এসি দুর্ঘটনা এড়াতে যেসব তথ্য জেনে রাখা দরকার

এসি দুর্ঘটনা এড়াতে যেসব তথ্য জেনে রাখা দরকার
এসি দুর্ঘটনা এড়াতে যেসব তথ্য জেনে রাখা দরকার

 এসি দুর্ঘটনা –  গরমকালে একটু শীতলতার আরামের জন্য যে যন্ত্রটি ঘরে এনেছেন, আপনার সামান্য অবহেলায় সে যন্ত্রটিই হতে পারে আপনার পরিবারের ভয়ঙ্কর মৃত্যুর কারণ। জি হ্যা কথা বলছি আপনার ঘরের এসি সম্পর্কে। 

শীতের শেষে গরমের শুরু হয়। তীব্র গরম থেকে বাঁচতে অনেকেই তার সামর্থ্য অনুযায়ী এসি ব্যবহার করে থাকেন। অনেকে বছরের পর বছর এসি ব্যবহার করেন কোন প্রকার সার্ভিসিং ছাড়াই। তাদের ধারণা এসি কোন ঝামেলা দেখা দিচ্ছে না তাই সার্ভিসিং এর প্রয়োজনও পড়ছে না।

কিন্তু আসলেই কি সার্ভিসিং এর প্রয়োজন নেই? এবিষয়ে বুয়েটের অধ্যাপক অলোক কুমার মজুমদার বলেন, আমাদের দেশে এসির রক্ষণাবেক্ষণে খুব অবহেলা করা হয়। কিন্তু মনে রাখা দরকার, এই যন্ত্রটি কিন্তু বাসার অন্যসব যন্ত্রের মতো নয়।

এটির জন্য রক্ষণাবেক্ষণ খুবই জরুরি। প্রতিমাসে ফিল্টার পরিষ্কার রাখা, বছরে একবার অন্তত পুরো যন্ত্রটির সার্ভিসিং করানো, আউটডোর ইউনিট পরিষ্কার রাখতে হবে।

সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে এসির সংখ্যা বাড়ার সাথে সাথে এসি বিস্ফোরণের ঘটনার ঘটছে অনেক। দমকল বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা ও গাজীপুর মিলিয়ে ২০১৯ সালেই অন্তত পাঁচটি এসি বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। যার মধ্যে অন্তত চারজনের মৃত্যু হয়েছে, আহত হয়েছেন অন্তত ২২জন। আর সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জ মসজিদে এসি বিস্ফোরন ঘবরতো আমরা সবাই জানি।

সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এসি বিস্ফোরণের ঘটনাটি বেশি ঘটছে বলে অনেকেই মনে করেন। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক অলোক কুমার মজুমদার মনে করেন এসি দুর্ঘটনার পেছনে চারটি কারণ রয়েছে।

সেগুলো হচ্ছে –

১.অনেকে ঘরের লোড অনুপাতে এসি ব্যবহার করেন না। যার জন্য এসিটি অনেকক্ষণ ধরে চলতে থাকায় অতিরিক্ত গরম হয়ে যায়। তখন দূর্ঘটনা ঘটার সম্ভবনাও বেড়ে যায়।

২.অনেকে নিম্নমানের এসি কিনে যার ফলে সেগুলোর ভেতরে ফ্যান, তারের, বিদ্যুতের ব্যবস্থাগুলো ঠিক থাকে না। ফলে এগুলো কারিগরি ত্রুটির জন্য আগুনের সূত্রপাত হতে পারে।

৩. রক্ষণাবেক্ষনের অভাবে এসির গ্যাসে আগুন লেগে সেটি ঘরে ছড়িয়ে পড়তে পারে।

৪.অনেক সময় উইন্ডো এসির সামনে বাতাস চলাচলে বাধাগ্রস্ত হলে, সেটিও এসিকে গরম করে তুলতে পারে।

৫. একটানা অনেক্ষণ এসি ব্যবহার কররেও দূর্ঘটনা ঘটতে পারে।

দিন দিন এসির চাহিদা বাজারে বাড়ছে সে সাথে সরবারহ বাড়ছে এসির।নিম্নমানের গ্যাস আর প্রতিযোগিতার বাজারে। মানুষজন কোনপ্রকার নিরাপত্তার কথা না ভেবেই সস্তায় পুরোনো এসি কিনছে। এতে করে যতটা না সুবিধা হচ্ছে তার চেয়ে বেশি বাড়ছে দূর্ঘটনা ঘটার প্রবণতা।

এবিষয়ে রাজধানীর গুলশান এলাকার একটি এসি সরবরাহ এবং সার্ভিসিংয়ের প্রতিষ্ঠানের পরিচালক বলেন, বর্তমান সময়ের এসিগুলোতে যে গ্যাস ব্যবহার করা হয়, সেই গ্যাসে সহজে আগুন ধরে যায়। ফলে সেটিতে কোন লিক হয়ে জমে থাকা গ্যাসে বৈদ্যুতিক কারণে আগুনের স্ফুলিঙ্গ বা অন্য কোন ভাবে আগুনের সংস্পর্শে এলে সহজেই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটতে পারে।

যেভাবে এসি দুর্ঘটনা  ঘটতে পারেঃ-

১. রুমের আকার অনুযাযী সঠিক ক্ষমতার এসি ব্যবহার না করে পুরনো বা নিম্নমানের এসির ব্যবহার করা।

২.কম্প্রেসরের ভেতরে ময়লা আটকে জ্যাম তৈরি হওয়া

৩.এসির গ্যাস ভেতরে জমে লিক হয়ে গেলে।

৪.দীর্ঘক্ষণ টানা এসি চালানো হলে এসি অতিরিক্ত গরম হয়ে বিস্ফোরণ ঘটতে পারে।

৫.এসির ভেতরে বা বাইরের বৈদ্যুতিক তারসমূহ নড়বড়ে হয়ে থাকলে, তাতে শর্টসার্কিটের তৈরি করতে পারে।

এছাড়াও বৈদ্যুতিক হাই ভোল্টেজের উঠানামা জনিত কারণে ইলেকট্রনিক যন্ত্রের ওপর চাপ তৈরি হওয়াতে এসি বিস্ফোরণ হতে পারে। অনেকেই নিয়মিত এসির সার্ভিসিং করান না যার ফলে সার্ভিসিং এর অভাবেও এ ভয়ঙ্কর বিস্ফোরণ হতে পারে।

এসি দুর্ঘটনা এড়াতে যা করবেনঃ-

১. ঘরের আকার অনুযায়ী সঠিক লোডের ভালো ব্যান্ডের এসি ব্যবহার করতে হবে।

২. নিয়মিত এসি সার্ভিসিং করাতে হবে।

৩. এসির বাতাস চলাচলে নিরবিচ্ছিন্ন হতে হবে।

৪.বজ্রপাত বা বৃষ্টির সময়ে এসি বন্ধ রাখতে হবে।

৫.বৈদ্যুতিক সংযোগ, সকেট, ফিল্টার নিয়মিতভাবে পরীক্ষা করা।

এছাড়াও একটানা এসি চালানো থেকে বিরত থাকতে হবে একটানা ৮ ঘন্টার বেশি সময় এসি চালানো যাবেনা। আউটডোর মেশিন এমন স্থানে বসাতে হবে, যেন পর্যাপ্ত বাতাস চলাচল করতে পারে।

বাজারে অনেকে চীনা বা অন্য দেশ থেকে কম দামে এসি এনে সেটাতে বড় বড় ব্র্যান্ডের লোগো ব্যবহার করে চালিয়ে দিচ্ছে এবিষয়ে সংশ্লিষ্টরা নির্দিষ্ট শো-রুম থেকে ভালো মানের এসি কিনতে পরামর্শ দেন।

 

শেয়ার করুন -

উত্তর দিন

আপনার মন্তব্য লিখুন
আপনার নাম লিখুন