মিষ্টির কথা মাথায় আসতেই সবার আগে আমাদের মনে যে খাদ্যটি ভেসে উঠে তা হলো চিনি । যেকোন খাবারে মিষ্টতা আনতে চিনির বিকল্প খুব কমই রয়েছে।
হয়তো এরকম মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না যে মিষ্টি পছন্দ করে না। কারণ অল্প হলেও আমরা সবাই মিষ্টি খেতে ভালবাসি। আর এই মিষ্টির চাহিদা আজ থেকে নয়। অনেক কাল আগে থেকেই মানুষ অনুভব করে আসছে।
মিষ্টির স্বাদ মুখে লাগতেই একটা অন্যরকম অনুভূতির সৃষ্টি হয়।
মিষ্টি আমাদের শরীরের খুশি থাকার হরমোন যার নাম ডোপামিন তাকে সক্রিয় করে তুলে। এছাড়াও মিষ্টি আমাদের মস্তিষ্ককে সক্রিয় করতে সহায়তা করে।
কিন্তু যখনি মিষ্টির কথা আসে তখনই সর্বপ্রথম নাম আসে চিনির। কারণ মিষ্টিজাতীয় অধিকাংশ খাবারই তৈরি হয় চিনি থেকে।
আর এই চিনি তৈরি হয় কিভাবে? কোন জিনিস থেকে চিনি উৎপাদিত হয়। এবং চিনি উৎপাদনের জন্য কোন কোন প্রসেসিং এর মধ্য দিয়ে যেতে হয়।
আজ আমরা জানতে চলেছি এই চিনি উৎপাদন পদ্ধতি সম্পর্কে-
চিনি মূলত উৎপাদিত হয় আখ বা ইক্ষু থেকে। এছাড়াও বীট এবং ম্যাপলও চিনি প্রস্তুতের একটি বনজ উৎস।
কাঁচামাল আনায়ন:
আগেই আমরা জেনেছি যে চিনি তৈরির প্রধান কাঁচামাল আখ।
আখের জুস বা রস থেকে চিনি উৎপাদন করা হয়।
তাই সর্বপ্রথম সরাসরি জমি থেকে আখ কেটে মিলে আনা হয় চিনি প্রস্তুতের জন্য।
ছোট টুকরাকরণ:
মিল-কারখানায় আখগুলোকে চেপে-পিষে এথেকে আখের রস বা জুস বের করা হয়। আর তা থেকেই প্রস্তুত হয় চিনি।
কাজেই জমি থেকে আখ এনে আখগুলোকে প্রথমে কেটে ছোট ছোট টুকরা করা হয়। এটি করা হয় এজন্য যাতে আখগুলো মেশিনে খুব সহজেই খুব ভাল ভাবে পিষা যায়, এবং সবচেয়ে ভালভাবে আখের রস সংগ্রহ করা যায়।
এ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সমস্ত আখগুলোকে চপার মেশিনে ঢালা হয়।
পরিষ্কার বা ধৌতকরণ:
চিনিতে যাতে কোন ময়লা লেগে না থাকে একারণে আখগুলো এরপর পরিষ্কার পানিতে ভালভাবে ধোয়া হয়।
আখ থেকে রস বের করা:
আখগুলো যখন ভালভাবে পরিষ্কার হয়ে যায় তখন এগুলোকে ক্র্যাশিং মেশিনে পাঠানো হয়।
এই প্রসেসিং এর সময় মাড়াই এর মাধ্যমে আখ থেকে রসগুলো খুব ভালভাবে বের করা হয়।
আখের রস সংগ্রহের পর ছিলকা বা ছোবড়া আলাদা করা হয়।
সুগার ইন্ডাস্ট্রিতে আলাদা হয়ে যাওয়া এই ছোবড়া গুলিকে ব্যাগাস বলা হয়।
এগুলোকে পরে জ্বালানী হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এই জ্বালানী এতটাই শক্তিশালী যে চিনি তৈরিতে পুরো কারখানার জ্বালানী চাহিদা এগুলোর মাধ্যমে পূরণ করা যায়।
মিল হাউস:
যে মেশিনে আখের রস এবং ছোবড়া আলাদা করা হয় তাকে মিল হাউস বলা হয়।
প্রসেস হাউস:
মিল হাউস থেকে সংগ্রহ করা আখের রসগুলি প্রসেস হাউসে পাঠিয়ে দেয়া হয়।
এখানেই চিনি তৈরির আসল প্রকৃয়া পরিচালনা করা হয়।
রস থেকে দানাদার চিনি প্রস্তুতের জন্য আখের রসগুলিকে সর্বপ্রথম ৭৫ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেট পর্যন্ত তাপমাত্রায় গরম করা হয়।
তার পর এতে মিল্ক অফ লাইম (Milk of Lime) মিশ্রণ করা হয়।
মিল্ক অফ লাইম মিশানোর একমাত্র কারণ হলো এটি ব্যবহারের ফলে আখে থাকা এসিড কমে যায়।
আখে হালকা এসিড থাকে। এই অম্ল মেশানোর পর এসিডের মাত্রা কমে যায়।
তারপর একে ১০৪ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেটে গরম করে অন্য আরেকটি মেশিনের পাত্রে লোড করা হয়।
যেখানে আখের রসের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের ফুডগ্রেড ক্যামিকাল, আরও নানান দ্রব্য মেশানো হয়।
যেন রসে অবস্থিত অনেক ধরনের Impurity বা ময়লা এবং ক্যামিকাল নিচে বসে যায়। এবং সহজেই এগুলো পৃথক করা যায়।
এরফলেই আমরা পরিষ্কার রস উপরের অংশে দেখতে পাই।
এরপর রসগুলো কে evaporator এর মাধ্যমে উচ্চ তাপমাত্রায় ফুটানো হয়। যাতে রসে অবস্থিত পানি বাষ্পীভবনের মাধ্যমে আলাদা হয়ে যায়। এবং এগুলি সম্পূর্ণ শিরাপে পরিণত হয়ে যায়।
এবার চিনির শিরাপগুলো আরও বেশি পরিমাণ শক্ত করার জন্য অন্য মেশিনে পাঠানো হয়।
যেখানে এগুলোকে ক্রিস্টালের আকার দেয়া হবে।
আর এজন্য শিরাপে এ্যালকোহল মিশানো হয়। এর মিল্কি সলিউশন চিনি কে শিরাপ থেকে বর্তমান দানাদার অবস্থায় রূপ দেয়।
এবং তারপর চিনি গুলো বিভিন্নরকম প্যাকেটের মাধ্যমে প্যকেজিং করা হয় বাজারজাতকরণের জন্য।