মৃত্যুর পরেও জীবন্ত থাকা! হয়তো ভাবছেন এও কি সম্ভব? কোন জীব যদি মারাই যায় তাহলে সেটি আবার জীবিত কিভাবে থাকে।
তবে আপনাকে জানিয়ে রাখি আমাদের পৃথিবীতে এমন কিছু প্রাণী রয়েছে, যারা মৃত্যুর পরেও জীবন্ত তবে কিছুটা সময় এমনকি অনেক বছর বেঁচেও থাকতে পারে,
আজ আমরা কথা বলবো আমাদের বিশ্বের এমন কিছু প্রাণী সম্পর্কে যেসকল প্রাণীগুলো মৃত্যুর পরেও জীবন্ত থাকে।
প্লানারিয়ান্স –
প্লানারিয়ান্স হচ্ছে এমন এক ধরনের জলজ প্রাণী, বিজ্ঞানীদের ভাষায় যা প্রায় আজীবন জীবিত থাকতে পারে।
যার মূল কারন টি হচ্ছে এই প্রানীটির দেহের যে স্থানেই ক্ষত কিংবা বিচ্ছিন্ন হোক না কেন- এটি তার সেই স্থানকে পুণরায় আগের মত করে নিজ থেকে তৈরি করে নিতে সক্ষম।
এরজন্য অবশ্য বিজ্ঞানীরা ব্যাখ্যা দিয়েছেন প্লানারিয়ান্সের দেহে নিউব্রলাস্টস নামে এক বিশেষ ধরনের কোষ রয়েছে।
যেই কোষটি নিজ থেকেই এর দেহের সকল স্থানকে পুণরায় গঠন করতে সক্ষম।
এরজন্য যুক্তরাষ্ট্রের কয়েক জন প্রাণী বিজ্ঞানীগণ একটি পরীক্ষা করেন।
তারা প্লানারিয়ান্স কে ছোট ছোট টুকরো করে কেটে তার উপরে মাইক্রোস্কপ দিয়ে নজরদারি করতে থাকেন।
অদ্ভুত বিষয় হচ্ছে কয়েক দিনের মাথায় সেই টুকরো গুলো থেকে ভিন্ন ভিন্ন প্লানারিয়ায়ন্সের জন্ম হয়।
অর্থ্যাৎ প্রত্যেকটি টুকরোই আলাদা ভাবে ভিন্ন প্লানারিয়ান্স হয়ে বেড়ে উঠতে থাকে।
এই তথ্যটি জানার পরে হয়তো আপনার মনে একটি প্রশ্ন স্বাভাবিকভাবেই ঘুড়পাক খাচ্ছে ,
আর সেটি হল, আমাদের ধর্মীয় গ্রন্থ পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে
“প্রত্যেক প্রাণীকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করিতে হইবে”
তাহলে এই প্রাণীটি কিভাবে সারা জীবন বেঁচে থাকতে পারে,
বিজ্ঞানীরা অবশ্য এই এক্সপেরিমেন্টকেও শেষ করে দেখিয়েছেন।
তারা বলেন স্বাভাবিক ভাবে এই প্লানারিয়ান্স বেঁচে থাকতে পারলেও একে যদি এক বিশেষ বিকিরনের মধ্যে দিয়ে নিয়ে যাওয়া যায় তাহলে এটি তার দেহের পুণর্গঠনের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। যারফলে একসপ্তাহের মাথায় প্লানারিয়ান্স মারা যায়।
হাইড্রা –
প্লানারিয়ায়ন্স এবং হাইড্রাও মৃত্যুর পরেও জীবন্ত থাকে। এদের দেহের ভেতরে অন্যতম বৈশিষ্ট হচ্ছে এরা প্রত্যেকেই বহু বছর জীবিত থাকতে পারে,
তবে এক্ষেত্রে হাইড্রার ধরনটি একটু ভিন্ন।
১ থেকে ২০ মিলিমিটার আকৃতির হওয়া এ প্রাণীটিরও দীর্ঘ জীবন জীবিত থাকার অন্যতম কারন হচ্ছে হাইড্রা তাদের প্রয়োজনমত পুরো দেহের অবয়বকে পরিবর্তন করে ফেলতে পারে,
তবে তফাতটি হচ্ছে হাইড্রা সাপের মত শুধুমাত্র তাদের খোলসকে পরিবর্তন না করে গোটা বডিকেই পরিবর্তন করে ফেলে।
এতে করে তারা পুণরায় নতুন আরেকটি জীবন লাভ করে।
যেকারণে অনেকেই এই হাইড্রা কে ইম্মোর্টাল বা আজীবন বেঁচে থাকা প্রাণী হিসেবে ডাকেন,
যদিও একটি সময়ে এই হাইড্রাও পর্যাপ্ত পরিমাণে পুষ্টি না পেয়ে মারা যায়,
তবে হাইড্রার মরে যাবার বিষয়টি কিন্তু অনেকটাই দূর্লভ ঘটনা।
কোবরা –
আপনি হয়তো কিছুটা অবাক হচ্ছেন ?
কোবরা কিভাবে মৃত্যুর পরেও জীবন্ত থাকতে পারে,
মূল ঘটনাটি ঘটে বেশ কয়েক বছর পূর্বে চীনের একটি প্রদেশে।
একজন শেফ কোবরা রান্না করার জন্য প্রথমেই সেটির বডি থেকে তার মাথা আলাদা করে ফেলেন এবং এরপর সেটি রান্নার প্রস্তুতি নিতে থাকেন।
এমন অবস্থাতেই কোবরার সেই কাটা মাথা শেফের হাতে কামড় দিয়ে বসে।
পরে তাকে এম্বুলেন্সে করে হসপিটালে নেবার আগেই তার মৃত্যু ঘটে।
পরবর্তিতে চীনা গবেষকরা এক অবাক করা তথ্য প্রাকাশ করেন।
তারা বলেন – কোবরা বা বিভিন্ন প্রজাতির সাপকে মেরে ফেলা এমনকি তার দেহ থেকে মাথা আলাদা করবার পরেও ১ ঘন্টা কিংবা তার চাইতে বেশি সময় ধরে সেই সাপগুলোর মাথা সচল থাকে।
অর্থ্যাৎ কেটে ফেলার পরেও শুধু মাথা থাকা অবস্থাতেও সাপ অন্যকিছুকে কামড় দিতে সক্ষম।
ওয়াটার বিয়ার্স–
অনেকটা ভাল্লুক আকৃতির এই প্রাণীটি মাত্র ১ মিলিমিটার কিংবা তার থেকেও ছোট। ওটারবিয়ার্স হচ্ছে বিশ্বের অন্যতম অদ্ভুত এবং দীর্ঘজীবি একটি প্রাণী। পানিতে বাস করা এই ওয়াটারবিয়ার্স খুবই ধীর গতির এবং আত্ননির্ভশীল একটি প্রাণী ।
বিভিন্ন প্রতিকূলতার মধ্যে এটি বেচে থাকতেও বেশ পারদর্শী। এই প্রাণী -২৭৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা থেকে শুরু করে +১৫১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাতেও বেঁচে থাকতে সক্ষম।
অবাক করার বিষয় হচ্ছে পানিতে বাস করা এই ওয়াটা্রবিয়ার্স পানি কিংবা খাবার ব্যাতীত কমপক্ষে প্রায় ৩০ বছর বেঁচে থাকতে পারে ।
২০০৭ সালে বিজ্ঞানীরা একটি পরীক্ষার জন্য এই ওয়াটারবিয়ার্সকে মহাশূণ্যে পাঠিয়েছিল।
কিন্তু আশ্চর্জের বিষয় হচ্ছে সেখান থেকেও ওয়াটারবিয়ার্স জীবিত ফিরে এসেছিল। ধারনা করা হয় প্রজননের উপর ভিত্তি করে এটি শত বছরের চাইতেও বেশি দিন বেঁচে থাকতে পারে ।
ইম্মোর্টাল জেলি ফিশ –
আধুনিক বিজ্ঞানের আবির্ভাবের শুরু থেকেই সাগরে বাস করা এই প্রাণীটিকে নিয়ে বিজ্ঞানীরা গবেষণা শুরু করেন।
সেসময়ে তারা এই জেলি ফিশকে বিভিন্নভাবে কেটে কিংবা উচ্চতর তাপমাত্রায় রেখে পরীক্ষা চালান।
অনেকটা হাইড্রার মত করে খোলস পাল্টে নেয়া এই প্রাণীটি এভাবেই তাদের জীবনচক্র চালিয়ে থাকে।
বিজ্ঞানীরা বলেন হয়তো এর খোলস পাল্টে নেবার সময় সেখান থেকে পুরানো জেলি ফিশ মারা গিয়ে নতুন ভাবে জেলি ফিশ তৈরি হয় অথবা এও হতে পারে সেই জেলি ফিশটি বারংবার খোলস পাল্টে আজীবন জীবিত থাকে।
প্রায় ৯৫ ভাগ পানি নিয়ে গঠিত এই জেলি ফিশকে এরজন্যই এখন পর্যন্ত ইম্মোর্টাল জেলি ফিশ নামে ডাকা হয়।
এই সকল প্রাণী ছাড়াও আমাদের পৃথিবীতে সমুদ্রে বাস করে প্রবাল অবস্থান ভেদে হাজার কিংবা তার চাইতেও বেশি সময় বেঁচে থাকতে সক্ষম।