ফেস রিকগনিশন প্রযুক্তি কতটা নির্ভরযোগ্য?

ফেস রিকগনিশন প্রযুক্তি কতটা নির্ভরযোগ্য_
ফেস রিকগনিশন প্রযুক্তি কতটা নির্ভরযোগ্য_

ফেস রিকগনিশন প্রযুক্তি বর্তমান সময়ের বেশ জনপ্রিয় এবং বহুল গ্রহণযোগ্য এক প্রযুক্তি। গত ৫ বছরে এ প্রযুক্তিতে বিপ্লব ঘটেছে এবং এর ব্যবহার প্রচুর বৃদ্ধি পেয়েছে।

ফেস রিকগনিশন প্রযুক্তি-র ভাল-মন্দ জানার আগে চলুন জেনে নিই ফেস রিকগনিশন সিস্টেমটি আসলে কি-

ফেস রিকগনিশন সিস্টেম হচ্ছে, এক ধরনের কম্পিউটার প্রোগ্রাম যার সাহায্যে মানুষের মুখের গঠন প্রকৃতি পরীক্ষা করে তাকে শনাক্ত করা হয়।

এই পদ্ধতিতে কোন ব্যবহারকারীর মুখের ছবিকে কম্পিউটারে সংরক্ষিত ছবির সাথে দুই চোখের মধ্যবর্তী দুরত্ব, নাকের দৈর্ঘ্য এবং ব্যাস, চোয়ালের কৌণিক পরিমাণ ইত্যাদি তুলনা করার মাধ্যমে ব্যক্তিকে চিহ্নিত করা হয়।

একদিক বিবেচনায় ফেস রিকগনিশন প্রযুক্তি সুবিধাজনক হলেও এত নজরদারির বিপদ সম্পর্কেও ব্যবহারকারীদের সচেতন করে দিচ্ছেন বিশ্লেষকরা৷

এরই মধ্যে আবার আসতে চলেছে নতুন এক প্রযু্ক্তি, ইমোশন রিকগনিশন প্রযুক্তি৷

২০০২ সালে ‘মাইনোরিটি রিপোর্ট’- নামে একটি হলিউড মুভি মুক্তি পেয়েছিল। যেখানে ২০৫৪ সালের পৃথিবী কেমন হতে পারে তা দেখানো হয়েছে৷

মুভিতে দেখা গেছে, কোন কারণবশত অভিনেতা টম ক্রুজ পালানোর চেষ্টা করছেন, কিন্তু তার উপর সবসময়, সব জায়গা থেকে নজরদারি চলছে।

অবশ্য ২০৫৪ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়নি, মুভিতে দেখানো সেই দৃশ্য এর মধ্যেই বাস্তব হয়ে উঠছে৷

সমৃদ্ধশালী দেশ চীনে কয়েকশ মিলিয়ন ক্যামেরা দিয়ে প্রতিটি নাগরিকদের গতিবিধির উপর নজর রাখা হচ্ছে৷

নাগরিকদের দৈনন্দিন জীবন-যাপন, কাজ-কর্মের সঙ্গে ফেস রিকগনিশন প্রযুক্তি জড়িয়ে আছে৷

এছাড়া আরও বিভিন্ন দেশে যেমন- জার্মানিতে বিমানবন্দরে যাত্রীদের বায়োমট্রিক ছবি সম্বলিত পাসপোর্ট নিয়ন্ত্রণেও এই প্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহার হচ্ছে৷

‘কগনিটেক’ নামক জার্মান কোম্পানি নতুন এই প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে৷

নিরাপত্তার স্বার্থে বিমানবন্দরের ই-গেট, সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ কিংবা ভিডিও সার্ভিলেন্স, যে কোনো স্থানে ড্রেসডেনের এই কোম্পানির সফটওয়্যার ব্যবহার করা হয়৷

কগনিটেক জিএমবিএইচ কর্মকর্তা এলকে অব্যার্গ এর মতে, ‘‘সফটওয়্যারটি প্রথমে যেকোন ব্যাক্তির মুখের কয়েকটি নির্দিষ্ট অংশ খেয়াল করে৷

যেমন- দুই চোখের মধ্যের দূরত্ব, নাক থেকে চোখের দূরত্ব, মুখগহবরের কোণা এবং মুখের সারফেস, যেমন উঁচু বা নীচু অংশ৷

এসকল তথ্য তুলনা করে প্রতিটি মুখের একটি প্রোফাইল তৈরি করা হয়৷”

ডিজিটাল প্রোফাইলিংয়ের কারণে সকল ধরনের তুলনা সম্পন্ন করে সফটওয়্যার বুঝে নিতে পারে যে, দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটি কি সত্যি পাসপোর্টে ছবি থাকা সেই মানুষ, নাকি শুধুই একটা ছবি?

ফেস রিকগনিশন প্রযুক্তি দিন দিন আরো উন্নত হচ্ছে৷ যারফলে মুখের অল্প খানিকটা অংশ দেখেই সফটওয়্যার দ্রুত বলে দিতে পারে পাসপোর্টের ছবি আর সামনে থাকা মানুষটি একই মানুষ কিনা৷

সঠিক সিদ্ধান্ত জানাতে সময় লাগে মাত্র কয়েক সেকেন্ড৷ তবে তা হয় দ্রুত এবং নির্ভুল৷

আরো পড়ুন:
সময় এখন হোয়াটসঅ্যাপের বিকল্প খুঁজে নেওয়ার
বিজ্ঞানের যুগান্তকারী উদ্ভাবন বদলে দিচ্ছে ভবিষ্যৎ দুনিয়া

অব্যার্গ আরও বলেন, ‘‘এটাও ঠিক যে সবসময় শতভাগ নির্ভুল সিদ্ধান্ত পাওয়া যাবে না৷ তবে আমার মনে হয়, গত ৫ বছরে ফেস রিকগনিশন প্রযুক্তিতে ব্যাপক বিপ্লব ঘটেছে।

কারণ রিকগনিশনে নির্ভুলতার হার এতটাই বেড়েছে যে, এটা এখন বেশ বিশ্বস্ততার সাথে ব্যবহার করা যায়৷”

তবে এটা ঠিক কতখানি নির্ভরযোগ্য?

২০১৭ সালে বার্লিনের এক স্টেশনে জরিপ চালিয়ে অনুধাবন করা গেছে, সফটওয়্যার ভেদে সফলতার হার ছিল ৭০-৮০%।

যার কারণে, কর্তৃপক্ষ এ প্রযুক্তি নিয়মিত ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷

তবে আইটি বিশেষজ্ঞ এবং সাংবাদিক মার্কুস বেকেডাল এমন নজরদারির বিপদ সম্পর্কে আগেই সতর্ক করে দিয়েছেন৷

তিনি বলছেন, ‘‘বেশিরভাগ মানুষই প্রযুক্তির এমন উন্নতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানে না৷

তাছাড়া এই নজরদারি অনেকটা গোপনে করা হচ্ছে। অর্থ্যাৎ, আমরা আসলে জানিনা, আমাদের উপর ঠিক কতটুকু নজরদারি চালানো হচ্ছে৷

এটা খুবই বিপজ্জনক, কারণ বিস্তারিত না জানায় মানুষ ততটা প্রতিবাদ করতে পারছে না৷ যে কারণে, নজরদারি বেড়েই চলেছে৷”

কিন্তু এখানেই শেষ নয়৷ এখন আবার নতুন এক প্রযুক্তি আসছে।

তাহলো ইমোশন রিকগনিশন প্রযুক্তি। যেটা দিয়ে মানুষের মনের অবস্থাও বোঝা যাবে৷

curious

শেয়ার করুন -

উত্তর দিন

আপনার মন্তব্য লিখুন
আপনার নাম লিখুন