সমুদ্রে অসংখ্য প্রাণীর বসবাস। মানুষ যেসকল প্রাণীর নাম জানতে পেরেছে তাদের মধ্যে তারা মাছ অন্যতম। তারা মাছ নিয়ে মানুষের কৌতুহল ও আগ্রহ প্রচুর।
আজ আমরা জানবো তারামাছ সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য-
নামকরণ:
তারা মাছের ইংরেজি নাম Star Fish কিংবা Sea Star. দেখতে তারার মত বলে এর নামকরণ হয় তারা মাছ।
বৈজ্ঞানিক নাম:
তারা মাছের বৈজ্ঞানিক নাম Asteroidea.
প্রজাতি:
পৃথিবীর সকল সাগর এবং মহাসাগরের তলদেশে প্রায় ১৫০০ প্রজাতির তারা মাছ জন্মে থাকে।
পর্ব/পরিবার:
তারা মাছ অ্যাস্টেরয়ডিয়া শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত। এই প্রাণী তারা আকৃতির একাইনোডার্মাটা পর্বের অন্তর্গত।
সবচেয়ে বড় তারা মাছটির নাম সূর্যমুখী তারা বা Sunflower Sea Star.
গঠন:
তারা মাছের সাধারণ গঠন হলো কাটাযুক্ত শরীর এবং পাঁচটি বাহু বা পা।
মূলত এই বাহুগুলির কারণেই এদের তারা মাছ বলা হয়। একটি তারা মাছের পাঁচটি বাহু রয়েছে।
কিছু কিছু তারা মাছের বাহুর সংখ্যা ৫ টির অধিকও হয়। এমনকি ৫০ টিও হয়ে থাকে।
প্রাণীটির একেকটি বাহুর দৈর্ঘ্য প্রায় ১ মিটার হয়।
তারামাছের বাহু বা পাগুলো নলাকৃতির। এই পা বা বাহু হাইড্রোলিক সিস্টেমের মাধ্যমে পরিচালিত হয় এবং নিচের পৃষ্ঠে এদের মুখ থাকে। এই প্রাণী তাদের দেহের ধ্বংসপ্রাপ্ত স্থান অথবা বাহু আবরণ পুনঃগঠন করতে পারে।
তারা মাছের উপরপৃষ্ঠ মসৃণ হয়। আবার অনেকসময় দানাদার অথবা কাঁটাময়ও হয়ে থাকে। এবং সম্পূর্ণ শরীর অধিক্রমণ প্লেট দ্বারা আবৃত থাকে।
এদের শরীরে সাঁড়সির মত অঙ্গ থাকে, যাকে শোষক বলা হয়।
মজার ব্যাপার হলো তারা মাছের কোন চোখ থাকে না। এদের বাহুগুলোর শেষ প্রান্তে একধরণের রঞ্জক পদার্থ সম্বলিত ফোঁটা দাগ থাকে। যেগুলো আলোক সংবেদী হয়ে থাকে।
এই সংবেদী ফোঁটা মাধ্যমে তারা মাছেরা খাবারের সন্ধান করে থাকে।
অধিকাংশ প্রজাতির তারা মাছ উজ্জ্বল রঙের লাল অথবা কমলা আভা যুক্ত হয়। এছাড়াও নীল, ধূসর অথবা বাদামী রঙের আভাযুক্ত তারামাছের দেখাও মেলে।
তারা মাছকে আমরা মাছ বললেও আসলে এটি কোন মাছ নয়। কারণ এর কোন মেরুদন্ড নেই।
কোরাল বা টুনা কে মাছ বলা যেতে পারে। এদের মেরুদন্ড রয়েছে।
বৈশিষ্ট্য:
মেরুদন্ডী প্রাণীদের সাধারণ বৈশিষ্ট্য থেকে তারা মাছের বৈশিষ্ট্য অনেকাংশেই আলাদা।
সাগরে অনেক রকমের তারা মাছ রয়েছে। সামুদ্রিক তারারা সব ধরনের জায়গায় নিজেদের বাঁচিয়ে রাখতে পারে।
হোক তা উত্তাল সমুদ্র কিংবা পাথুরে সমুদ্র অথবা জলজ উদ্ভিদপূর্ণ এলাকা।
কিছু কিছু তারা মাছ বালির ২০ হাজার ফুট নিচেও অনায়াসে বসবাস করতে পারে।
আয়ুষ্কাল:
বিভিন্ন প্রজাতি ভেদে তারা মাছেরা ১০ থেকে ৩৪ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকতে সক্ষম।
খাদ্যাভ্যাস:
তারা মাছেরা নিজেরা যতই শক্ত-রুক্ষ হোক না কেন এরা খাদ্য হিসেবে নরম প্রাণীটিই পছন্দ করে।
আর তাই মলাস্কা পর্বের প্রাণী যেমন- শামুক, ঝিনুক এদের খু্বই পছন্দ। এছাড়াও শৈবাল স্পন্জ ও খেয়ে থাকে।
তারা মাছের পেটে যে এনজাইম থাকে তা তাদের এধরণের খাদ্য খুব দ্রুত হজমে সাহায্য করে।
সামুদ্রিক প্রাণীরা কখনই সামাজিক হয় না। তবে বছরের একটা সময় তারা মাছেরা মিলিত হয় খাদ্যের জন্য।
এই মাছের খাদ্যগ্রহণ প্রকৃয়া বিশ্বের অন্যতম বিচিত্র খাদ্যগ্রহণ প্রকৃয়া গুলোর একটি।
তারা মাছের খাদ্যগ্রহণ করতে মুখের ভিতরে নিতে হলে তাদের ৫ বা যতগুলো বাহু রয়েছে সব সংকোচন করে তাদের উপর ভর করে মুখ গহ্বর টিকে উচু করে তুলতে হয়।
তাদের খাদ্যগ্রহণ প্রকৃয়া অত্যন্ত বিচিত্র। একটি ঝিনুক বা ছোট মাছ যখন তাদের কাছাকাছি আসে তখন তারা মাছ তার বাহুগুলোর অগ্রপ্রান্তে ভর দিয়ে দেহের মাঝখান থেকে মুখ উচু করে রাখে।
সেখানে শিকার গেঁথে যাবার সাথে সাথেই তাকে বাহু দিয়ে ঘিয়ে ফেলে। যাতে শিকার পালিয়ে যেতে না পারে।
এরপর সে তার শিকারের দিকে মুখের বদলে পাকস্থলিটিকে এগিয়ে দেয়।