ফ্যাক্টরিতে যেভাবে রং তৈরি করা হয়

ফ্যাক্টরিতে যেভাবে রং তৈরি করা হয়
রং তৈরি করা

বাসাবাড়ি থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্থানকে আরো আকর্ষণীয় করে গড়ে তুলার জন্য আমরা যেই তরল পদার্থকে ব্যবহার করে থাকি সেটি হচ্ছে রং।

হাজারো বছর পূর্ব থেকে এই রঙের ব্যবহার চলে আসলেও এখন থেকে মাত্র কয়েকশো বছর পূর্বেই কিন্তু একে আধুনিকায়ন করা হয়েছে। রং হচ্ছে আলোর বিভিন্ন আকৃতির তরঙ্গ দৈর্ঘ্য যার প্রধান উৎস হলো সূর্য।

খ্রীষ্ঠপূর্ব সময়ে রঙের বিভিন্ন ব্যবহার থাকলেও একে আরো গঠনমূলক ভাবে গত ৩০০ বছর ধরে ব্যবহার করা হচ্ছে। শুরুতে এই রংকে সীমিত আকারে ব্যবহার করা হলেও বর্তমানে রঙের বিস্তর ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়।

রং তৈরির উপকরণ – 

প্রাচীন কালে সকল মানুষের কাছে প্রকৃতিই ছিল রঙের একমাত্র উৎস। আকরিক চূর্ণ, কাঠ-কয়লার গুঁড়ো, রঙীন মাটি— এগুলোই ছিল সে সময়ের মানুষের রং তৈরির প্রধান হাতিয়ার।

এক্ষেত্রে বিভিন্ন কাঠ। যথা- তেঁতুলের কান্ড ও কয়লা মিশিয়ে তা থেকে কালো রঙ তৈরি করা হত।

নীল রঙ তৈরি করা হতো তুঁত থেকে। লাল ও গোলাপী রঙ তৈরি করা হতো চাতালা কোড়ির মূল থেকে।

এছাড়াও আরো অন্যান্য রং ব্যবহারের জন্য সেই রঙের যেকোনো ফুলকে বিভিন্ন প্রকৃয়ার মাধ্যমে ব্যাবহার করা হতো।

অন্যদিকে বিভিন্ন ধাতু দিয়ে রং তৈরির ক্ষেত্রে বর্তমানে যেসকল ধাতুর প্রয়োগ করা হচ্ছে সেগুলো হলো-

ক্যাডমিয়াম, ক্রোমিয়াম, কোবাল্ট, তামা, সীসা, পারদ, জিঙ্ক, লাপিসলাজুলি ইত্যাদি।

ক্যাডমিয়াম ইয়েলো, ক্যাডমিয়াম রেড, ক্রোম ইয়েলো, কোবাল্ট ব্লু, হান পার্পল, ইজিপ্সিয়ান ব্লু, রেড লেড, জিঙ্ক হোয়াইট, আল্ট্রামেরিন, টার্কি রেড — এই সকল রঙের মূল উপাদান হচ্ছে ধাতু বা ধাতুর আকরিক।

রঙের প্রকারভেদ – 

বিশ্বাস করুন আর নাই বা করুন আমাদের পৃথিবীতে খালি চোখে দেখতে সক্ষম প্রায় ১০ মিলিয়নের মত রং রয়েছে।

আধুনিক বিজ্ঞানে এই সকল রং গুলো কে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে যার একটি হচ্ছে –

মৌলিক এবং অপরটি যৌগিক।

মূলত মৌলিক রং গুলো হচ্ছে লাল, সবুজ এবং নীল। এছাড়াও মৌলিক রং গুলো সেই সকল রং যেগুলোর মাধ্যমে পৃথিবীর এই লক্ষ লক্ষ রং তৈরি করা সম্ভব।

curious24world

তবে ছাপা খানায় বা বিভিন্ন ডিজিটাল মেশিনে রঙের ক্ষেত্রে মৌলিক রং হচ্ছে লাল, হলুদ, এবং নীল।

অন্যদিকে যৌগিক রং হচ্ছে সেই সকল রং যেগুলো এই মৌলিক তিনটি রঙের সংমিশ্রণে তৈরি হয়ে থাকে।

যেমন-আপনি যদি হলুদ এবং লাল রং মিশ্রণ করেন তাহলে সেখান থেকে কমলা রং তৈরি হবে।

লাল এবং নীল রং মিশ্রন করলে সেখান থেকে বেগুনী রং তৈরি হবে। এছাড়াও নীল এবং হলুদকে একত্রিত করলে সেখান থেকে সবুজ রং তৈরি হবে।

ঠিক একই ভাবে এই সকল মৌলিক ও যৌগিক রং গুলোকে পৃথক এবং একসাথে মিশিয়ে বিভিন্ন রং তৈরি করা সম্ভব।

রং নিয়ে বেশ কিছু বছর পূর্বে বিজ্ঞানী নিউটন আরো এক মজার তথ্য প্রকাশ করেছিলেন তখন তিনি বলেন সূর্য থেকে যে আলো বের হয় তা মূলত ৭ টি রঙের সমষ্টি যাকে আমরা রংধনুর সাথেও তুলনা করতে পারি।

নিউটন বলেন এই সাতটি রং কে যদি একত্রিত করা যায় তাহলে সেই সকল রং মিলিত হয়ে সাদা রং তৈরি করবে।

অর্থাৎ সাদা হচ্ছে সকল রঙের সমাহার, ঠিক একই ভাবে এই সাদা রঙের অনুপস্থিতি হচ্ছে কালো বা অন্ধকার ।

ফ্যাক্টরিতে রং তৈরি করা – 

ফ্যাক্টরিতে রং তৈরির জন্য প্রথমে যেটি প্রয়োজন হয় সেটি হচ্ছে প্যাসেটিক ওয়েল, পানি এবং বিভিন্ন খনিজ পদার্থ ।

শুরতে একটি বড় পাত্রে তেল ঢেলে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় তাকে গরম করা হয়। এরপরে সেখানে প্রয়োজন মত খনিজ পদার্থ ঢেলে সেগুলোকে খানিকটা তরল করার জন্য হালকা পানি দেওয়া হয়।

এর সবকিছুর মিশ্রন শেষে সম্পূর্ন রং তৈরি হলে একে শীতল করা হয়।

এরপর স্কেলের সাহায্যে রঙের পুরুত্ব পরীক্ষা করে তাকে প্লাস্টিকের জারে বা টিনের ক্যানে ভরে বাজারজাত করা হয়।

এক্ষেত্রে প্রতিটি ফ্যাক্টরিতে এই সকল কাজ পরিচালিত করা হয় মেশিনের সাহায্যে ।

সবচাইতে দামি রং কম্পানি –

এখন পর্যন্ত আমাদের বিশ্বে সবচাইতে দামি পেন্টিং কোম্পানিটি হচ্ছে  দ্যা শারউইন উইলিয়ামস কম্পানি যাদের মোট অর্থের পরিমান হচ্ছে প্রায় ১৭.৫৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

আমাদের দেশের বিভিন্ন রঙের কম্পানি – 

 আমাদের দেশে যেসকল রঙের কোম্পানি রয়েছে সেগুলো হচ্ছে যথাক্রমে

  • বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ লিমিটেড ( Berger Paints Bangladesh Limited) 

  • এলিট পেইন্ট এন্ড ক্যেমিকাল ইন্ড্রাস্টিজ লিমিটেড (Elite Paint & Chemical Industries Ltd.)

  • এশিয়ান পেইন্টস বাংলাদেশ লিমিটেড  (Asian Paints Bangladesh Ltd.)

  • নিপ্পন পেইন্ট বাংলাদেশ Nippon Paint (Bangladesh)

  • রক্সিপেইন্টস লিমিটেড  Roxy Paints Ltd.

  • রাক পেইন্টস RAK Paints

curious

শেয়ার করুন -

উত্তর দিন

আপনার মন্তব্য লিখুন
আপনার নাম লিখুন