জেলি-যুক্ত চিংড়ি মাছ, এটি চেনার উপায় এবং এতে যে সকল ক্ষতি হয়

জেলি-যুক্ত চিংড়ি মাছ, এটি চেনার উপায় এবং কতটা ক্ষতিকর
জেলি-যুক্ত চিংড়ি মাছ, এটি চেনার উপায় এবং কতটা ক্ষতিকর

বাংলাদেশের ঢাকায় বিভিন্ন বাজার ঘুড়ে পাওয়া যাচ্ছে জেলি-যুক্ত চিংড়ি মাছ। কীভাবে বোঝা যাবে যে চিংড়িতে জেলি রয়েছে। জেলি-যুক্ত চিংড়ি খাওয়া কতটা নিরাপদ? চলুন জেনে নেওয়া যাক চিংড়ি মাছ, যেন একটি আভিজাত্যের নাম।

নিম্নবিত্ত থেকে উচ্চবিত্ত এমন কোন শ্রেণীর মানুষ নেই যে চিংড়ি পছন্দ করে না। খেতে যেমন সুস্বাদু, দেখতেও বেশ লোভনীয়। এজন্য রসনাবিলাসীদের নজর বরাবরই সুস্বাদু চিংড়ির ‍দিকে।

আর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে অসৎ উপায় অবলম্বন করে যাচ্ছে কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা। চিংড়ি মাছে জেলি ঢুকানো তারই একটি প্রচেষ্টা। ‍চিংড়ি মাছের গ্রহণযোগ্যতা বেশি হওয়ায় এর দাম বেশ চড়া। আর এর মধ্যে জেলি ঢুকিয়ে মছের ওজন বাড়িয়ে অতিরিক্ত দাম আদায়ের চেষ্টা করে যাচ্ছে সুযোগসন্ধানী এই ব্যবসায়ীরা।

রাজধানী ঢাকায় সম্প্রতি যাত্রাবাড়ি, কাওরান বাজার, নিউ মার্কেট সহ বেশ কয়েকটি মাছের আড়তে অভিযান চালায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভ্রাম্যমাণ আদালত। এসব অভিযানের ফলশ্রুতিতে সবার সামনে আসে, যে অভ্যন্তরীণ বাজারে মাথায় জেলি-যুক্ত চিংড়ি মাছ বিক্রয় করা হচ্ছে।

যাত্রাবাড়ি আড়তের যেসব বিক্রেতারা চিংড়ি মাছ বিক্রি করছিল, তাদের প্রায় সবার কাছেই পাওয়া যায় জেলি-যুক্ত চিংড়ি মাছ। জেলি দেয়া চিংড়ি বিক্রির অপরাধে যাত্রাবাড়ী মাছের আড়তের কিছু অসাধু ব্যবসায়ীকে জরিমানাও করা হয়েছে।

জেলা মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের অভিযোগের ভিত্তিতেই মঙ্গলবার এই অভিযান চালানো হয়। অভিযানে ছিলেন ঢাকা জেলার মৎস্য কর্মকর্তা মামুনুর রশিদ। তিনি বলেন, “চিংড়িকে আমরা বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি কারণ এর আগে রপ্তানির জন্য যেসব পাঠানো চিংড়ি পাঠানো হয়েছিল তাতে সাগু পাওয়া গিয়েছিল।

এই কারণে সেগুলো বাতিল হয়ে গিয়েছিল। এই ঘটনার পুণরাবৃত্তি রোধ করতেই এই ব্যবস্থা গ্রহন। তিনি আরও বলেন, জেলি থাকার কারণে দুই হাজার কেজির মতো চিংড়ি নষ্ট করে ফেলেছেন তারা।

জেলি-যুক্ত চিংড়ি চেনার উপায়:-

মৎস্য কর্মকর্তারা জানান সাদা চোখে দূর থেকে দেখে এইটা ধরার কোনো উপায় নেই যে, কোনটিতে জেলি আছে আর কোনটিতে জেলি নেই। এক্ষেত্রে ক্রেতা কে বেশি সতর্ক থাকতে হবে বলে জাণিয়েছেন তারা।

এর জন্য কাছ থেকে দেখতে হবে। তবে নিশ্চিত হওয়ার জন্য চিংড়ির মাথা ভেঙে দেখতে পারলে ভাল। যদি তাতে কোনো তরল পদার্থ থাকে তাহলেই বুঝতে হবে মাছটি জেলি-যুক্ত।

এ ব্যপারে মি. রশিদ বলেন, “যদি চিংড়ি মাছ প্রাকৃতিক হয় তাহলে মাথা ভাঙ্গার পরে সেখানে থাকা দ্রব্যগুলো দ্রুত কিংবা সহজেই ছড়াবে না। কিন্ত যদি জেলি-যুক্ত চিংড়ি হয়ে থাকে তাহলে মাথা ভাঙ্গার সঙে সঙে সেখানে পৃথক একটি পদার্থ দেখা যাবে, নিচু করে ধরলেই তার পুরোটা বেরিয়ে আসতে চাইবে।”

মি. রশিদ বলেন, তখন দেখলেই বোধ্যগম্য হবে যে আলাদা কোন বস্তু সেখানে প্রবেশ করানো হয়েছে। তবে প্রায়শই দোকানী কিংবা বিক্রেতারা মাথা ভেঙ্গে দেখতে চাওয়ার অনুমতি দেয় না। তাই জেলি-যুক্ত চিংড়ির বাজারজাতকরণ রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেই এগিয়ে আসতে হবে বলে মনে করেন তিনি।

জেলি-যুক্ত চিংড়ি কি ক্ষতিকর?

খাদ্য ও পুষ্টিবিদের মতে, চিংড়ি মাছের ভেতরে যে জেলি পাওয়া যায় তার সম্পূর্ণটাই প্লাস্টিক। এছাড়া সাগু বা অনেক সময় সাদা পাথর এবং ধাতব পদার্থের মত বস্তুও পাওয়া যায়।

আর এগুলো শরীরে প্রবেশ করলে কিডনি ও পাকস্থলীজনিত জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে বলে সতর্ক করেছেন পুষ্টিবিদ ইমদাদ হোসেন শপথ।

তিনি বলেন, এমনিতেই পাথর জাতীয় কিছু পাকস্থলী হজম করতে পারে না। এগুলো জমে থাকে। যার কারণে এক ধরনের অস্বস্তি এবং পাকস্থলীর প্রদাহ সৃষ্টি করে।

জেলির যে কেমিক্যাল সাবস্ট্যান্স সেটা একদমই ডাইজেস্ট হবে না। এটা যেমন পাকিস্থলীর ক্ষতিসাধন করতে পারে তেমনি কিডনির জন্যও খুবই ক্ষতিকর।

আন্তর্জাতিক বাজার বা অভ্যন্তরীণ বাজার যেটাই হোক না কেন, দেশীয় মাছ বা চিংড়ির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে বাজারগুলোতে।  জেলা মৎস্য কর্মকর্তারা বলছেন, ঢাকাতেই প্রায় দুই কোটি মানুষ মাছের চাহিদা পূরণ করেন নিকটস্থ বাজার থেকে। যার মধ্যে অন্যতম চিংড়ি।

সুম্বাদু এই মাছে জেলির উপস্থিতি নিয়ে উৎকন্ঠা প্রকাশ করছেন দেশের সাধারণ ক্রেতারাও। পারভেজ হোসেন নামে এক ক্রেতা বলেন, চিংড়ি দেখে বোঝা যায় না তাতে জেলি রয়েছে।

কিনার পর বাসায় এনে কাটলে তখন বোঝা যায় যে ভেতরে কিছু একটা প্রবেশ করানো হয়েছে। কিন্তু অনেক সময় না জেনেই আমরা সেটা খেয়ে ফেলি। এটা স্বাস্থের জন্য ক্ষতিকর তা তিনি জানেন বলেও জানান।

শেয়ার করুন -

১ মন্তব্য

উত্তর দিন

আপনার মন্তব্য লিখুন
আপনার নাম লিখুন