মরুভূমির জাহাজ খ্যাত উট

মরুভূমির-জাহাজ-খ্যাত-উট
মরুভূমির-জাহাজ-খ্যাত-উট

উট কে মরুভূমির জাহাজ বলা হয়। রহস্যে ঘেরা প্রাণীটির গঠন প্রকৃতি এবং এর জীবন প্রণালী। এ যেন পৃথিবীর বুকে এক বিষ্ময়কর জীব।

ইসলাম ধর্মের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ আল-কুরআন এও উট সম্পর্কে বর্ণনা রয়েছে।

আজ আমাদের আলোচনার বিষয়বস্তু উট।

নামকরণ:

ইংরেজি নাম Camel.

বৈজ্ঞানিক নাম:

উটের বৈজ্ঞানিক নাম Camelus.

প্রজাতি:

প্রাণীটির ৩ টি প্রজাতি রয়েছে। যেমন-

১. Bactrain camel

২. Dromeday/Arabian camel

৩. Wild Bactrain camel

আদিনিবাস:

উটের আদিনিবাস সম্ভবত উত্তর আমেরিকায়।

পরবর্তীতে এদের মধ্যে একভাগ বেরিং প্রণালী পার হয়ে এশিয়া এবং উত্তর আফ্রিকায় চলে যায়, যাদের উত্তরসূরী হল ড্রোমেডারী ও ব্যাক্ট্রীয়ান।

মরুভূমিতে বহু যুগ ধরে বসবাস করার ফলে আজও উট মরুভূমির জাহাজ হয়ে সহিষ্ণুতার প্রতীক হিসেবে দাড়িয়ে রয়েছে।

তাদের মধ্য থেকে অন্য একভাগ আবার চলে যায় দক্ষিণ আমেরিকায় যাদের উত্তরসূরী ফিল লামা (llama) ও ভিকুন্যা(Vicugna)।

পরিবার:

উট কর্ডাটা পর্বের Mammalia শ্রেণীর অন্তর্গত camelidae পরিবারভুক্ত একটি প্রাণী।

আকার-আকৃতি, ওজন:

একটি প্রাপ্ত বয়স্ক উটের উচ্চতা ৬-৭ ফুট হয়ে থাকে।

প্রজাতি ভেদে একটি উটের ৬০০ থেকে ১০০০ কেজি পর্যন্ত ওজন হয়ে থাকে।

গঠন:

উট কুঁজ বিশিষ্ট একটি চতুষ্পদী প্রাণী।

উটের পিঠে কুঁজ রয়েছে। যেটিকে উটের জীবনিশক্তি হিসেবে ধরা হয়। কারণ এখানেই নাকি উট তার পুষ্টি এবং শক্তি জমিয়ে রাখে।

এর মুখ গহ্বর, দাঁত এবং চোয়াল এমন ভাবে গঠিত যা মরুভূমির যেকোন খাবার গ্রহণের পাশাপাশি কাঁটাযুক্ত ক্যাকটাস খেতেও পারদর্শী।

উটের ৪ টি পা এবং এদের পাও গুরুর পায়ের মত চেরা খুরবিশিষ্ট।

ব্যতীক্রম হলো, উটের পায়ের তলায় নরম প্যাড রয়েছে যা গরুর নেই।

উট রোমন্থন করে অর্থ্যাৎ জাবর কাটে।

কিন্তু উটের পাকস্থলি ৪ নয়, ৩ কক্ষ-বিশিষ্ট। তাই উট অনেকের কাছে ছদ্ম রোমন্থক হিসেবে পরিচিত।

উটের চোখের পাতায় দুটি স্তর রয়েছে যা তাকে মরুভূমির ধুলিঝড়ের মধ্যেও রাস্তা দেখাতে সহায়তা করে।

সেইসঙ্গে এটি মরুভূমির রুক্ষ পরিবেশে রোদের হাত থেকেও উটকে রক্ষা করে।

বৈশিষ্ট্য:

উট যেমন মরুভূমির উত্তপ্ত তাপমাত্রায় দিনেরবেলার ৫৩ ডিগ্রি সেন্টগ্রেট উষ্ণতায় গরম বালিতে পা রেখে চলাফেরা করে বেঁচে থাকতে পারে। আবার একইসাথে রাতে মাইনাস তাপমাত্রায়ও অনায়াসে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারে।

উটের অসাধারণ শারীরিক গঠনের ফলে মরুভূমিতে ভারি ওজন নিয়ে জলপান না করেই অনায়াসেই কয়েকশো কিলোমিটার পথ পারি দিতে পারে।

প্রায় ১৫০ কেজি ওজন নিয়েও এই প্রাণীটি মরুভূমির তপ্ত বালুতে সচ্ছন্দে চলাচল করতে পারে।

বিজ্ঞানীদের কাছে এক বিষ্ময়কর প্রাণী হলো এই ‍উট বা মরুভূমির জাহাজ।

আরো পড়ুন:
বিশ্বের সবচাইতে উচু প্রাণী জিরাফ
হায়েনা; যে পশুর হাসি মানুষের মত
সাগরের তারকা তারা মাছ

উটের সমস্ত শক্তির উৎস হলো তার কুঁজ। চর্বি সমৃদ্ধ এই কুঁজ উটকে তার পুষ্টি ও শক্তি যোগায়।

এবং জল শরীরের তাপমাত্রা ঠিক রাখে।

একবারে উট ১৩০ লিটার জল পান করতে পারে। যা প্রায় তিনটি গাড়ির ফুয়েল ট্যাংকের সমান।

এত পরিমাণ জল পান করতে উটের সময় লাগে মাত্র ১০-১৫ মিনিট।

পর্যাপ্ত পরিমাণ জল এবং খাবার খেয়ে একটি উট আগামী ৬ মাস পর্যন্ত কোন কিছু না খেয়ে এমনকি এক ফোটা জলও পান না করে মরুভূমির বুকে চলাফেরা করতে পারে।

অন্যকোন প্রাণী যদি একসঙ্গে এত জল নিজের দেহে ধারণ করতো তাহলে, তাদের শরীরের রক্ত কণিকা এত জলের চাপ সহ্য করতে পারতো না।

যার ফলস্বরূপ প্রাণীটির রক্তকণিকা ফেটে যেত এবং প্রাণীটি মৃত্যুবরণ করতো।

কিন্তু উটের ক্ষেত্রে এটি ব্যাতিক্রম। উটের রক্তকণিকা গুলো সেই প্রচন্ড পানির চাপ সহ্য করতে সক্ষম।

তাই এত জল পান করার পরেও তাদের কোন রকম অসুবিধা হয় না।

৪০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রার উপরে গেলে সাধারণ প্রাণীদের ঘাম হয়। এবং শারীরিক ক্ষতি হয়।

কিন্তু উট ঘামে না। যার ফলে তার শরীরের জল নষ্ট হয় না।

পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তারপর উট ঘামে।

ঘন্টায় একটি উট ৪০-৬৫ কিমি বেগে দৌড়াতে পারে।

খাদ্যাভাস:

খাবার হিসেবে উট মরুভূমির কাটাযুক্ত ক্যাকটাস গ্রহণ করে।

যা অন্য প্রাণীদের পক্ষে খাওয়া প্রায় অসম্ভব। এবং এগুলো খেলে তাদের মুখের মধ্যে ক্ষতও হয়ে যেতে পারে।

কিন্তু উটের আশ্চর্যজনক দাঁত এবং চোয়ালের গঠনই তাকে এই অবিশ্বাস্য ক্ষমতা প্রদান করেছে।

এছাড়াও বিভিন্ন ছোট প্রাণী শিকার করেও খায় প্রাণীট।

প্রকৃতির অদ্ভুদ সৃষ্টি, এত ক্ষমতাধর এই প্রাণীটি স্বভাবে একদমই শান্তশিষ্ট।

আয়ুষ্কাল:

উট গড়ে ৪০-৫০ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকে।

উট ছাড়া পৃথিবীর বুকে মরুভূমিতে মানুষ কিন্তু একেবারেই নিঃস্ব। উটের সাহায্যেই মুরুভূমিতে মানব সভ্যতা গড়ে ওঠেছে। এবং এখনো পর্যন্ত টিকে রয়েছে।

মরুর দেশে উট তাদের নিত্যসঙ্গী। এটি সেখানে একটি গৃহপালিত পশু। গৃহস্থরা উটের দুধ এবং গোশতও খায়।

আবার এ দুধ এবং উট বা উটের গোশত বিক্রির মাধ্যমেও নিজেদের ভরণ-পোষণ করতে পারে।

গৃহকর্তার মালপত্র বহন করে, তাদের গাড়ি টানে এই উট।

এত ক্ষমতাধর হওয়া সত্বেও উট খুবই নিরীহ একটি প্রাণী। কিন্তু বর্তমানে উটের নিধন, অত্যাচার বেড়ে গেছে।

মানুষ উটের পিঠে বেশ ভারি ভারি বোঝা বহন করিয়ে উটকে প্রায় মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়।

এভাবেই দিনে দিনে হারিয়ে যেতে বসেছে উট। তাই আমাদের সময় থাকতে সোচ্চার হতে হবে।

তাদের রক্ষণা-বেক্ষণে এগিয়ে আসতে হবে। তাদের প্রতি যত্নশীল হতে হবে।

curious

শেয়ার করুন -

উত্তর দিন

আপনার মন্তব্য লিখুন
আপনার নাম লিখুন