হায়েনা – যে পশুর হাসি মানুষের মত

হায়েনা - যে পশুর হাসি মানুষের মত
হায়েনা - যে পশুর হাসি মানুষের মত

হায়েনা কুকুর সদৃশ একটি হিংস্র মাংশাষী এবং ভয়ংকর বন্যপশু। পৃথিবীর সবচেয়ে হিংস্র পশু। এরা শিকারে খুবই পটু। 

তবে সবচেয়ে অবাক করা ব্যাপার হায়েনার হাসি মানুষের হাসির মত।

ইংরেজী নাম:

হায়েনার ইংরেজী নাম Hyena.

বৈজ্ঞানিক নাম:

হায়েনার বৈজ্ঞানিক নাম Hyaenidae.

পরিবার:

এই প্রানীটি মূলত স্তন্যপায়ী প্রাণী। শ্বাপদ বর্গের হায়েনারা ‘হায়েনিডে-র (Hyaenidae) পরিবারের সদস্য।

আদিনিবাস:

আজ থেকে প্রায় ২২ মিলিয়ন বছর পূর্বে ইউরোয়েশিয়ার জঙ্গলে হায়েনার আবির্ভাব ঘটে।

প্রজাতি:

পৃথিবীতে প্রধানত ৩ প্রজাতির হায়েনা রয়েছে। যেমন:-

১. চিত্রা হায়েনা

২. ডোরা কাটা হায়েনা

৩. বাদামী হয়েনা।

এছাড়াও আরও এক ধরনের হায়েনা পৃথিবীতে রয়েছে। তা হলো আর্ডওল্ফ।

এদের কখনো কখনো ভিন্ন পরিবারের সদস্য হিসেবে ধরা হয়।

দেখতে কুকুরের মত হলেও এরা কুকুর প্রজাতির নয়। প্রকৃতপক্ষে এরা বিড়াল পরিবারের নিকটাত্মীয় প্রাণী।

প্রাপ্তিস্থান:

আগে পশ্চিমা ইউরোপে হয়েনার পাওয়া যেত। পূর্ব রাশিয়াতেও এদের কিছু প্রজাতির বিচরণ ছিল।

কিন্ত এখন শুধু এশিয়া এবং আফ্রিকা মহাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে হায়েনার দেখা পাওয়া যায়।

আকার-আকৃতি:

হায়েনার উচ্চতা প্রায় আড়াই ফুট।

লেজ সহ একটি হায়েনা প্রায় ৬.৫ ফুট পর্যন্ত লম্বা হতে পারে।

লেজের দৈর্ঘ্য ১ ফুট।

একটি হায়েনার ওজন প্রায় ৮০ কিলোগ্রাম পর্যন্ত হতে পারে।

খাদ্যাভ্যাস:

হায়েনা মূলত স্তন্যপায়ী প্রাণী। তবে হায়েনা মাংশাষী প্রাণী। অন্য নিরীহ প্রাণীদের শিকার করে এরা জীবন-যাপন করে।

তবে পঁচা গলিত মাংস খেতে বেশি পছন্দ করে।

এরা মৃত পশুপাখিকে খাদ্য হিসেবে গ্ৰহণ করে, কখনও বা স্বগোত্র ভোজীও হয়ে থাকে।

হায়েনারা অন্যান্য শীর্ষ শিকারিদের‌ও ভয় পায় না, বরং তাদের শিকার করা খাবারে ভাগ বসাতে এরা প্রস্তুত।

আয়ষ্কাল:

হায়েনারা গড়ে ২০-২৫ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকে।

দৈহিক গঠন:

হায়েনা দেখতে অনেকটা কুকুরের মত হলেও এরা কুকুর শ্রেণীর নয়। বিড়াল পরিবারের নিকটতর।

এদের দুটি পা, একটি লেজ রয়েছে।

হায়েনার দৈহিক বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এদের পেছনের পায়ের চেয়ে সামনের পা গুলো লম্বা। এদের চোয়াল খুবই শক্ত।

হায়েনার দাত খুবই ধারালো। যার কারণে এরা শিকারে খুব পটু হয়।

আরো পড়ুন:
বিশ্বের সবচেয়ে উচু প্রাণী জিরাফ
সাগরের তারকা - তারা মাছ
বর্ণীল সৌন্দর্য্যে রঙ্গিন ম্যাকাও পাখি

পৃথিবীতে বিভিন্ন ধরনের হয়েনা রয়েছে। তুরস্ক, ইরান এবং ভারতীয় উপমহাদেশ এবং উত্তর আফ্রিকার হায়েনার দেহে ডোরাকাটা দাগ রয়েছে।

তবে দক্ষিণ আফ্রিকার হয়েনার দেহ পিঙ্গল বর্ণের।

বৈশিষ্ট্য:

হায়েনা এতই ভয়ঙ্কর যে এরা একত্রে দলবদ্ধ হয়ে বাঘ সিংহকে পর্যন্ত কুপোকাত করে ফেলে।

ছোট হলেও হিংস্রতায় সব থেকে বড় প্রাণী হয়েনা। হিংস্রতায় সিংহের পরেই হায়েনার স্থান।

আফ্রিকায় হিংস্র প্রাণীর তালিকায় এদের স্থান দ্বিতীয়।

একটি হায়েনা ঘন্টায় প্রায় ৬৪ কিমি বেগে ছুটে চলে।

এরা এতটা হিংস্র শিকারের সময় শিকারিকে জীবিত অবস্থাতেই শরীরে কামড় দিয়ে মাংস খেতে শুরু করে। অন্যান্য প্রাণীরা আগে শিকারের মাধ্যমে শিকারী কে মেরে ফেলে, তারপর খায়। কিন্তু হায়েনার ক্ষেত্রে তা একেবারেই নয়।

হায়েনাই একমাত্র শিকারী প্রাণী যারা শিকারের চামড়া পর্যন্ত খেয়ে ফেলে।

হায়েনার শরীর বিশ্রী গন্ধময়। যা মানুষের পক্ষে সহ্য করা সম্ভব নয়।

হায়েনা সাধারণত নিশাচর। তবে এরা দিন-রাত সবসময় কর্মক্ষম থাকে। রাতেও শিকার করে।

রাতে এটি প্রায় পাগলের মত চিৎকার করে। যা শুনে অনেকেই ভয় পেয়ে যায়।

হায়েনারা খুবই সাহসী প্রাণী। এদের চোয়াল এবং থাবা শক্তিশালী।

হায়েনাদের সমাজ মাতৃতান্ত্রিক সমাজ। একটি মাদি হায়েনার নেতৃত্বে এদের একেকটি দলে প্রায় ৮০ জন করে হায়েনা রয়েছে।

শিকার করার পরে একসঙ্গে সব হায়েনারা জড়ো হলে, সবাই সবাইকে অভিনন্দন জানায়।

হায়েনা যখন হাসে:

সব প্রজাতির হায়েনা হাসে না। শুধুমাত্র ডোরাকাটা হায়েনা হসে।

তাদের হাসির শব্দ এতটাই বিকট যে শুনলে মনে হবে তারা একে অপরের সাথে দ্বন্দে লিপ্ত আছে।

এরা হাসতে হাসতেই শিকার করে এবং খুব নির্মম ভাবে শিকার করে।

প্রকৃতির সবচেয়ে হিংস্র প্রাণী হায়েনা, এটা ঠিক। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য মানুষ আরও বেশি হিংস্র। যার কারণে মানুষের আগ্রাসনে এই প্রাণটি আজ বিলুপ্তির পথে।

বর্তমানে হায়েনাদের অবস্থান ক্রমশ কমে যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে হয়তো আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম শুধুমাত্র ছবি আর ভিডিও তেই হায়েনার অস্তিত্যের খোঁজ পাবে।

curious

শেয়ার করুন -

উত্তর দিন

আপনার মন্তব্য লিখুন
আপনার নাম লিখুন