জরুরী রক্তের প্রয়োজনে কিছু ওয়েবসাইটের লিঙ্ক এবং বিভিন্ন সরকারি হাস্পাতালের ব্লাড ব্যাংক সহ আরো কিছু মোবাইল নাম্বার।
http://www.donatebloodbd.com/
http://blood.quantummethod.org.bd/bn
www.policebloodbank.gov.bd
মোবাইল ফোন সার্ভিস –
রক্তের বিষয়ে বাংলালিংকের নিজস্ব সার্ভিস রয়েছে। যেকোন বাংলালিংক নাম্বার থেকে ৮০০৮ নাম্বারে ডায়াল করে নিকটস্থ ব্লাডব্যাংক, হাসাপাতাল এবং ডোনারের ইনফরমেশন পাওয়া যায়।
জরুরী রক্তের প্রয়োজনে ফোন করুন: –
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ৮৬২১৬৫৮
*ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল শাখা – ৯৬৬৮৬৯০, ৮৬১৬৭৪৪, ০১৮১৯-২৮৪৮৭৮
*ঢাকা ডেন্টাল কলেজ শাখা ৯০১১৮৮৭, ৮০১৭১৪৬, ৯০০২০৩৫
*বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ শাখা ৯১২৪৬১৯, ৯১১৮২০২; এক্স: ৪৩০
*স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ শাখা ৭৩১৯১২৩, ৯৬৬৮৬৯০, ০১৮১৯-২৮৪৮৭৮
*ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ শাখা ০৯১-৫৪৮২৯
*চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ শাখা ০৩১-৬১৬৬২৫
*চট্টগ্রাম শাখা ৬১৬৬২৫
*রংপুর মেডিকেল কলেজ শাখা ৫২১৬৫১৮০
*বগুড়া জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ ৬৪৪-৫১০০২৯৫
*দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ শাখা ০৫৩১-৪৭৪৮
*রাজশাহী মেডিকেল কলেজ শাখা ০৭২১-৫২১৬৫১৮০, ০১৭২১-৭৭৩০৮০
*খুলনা মেডিকেল কলেজ শাখা ০৪১-৭৬১৫০৯
*সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ শাখা ০৮২১-৭১০৮৮০
*বাঁধন ব্লাড ব্যাংক
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, টিএসসি শাখা ৮৬২৯০৪২, ০১৭১১-০২৫৮৭৬
*বুয়েট শাখা ০১৯১২-০৮২৯১৯
*জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ০১৭১২-১৮০২৪৬
*রেটিনা ব্লাড ব্যাংক ৯৬৬৩৮৫৩, ০১৬১৪-৬০৬৪১১
*রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি ৯১১৬৫৬৩, ৮১২১৪৯৭
*সন্ধানী ইন্টারন্যাশনাল আই ব্যাংক ৯১২৪৩৫৩, ০১১৯০-১৫১৪৮০
*স্যার সলিমুল্লাহ কলেজ ব্লাড ব্যাংক ৭৩১৯১২৩
*ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল ব্লাড ব্যাংক ৮৩১৭০৯০, ৮৩২১৪৯৫
*কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন ৯৩৫১৯৬৯, ৮৩২২৯৮৭, ৯৩৪১৪৪১, ৮৩১৯৩৭৭
*সন্ধানী ন্যাশনাল আই ডোনেশন সোসাইটি ৮৬১৪০৪০
*চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ৬১৬৮৯১-৯৪, ৯৪৬১৬১৯৯
*ফাতেমা বেগম রেড ক্রিসেন্ট ব্লাড সেন্টার, *চট্টগ্রাম ০৩১-৬২০৬৮৫, ৬১২৩৯৫, ৬২০৯২৬
*পোর্ট হাসপাতাল, চট্টগ্রাম ৫০২০২৪
*রেলওয়ে হাসপাতাল, চট্টগ্রাম ৭২০১২১-৩৯
*বেগম তোয়েবা মজুমদার রেড ক্রিসেন্ট ব্লাড *সেন্টার, দিনাজপুর ০৫৩১-৬৪০২১
*ব্লাড ব্যাংক, খুলনা ৭৬২০০৬
—
রক্তদানের উপকারিতা
স্বেচ্ছায় নিজের রক্ত অন্য কারো প্রয়োজনে দান করাই রক্তদান। তবে রক্তদাতাকে অবশ্যই পূর্ণবয়স্ক অর্থাৎ ১৮ বছর বয়স হতে হয়। প্রতি চার মাস অন্তর প্রত্যেক সুস্থ ও প্রাপ্তবয়স্ক নর-নারী নিশ্চিন্তে ও নিরাপদে রক্তদান করতে পারেন। এতে স্বাস্থ্যে কোনো ধরনের ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে না। তবে রক্তদানের পদ্ধতি ও পরবর্তী প্রভাব সম্পর্কে অজ্ঞতা ও অযথা ভীতির কারণে অনেকেই রক্ত দিতে দ্বীধান্বিত হন। কিন্তু রক্তদানেরও যে উপকারিতা রয়েছে, সে কথা আমরা কয়জনই বা জানি?
উপকারিতা:
১ – রক্তদান স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। কারণ রক্তদান করার সঙ্গে সঙ্গে আপনার শরীরের মধ্যে অবস্থিত “বোন ম্যারো’ নতুন কণিকা তৈরির জন্য উদ্দীপ্ত হয়। রক্তদানের ২ সপ্তাহের মধ্যে নতুন রক্তকণিকা জন্ম হয়ে এই ঘাটতি পূরণ করে।
২ – বছরে তিনবার রক্তদান শরীরে লোহিত কণিকাগুলোর প্রাণবন্ততা বাড়িয়ে তোলে ও নতুন কণিকা তৈরির হার বাড়ায়।
৩ – রক্তদানে কোনো সমস্যা হয় না। কেননা একজন সুস্থ মানুষের শরীরে পাঁচ-ছয় লিটার রক্ত থাকে। এর মধ্যে সাধারণত ২৫০ থেকে ৪০০ মিলিলিটার রক্ত দান করা হয়, যা শরীরে থাকা মোট রক্তের মাত্র ১০ ভাগের এক ভাগ। রক্তের মূল উপাদান পানি, যা ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই পূরণ হয়।
৪ – রক্তদানের মাধ্যমে নিজেকে সুস্থ রাখার স্পৃহা জন্মে।
৫ – নিয়মিত স্বেচ্ছায় রক্তদানের মাধ্যমে পাঁচটি পরীক্ষা সম্পূর্ণ বিনা খরচে করা হয়। এর মাধ্যমে জানা যায় শরীরে অন্য বড় কোনো রোগ আছে কি’না?
যেমন: #হেপাটাইটিস-বি, হেপাটাইটিস-সি, সিফিলিস, ম্যালেরিয়া, এইচআইভি (এইডস) ইত্যাদি।
৬ – সম্প্রতি ইংল্যান্ডের এক গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত স্বেচ্ছায় রক্তদানকারী জটিল বা দুরারোগ্য রোগ-ব্যাধি থেকে প্রায়ই মুক্ত থাকেন।
৭ – নিয়মিত রক্তদানকারীর হৃদরোগ, লিভার ও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি অনেক কম থাকে।
৮ – রক্তদান অনেক ক্ষেত্রে ক্যান্সার প্রতিরোধেও সহায়তা করে।
৯ – রক্তে কোলস্টেরলের উপস্থিতি কমাতে সাহায্য করে।
১০ – শরীরে অতিরিক্ত আয়রনের উপস্থিতিকে বলে Hemochromatosis। নিয়মিত রক্তদান এই রোগ প্রতিরোধ করে।
১১ – স্থূলদেহী মানুষের ওজন কমাতে রক্তদান সহায়ক।
১২ – মুমূর্ষু মানুষকে রক্তদান করলে মানসিক তৃপ্তি আসে। কারণ, এতো বড় দান যা আর কোনোভাবেই সম্ভব নয়।
১৩ – রক্তদান ধর্মীয় দিক থেকে অত্যন্ত পূণ্যের বা সওয়াবের কাজ।
<> পবিত্র কোরআনের সূরা মায়েদার ৩২ নং আয়াতে আছে –
“একজন মানুষের জীবন বাঁচানো সমগ্র মানব জাতির জীবন বাঁচানোর মতো মহান কাজ”।
<> হিন্দু ধর্ম মতে, “সমগ্র বিশ্ব আমার কুটুম (আত্মীয়)” আর আত্মীয়ের প্রাণরক্ষা আমাদের দায়িত্ব।

রক্ত দানের শর্ত সমুহ –
১ – শারীরিক এবং মানসিকভাবে সুস্থ নিরোগ ব্যক্তি রক্ত দিতে পারবেন।
2 – রক্ত দাতার বয়স ১৮ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে হতে হবে।
৩ – শারীরিক ওজন মেয়েদের ক্ষেত্রে: ৪৫ কেজি এবং ছেলেদের ক্ষেত্রে ৪৭ কেজি অথবা এর বেশি হতে হবে। উচ্চতা অনযায়ী ওজন ঠিক আছে কি’না অর্থ্যাৎ বডি মাস ইনডেক্স ঠিক আছে কি’না দেখে নিতে হবে।
৪ – ভরপেটে খাওয়ার চার ঘণ্টা পর রক্ত দেওয়া শ্রেয়।
৫ – কোনোরকম এনার্জি ড্রিংক/মাদকসেবন রক্তদানের আগে সেবন না করাই ভালো।
৬ – কোন বিশেষ ধরনের ঔষধ ব্যবহার না করলে। যেমন: এ্যান্টিবায়োটিক।
৭ – রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ, ব্লাড প্রেসার এবং শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক থাকতে হবে।
৮. শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত রোগ এ্যাজমা, হাঁপানি যাদের আছে তারা রক্ত দিতে পারবেন না।
৯ – মহিলাদের ক্ষেত্রে ৪ মাস অন্তর-অন্তর, পুরুষদের ক্ষেত্রে ৩/৪ মাস অন্তর অন্তর রক্তদান করা যায়।
১০ – রক্তবাহিত জটিল রোগ যেমন: #ম্যালেরিয়া, ডায়েরিয়া, সিফিলিস, গনোরিয়া, ক্যান্সার, হিমোফিলিয়া, হেপাটাইটিস বি ও সি, এইডস, চর্মরোগ, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, টাইফয়েড, উচ্চ রক্তচাপ এবং বাতজ্বর না থাকলে।
১১ – মহিলাদের মধ্যে যারা গর্ভবতী নন এবং যাদের মাসিক চলছে না।
১২ – যাঁদের শরীরের কোনো স্থানের গ্ল্যান্ড (লিম্ফনোড) ফুলে গেছে। বিশেষ করে ঘাড়, গলায়, হাতের নিচের গ্লান্ড।
কিভাবে রক্তদান করতে হয়
রক্তদান করার জন্য ইচ্ছা শক্তি’ই যথেষ্ট। তবুও কিছু নিয়ম মানা উচিত।
১ – . আপনারা স্বেচ্ছায় রক্তদান করবেন, বিনিময়ে কোনো টাকা নিবেন না। কারণ বিনিময়ে কোনো টাকা চাওয়া হারাম।
৩ – রক্তদানের পূর্বে অবশ্যই রোগী দেখবেন এবং ডাক্তারের চাহিদা পত্র ছাড়া রক্তদান করবেন না।
৩ – রক্তদান করতে গেলে, কোন বন্ধুকে আপনার সাথে নিয়ে যাবেন। অর্থাৎ একা যাবেন না।
৪ – রক্তদানের উপযোগিতা যাচাই করার জন্য কতগুলো পরীক্ষা করা জরুরি।
যেমন: #হেপাটাইটিস-বি, হেপাটাইটিস-সি, এইচআইভি (হিউমেন ইমিউনোডিফিসিয়েন্সি ভাইরাস) বা এইডস, ম্যালেরিয়া ও সিফিলিস। আপনি রক্তদান/রক্ত গ্রহণের পূর্বে এই পরিক্ষাগুলোর রিপোর্ট অবশ্যই দেখবেন।
৫ – রক্তদানের আগে প্রতিটি রক্তদাতাকে তার স্বাস্থ্য সম্পর্কিত কিছু ব্যক্তিগত ও গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের জিজ্ঞাসা করা হয়। সেগুলোর সঠিক উত্তর দিতে হবে। রক্তদাতার শারীরিক তাপমাত্রা, রক্তচাপ, নাড়ীর গতি পরীক্ষা করা হয় এবং রক্তদাতার রক্ত জীবাণু মুক্ত কি’না তা জানার জন্য সামান্য রক্ত নেওয়া হয়।
৬ – এছাড়া এই রক্তের মাধ্যমে রোগী রক্তদাতার রক্তের মধ্যে কোন জমাটবদ্ধতা সৃষ্টি হয় কি’না তাও পরীক্ষা করা হয় (ক্রসম্যাচিং)। এতে সময় লাগে প্রায় ৪০ মিনিট।
৭ – রক্ত পরীক্ষার পর কারো রক্তে এইডস, হেপাটাইটিস-বি, হেপাটাইটিস-সি, সিফিলিস বা অন্য কোন জীবাণুর উপস্থিতি ধরা পরলে তাকে (রক্তদাতা) প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের পরামর্শ দেওয়া হয়।
৮ – সূঁচের অনুভূতি পাওয়ার মাধ্যমে রক্তদান প্রক্রিয়া শুরু হয়। এতে সময় লাগে সবোর্চ্চ ১০ মিনিট। সব মিলিয়ে ১ ঘন্টার মধ্যে রক্তদান করে আসতে পারবেন।
কাদের রক্তের প্রয়োজন হয়
১ – দূঘর্টনাজনিত রক্তক্ষরণ: দূঘর্টনায় আহত রোগীর জন্য দূঘর্টনার ধরণ অনুযায়ী রক্তের প্রয়োজন হয়।
২ – দগ্ধতা: আগুনে পোড়া বা এসিডে ঝলসানো রোগীর জন্য প্লাজমা/রক্তরস প্রয়োজন। এজন্য ৩-৪ ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন হয়।
৩ – অ্যানিমিয়া: রক্তে R.B.C এর পরিমাণ কমে গেলে রক্তে পযার্প্ত পরিমাণ হিমোগ্লোবিনের অভাবে অ্যানিমিয়া রোগ হয়। হিমোলাইটিক অ্যানিমিয়াতে R.B.C এর ভাঙ্গন ঘটে ফলে রক্তের প্রয়োজন হয়।
৪ – থ্যালাসেমিয়া: এক ধরনের হিমোগ্লোবিনের অভাবজনিত বংশগত রোগ। রোগীকে প্রতিমাসে/সপ্তাহে ১-২ ব্যাগ রক্ত দিতে হয়।
৫ – হৃদরোগ: ভয়াবহ Heart Surgery এবং Bypass Surgery এর জন্য প্রায় ৬-১০ ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন হয়।
৬ – হিমোফিলিয়া: এক ধরনের বংশগত রোগ। রক্তক্ষরণ হয় যা সহজে বন্ধ হয় না, তাই রোগীকে রক্ত জমাট বাধার উপাদান সমৃদ্ধ Platelete দেওয়া হয়।
৭ – প্রসবকালীন রক্তক্ষরণ: সাধারণত রক্তের প্রয়োজন হয় না তবে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হলে ১-২ বা ততোধিক ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন হয়।
৮. ব্লাড ক্যান্সার: রক্তের উপাদানসূমহের অভাবে ক্যান্সার হয়। প্রয়োজন অনুসারে রক্ত দেওয়া হয়।
৯ – কিডনী ডায়ালাইসিস: ডায়ালাইসিস-এর সময় মাঝে মাঝে রক্তের প্রয়োজন হয়।
১০ – রক্ত বমি: এ রোগে ১-২ ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন হয়।
১১ – ডেঙ্গু জ্বর: এ রোগে ৪ ব্যাগ রক্ত হতে ১ ব্যাগ Platelete পৃথক করে রোগীর শরীরে দেওয়া হয়।
১২ – অস্ত্রপচার: অস্ত্রপচারের ধরণ বুঝে রক্তের চাহিদা বিভিন্ন দেওয়া হয়।

রক্ত কি ?
রক্ত (Blood) হল উচ্চশ্রেণীর প্রাণিদেহের এক প্রকার কোষবহুল, বহু জৈব ও অজৈব পদার্থের সমন্বয়ে গঠিত সামান্য লবণাক্ত, আঠালো, ক্ষারধর্মী ও লালবর্ণের ঘন তরল পদার্থ যা হৃৎপিন্ড, ধমনী, শিরা ও কৈশিক জালিকার মধ্য দিয়ে নিয়মিত প্রবাহিত হয়। রক্ত একধরণের তরল যোজক কলা। রক্ত প্রধানত দেহে অক্সিজেন, কার্বন ডাই অক্সাইড এবং অন্যান্য বর্জ্য পদার্থ পরিবাহিত করে। রক্ত হল আমাদেরে দেহের জ্বালানি স্বরূপ। মানবদেহে শতকরা ৮ ভাগ রক্ত থাকে (গড়ে মানবদেহে ৫-৬ লিটার রক্ত থাকে)। রক্তের PH সামান্য ক্ষারীয় অর্থাৎ ৭.২ – ৭.৪। মানুষের রক্তের তাপমাত্রা ৩৬ – ৩৮ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড (গড়ে ৩৭ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড)।
#রক্তের অংশ: রক্তের মূল অংশ দুইটি। যথা:
১ – রক্ত রস (Blood Plasma)
২ – রক্ত কণিকা (Blood Corpuscle)
#রক্ত রস: রক্তের তরল, হালকা হলুদাভ অংশকে রক্ত রস (Plasma) বলে। রক্তকণিকা ব্যতীত রক্তের বাকি অংশই রক্ত রস। মেরুদন্ডী প্রাণিদের রক্তের প্রায় ৫৫% রক্ত রস।
#রক্তের প্রধান উপাদান দুইটি। যথা:
(ক) অজৈব পদার্থ (খ) জৈব পদার্থ
(ক) অজৈব পদার্থ: রক্ত রসে ৪ ধরণের অজৈব পদার্থ দেখা যায়। এগুলো হল: তরল পানি ৯১%-৯২%, জড় পদার্থ ৯% অক্সিজেন, কার্বন ডাই-অক্সাইড ইত্যাদি গ্যাসীয় ও খনিজ পদার্থ (Na+, K+, Ca++, Mg++, P+++, Cl-, Fe++, HCO-, PO43-, SO42-, Cu+, Mn++, Zn++, Pb++ ইত্যাদি) ০.৯%
(খ) জৈব পদার্থ: রক্ত রসে মাত্র ৭.১%-৮.১% জৈব পদার্থ থাকে। এর মধ্যে অধিক পরিমাণে থাকে প্লাজমা প্রোটিন- গড়ে ৬-৮ গ্রাম/ডেসি লি.। প্লাজমা প্রোটিনগুলো হচ্ছে – অ্যালবুমিন, গ্লোবিউলিন, ফিব্রিনোজেন। এছাড়াও অন্যান্য জৈব পদার্থগুলো হল: স্নেহ দ্রব্য (নিউট্রাল ফ্যাট, কোলেস্টেরল, ফসফোলিপিড, লেসিথিন ইত্যাদি), কার্বোহাইড্রেট (গ্লুকোজ), অপ্রোটিন নাইট্রোজেন দ্রব্য (অ্যামাইনো এসিড, ইউরিয়া, ইউরিক এসিড, ক্রিয়েটিন, ক্রিয়েটিনিন, জ্যানথিন ইত্যাদি), রঞ্জক দ্রব্য (বিলিরুবিন, বিলিভার্ডিন), বিভিন্ন ধরণের এসিড (যেমন: সাইট্রিক এসিড, ল্যাকটিক এসিড), হরমোন, ভিটামিন, এনজাইম, মিউসিন ও অ্যান্টিবডি।
#কাজ:
১ – এর মাধ্যমে পাচিত খাদ্যবস্তু, হরমোন, উৎসেচক ইত্যাদি দেহের বিভিন্ন অংশে পরিবাহিত হয়।
৩ – রক্তরসের প্রোটিনের পরিমাণ রক্তের সান্দ্রতা (ঘনত্ব), তারল্য (Fluidity), প্রবাহধর্ম (Rheology) বজায় রাখে এবং পানির অভিস্রবণিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করে।
৩ – রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
৪ – অ্যান্টিবডি, কম্প্লিমেন্টস ইত্যাদি প্রাথমিক রোগ প্রতিরোধ উপকরণ রক্ত ধারণ করে।
রক্তচাপ:
হৃদপিন্ডের সংকোচন-প্রসারণের কারণে মানুষের ধমনী ও শিরায় রক্তের চাপ সৃষ্টি হয়। হৃদপিন্ডের সংকোচন এর ফলে যে চাপ অনুভূত হয় তাকে সিস্টোলিক চাপ বলে। হৃদপিন্ডের প্রসারণের ফলে যে চাপ অনুভূত হয় তাকে ডায়াস্টোলিক চাপ বলে। মানুষের শরীরে ৮০/১২০ হলো আদর্শ রক্তচাপ, ৮০/১৩০ হলো সবচেয়ে অনুকূল রক্তচাপ এবং ৮৫/১৪০ হলো সর্বোচ্চ রক্তচাপ।
রক্তচাপের গুরুত্ব:
রক্তচাপ রক্তসংবহনে এবং জালকতন্ত্রে পরিস্রাবণ প্রক্রিয়ায় সাহায্য করে। এই পরিস্রাবণ প্রক্রিয়া রক্ত থেকে কোষে পুষ্টি সরবরাহ করা, মূত্রউৎপাদন করা প্রভৃতি শারীরবৃত্তীয় কাজের সঙ্গে জড়িত।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনকারী কারণসমূহ:
১ – হৃৎপিন্ডের সংকোচন করার ক্ষমতা।
২ – রক্তবাহের স্থিতিস্থাপকতা।
৩ – হরমোন।
৪ – খাদ্য গ্রহণ।
৫ – ঘুমানো।
৬ – দৈহিক পরিশ্রম।
রক্তের বিভিন্ন উপাদানের মান:
লোহিত রক্ত কণিকা-
পুরুষ: প্রতি ঘনমিটারে ৪.৫-৫.৫ লাখ
মহিলা: প্রতি ঘনমিটারে ৪-৫ লাখ।
আপনি কী জানেন, রক্ত কেনো লাল হয়?
আমাদের রক্তে হিমোগ্লোবিন নামের একটি অক্সিজেনবাহী লৌহসমৃদ্ধ বর্তুলাকার মেটালোপ্রোটিন থাকে। প্রতি গ্রাম হিমোগ্লোবিন ১.৩৬ হতে ১.৩৭ মিলিলিটার অক্সিজেন ধারণ করতে পারে। আর লৌহ এবং অক্সিজেনের যৌগগুলোর ক্ষেত্রে লাল বর্ণ ধারণ করার প্রবণতা থাকে। ঠিক এই কারণেই রক্তের রঙ লাল হয়।
আমাদের রক্তে মাঝে লোহা (হিমোগ্লোবিন) আছে। লোহার বৈশিষ্ট্য হলো, এর দ্বারা গঠিত অনেক যৌগে লাল রঙ ধারণ করে থাকে। রক্তে লালের জন্য দায়ী এই উপাদানটি আছে বলেই আমাদের রক্ত লাল। অপর দিকে টিকটিকির লোহা নেই বলে তার রক্ত লাল নয়। চিংড়ির বেলাতেও তেমন কথাই প্রযোজ্য। যদি কোনোভাবে আমাদের রক্তে লোহা না থেকে তামা থাকত তবে আমাদের রক্ত হতো নীল। এই ব্যাপারটা কল্পনা করে অনেক সায়েন্স ফিকশন রচিত হয়েছে যাদের রক্ত থাকে নীল।
আপনার শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণ আয়রন প্রয়োজন হিমোগ্লোবিনের মাত্রাকে ভালো রাখতে। শরীরে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কমে গিয়ে রক্তশূন্যতা হতে পারে। অস্থিমজ্জা রক্ত কোষ উৎপন্ন করে। তবে এই কোষ সাধারণত একটি নির্দিষ্ট সময় পর মারা যায়।
কীভাবে রক্ত বৃদ্ধি পায়?
জীবনযাপনের কিছু ধরন এবং কিছু খাবারের মাধ্যমে রক্তের লোহিত কণিকা বাড়ে, রক্ত ভালো থাকে। লাইফস্টাইল বিষয়ক ওয়েবসাইট বোল্ডস্কাই জানিয়েছে রক্ত ভালো রাখার কিছু উপায়ের কথা।
১ – আয়রন সমৃদ্ধ খাবার: হিমোগ্লোবিন তৈরির জন্য আয়রন সমৃদ্ধ খাবার, যেমন: লাল মাংস, শাক, ডিম, পালং শাক, কচু ইত্যাদি খাদ্য তালিকায় রাখতে পারেন।
২ – ফলিক এসিড: ভিটামিন বি৯ ও ফলিক এসিড লোহিত রক্ত কণিকা উৎপন্ন করতে সাহায্য করে। পালং শাক, বাদাম, ডাল, সিরিয়াল এগুলো খেতে পারেন।
৩ – ভিটামিন বি ১২: ভিটামিন ১২ সমৃদ্ধ খাবার দাবার লোহিত রক্ত কণিকা উৎপন্ন করতে সাহায্য করে। মাছ, ডিম, গরুর মাংসের লিভার, দুগ্ধ জাতীয় খাবার এই চাহিদা পূরণ করবে।
৪ – সবুজ শাক: সবুজ শাকে রয়েছে আয়রণ, প্রোটিন, ভিটামিন বি এবং ভিটামিন সি।
৫ – কমলা: এটি লোহিত রক্ত কণিকা বাড়াতে সাহায্য করে।
৬ – নিয়মিত ব্যায়াম: নিয়মিত ব্যায়াম লোহিত রক্ত কণিকা বাড়ায় এবং শরীরে অক্সিজেন ভালোভাবে প্রবাহিত হতে সাহায্য করে।
৭ – জীবনযাপনের ধরন পরিবর্তন: জীবনযাপনের কিছু বিষয় রক্তকে খারাপ করে দিতে পারে। যেমন-মদ্যপান লোহিত রক্ত কণিকা উৎপাদনে বাজে প্রভাব ফেলে।
রক্ত উপাদান চাইলেই একজন মানুষের শরীর থেকে আরেকজন মানুষের শরীরে রক্ত সঞ্চালন করা যাবে না। তার কারণ মানুষের রক্তের বিভিন্ন গ্রুপ রয়েছে। রক্তের লোহিতকণায় ও রক্ত রসে রাসায়নিক উপাদানগত কিছু তারতম্য রক্তের এই শ্রেণীবিভাগের কারণ। বিভিন্ন ধরনের রক্ত গ্রুপ থাকলেও রক্ত সঞ্চালনের ক্ষেত্রে কেবলমাত্র ABO গ্রুপ ও Rh ফ্যাক্টর গুরুত্বপূর্ণ। #রক্তের লোহিতকণার আবরণে বিশেষ বিশেষ ধরনের যৌগিক পদার্থ থাকে যাকে বলে অ্যান্টিজেন। দুই ধরনের অ্যান্টিজেন রয়েছে।
একটির নাম A অপরটির নাম B.
*রক্তের লোহিতকণার আবরণে শুধুমাত্র A অ্যান্টিজেন থাকলে রক্তের গ্রুপ হবে A.
*শুধুমাত্র B অ্যান্টিজেন থাকলে রক্তের গ্রুপ হবে B.
*A ও B উভয় অ্যান্টিজেন থাকলে রক্তের গ্রুপ হবে AB.
*আর A বা B কোনো অ্যান্টিজেন-ই না থাকলে রক্তের গ্রুপ হবে O.
#লোহিতকণার আবরণে যেমন অ্যান্টিজেন থাকে তেমনি রক্ত রসে থাকে অ্যান্টিবডি। সাধারণত দুই ধরনের অ্যান্টিবডি দেখা যায়: Anti-A এবং Anti-B.
বিপরীতধর্মী Antigen ও Antibody পরস্পরকে ধ্বংস করে।
*এজন্যে যার রক্তকণায় A অ্যান্টিজেন (Blood Group-A) রয়েছে তার রক্ত রসে আছে Anti-B Antibody.
*তেমনি যার রক্তকণায় B Antigen (Blood Group-B) রয়েছে তার রক্ত রসে আছে Anti-A Antibody.
*যার রক্তকণায় A ও B উভয় Antigen-B রয়েছে (Blood Group-AB), তার রক্ত রসে কোনো Antibody নাই।
*আর যার রক্তে AB কোনো Antigen-B নাই (Blood Group-O) তার রক্ত রসে Anti-A এবং Anti-B উভয় Antibody-B রয়েছে।
<> রক্ত সঞ্চালনের ক্ষেত্রে দাতা ও গ্রহীতার একই রক্ত গ্রুপ হতে হবে। রক্ত গ্রহীতাকে ভিন্ন গ্রুপের রক্ত দেওয়া হলে Antigen ও Antibody এর প্রতিক্রিয়ায় রক্তকণাগুলো ভেঙ্গে গিয়ে তাল পাকিয়ে যায় ও রক্তনালী বন্ধ হয়ে গিয়ে বিপদ, এমনকি মৃত্যুও ঘটতে পারে।
<> O গ্রুপের রক্তকণায় কোনো Antigen নেই। তাই O গ্রুপের অল্প পরিমাণ রক্ত যেকোনো গ্রুপের মানুষের শরীরে দেয়া যায়। তাই O গ্রুপের দাতাকে সার্বজনীন দাতা বলে।
<> AB গ্রুপের রক্ত রসে কোনো Antibody নেই। তাই অন্য যেকোনো গ্রুপের অল্প পরিমাণ রক্ত AB গ্রুপের মানুষের শরীরেও দেয়া যায়। তাই AB গ্রুপের মানুষকে সার্বজনীন গ্রহীতা বলে।
<> তবে সবসময় সঠিক গ্রুপের রক্ত সঞ্চালনই নিরাপদ। অত্যন্ত জরুরি অবস্থা ছাড়া কখনোই সার্বজনীন দাতা বা সার্বজনীন গ্রহীতার ধারণার প্রয়োগ ঘটানো হয় না।
<> রক্ত সঞ্চালনের ক্ষেত্রে আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ রক্ত গ্রুপ হল রেসাস গ্রুপ বা রেসাস ফ্যাক্টর। রেসাস ম্যাকাকাস (Rhesus Macaqus) প্রজাতির ভারতীয় বাঁদরের রক্তের লোহিত কণার আবরণে এক বিশেষ ধরনের যৌগ থাকে। যে মানুষের রক্তের লোহিতকণায় অনুরূপ যৌগ থাকে তাদের রক্তকে আরএইচ পজিশন বলা হয় আর যাদের রক্তে এই ধরনের যৌগিক পদার্থ থাকে না তাদের রক্তকে আরএইচ নেগেটিভ বলা হয়।
<> রক্তের গ্রুপ বলতে ABO-i কোনটি এবং তার সঙ্গে Rh Positive না Rh Negative বলতে হয়।
<> বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীর রক্তের গ্রুপ ভিত্তিক হার:
A=২২.৪৪%, B=৩৫.২০%, O=৩৩.৯৭%, AB=৮.৩৯%
#বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীর রক্তের রেসাস ফ্যাক্টর হার:
Rhesus Positive=97.44%
Rhesus Negative=2.56%
আরো পড়ুন –
পাঁচ কৌশলে – বৃদ্ধি করুন আপনার বুদ্ধি
Wow that was strange. I just wrote an very long comment but after I clicked submit my comment didn’t show up. Grrrr… well I’m not writing all that over again. Anyway, just wanted to say wonderful blog!