বাংলাদেশের জাতীয় পাখি; দোয়েল পাখি

বাংলাদেশের জাতীয় পাখি; দোয়েল পাখি
বাংলাদেশের জাতীয় পাখি; দোয়েল পাখি

সুজলা-সুফলা-শষ্য-শ্যামলা চির সবুজের দেশ আমাদের এই বাংলাদেশের। বাংলার সবুজ প্রকৃতি জুড়ে গাছের ডালে মাঠে ঘাটে ও নীল আকাশে ডানা মেলে উড়ে উড়ে ঘুড়ে বেড়াচ্ছে হাজারো রকমের চেনা-অচেনা পাখি। এসবের মধ্যে দোয়েল পাখি আমাদের জাতীয় পাখি।

বাংলাদেশের পল্লী অঞ্চলের সর্বত্রই এই পাখির আনাগোনা লক্ষ্য করা যায়। গ্রামীণ অঞ্চল গুলো খুব ভোর থেকেই দোয়েলের কলকাকলি শোনা যায়।

গ্রামের সৌন্দর্য্য যেন দোয়েল আরও বেশি অপরূপ করে তোলে।

নানা রকম সুরে ডেকে গান গাওয়ার জন্য দোয়েল সুপরিচিত।

নামকরণ:

এই পাখির বাংলা নামটির সঙ্গে ফরাসী ও ওলন্দাজ নামের মিল রয়েছে। ফরাসী ভাষায় দোয়েলকে বলা হয় Shama dayal.

এবং ওলন্দাজ ভাষায় দোয়েলকে Dayallijster নামে ডাকা হয়।

বৈজ্ঞানিক নাম:

দোয়েল পাখির বৈজ্ঞানিক নাম Copsychus Saularis.

ইংরেজি নাম:

ইংরেজিতে দোয়েল Oriental Magpie-robin নামে পরিচিত।

পরিবার:

দোয়েল প্যাসেরিফরম অর্থ্যাৎ চড়াই-প্রতিম বর্গের অন্তর্গত একটি পাখি।

প্রাপ্তিস্থান:

এশিয়ায় বিভিন্ন নাতিশীতোষ্ণ দেশ মূলত বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকা, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, চীনের দক্ষিণাঞ্চল এবং ফিলিপাইনে দোয়েল পাখি দেখা যায়।

আকার-আকৃতি:

দোয়েল পাখি আকারে ১৫-২০ সেন্টিমিটার অর্থ্যাৎ ৭-৮ ইঞ্চি লম্বা হয়ে থাকে।

গঠন:

এই পাখির পা দুটি সরু এবং একটি লেজ ও ২ টি ডানা রয়েছে।

দোয়েল পাখির ঠোঁটটি সরু ও সূঁচালো।

দোয়েলের গলার নিচ থেকে দুধের মত সাদা পালক রয়েছে। যা বুক পর্যন্ত নেমে এসেছে।

পাখা ও লেজের মধ্যে কয়েকটি সাদা পালক এত সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি করেছে যা সহজেই আমাদের মন কেড়ে নেয়।

বৈশিষ্ট্য:

দোয়েল পাখি আকারে ছোট। এরা খুবই চঞ্চল ও অস্থির প্রকৃতির একটি পাখি।

আকারে ছোট এই পাখিটি লাফিয়ে লাফিয়ে চলে এবং খাবার খুঁজে।

দোয়েল তার লম্বা লেজটি সে অধিকাংশ সময় খাড়া করে রাখে।

দোয়েল শান্তি-নিরীহ, অল্পে তুষ্ট আর সদানন্দ স্বাভাবের এই পাখিটি বাঙালী স্বাভাবের সঙ্গে একেবারেই সামন্জস্যপূর্ণ।

এপাখিটির রয়েছে সুমধুর কন্ঠ। তার কন্ঠের জাদু পাখিপ্রেমী লোকদের সহজেই দৃষ্টি আকর্ষণ করে।

সাধারণত দোয়েলকে গায়ক পাখি ডাকা হয়। এরা গান গায় এবং আস্তে আস্তে শীষও দেয়।

প্রজনন ঋতুতে পুরুষ দোয়েল খুব ভোরে এবং পড়ন্ত বিকেলে সুরেলা গলায় বেশ জোড়ে শীষ বাজিয়ে গান গায়।

দোয়েল জোড়ায় জোড়ায় বাস করে।

শান্ত প্রকৃতির দোয়েল পোষ মানে।

পুরুষ দোয়েল শিকার ধরতে খুবই পটু।

খাদ্যাভাস:

ছোট্ট কীট পতঙ্গ, ছোট ছোট শুঁও পোকা এদের প্রধান খাবার।

আবার অনেক সময় এই পাখিগুলো মাটি থেকে ঠুকরিয়ে ঠুকরিয়ে কেঁচো জাতীয় প্রাণী খায়।

প্রজনন:

এপ্রিল থেকে জুলাই মাস দোয়েল পাখির প্রজনন কাল।

তখন স্ত্রীদোয়েল একবারে সাধারণত ৪/৫টি ডিম পাড়ে।

আরো পড়ুন:
ডাইনোসরদের পুণরুজ্জীবিত করকি সম্ভব?
মরুভূমির জাহাজ খ্যাত উট
বিশ্বের সবচািইতে উচু প্রাণী জিরাফ

ডিমের রঙ ফিকে নীলচে-সবুজ হয়। এবং এর উপর আবার বাদামী ছোপ ছোপ থাকে।

ডিম দেবার ১ সপ্তাহ পূর্বে দোয়েল গাছের কোটরে অথবা ছাদের কার্ণিশে বাসা বাধে।

বাসস্থান:

সাধারণত কাঠসমৃদ্ধ বন-জঙ্গল, চাষাবাদকৃত জমির আশপাশ এবং জনবসতিপূর্ণ এলাকায় মানষের কাছাকাছি ও এদের দেখা মেলে।

তবে, মূলত গ্রামীণ অঞ্চলেই এদের বাস।

দোয়েল সাধারণত বাসা বানাতে পারে না।

গাছের কোটরে কিংবা ফাটলে এরা খড়-কুটো জমা করে বাসা তৈরি করে।

আয়ুস্কাল:

একটি দোয়েল পাখি সর্বোচ্চ ১৫ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকে।

পাখিটির স্বভাব অত্যন্ত সুন্দর ও নির্মল। সুন্দর স্বভাবের জন্য দোয়েল পাখির যথেষ্ট কদর রয়েছে।

পাখিপ্রেমী মানুষদের নিকট এর চাহিদা ব্যপক। তাইতো দোয়েলকে বাংলাদেশের জাতীয় পাখির মর্যাদা দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায়ে দোয়েল চত্বর নামক একটি সড়ক-চত্বর রয়েছে। যেটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার মাঝে অবস্থিত।

প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় পাখিদেরও রয়েছে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা। কিন্তু বর্তমানে শিকারীর কবলে হাড়িয়ে যেতে বসেছে পাখিটি।

এদের বাঁচাতে হলে আমাদের প্রত্যেকের এগিয়ে আসা উচিত।

curious

শেয়ার করুন -

১ মন্তব্য

উত্তর দিন

আপনার মন্তব্য লিখুন
আপনার নাম লিখুন