিনি “নিরামিষভোজী সংঘ”-তে যুক্ত হন। এবং সে সংগঠনের কার্যকরী কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। সংস্থাটির একটি স্থানীয় শাখাও প্রচলন করেন তিনি।

নিরামিষভোজী সংঘের অনেক সদস্যই আবার থিওসোফিক্যাল সোসাইটি(Theosophical Society)-এরও সদস্য ছিলেন।

যা ১৮৭৫ সালের দিকে সার্বজনীন ভাতৃত্বের লক্ষ্যে গঠিত হয়েছিল। এতে ধর্ম শিক্ষায় বৌদ্ধ এবং হিন্দু ব্রাহ্মণ্য সাহিত্য পড়ানো হত।

তারা গান্ধীজিকে ভগবত গীতা পড়তে উৎসাহিত করতেন। এর পূর্বে ধর্ম বিষয়ে তাঁর তেমন কোন আগ্রহ না থাকলেও, গান্ধীজি হিন্দু, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ এবং ইসলামসহ আরও অন্যান্য ধর্ম এবং তাদের বিভিন্ন রীতি-নীতি সম্পর্কে পড়াশোনা করেন।

তাঁর এই অভিজ্ঞতা পরবর্তী জীবনের সাংগঠনিক কার্যক্রমে বিভিন্ন ভাবে কাজে লাগে।

এরপর মহাত্মা গান্ধী দেশে ফিরে আসেন।

কর্মজীবন:

বিলেত থেকে আইন পাশ করে আসলেও দেশে ফেরার পর আইনজীবি হিসেবে কাজ পেতে তাঁকে বেশ বেগ পেতে হয়েছিল।

এরপর ১৮৯৩ সালে দাদা আব্দুল্লা এর আমন্ত্রণে ‘আব্দুল্লা এ্যান্ড সন্স’ এর আইনজীবি হিসেবে কাজ করতে দক্ষিণ আফ্রিকায় যান তিনি।

বৈবাহিক জীবন:

মাত্র ১৩ বছর বয়সেই গান্ধীজির বিবাহ হয়। গান্ধীজির স্ত্রীর নাম কস্তুরবা গান্ধী।

এত ছোট বয়সে স্ত্রী ছিল গান্ধীজির খেলার সাথী।

পরবর্তীতে এ দম্পতির ৪ পুত্র সন্তান জন্মায়।

তাদের নাম যথাক্রমে- হরিলাল গান্ধী (জন্ম ১৮৮৮), মনিলাল গান্ধী (জন্ম ১৮৯২), রামদাস গান্ধী (জন্ম ১৮৯৭) এবং দেবদাস গান্ধী (জন্ম ১৯০০) সালে।

সাধাসিধা জীবনযাপন:

মহাত্মা গান্ধ একেবারেই সাধারণ জীবনযাপন করতেন।

তার নিজের পরিধেয় বস্ত্র ছিল ভারতের ঐতিহ্যবাহী পোশাক ধুতি এবং শাল।

তাঁর ব্যাক্তিত্বের আরও নজরকারা ব্যাপার হলো, তাঁর পরিধেয় এই শাল এবং ধুতি তিনি নিজেই চরকায় বুনতেন।

নিজের পরিধেয় শাল এবং ধুতি নিজেই চরকায় বুনতেন গান্ধীজি
নিজের পরিধেয় শাল এবং ধুতি নিজেই চরকায় বুনতেন গান্ধীজি

তিনি ছিলেন নিরামিষভোজী, সাধারণ নিরামিষ আহার গ্রহণ করতেন ।

জীবনের শেষপ্রান্তে তিনি ফলমূলই বেশি খেতেন। নিজের আত্মশুদ্ধি এবং প্রতিবাদের লক্ষ্যে তিনি দীর্ঘ সময় উপবাস থাকতেন।

গান্ধীজির রাজনৈতিক জীবন:

ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের মহান নায়ক গান্ধীজী। তিনি ভারতের জাতির জনক।

দক্ষিণ আফ্রিকা গান্ধীজির জীবনকে নাটকীয়ভাবে পরিবর্তন করে দেয়।

সেখানে যাওয়ার পর তিনি ভারতীয় কৃষ্ণাঙ্গদের প্রতি সাধারণভাবে প্রচলিত বৈষম্যের স্বীকার হন।

তখন সেদেশে ভারতীয়দের অধিকার সচেতন করে তোলার জন্য তিনি সেখানকার ভারতীয়দের রাজনৈতিক ভাবে সংগবদ্ধ করেন।

তারপর দীর্ঘদিন আফ্রিকার বঞ্চিত মানুষদের অধিকার আদায়ের জন্য লড়ে, ১৯১৫ সালের ৯ জানুয়ারী তিনি ভারতবর্ষে ফিরে আসেন।

সত্যাগ্রহ ছিল মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীর একটি দর্শন। এবং অহিংস প্রতিরোধের অনুশীলন।

মহাত্মা গান্ধী সত্যাগ্রহের চর্চা করেছিলেন ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে, এবং দক্ষিন আফ্রিকায়।

তাঁর এই তত্ত্ব নেলসন ম্যান্ডেলা গণঅধিকারের সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মার্টিন লুথার কিং ও জেমস ব্রেভেলের কর্মসূচি সহ সামাজিক ন্যায় প্রতিষ্ঠা ও অন্যান্য আন্দোলনে বেশ প্রভাব ফেলেছিল।

দক্ষিণ আফ্রিকার অন্যতম শ্রেষ্ঠ সন্তান এই নেলসন ম্যান্ডেলা তাঁর আদর্শ হিসেবে মানতেন গান্ধীজিকে।

১৯০৬ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার “ইন্ডিয়ান অপিনিয়ন” খবরের কাগজে এই সত্যাগ্রহ শব্দটি প্রথম ব্যবহার করা হয়। যার মূল উপাদান হলো সত্য ও অহিংসা।

১৯৩০ সালে মহাত্মা গান্ধী ভারতীয়দের লবণ করের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেন। সে প্রতিবাদে গান্ধীজি ৪০০ কিলোমিটার (২৪৮ মাইল) দীর্ঘ ‘ডান্ডি লবণ কুচকাওয়াজ’ এর নেতৃত্ব দেন।

যে আন্দোলন পরবর্তীতে ১৯৪২ সালে ইংরেজ শাসকদের প্রতি সরাসরি ‘ভারত ছাড়’ আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটায়।

ভারতীয়দের অধিকার এবং স্বাধীনতা আদায়ের দাবিতে প্রতিবাদ করে গান্ধীজি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কারণে বেশ কয়েকবার দক্ষিণ আফ্রিকা এবং নিজ দেশ ভারতেও কারাবরণ করেন।

চম্পারন:

ভারতে ফিরেই তিনি প্রথম এই সত্যাগ্রহ প্রয়োগ করেন, বিহারের চম্পারন।

ভারতীয় কৃষকদের জীবনযাত্রার মান কেমন এবং তারা কিভাবে চাষ করে চম্পারনেই তা প্রথমবারের মতন চাক্ষুষ করেছিলেন গান্ধীজি।

তখন তিন কাঠিয়া নামক একটি নিয়ম প্রচলিত ছিল, যা শতাধিক বছরেরও বেশি সময় ধরে চলে আসছিল।

জমির মালিককে তার জমি এক তৃতীয়াংশ নীলকরদের হাতে ছেড়ে দিতে হত নীল চাষের জন্য। এভাবেই চলতো কৃষকদের শোষণ।

ব্রিটিশরা সেসময় মারাত্মক দুর্ভিক্ষের মাঝে একটি শোষণমূলক কর চালু করে। এবং তা বাড়ানোর চেষ্টা করে। এতে করে তখন পরিস্থিতি প্রচন্ড অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে।

ঠিক তখনি স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকদের জড়ো করে গ্রামবাসীদের জন্য তিনি আশ্রম তৈরি করেন। আর কিছুদিন পরেই প্রতিষ্ঠা করেন হাসপাতাল ও স্কুল।

পরবর্তীতে তিনি জমিদারদের বিরুদ্ধে সুসংগঠিত বিক্ষোভ এবং আন্দোলনে নেতৃত্ব দান করে।

তাঁর আন্দোলনে ভীত হয়ে ব্রিটিশ রাজস্যের হার বৃদ্ধি বর্জন এবং দুর্ভিক্ষ শেষ হবার আগ পর্যন্ত তা স্থগিত করে দেয়।

এ সাফল্যে সেখানকার জনগণ খুশি হয়ে গান্ধীজি কে বাপু (বাবা) এবং মহাত্মা উপাধি দান করে। যার অর্থ মহান আত্মা।

আর তাই গান্ধীজি সমগ্র বিশ্বজুড়ে মহাত্মা গান্ধী নামে খ্যাত।

খেদা আমিদাবাদ:

চম্পারনে সফল সত্যাগ্রহ পরিচালনার পর তিনি খেদা ও আমিদাবাদে সফলভাবে সত্যাগ্রহ আন্দোলন পরিচালনা করেন।

অসহযোগ আন্দোলন:

অন্যায়ের বিরুদ্ধে গান্ধীজির অস্ত্র সবসময় ছিল অসহযোগ এবং শান্তিপূর্ণ প্রতিরোধ।

পাঞ্জাবের জালিয়ানওয়ালাবাগে সাধারণ মানুষের উপর ব্রিটিশ সরকারে করা হত্যাকান্ডের ফলে জনসাধারণ তাদের প্রতি ব্যাপক হারে ক্ষুব্ধ হয়ে যায় এবং সহিংসতার মাত্রাও বৃদ্ধি পায়।

মহাত্মা গান্ধী ব্রিটিশ সরকারের এহেন কৃতকর্ম এবং এরই প্রত্যুত্তরে ভারতীয়দের প্রতিশোধপরায়ণ আচরণ উভয়েরই প্রবল নিন্দা করেন।

একটি লিখিত বিবৃতির মাধ্যমে গান্ধীজি ক্ষতিগ্রস্ত ব্রিটিশ নাগরিকদের সমবেদনা জ্ঞাপন করেন এবং সৃষ্ট বিশৃঙ্খলা নিয়ে বেশ সমালোচনা করেন।

তার এই পদক্ষেপ প্রাথমিক পর্যায়ে দলের ভিতরে অসন্তোষের জন্ম দেয়। তবে গান্ধীজির একটি আবেগীয় বক্তৃতার পর তা সকলের কাছে গৃহীত হয়।

আরো পড়ুন: লিওনার্দো দা ভিঞ্চি – ইতিহাসে অদ্ভুত এক মানব সৌদি রাজপরিবার ইবনে সিনা – মধ্যযুগের জ্ঞান সাধনার শ্রেষ্ঠ নক্ষত্র

বক্তৃতায় তিনি তাঁর মূলনীতিগুলোর বিশদ বর্ণনা দিয়ে বলেন যেকোনরকম বিশৃঙ্খলাই অমঙ্গলজনক এবং কিছুতেই সমর্থনযোগ্য নয়।

এইসব হত্যাকাণ্ড এবং গণবিক্ষোভের পরবর্তীতে গান্ধীজি পূর্ণাঙ্গ স্বায়ত্তশাসন ও সকল সরকারি প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ লাভের দিকে মনোনিবেশ করেন।

যা শেষ পর্যন্ত স্বরাজ বা সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত, আদর্শগত, রাজনৈতিক স্বাধীনতার আন্দোলনে রূপান্তরিত হয়।

১৯৮২ সালের ডিসেম্বরে গান্ধীজি পান জাতীয় কংগ্রেসের দায়িত্ব। দায়িত্ব পাবার পর সফল ভাবে পরিচালনা করেন অসহযোগ, আইন অমান্য এবং ভারত ছাড় এর মতো তিনটি গুরুত্বপূর্ণ সর্বভারতীয় জাতীয় আন্দোলন।

অবশেষে ভারত স্বাধীন হয়।

গান্ধীজি হত্যাকন্ড:

ভারত স্বাধীনতার পর প্রতিদিন সকাল ও সন্ধ্যায় প্রার্থনাসভা করতেন মহাত্মা গান্ধী । সেখানে সব ধর্মের কথা বলা হত। যাতে অংশগ্রহণ করতেন কয়েকশো মানুষ।

প্রতিদিনের মত ১৯৪৮ সালের ৩০ জানুয়ারী, সেদিনও সন্ধ্যায় প্রার্থনা সভার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন মহাত্মা গান্ধী ।

ঠিক সেই মুহুর্তেই নাথুরা গডসে খুব কাছ থেকে তাঁকে তিনটি গুলি ছুঁড়ে তাঁর বুক লক্ষ করে।

গডসের করা সেদিনের গুলিতেই নিহত হন মহাত্মা গান্ধী ।

পরবর্তীতে আইনের আওতায় এনে তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। এবং ১৯৪৯ সালের ১৪ নাভেম্বর তার ফাঁসি কার্যকর হয়।

গান্ধীজির ইচ্ছানুযায়ী তাঁর দেহভস্ম বিশ্বের বেশ কয়েকটি প্রধান নদী যেমন- নীলনদ, ভোলগা, টেমস ইত্যাদিতে ডুবানো হয়।

এর সামান্য অংশ সেলফ রিয়ালাইজেশন ফেলোশিপ লেক স্রাইনের মহাত্মা গান্ধী বিশ্ব শান্তি সৌধে একটি হাজার বছরের পুরনো চৈনিক পাথরের পাত্রে সংরক্ষণ করে রাখা হয়।

সম্মাণনা:

গান্ধীজি ভারত তথা এবং সারা পৃথিবী জুড়ে মহাত্মা অর্থ্যাৎ মহান আত্মা এবং বাপু (বাবা) নামে পরিচিত।

ভারত সরকার তাঁর  সম্মানার্থে তাকে ভারতের জাতির জনক হিসেবে ‍ভূষিত করেছে ।

২রা অক্টোবর তার জন্মদিন উপলেক্ষে ভারতে গান্ধী জয়ন্তী হিসেবে যথাযোগ্য মর্যাদা ও সম্মানের সহিত পালন করা হয়। এই দিন ভারতীয়দের জাতীয় ছুটির দিন।

২০০৭ সালের ১৫ জুন জাতিসংঘের সাধারণ সভা কর্তৃক  ২রা অক্টোবরকে ‘আন্তর্জাতিক অহিংস দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। জাতিসংঘের সকল সদস্যরা তাদের নিজ নিজ দেশেও এ দিবস পালনে সম্মতি প্রদান করেছে।

১৯১৫ সালের ৯ই জানুয়ারী গান্ধীজি ভারতে ফিরে আসেন, একারণে এই দিনে মহাত্মা গান্ধীকে সম্মান করতে ‘প্রবাসী ভারতীয় দিবস’ হিসাবে পালন করা হয়।

মহাত্মা গান্ধীর মৃ্ত্যুর এত বছর পেরিয়ে গেল এখনো পুরো বিশ্ববাসী তাঁকে প্রাণভরে সম্মান করেন এই মহান নেতাকে।

সত্যাগ্রহ আন্দোলনই মহাত্মা গান্ধীকে সারা বিশ্বে এক অনন্য ব্যাক্তিত্বে পরিণত করেছে।

curious

শেয়ার করুন -

উত্তর দিন

আপনার মন্তব্য লিখুন
আপনার নাম লিখুন