সোনালী ভূমি হিসেবে পরিচিত অপরূপ সৌন্দর্য্যের দেশ মিয়ানমার

সোনালী ভূমি হিসেবে পরিচিত অপরূপ সৌন্দর্য্যের দেশ মিয়ানমার
সোনালী ভূমি হিসেবে পরিচিত অপরূপ সৌন্দর্য্যের দেশ মিয়ানমার

নাম মিয়ানমার। বাংলাদেশের পাশের দেশ। তবে পাশের দেশ হলেও মিয়ানমার দেশটির অনেক কিছু সম্পর্কেই আমরা এখনো অজ্ঞাত।

বাংলাদেশিদের কাছে দেশটি যেন এক অপার রহস্য।

আসুন আমরা দেশটিকে জানার চেষ্টা করি।

জীবন ও প্রকৃতির বৈচিত্র আছে দেশটিতে। একদিকে তুষার ঢাকা হিমালয়। অন্যদিকে আবার সাগরতলের বিপুল আয়োজন।

আছে গহীন বন, প্রাচীন স্থাপনা। আর আছে শান্ত প্রকৃতি।

নামকরণ:

মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় নাম হচ্ছে প্রজাতান্ত্রিক ঐক্যতন্ত্রী মিয়ানমার। মিয়ানমার দেশটি মায়ানমার নামেও অনেকের কাছেই সুপরিচিত।

তৎকালীন বার্মার গণতান্ত্রিক সরকারের উৎখাতের পরে ১৯৮৯ সালে মিয়ানমারের সামরিক সরকার বার্মার নতুন  নামকরণ করে “মিয়ানমার” নামে।

এবং তখন সেখানকার প্রধান শহর ও তৎকালীন রাজধানী রেঙ্গুনের নতুন নামকরণ হয় ইয়াঙ্গুন নাম।

সংস্কৃত ভাষায় মিয়ানমার “ব্রহ্মদেশ” নামে পরিচিত।

বর্মী ভাষায় এদেশ “মিয়ানমা” নামে পরিচিত।

এবং চৈনিক ভাষায় (মান্দারিন) একে  “মিআন” অথবা “মিআনদিআন” নামে ডাকা হয়।

আসামে মিয়ানমারকে বলা হয় “মান দেশ” বলে।

নামকরণের ইতিহাস:

মিয়ানমারের প্রাচীন নাম ব্রহ্মদেশ। এর প্রাক্তন নাম বর্মা বা বার্মা।

বার্মা নামটি ব্রহ্মদেশ নামটির সঙ্গে সম্পৃক্ত। তাই এদেশের এমন নাম।

আয়তন:

পাহাড় আর সাগরে ঘেরা মিয়ানমারের মোট আয়তন ৬৭৮,৫০০ বর্গকিলোমিটার বা ২৬১,৯৭০ বর্গমাইল।

ভৌগলিক অবস্থান:

মিয়ানমারের পশ্চিমে রয়েছে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিভাগ,  এবং ভারতের মিজোরাম।

দেশটির উত্তর-পশ্চিম সীমান্তে ভরতের আসাম, নাগাল্যান্ড এবং মণিপুর অবস্থিত।

আর উত্তর-পূর্বাংশের ২,১৮৫ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে রয়েছে তিব্বত এবং চীনের ইউনান প্রদেশ।

দক্ষিণ-পূর্ব অংশে আছে লাওস এবং থাইল্যান্ড দেশ।

এবং দক্ষিণ-পশ্চিম এবং দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর ও আন্দামান সাগরের সঙ্গে মিয়ানমারের ১,৯৩০ কিলোমিটার উপকূল রেখা বিদ্যমান।

ভৌগলিক ভাবে উচু এবং নিচু দুটি এলাকায় বিভক্ত মিয়ানমার।

উপকূলীয় এলাকাকে বলা হয় নিচু এলাকা।

ইতিহাস:

আজকের মিয়ানমারের রাজ্যগুলো পূর্বে স্বাধীন রাজ্যে বিভক্ত ছিল। এদেরই একটি রাজ্য পাগান।

  • পাগান:

১০৪৪ সালে রাজা অন্দ্রৎ ঐ রাজ্যের সিংহাসনে বসেন। তিনি ছড়িয়ে থাকা কিছু রাজ্যকে এক করে রাষ্ট্র গঠন করেন। সেসব রাষ্ট্রের রাজধানী হয় পাগান।

তিনি ছিলেন বৌদ্ধ রাজা। পাগানে তাই গড়ে তুলেন প্রচুর বৌদ্ধ মন্দির।

এবং শিল্প-সংস্কৃতিতেও সমৃদ্ধ করে তুলেন পাগানকে।

ত্রয়োদশ শতকের শেষের দিকে পাগান রাজত্ব ভেঙে যেতে থাকে।  সর্ন ও মঙ্গলীয়রা এসে পাগান রাজ্যকে টুকরো টুকরো করে বিচ্ছিন্ন করে।

এগুলোর মধ্যে উল্ল্যেখযোগ্য- আভা, আরাকান, হানথাবতী ইত্যাদি।

চতুর্দশ শতকের মাঝামাঝি দেশটির মূল অঞ্চল হয় চারটি। উচু বার্মা, নিচু বার্মা, শান এবং আরাকান।

কিন্তু রাজ্যগুলোর মধ্যে রোজকার কলহ লেগেই থাকত।

আরাকানের সঙ্গে বাংলার রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক যোগাযোগ ছিল।

তাদের রাজ দরবারে অনেক বাঙালী মুসলমান কাজ করতেন। মহাকবি আলাওল রোসাং রাজ দরবারের রাজকবি ছিলেন।

  • আরাকান সম্পর্কে কিছু তথ্য:

মধ্যযুগীয় বাংলা সাহিত্যে রয়েছে আরাকান রাজ্যের নাম্। মধ্যযুগে একে ডাকা হতো ব্রোসাং নামে।

আরাকানের ম্রাউক-উ রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা নরমিখলা। ১৪০৬ সালে তিনি বার্মা রাজার আক্রমণের মুখে ক্ষমতাচ্যুত হন।

তখন তিনি বাংলার রাজধানী গৌড়ে পালিয়ে আসেন।

গৌড়ের শাসক জালালুদ্দিন শাহ নরমিখলার সঙ্গে ৩০ হাজার সৈন্য নিয়ে আসেন। এবং তাঁকে বিতাড়নকারী বর্মি রাজাকে উৎখাতে সাহায্য করেন।

এরপর নরমিখলা ইসলাম কবুল করেন ও মোহাম্মদ সোলায়মান শাহ নাম নিয়ে আরাকানের সিংহাসনে বসেন।

ম্রাউক-উ রাজবংশ ১০০ বছর ধরে আরাকান রাজ্য শাসন করেছে।

১৬৩৫ সালে রাজা থালুন বিশৃঙ্খল কয়েকটি অঞ্চল দখল করেন।

বার্মায় নিয়ে আসেন রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্থিরতা। তবে যুদ্ধ থেমে থাকে নি।

মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেব যখন ক্ষমতায় বসেন তখন তার ভাই সুজা আরাকানে পালিয়ে যান।

তখন ১৬৬০ সাল। তখনো আরাকান রাজ্য স্বাধীন ছিল।

রোসাং রাজা চন্দ্র সুধর্মা বিশ্বাসঘাতকতা করে শাহ্ সুজা সহ তার পরিবারকে নির্মমভাবে হত্যা করেন।

আরাকানে সৃষ্টি হয় অরাজকতা। আর এই অরাজকতার সুযোগেই বার্মার আড়ালে ঢুকে যায় আরাকানের স্বাধীনতা।

১৭৮২ সালে আরাকানের সিংহাসনে ছিলেন রাজা থামাদা। তার বিরুদ্ধে সামন্তরা একত্র হয়।

সামন্তরা বার্মার রাজা বোধ পায়াকে আরাকান আক্রমণের আমন্ত্রণ জানায়।

১৭৮৪ সালের শেষের দিকে বোধ পায়া ৩০ হাজার সৈন্য নিয়ে আরাকান আক্রমণ করেন।

সামন্তদের অনুপ্রেরণায় তখন থেকে বোধ পায়াকে স্বাদরে গ্রহণ করেন।

আরাকানের রাজা স্বাধীনতা রক্ষা করতে যুদ্ধ করেন কিন্তু পরাজিত হন।

আরাকানে নেমে আসে পাশবিকতা।

তখন মুদ্রা ব্যবস্থা, ব্যবসায় আরাকান অনেকটাই এগিয়ে ছিল।

বার্মার সেনারা এসব পেয়ে লুন্ঠন শুরু করে। মানুষকে বন্দী করে মুক্তিপণ আদায় করে। এমন আরও নানা রকম নির্যাতন করতে থাকে তারা।

১৮২৪ সালের সময় ইস্ট ইন্ডিয়া কম্পানি বার্মা দখল করে নেয়। এরপর থেকে দীর্ঘ ১০০ বছর পর্যন্ত আরাকানিরা অনেকটা স্বস্তিতে বাস করতে থাকে।

১৮৮৬ সালে বার্মাকে ব্রিটিশ শাষিত ভারতীয় একটি অংশ হিসেবে জুড়ে নেওয়া হয়।

এরপর ১৯৪২ সালে আরাকান জাপানীদের দখলে চলে যায়।

১৯৪৫ সালে অবশেষে আবার ব্রিটিশরা আরাকান দখল করে।

তারপর থেকেই শরু হতে থাকে ব্রিটিশদের অত্যাচার।

ব্রিটিশরা তাদের পুরোনো নীতি “ভাগ কর এবং শাষণ কর” বার্মাতেও কাজে লাগায়।

সংখ্যাগুরুদের বেশি বেশি সুবিধা দিতে থাকে। আর বিভিন্ন সম্প্রদায়গুলোর মধ্যে উস্কে দিতে থাকে সাম্প্রদায়িকতা।

তারপর নানা যুদ্ধ বিদ্রোহের মাধ্যমে ১৯৪৮ সালে স্বাধীনতা লাভ করে বার্মা।

জনসংখ্যা:

জনসংখ্যার দিক থেকে মিয়ানমারের স্থান বিশ্বে ২৪তম।

এই দেশটির জনসংখ্যা প্রায় ৬ কোটি।

যেখানে মোট জনসংখ্যার প্রায় ৮৭% বৌদ্ধ, ৬% খ্রীষ্টান এবং ৪.৩% মুসলিম।

বাকী জনসংখ্যার মধ্যে রয়েছে হিন্দু, নাস্তিক এবং উপজাতীয় কিছু কিছু ধর্মের লোক।

মিয়ানমারের জনগণদের বার্মিজ বলা হয়। বার্মায় থাকে বলে তাদের বার্মিজ বলে ডাকা হয়।

জলবায়ু:

পৃথিবীর মানচিত্র অনুযায়ী মায়ানমারের অধিকাংশই কর্কটক্রান্তি এবং বিষুবরেখার মাঝামাঝি অবস্থিত।

দেশটির ব-দ্বীপ অঞ্চলগুলোয় বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ প্রায় ২,৫০০ মিলিমিটার অথবা ৯৮ ইঞ্চি।

তবে মধ্য মিয়ানমার এর শুষ্ক এলাকায় তা ১,০০০ মিলিমিটারেরও কম।

উত্তরের অপেক্ষাকৃত শীতল অঞ্চলের গড় তাপমাত্রা ২১° সেলসিয়াস।

এবং উপকূলীয় ও ব-দ্বীপ অঞ্চলের গড় তাপমাত্রা হচ্ছে ৩২° সেলসিয়াস।

রাজধানী:

পূর্বে মিয়ানমারের প্রাচীন রাজধানী ইয়াঙ্গুন ছিল।

তবে বর্তমানে মিয়ানমারের রাজধানীর নাম নেপিডো।

প্রধান বা প্রশাসনিক শহর:

মিয়ানমার দেশটি ৭ টি রাজ্য নিয়ে গঠিত। রাজ্যগুলির নাম- চিন, কাচিন, কারেন, মন, রাখাইন (আরাকান) এবং শান।

মূল বার্মা আবার ৭ টি বিভাগে বিভক্ত। যেমন- ইরাবতী, মাগওয়ে, মান্দালয়, ব্যাগো, রেংগুন, সাগাইং ও তেনাসসেরিম।

শান্ত-সুন্দর প্রকৃতির মিয়ানমারের সম্পূর্ণ দেশ জুড়ে রয়েছে হাজারো প্যাগোডা
শান্ত-সুন্দর প্রকৃতির মিয়ানমারের সম্পূর্ণ দেশ জুড়ে রয়েছে হাজারো প্যাগোডা

ধর্ম:

মিয়ানমারে সবচেয়ে বেশি বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের বাস।

তবে এছাড়াও আরও বিভিন্ন ধর্ম রয়েছে দেশটিতে।

মিয়ানমারে মুসলমান ধর্মালম্বীদের বসবাস শুরু হয় অষ্টম শতাব্দীতে। আরবরাই দেশটিতে মুসিলম ধর্ম নিয়ে আসেন।

এদের অনেকের বসতী ছিল আরাকানের শহরতলীগুলোতে। পরে এদের পরিচয় হয় রোহিঙ্গা নামে।

ভাষা:

মিয়ানমারের সরকারী ভাষা হচ্ছে বর্মী ভাষা। এ ভাষায় দেশটির প্রায় ৮০% মানুষ কথা বলেন।

এছাড়াও মিয়ানমারে এলাকাভেদে আরও প্রায় ১০০টি ভাষা প্রচলিত রয়েছে।

এগুলোর মধ্যে রয়েছে কারেন ভাষা। এবং আরও বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য উপভাষা রয়েছে যেগুলো প্রায় ৩০ লক্ষ মানুষের ভাষা।

রয়েছে শান ভাষার বিভিন্ন উপভাষা যেগুলির বক্তার সংখ্যাও  প্রায় ৩০ লক্ষ।

এছাড়াও আরও রয়েছে বিভিন্ন সংখ্যালঘু ভাষা যেগুলির ভেতর আরাকনি ভাষা, চিন ভাষার নানান উপাভাষা, জিংপো ভাষা, রোহিঙ্গা ভাষা, লূ ভাষা এবং পারাউক ভাষা বিশেষ উল্লেখযোগ্য।

রাজনৈতিক অবস্থা:

মিয়ানমার এর বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর নাম অং সান সু চি। তিনি ২০১৬ সালে প্রথম রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা হন।

মিয়ানমার দেশটির প্রকৃতি শান্ত হলেও রাজনৈতিক অবস্থা একেবারে অশান্ত। সেনা শাষন আর উগ্র সাম্প্রদায়িকতার বিষ ছড়ানো সম্পূর্ণ দেশি জুড়ে।

মিয়ানমারের শাষকদের জাতিবাদী নিপীড়নমূলক কর্মকান্ড দেশটির জন্য তৈরি করেছে রোহিঙ্গা সংকট।

এই সংকটের বোঝা এখন বাংলাদেশের পিঠে। দেশটির চতুর কূটনৈতিক নীতি যেমন বাংলাদেশকে সংকটে ফেলেছে তেমনি নিজেরাও হয়ে চলেছে কোণঠাসা।

কয়েকটি দেশ ছাড়া আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে মিয়ানমার এখন নির্যাতনের আরেক নাম।

অথচ সুন্দর এই দেশটি হতে পারতো বাংলাদেশের বন্ধু। হতে পারত মানবিক।

অর্থনৈতিক অবস্থা:

মিয়ানমার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যতম দরিদ্য দেশ।

মিয়ানমারের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা দেশটির অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে।

কয়েক দশক ধরে চলা গৃহযুদ্ধ এবং অশান্তি মিয়ানমারের বর্তমান স্তরের দারিদ্র্যতা এবং অর্থনৈতিক অগ্রগতিকে তরাণ্বিত করেছে।

এছাড়াও মিয়ানমারে পর্যাপ্ত অবকাঠামোগত অভাব রয়েছে।

তবে বর্তমানে দেশটি তাদের সমস্ত বড় বড় শিল্প কর্পোরেশনগুলিতে তেল উৎপাদন এবং ভোগ্যপণ্য থেকে শুরু করে পরিবহন ও পর্যটন পর্যন্ত, তাতমাদও (মিয়ানমারের মিলিটারি) সর্বাধিক অংশীদারিত্ব রয়েছে।

দর্শনীয় স্থান:

মিয়ানমার খুবই সুন্দর-শান্ত একটি দেশ। এখানে দেখার মত রয়েছে প্রচুর দর্শনীয় স্থান।

কারখানা ও শহরের বিস্তার কম হওয়ায় দেশটির অনেক অঞ্চল রয়ে গেছে আগের মতই। আর তাই শহরেও রয়েছে গ্রামের আমেজ।

  • বেগান:

এটি মিয়ানমারের শুরুর দিকের রাজ্য বার্মার রাজধানী।

এটি বিশ্বে সোনালী শহর নামে প্রসিদ্ধ।

এ শহরকে হাজার প্যাগোডার শহরও বলা হয়। এখানে প্রায় ১৩ হাজারের বেশি বৌদ্ধমন্দির রয়েছে।

গোটা শহর পরিদর্শন করতে উড়ে যাওয়া যেতে পারে হট এয়ার বেলুনে।

  • ইন্দে লেক:

দেশটির একটি এলাকা পরিচিত স্বর্গের পথ নামে। যার নাম ইন্দে লেক।

শান রাজ্যে অবস্থিত এই লেকের বিশাল নীল পানিতে ছোট ছোট গ্রাম। গ্রামগুলো জেলেদের।

লেকের নীল জলে এরা বানিয়েছেন ভাসমান বাগান। বাগানে শষা টমেটো সহ বিভিন্ন ফুল-সবজির চাষ হয়।

নদী পথের যাত্রায় যা দেখতে  লাগে অপরূপ সুন্দর।

  • মান্দালয়:

মান্দালয় বর্তমানে মিয়ানমারের দ্বিতীয় বৃহত্তম সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের শহর।

এখানে দেখা পাওয়া যাবে প্রাচীন অনেক প্যাগোডার।

কুথডাও প্যাগোডায় রয়েছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বই। যেটি কাগজের নয় পাথরে তৈরি। ৭২৯ টি মার্বেল পাথর দিয়ে তৈরি করা হয়েছে বইটি। আর স্বর্ণের হরফে লেখা রয়েছে বৌদ্ধ ধর্মে ত্রিপিটকের বিভিন্ন বাণী।

১৮৮০ সালে ব্রিটিশ সেনারা ওখানে লুটপাট করে। লুটে নেয় স্বর্ণের হরফগুলো।

২০১৩ সালে এই পাথুরে বইটি ইউনেস্কোর তালিকায় স্থান পায়।

  • বেগো (পেগু):

১৪ থেকে ১৬ শতাব্দীতে মন্ রাজাদের রাজধানী ছিল এই শহরটি।

এ শহরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে আকর্ষণীয় সব বৌদ্ধ বিহার, সেসময়কার রাজাদের দর্শনীয় বাড়ি,  উন্মুক্ত মার্কেট।

কায়াকপুন প্যাগোডায় রয়েছে ৪টি সুদৃশ্য বিশালাকার বুদ্ধের মুর্তি। যা অপার সৌন্দর্য্যে ভরা।

এচাড়াও এ অঞ্চলের প্রাকৃতিক পরিবেশ পর্যটকদের বিমোহিত না করে পারে না।

  • ম্রাউক উ:

ম্রাউক উ মিয়ানমারের একটি এতিহ্যবাহী প্রত্নতাত্ত্বিক শহর।

প্রাচীনকালে এই শহরটিকে ঘেরা দেয়ালের দুর্গ বলে ভাবা হতো।

আসলে এখানে অবুস্থি প্রাচীন বৌদ্ধ মন্দিরগুলোকে প্রাকৃতিক দুর্যোগের হাত থেকে রক্ষা করতে এই দেয়ালগুলো নির্মান করা হয়েছিল।

আরো পড়ুন:
মালয়েশিয়া দেশ – ভ্রমন বিলাসী
সিঙ্গাপুর দেশ –  ভ্রমন বিলাসী
থাইল্যান্ড দেশ বা তাইল্যান্ড – ভ্রমন বিলাসী
  • থানলিয়ন (সিরাইম):

ইয়াঙ্গুন থেকে বেগো নদী পার হয়ে মাত্র ৩০ মিনিটের রাস্তা পেরোলেই এ শহরে পৌঁছানো যায়।

চৌদ্দদশ শতাব্দীতে এটি মিয়ানমারের অন্যতম একটি বন্দর ছিল।

এখানে সপ্তদশ শতকে নির্মাণ করা হয়েছিল কাইকাহুক প্যাগোডা, থানলিন ‍ও ইয়েল প্যাগোডা।

শহরের বেগো নদীর স্বচ্ছ জলরাশি এবং নদীর পানিতে নৌ ভ্রমণ ভ্রমনে দেবে অনাবিল আনন্দ।

পাহাড়ী এলাকা মান্দালয়। এখানে সন্ধ্যা নামে সোনালী রঙ ছড়িয়ে। তবে কেবল মান্দালয় নয় গোটা মিয়ানমারকেই ডাকা হয় সোনালী ভূমি।

লাল পাহাড়, ইনলে লেকের পাশে, উইনারি সহ বেশকিছু এলাকায় সূর্য উঠে এবং অস্ত যায় সোনালী ঝলক দিয়ে।

কিন্তু মিয়ানমারের উগ্র রাজনৈতিক অবস্থা এই সুন্দর ভূমিকে আড়াল করে রেখেছে পর্যটকদের কাছ থেকে।

অথচ দেশটি স্বাভাবিক থাকলে পৃথিবীর কাছে খুলে দিতে পারত নিজেদের মোহনীয় প্রকৃতি।

আর পর্যটকদের কাছে মিয়ানমার হয়ে উঠত স্বর্গভূমি।

 দেশটিতে পর্যটকরা যান। তবে সব স্থান তাদের জন্য খোলা থাকে না।

বিদেশীরা রাঙ্গুন, মান্দালয়, ইনলে লেকের মত এলাকাগুলো পরিদর্শন করতে পারেন।

তবে মারুকীয়ু, কালাও, পুতাও এবং কেংত্যু সহ কিছু কিছু এলাকায় বিদেশীদের চলাচল সীমিত। কারণ এসব এলাকায় রাজনৈতিক অস্থিরতা বিরাজমান।

আর যেখানে এসব নেই সেখানের সব জায়গায় ভয় রয়েছে। ওৎ পেতে থাকে উগ্র বৌদ্ধ-ভিক্ষু। তাদের ভয়ে তটস্থ থাকতে হয় দর্শনার্থীদের।

তবে এসব ঝুকি নিয়েও যারা মিয়ানমারে যান তারা ফিরে এসে মিয়ানমারকে স্বর্গভূমি বলতে বাধ্য হন।

curious

শেয়ার করুন -

উত্তর দিন

আপনার মন্তব্য লিখুন
আপনার নাম লিখুন