পাথড়কুচি গাছ; বিভিন্ন গুণে গুণাণ্বিত এক উদ্ভিদ

পাথড়কুচি গাছ; বিভিন্ন গুণে গুণাণ্বিত এক উদ্ভিদ
পাথড়কুচি গাছ; বিভিন্ন গুণে গুণাণ্বিত এক উদ্ভিদ

পাথড়কুচি গাছ ঔষধি গাছ গুলোর মধ্যে অন্যতম। প্রাচীনকাল থেকে বিভিন্ন অসুখ নিবারণে ভেষজ এই উদ্ভিদ ব্যবহৃত হয়ে আসছে।  সর্দি-কাশি সহ নানা অসুখে এটি প্রচুর কার্যকরি। 

আজ আমরা জানবো পাথড়কুচি গাছ সম্পর্কে-

নাম:

পাথড়কুচি গাছের ইংরেজি নাম Kalanchoe pinnata.

বৈজ্ঞানিক নাম:

পাথড়কুচি গাছের বৈজ্ঞানিক নাম Bryophyllum pinnatum.

পরিবার:

পাথড়কুচি গাছ Saxifragales বর্গের Crassulaceae পরিবারের অন্তর্গত একটি বিরুৎ উদ্ভিদ।

উৎপত্তি স্থান:

পাথড়কুচি সাধারণত উষ্ণমন্ডলীয় স্থানে প্রাকৃতিক ভাবে জন্মায়। সমুদ্র স্তর তেকে ৮৫০০ ফুট উচুতে এরা জন্মে থাকে।

প্রাপ্তিস্থান:

পাথড়কুচি গাছ এশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ফিলিপাইন, ম্যাকারোনসিয়া, ব্রাজিল, গ্যালাপাগোস এসব অঞ্চলে পাওয়া যায়।

আকার-আকৃতি:

পাথড়কুচি গাছ দেড় থেকে দুই ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়।

পাতার আকৃতি হয় ১০-৩০ সেন্টিমিটার অথবা ৪-১২ ইঞ্চি। পাতার আকার ডিম্বাকৃতির হয়ে থাকে।

পাথড়কুচি ফুল জন্মায় যা ৪-৫ সেমি. লম্বা হয়।

গঠন:

পাথড়কুচি গাছের পাতা মাংসল ও মসৃণ প্রকৃতির। পাতার আকৃতি অনেকটা ডিমের মতো। পাতার চারপাশে ছোট্ট গোল গোল খাঁজ কাঁটা রযেছে।

এই খাঁজ গুলো থেকে নতুন পাথড়কুচি চারার জন্ম হয়।

পাতাগুলি কান্ডের অগ্রভাগে হয়ে থাকে। একটি কান্ডে একসঙ্গে তিনটি পাতা গজায়।

অনেক সময় পাথড়কুচি গাছের বয়স বাড়লে সেই গাছের খাঁজ থেকেও চারা গজায়।

পাথড়কুচি গাছের ফুল ও গজায় যা অনেক সুন্দর। তবে শুধুমাত্র প্রাপ্তবয়স্ক হলেই এই গাছে ফুল আসে।

পাথড়কুচি ফুল
পাথড়কুচি ফুল

পাথড়কুচি ফুলের কয়েকটি প্রজাতির নাম হাজারি, লাল পাথড়কুচি ফুল, হিমসাগর।

বৈশিষ্ট্য:

প্রাচীনকাল থেকে ব্যাধি নিরসনে যেসকল ঔষধি গাছ ব্যবহৃত হয়ে আসছে তাদের মধ্যে পাথরকুচি অন্যতম।

পাথরকুচি গাছের পাতা মাটিতে ফেলে রাখলে কয়দিনের মধ্যেই অনায়াসে চারা গজায়।

কাঁকর মাটিতে সহজেই জন্মে এই উদ্ভিদ। তবে ভেজা, স্যাঁতস্যাঁতে স্থানে পাথড়কুচি দ্রুত বাড়ে।

পাথড়কুচি গাছের গুণাগুণ:

পাথড়কুচি গাছের প্রচুর ঔষধি গুণাগুণ রযেছে। বিভিন্ন রোগের প্রতিরোধক হিসেবে অতুলনীয়।

পুরোনো সর্দি-কাশি দূর করতে পাথড়কুচি গাছের পাতা বেটে রস খেলে ভিষণ উপকার পাওয়া যায়।

এ পাতায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পানি। যা আমাদের শরীরের তথা ত্বকের জন্য খুবই উপকারী।

ত্বকের কাটা অংশে দ্রুত জ্বালাপোড়া কমানোর বিশেষ ক্ষমতা রয়েছে পাথড়কুচি পাতার রসে।

আরো পড়ুন:
সুস্বাদু মাশরুম উদ্ভিদ
মহীরুহ উদ্ভিদ বট গাছ
লজ্জাবতী গাছ

পাথরকুচি গাছে এর পাতা বেটে ত্বকে লাগালে মুখে ব্রণ ও ফুসকুড়ি জাতীয় সমস্যা অনেকাংশেই নির্মূল হয়ে যায়।

পাথরকুচি গাছের পাতা কিডনি এবং গলগণ্ডের পাথর অপসারণ করতে সহায়তা করে।

যাদের মৃগী রোগ রয়েছে তাদের পাথরকুচির পাতার রস দুই থেকে ১০ ফোঁটা খাওয়ালে তাৎক্ষণাৎ উপকার পাওয়া যায়।

পেট ফোলা, প্রস্রাব আটকে যাওয়া, আধো-বায়ু এসকল রোগের ক্ষেত্রে অল্প চিনির সঙ্গে ১-২ চা চামচ পাথরকুচির পাতার রস গরম করে খেলে দ্রুত রোগের উপশম হয়।

পিত্তজনিত ব্যথা প্রশমনের জন্যও পাথড়কুচি পাতা খুিই কার্যকরি।

লিভারের যেকোনো সমস্যা থেকে রক্ষা পেতে তাজা পাথরকুচি পাতা এবং এর রস অনেক উপকারী পথ্য।

বিষাক্ত পোকা কামড় দিলে পাথড়কুচি পাতার রস আগুনে সেঁকে পোড়া স্থানে লাগালে উপকার পাওয়া যায়।

এ ছাড়া উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ এবং মূত্রথলির সমস্যাজনিত কারণ থেকে পাথরকুচি পাতা মুক্তি দেয়।

শরীরের বিভিন্ন জ্বালা-পোড়া বা আর্থ্রাইটিস থেকে রক্ষা করে এই পাতা।

পাথরকুচি পাতা বেটে কয়েক ফোঁটা রস কানের ভেতর দিলে কানের যন্ত্রণা কমে যায় এবং আরাম পাওয়া যায়।

কলেরা, ডায়রিয়া অথবা রক্ত আমাশয়জনিত রোগ থেকে সেরে উঠতে পাথরকুচি পাতার জুড়ি নেই।

পাথরকুচি পাতার রসের সঙ্গে গোলমরিচ গুড়া মিশ্রণ করে পান করলে পাইলস এবং অর্শ রোগ হতে মুক্তি লাভ সম্ভব।

curious

শেয়ার করুন -

উত্তর দিন

আপনার মন্তব্য লিখুন
আপনার নাম লিখুন