মূত্র থেকে প্লাস্টিক তৈরি কি সম্ভব? সম্প্রতি এ নিয়ে গবেষনা চালিয়েছেন সাউথ ক্যারোলিনার ক্লেমসন বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক।
তারা এমন এক প্রকৃয়া বের করেন যার মাধ্যমে মূত্র ও নিঃশ্বাসের মাধ্যমে ত্যাগ করা কার্বন-ডাই-অক্সাইডের মাধ্যমে প্লাস্টিক তৈরি করা যায়।
মূলত মহাকাশচারী বিজ্ঞানীদের মাথা থেকে মূত্র থেকে প্লাস্টিক তৈরির এই চিন্তা আসে । মহাকাশ যাত্রার সময় নভোচারীদের সকল বস্তু পুনর্ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত থাকতে হয়।
কারন তাদের সীমিত সুবিধা বা দ্রব্যাদি সঙ্গে নিতে হয়। যেকোন সময় তা নিঃশ্বেষ হয়ে যেতে পারে।
মহাকাশ যাত্রার দীর্ঘসময়ে কাজে সফল হতে হলে নভোচারীদের মাঝে বিদ্যমান সবকিছুর সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। এবং এর জন্যে দরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা।
মূত্র থেকে প্লাস্টিক তৈরি প্রকৃয়ায় প্রধাণত ইয়াররোওয়া লিপোলাইটিকা (Yarrowia lipolytica) নামক ইস্ট ব্যবহৃত হয়। প্রথমে মূত্র থেকে প্রাপ্ত নাইট্রোজেন এবং নিঃশ্বাস থেকে প্রাপ্ত কার্বন-ডাই-অক্সাইড ইস্টকে প্রদান করা হয়। যার রাসায়নিক সংকেত N+CO2->ইস্ট
ইস্টকে এমনভাবে জেনেটিকালি প্রকৃয়াকরণ করা হয় যেন তা নাইট্রোজেন ও কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করার পর পলিস্টার মনোমার (N+CO2+ইস্ট=পলিস্টার মনোমার) তৈরি করে।
এসব মনোমার থেকেই প্লাস্টিক পলিমার তৈরি হয়। প্রাপ্ত প্লাস্টিক একটি 3D প্রিন্টারের মাধ্যমে ব্যবহার্য বস্তু তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
ইস্ট ব্যবহার করে মূত্র ও কার্বন-ডাই-অক্সাইড থেকে প্লাস্টিক উৎপাদন উক্ত ইস্টের ভিন্ন স্ট্রেইন অনুরুপ প্রকৃয়া ব্যবহারের মাধ্যমে মূত্র ও কার্বন-ডাই-অক্সাইড থেকে ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড (মূত্র+CO2=ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড) তৈরি করতে সক্ষম।
ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড মানব দেহের জন্য একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। যা মানব দেহ নিজে তৈরি করতে পারে না। খাদ্যবস্তু থেকে এটি অর্জন করতে হয়।
নিঃশ্বাস থেকে প্রাপ্ত কার্বন-ডাই-অক্সাইড ইস্টের গ্রহণপোযোগী করার জন্য সায়ানো ব্যাকটেরিয়া বা শৈবাল ব্যবহৃত হয়। যা ইউরিন থেকে প্লাস্টিক তৈরি করতে সহায়তা করবে। এই প্রকৃয়া ব্যবহার করে একটি যুগান্তকারী সৃষ্টির নিরন্তর চেষ্টা করে চলেছে বিজ্ঞানীরা।
মহাকাশ যাত্রার সময় নভোচারীরা যেকোন সময় যেকোনো বিপদে পরতে পারে। এর মধ্যে অন্যতম হলো, সঙ্গে থাকা দ্রব্যাদি নিঃশেষ হয়ে যাওয়া। এ সংকটাপাপন্ন অবস্থায় তারা মূত্র থেকে পানি পান করে থাকে।
আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে অবস্থানরত নভোচারীরা ইউরিন থেকে বিশুদ্ধকরনের মাধ্যমে প্রাপ্ত পানি পান করে থাকেন। এছাড়া মূত্র থেকে প্লাস্টিক উৎপাদনের প্রচেষ্টাও চালিয়ে যাচ্ছে বিজ্ঞানীরা।
আশা করা যায় অদূর ভবিষ্যতে তারা এই প্রচেষ্টায় সফল হবে। এবং গোটা বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিতে সক্ষম হবে।