লাইফ সাপোর্টে জীবনের সাথে যুদ্ধ করে হার মেনে নিলেন দুই বাংলার চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ।
রবিবার স্থানীয় সময় দুপুর ১২:১৫ নাগাদ পরিবারের পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা হয় তাঁর মৃত্যু সংবাদ।
কলকাতার বেলভিউ নার্সিং হোম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এই গুণী অভিনেতা।
কিখংবদন্তি এই অভিনেতার মৃত্যু ছিল ৮৫ বছর বয়সে। ৪০ দিন ধরে চলছিল তাঁর চিকিৎসা। কিন্তু শুক্রবার থেকে ভয়াবহ অবনতি ঘটতে শুরু করে তাঁর শরীরের।
গত ৩৮ ঘন্টা যাবত তিনি কোন চিকিৎসায় সারা দিচ্ছিলেন না।
করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর মুখে ঢলে পরেন তিনি। এছাড়াও মরণঘাতী ক্যানসার সহ হার্ট এর আরও নানা রোগে ভুগে শেষ পর্যন্ত না ফেরার দেশে চলে গেলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ।
তার অভিনীত চরিত্রগুলোর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় হলো ‘ফেলুদা’। সত্যজিৎ রায়ের পরিচালনায় ‘সোনার কেল্লা’ এবং ‘জয় বাবা ফেলুনাথ’ ছবিতে ফেলুদা ভূমিকায় অভিনয় করেছেন।
প্রথমে ফেলুদা চরিত্রে তার চেয়েও ভালো কাউকে নেওয়ার পরিকল্পনা ছিল সত্যজিৎ রায়ের।
কিন্তু তার অভিনীত ফেলুদার প্রথম ছবি সোনার কেল্লা মুক্তি পাওয়ার পর তার অভিনয় শৈলী দেখে সত্যজিৎ রায় স্বীকার করেন যে, তার থেকে ভালো আর কেউ ছবিটির অভিনয় পারতো না।
অভিনেতা হিসেবে তিনি অর্জন করেন কিংবদন্তি খেতাব। তবে আবৃত্তি শিল্পী হিসেবেও তিনি বেশ সম্মান কুড়িয়েছেন।
দুটি বিষয়েই তার নাম অত্যন্ত সম্মানের সাথেই উচ্চারিত হয়।
একই সঙ্গে তিনি অনুবাদক ও কবি। বাংলা চলচ্চিত্রে বিখ্যাত পরিচালক সত্যজিৎ রায়ের প্রায় ৩৪টি ছায়াছবির থেকে ১৪ টি সিনেমাতেই অভিনয় করেছেন সৌমিত্র চট্রোপাধ্যায় ।
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় অভিনীত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রের তালিকা- অপুর সংসার, দেবী, ক্ষুধিত পাষাণ, স্বরলিপি, সমাপ্তি তিন কন্যা, স্বয়ম্বরা, পুনশ্চ, অতল জলের আহ্বান, আগুন, বেনারসি, অভিযান, সাত পাকে বাঁধা, চারুলতা, কাপুরুষ, আকাশ কুসুম, মহাশ্বেতা, পরিণীতা, অরণ্যের দিনরাত্রি, প্রথম কদম ফুল, অশনি সংকেত, সোনার কেল্লা, দত্তা, নৌকাডুবি, দেবদাস, হীরক রাজার দেশে, ঘরে বাইরে, গণশত্রু, চাঁদের বাড়ি ও জয় বাবা ফেলুনাথ।
একাধিকবার তিনি পেয়েছেন ফিল্মফেয়ার পুরষ্কার। ২০০৪ সালে ভারত সরকারের কাছ থেকে পদ্ম ভূষণ পুরস্কারে ভূষিত হোন।
২০১২ সালে এই গুণী অভিনেতা অর্জন করেন দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার।
এবং ২০১৭ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বঙ্গবিভূষণ পুরস্কারে ভূষিত হোন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় (২০১৩ সালে এই একই পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেছিলেন তিনি)।
