জিরাফ হচ্ছে পৃথিবীর সবথেকে লম্বা প্রাণী। অতিরিক্ত লম্বা হওয়ায় জিরাফকে আফ্রিকার জঙ্গলের টাওয়ার বলা হয়। আজ আমাদের আলোচনার বিষয়বস্তু জিরাফ।
১৫-২০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হওয়া সত্ত্বেও এদের অতিকায় দানব হিসেবে ধরা যায় না। কারণ জিরাফ খুবই শান্ত স্বভাবের একটি প্রাণী।
জিরাফকে মানুষ অত্যন্ত বন্ধুসুলভ প্রাণী বলেই ধরে থাকে।
বৈজ্ঞানিক নাম:
জিরাফের বৈজ্ঞানিক নাম Giraffa.
পরিবার:
জিরাফ কর্ডাটা পর্বের স্তন্যপায়ী শ্রেণীর অন্তর্ভূক্ত প্রানী।
এর বর্গ আর্টিওড্যাক্টাইলা এবং পরিবার জিরাফিডি।
আকার-আকৃতি:
জিরাফ প্রায় ১৯ ফুট পর্যন্ত দৈর্ঘ্যের হয়ে থাকে। এত উঁচা-লম্বা বলে উচ্চতম প্রাণীদের মধ্যে জিরাফের অবস্থান সর্বোচ্চ।
জিরাফের পা পৃথিবীতে থাকা অন্যান্য প্রাণীগুলোর মধ্যে সবথেকে লম্বা পা। যার উচ্চতা প্রায় ৬ ফুট।
জিরাফের জিব্হা ২১ ইঞ্চি পর্যন্ত হতে পারে। পায়ের পাতা ১২ ইঞ্চি।
একটি পুরুষ জিরাফের ওজন হয় ৩০০০ পাউন্ড বা ১৩৬০ কেজি। এবং একটি মেয়ে জিরাফের ওজন হয় ১৫০০ পাউন্ড বা ৬৮০ কেজি।
এদের হৃদপিন্ড ওজনে ২৫ পাউন্ড। এবং প্রায় ৫৫ লিটার পর্যন্ত বায়ু ধারণ করতে পারে।
সবথেকে মজার ব্যাপার হচ্ছে মানুষের মত জিরাফেরও ৩২ টি দাঁত রয়েছে।
দাঁতের মত জিরাফের মেরুদন্ডতেও মানুষের মত ৯টি হাড় বিদ্যমান। পার্থক্য শুধু জিরাফের হাড়গুলো বেশি লম্বা।
জিরাফের মাথায় ২-৪ টি ভোঁতা শিং রয়েছে। এই প্রাণীর নারী-পুরুষভেদে শিং এর সংখ্যা বা আকার-আকৃতি পৃথক হয় না।
গঠন:
অতিরিক্ত লম্বা হওয়ায় এবং হাটু না থাকার কারণে এরা দাঁড়িয়েই ঘুমায়। এবং দাড়িয়েই বাচ্চা প্রসব করে।
তবে তাদের গলা সে তুলনায় প্রচুর খাটো হয়। একারণে জিরাফ দাড়িয়েই পা বাকা করে পানি পান করে থাকে।
জিরাফ প্রতি কয়েকদিন পর পর একবার পানি পান করে। যার কারণে পানিশূণ্য ধু ধু মরুভূমিতে জিরাফ অনায়াসে জীবন কাটাতে পারে।
আফ্রিকার সহারা মরুভূমির মত তীব্র শুষ্ক পরিবেশ উপেক্ষা করেও বেঁচে থাকতে পারে।
জিরাফের হাঁটু নেই তাই জীবনের বেশিরভাগ সময়ে এই প্রাণীটি দাঁড়িয়েই অতিবাহিত করে।
জিরাফ মূলত দাঁড়িয়ে ঘুমায়। তবে এরা খুব অল্প পরিমাণে ঘুমায়।
আরো পড়ুন:
সাগরের তারকা - তারা মাছ
বর্ণীল সৌন্দর্য্যে রঙ্গিন ম্যাকাও পাখি
দৈনিক মাত্র ১-২ ঘন্টা ঘুমায় এই প্রাণী। যা প্রাণীজগতের মধ্যে সবচেয়ে স্বল্প পরিমাণের ঘুম্
দুটি মানুষের আঙ্গুলের ছাপ যেমন সম্পূর্ণ আলাদা তেমনি একেকটি জিরাফের গায়ের খোপ খোপ ডোরাকাটা গুলোও একদম আলাদা। সৌন্দর্
খাদ্যাভ্যাস:
জিরাফ তৃণভূজী প্রাণী। এর প্রায় ২ ফিট লম্বা জিভ দিয়ে টেনে টেনে গাছের লতাপাতা ছিড়ে খায়।
তবে অ্যাকাশিয়া গাছের পাতা এদের বিশেষ পছন্দ।
আয়ুস্কাল:
এই বিশাল আকারের প্রাণীটি মাত্র ৩০-৪০ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকে।
বংশবিস্তার:
জিরাফের গর্ভধারণ কাল ১৫ মাস।
জিরাফ দাড়িয়ে বাচ্চা প্রসব করে। তারমানে প্রায় ৮ ফিট উচ্চতা থেকে মাটিতে পরে স্বাগতম জানানো হয় একটি নবজাতক বাচ্চাকে।
জিরাফের নবজাতক বাচ্চার উচ্চতা প্রায় ৬ ফুট পর্যন্ত হয়ে থাকে। এবং ওজন থাকে গড়ে ৬৮ কেজি।
আবাস্থল:
জিরাফরা সাধারণত বাস করে আফ্রিকার তৃণভূমিময় সাভানা অঞ্চলে।
এরা অর্ধশুষ্ক এবং খোলাভূমিতে বাস করতে পছন্দ করে। যেখানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকে বিভিন্ন গাছ।
বৈশিষ্ট্য:
বনের বিশেষ বিশেষ জায়গায় জিরাফদের দলবেধে চলাফেরা করতে দেখা যায়।
জিরাফেরা এতটা সামাজিক প্রাণী যে এদের নিজস্ব কোন এলাকা থাকে না। এরা মূলত নিরিহ স্বভাবের প্রাণী। তবে আক্রান্ত হলে যুদ্ধংদেহী রূপ ধারণ করে।
এরা খুব নিচু আওয়াজে পরস্পরের সাথে কথা বলে। সাধারণত লড়াই করেনা।
জিরাফ মূলত সিংহ, বন্যকুকুর ও হায়েনা দ্বারা বেশি আক্রান্ত হয়।
প্রতিবছর সিংহের আক্রমণে বেশকিছু জিরাফ নিহত হয়। মানব সভ্যতার আগ্রাসনের কবলে পরে অন্যসব প্রাণীদের মত জিরাফও এখন বিপন্নপ্রায়।
মাত্র ৩০ বছর আগেও জিরাফের সংখ্যা ছিল ১,৫০,০০০ সেখানে আজ জিরাফের সংখ্যা ১০,০০,০০০ এ নেমে এসেছে।
তাদের রক্ষার্থে আমাদের সকলের সোচ্চার হওয়া উচিত।