কচ্ছপ – পৃথিবীর প্রাচীন প্রানীদের অন্যতম হচ্ছে কচ্ছপ। শতবছরের জীবন কাল নিয়ে বেঁচে থাকা এই প্রাণীটি একপ্রকার নিরীহ জীবনযাপনই করে থাকে।
আমরা সবাই খরগোশ আর কচ্ছপের সেই দৌড়ের লড়াইয়ে গল্প জানি। যেখানে দ্রুতগতির খরগোশের সাথে দৃঢ় গতির কচ্ছপ জয় লাভ করেছিলো। আর আজ আমরা জানব সেই কচ্ছপের জীবনধারণ সম্পর্কে।
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস: – জগৎ – > প্রাণী জগৎ পর্ব -> কর্ডাটা উপপর্ব -> মেরুদণ্ডী শ্রেণী -> সরীসৃপ বর্গ -> টেস্টুডিনিস বৈচিত্র্য -> আনুমানিক ৩০০ টি প্রজাতি নিয়ে ১৪ টি জীবিত গোত্র আছে কচ্ছপের। কচ্ছপ এমন একধরনের সরীসৃপ যারা জল এবং স্থল উভয়েই বাস করে। যাদের মধ্য কালো কচ্ছপ সাধারণত স্থলে বাস করে, এবং নীল কচ্ছপগুলো সামুদ্রিক হয়।
দেহের গঠন: – কচ্ছপ (Tortoise) Testudines বর্গের অন্তর্গত ডাঙ্গায় বসবাসকারী সরীসৃপ। এদের দেহ খোলসদ্বারা আবৃত থাকে। খোলসের উপরের অংশকে Carapace(ক্যারাপেস) এবং নিচের অংশকে Plastron(প্লাসট্রন )বলে। কচ্ছপ বিভিন্ন পরিস্থিতিতে তার নিজের শরীরের অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা পরিবর্তন করতে পারে, সাধারণত এ ধরনের প্রাণীদের ঠান্ডা-রক্তের প্রাণী বলে অভিহিত করা হয়। এরা কয়েক সে.মি. থেকে ২ মিটার পর্যন্ত বড় হতে পারে।

কচ্ছপ প্রজনন: – কচ্ছপ পানিতে বাস করলেও এরা ডাঙায় ডিম ছাড়ে। মেয়ে কচ্ছপরা গর্ত করে গর্তে ডিম পারে, একটি গর্তে১-৩০ টির মতন ডিম থাকে। তারা সাধারণত রাতের বেলা ডিম পাড়ে এবং ডিম পাড়ার পর মা কচ্ছপ ডিমগুলোকে মাটি, বালি বা অন্য যেকোন জৈব পদার্থ দিয়ে ঢেকে দেয়। এর পর সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক নিয়মর ডিম ফুটে বাচ্চা বের হতে প্রজাতি বিশেষে ৬০ থেকে ১২০ দিন সময় লাগে।
ডিমের আকার মায়ের আকারের উপর নির্ভর করে এবং carapace এবং plastron এর মাঝে অবস্থিত cloacal opening(পায়ুমুখ) এর প্রস্থ পরিমাপ করে এর মোটামুটি ধারণা পাওয়া যায়। মেয়ে কচ্ছপদের plastron এ প্রায়ই “V” আকৃতির খাঁজ থাকে। এটি ডিম পাড়ার সময় সাহায্য করে থাকে। ডিম তায়ের জন্য প্রয়োজনীয় সময় পার হওয়ার পর বাচ্চা কচ্ছপ দাঁত দিয়ে ডিমের খোসা কেটে বের হয়ে আসে।
বাচ্চা কচ্ছপরা একটি ভ্রণথলে (embryonic sac) নিয়ে জন্মগ্রহণ করে যা তাদের ৩ থেকে ৭ দিন পর্যন্ত পুষ্টি সরবরাহ করে থাকে। শুধু মাত্র বাচ্চা কচ্ছপরা তাদের প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানের জন্য ভিন্ন ধরনের খাবার খেয়ে থাকে। উদাহরণস্বরূপ, তৃণভোজী কচ্ছপদের বাচ্চারা অতিরিক্ত আমিষের চাহিদা পূরণের জন্য কীটপতঙ্গ খেয়ে থাকে।
লিঙ্গ বৈশিষ্ট্য: – কিছু কচ্ছপ প্রজাতির পুরুষদের ঘাড় মেয়েদের থেকে লম্বা থাকে। আবার কিছু প্রজাতির মেয়েদের নখর পুরুষদের থেকে বড় হয়ে থাকে। তবে অধিকাংশ কচ্ছপ প্রজাতিতে পুরুষদের থেকে মেয়েরা আকারে বড় হয়ে থাকে।
পুরুষের খোলসের উপরের অংশ প্রজননে সহযোগিতা করার জন্য ভিতরের দিকে বাকানো থাকে। কচ্ছপদের লিঙ্গ নিরূপণের সবথেকে সহজ উপায় হচ্ছে তাদের লেজ লক্ষ্য করা। সাধারণত মেয়েদের নিচের দিকে বাকানো ছোট লেজ থাকে অন্যদিকে পুরুষদের উপর দিকে বাকানো তুলনামূলক ভাবে বড় লেজ থাকে।
খাবার: – অধিকাংশ ডাঙ্গায় বসবাসকারী কচ্ছপ তৃণভোজী। তারা ঘাস, আগাছা, পাতা, ফুল এবং কিছু ফল খেয়ে বেঁচে থাকে। যদিও কিছু সর্বভূক কচ্ছপও এই পরিবারে আছে। পোষ্য কচ্ছপরা সাধারণত ঘাস, পাতা, আগাছা এবং কিছু ফুল খায়। কিছু প্রজাতি তাদের বাসস্থানে প্রাপ্ত কীটপতঙ্গ এবং মৃতদেহও খেয়ে থাকে।
প্রত্যেক প্রজাতির কচ্ছপের পুষ্টির চাহিদা ভিন্ন রকমের হয়ে থাকে। কচ্ছপ সাধারণত দলবদ্ধ প্রাণী নয় এবং একাকি জীবন যাপন করে থাকে। বড় কচ্ছপরা শুকনো জমিতে খুব ধীরে চলে, প্রায় ০.২৭ কিমি./ঘণ্টা। কচ্ছপের নথিভুক্ত দ্রুততম গতি ৫ মাইল/ ঘণ্টা।
কচ্ছপের জীবনকাল: – কচ্ছপদের সাধারণত ১৫০ বছর পর্যন্ত বাঁচার কথা শোনা গেছে। এই পর্যন্ত রেকর্ডকৃত কচ্ছপদের মধ্যে সবথেকে দীর্ঘজীবি কচ্ছপ হচ্ছে Tu’i Malia। তাকে ১৭৭৭ সালে, ব্রিটিশ পরিবার Captain Cook তার জন্মের অল্প দিনের মধ্যেই উপহার দেন Tongan Royal Family কে। ১৯৬৫ সালের ১৯ মে ১৮৮ বছর বয়সে তার স্বাভাবিক মৃত্যু হয়। ততদিন পর্যন্ত সে Tongan royal family এর তত্ত্বাবধানে ছিল।
অপরদিকে ভারতের আলীপুর চিড়িয়াখানার কর্মকর্তারা দাবী করেন “আদৃতা”(Adwaita) সবথেকে দীর্ঘায়ু প্রাণী। আদৃতা ২০০৬ সালের ২৩ মার্চ মারা যায়। “আদৃতা” কে Aldabra giant tortoise এবং Lord Wellesley তাকে ভারতে আনেন।
১৮৭৫ সালে Alipur Zoological Gardens প্রতিষ্ঠার সময় তাকে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়। কর্মকর্তাদের মতে রেকর্ড অনুসারে আদৃতার বয়স কমপক্ষে ১৫০ বছর কিন্তু অন্যান্য তথ্য উপাত্ত অনুসারে তার বয়স ২৫০বছর। আদৃতাকে Robert Clive এর পোষা প্রাণী বলে ধারনা করা হয়।
আরো পড়ুন –
খরগোশ বা শশক – প্রাণী জগৎ
লেখাটি পড়ে দারুন লাগল। এমন প্রানীদের সম্পর্কে নতুন তথ্য অনেক কিছুই জানা যায়। দারুন হয়েছে লেখাটি।