পেঙ্গুইন পাখি – প্রাণী জগৎ

পেঙ্গুইন পাখি - প্রাণী জগৎ
পেঙ্গুইন পাখি

যদি প্রশ্ন করা হয় কোন পাখি মানুষের মতন হাটে? তবে এর সহজ উত্তর হচ্ছে পেঙ্গুইন পাখি। পেঙ্গুইন নামক এ অদ্ভুত সুন্দর প্রানীটি তার ভারি শরীর নিয়ে মানুষের মতন হেটে বেড়ায়, যাকে দূর থেকে দেখলে যে কেউ ভেবে বসবে একজন বয়স্ক মানুষ হেটে যাচ্ছে।

সাদা কালো রঙের মিশ্রণে অনেকটা সাহেবি পোশাকের আদলে গড়া স্থুল দেহের পেঙ্গুইন হলো পক্ষীকুলের সবচেয়ে বড় পাখিদের মধ্য অন্যতম। এদের দেখে বিশ্বাস না হলেও আশ্চর্য্যের বিষয় হলো পেঙ্গুইন কিছুটা উড়তে পারে। দূর থেকে হাতের মতন দেখা গেলেও কাধের দু পাশে দুটি পাখা এদের উড়তে সাহায্য করে। যদিও এটি খুবি সামান্য পরিমানে।

পেঙ্গুইনরা প্রধানত শীতলতম স্থানে থাকতে পছন্দ করে। এরা অ্যান্টার্কটিকার উপকূলীয় অঞ্চলের বসবাস করে। পৃথিবীতে বেশকয়েক ধরনের পেঙ্গুইন পাখি রয়েছে । এরমধ্যে অন্যতম হল অ্যাডিলি পেঙ্গুইন যা কিনা পৃথিবীর সবচেয়ে কিউট পাখিদের মধ্য অন্যতম।

 এরা সামুদ্রিক পাখিদের মধ্যে সবথেকে বেশি দক্ষিণে বসবাসকারী পাখি। এছাড়া দক্ষিণে বসবাসকারী অন্যান্য পাখিগুলো হল এম্পেরার পেঙ্গুইন, সাউথ পোলার স্কুয়া, উইলসনস স্ট্রম পেট্রেল, স্নো পেট্রেল, অ্যান্টার্কটিক পেট্রেল ইত্যাদি পাখি গুলোও এই দক্ষিণ প্রান্তেই বসবাস করে।

অ্যাডিলি পেঙ্গুইনের নামকরণ করেন ফরাসি অনুসন্ধানকারী জুলেস দুমন্ত ডি উরভিল্লে।  তিনি তাঁর স্ত্রী ‘অ্যাডিলি” এর সাথে মিল রেখে ১৮৪০ সালে এই পেঙ্গুইনের নাম রাখেন  নাম  “অ্যাডিলি”।

অ্যাডিলি পেঙ্গুইন বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাসঃ-  প্রাচীন কাল থেকেই পেঙ্গুইনকে পক্ষী সম্প্রদায়ে অন্তভূক্ত ভাবা হয়। অ্যডিলি পেঙ্গুইন অ্যানিমিয়া জগতের কর্ডাটা পর্বের প্রাণী। সেফিনিফিসিডিয়া পরিবারের সেফিনিসিফর্মেস বর্গের অ্যাডিলি পেঙ্গুইনকে পৃথিবীর সবচেয়ে কিউট পেঙ্গুইনদের অন্যতম প্রজাতি ভাবা হয়।

প্রজাতিঃ- অ্যাডিলি পেঙ্গুইনরা পেগোসিলিস গোত্রের অন্তর্ভুক্ত তিনটি প্রজাতির মধ্যে একটি। মাইটোকন্ড্রিয়া এবং নিউক্লিয়াস কোষ গবেষণার মাধ্যমে জানা গেছে যে এই প্রজাতিটি ৩৮ মিলিয়ন বছর আগে অন্যান্য প্রজাতিদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছে আর অ্যাডিলি পেঙ্গুইন প্রজাতি  অন্যান্যদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছে প্রায় ১৯ মিলিয়ন বছর আগে।

পেঙ্গুইন পাখি - প্রাণী জগৎ
পেঙ্গুইন পাখি

দেহের গঠনঃ-  অ্যাডিলি পেঙ্গুইন পাখি  অন্যান্য পেঙ্গুইনদের থেকে আকারে মাঝারি এবং আয়তনে ছোট হয়ে থাকে। এরা লম্বায়  ৪৬ থেকে ৭৫ সেমি হয়ে থাকে এবং এদের ওজন প্রায় ৩.৬-৬ কেজি পর্যন্ত হতে পারে। এদের লেজ অন্যান্য পেঙ্গুইনদের তুলনায় লম্বা হয়। কালো চেহারার মোটা পেটের এই পেঙ্গুইন সহজের নজর কাড়ে।

অন্যদের থেকে অ্যাডিলি পেঙ্গুইনদের আলাদা করার অন্যতম প্রধান চিহ্ন হলো এদের চোখের পার্শ্ববর্তী সাদা রিং এবং ঠোঁটের নিচের পালক। ঠোঁটের এই দীর্ঘ পালক তাদের ঠোটের প্রায় পুরোটা অংশই ঢেকে দেয়। এদের অনেকটা আমেরিকার ডিনার জ্যাকেট টেকসুডোর মতন দেখায়।

বাসস্থানঃ- অ্যাডিলি পেঙ্গুইনদের বেশিরভাগই অ্যান্টার্কটিকার উপকূলীয় অঞ্চলে বসবাস করে। তবে প্রজনন মৌসুমে এদের কিছু অংশ অ্যান্টার্কটিকা পেনিনসুলা অঞ্চলে উপনিবেশ আকারে বসবাস করে। সাধারণত প্রজনন সময় তারা বড় প্রজনন উপনিবেশের মধ্যে সমবেত হয়। এছাড়াও জলবায়ু জনিত সমস্যার কারণে এরা এদের বাসস্থান পরিবর্তন করে থাকে।

বংশবৃদ্ধিঃ-  অ্যাডিলি পেঙ্গুইনরা অক্টোবর মাস থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত বংশবৃদ্ধি করে থাকে। এসময় তারা অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশের বিভিন্ন উপকূলীয় অঞ্চলে অবস্থান করে।  এরা পাথর দিয়ে এবড়ো-খেবড়ো বাসা বানায় এবং সেখানেই ডিম দেয়।

সাধারণত প্রতি মৌসুমে এরা দুটি করে ডিম দেয়। এ ডিম গুলো ৩২ থেকে ৩৪ দিন পর্যন্ত তা দেবার পর ডিম ফেটে বাচ্চা বের হয়ে আসে। বাচ্চা জন্মের ২০-২২ দিন মা পেঙ্গুইন তাদের বাচ্চাদের ঘরের ভেতরই দেখভাল করে থাকে।

বাচ্চাগুলো বড় না হওয়া পর্যন্ত বাবা মার সাথেই থাকে। তারা বাচ্চাদের আগলে রাখে তবে বাচ্চাদের বয়স ৫০-৬০ দিন হলেই তারা সাগরে নেমে যায় এবং নিজেদের মতন করে জীবন শুরু করে।অনুমান করা হয় যে অ্যাডিলি পেঙ্গুইনদের এখনও ২.৪-৩.২ মিলিয়ন জোড়া পৃথিবীতে বসবাস করে।

অ্যাডিলি পেঙ্গুইন ঘণ্টায় ৪৫ মাইল (৭২ কিলোমিটার/ঘণ্টা) সাঁতার কাটতে পারে। এরা আচরণে চঞ্চল প্রকৃতির হয়।  এদের প্রধান শত্রু হলো চিতাবাঘ সীল, স্কুয়া, তিমি ইত্যাদি সমুদ্রিক শিকারি প্রাণী।

পেঙ্গুইন নিরীহ প্রকৃতির পাখিদের একটিঃ –  পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর প্রাণীগুলোর তালিকা করতে গেলে পেঙ্গুইন থাকবে প্রথম সারিতে। কালের বিবর্তন ও জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে এ প্রাণীটি বিলুপ্ত হবার পথে ।

প্রাণীকুলকে বিলুপ্ত হওয়া থেকে রক্ষা করার জন্য প্রথম পদক্ষেপ আমাদেরই নিতে হবে। এ সকল প্রাণীদের টিকিয়ে রাখার জন্য পরিবেশ দূষণ রোধে আমাদের সবাইকে আরো সচেতন হওয়া প্রয়োজন।

curious

শেয়ার করুন -

উত্তর দিন

আপনার মন্তব্য লিখুন
আপনার নাম লিখুন