প্লাজমা থেরাপি আসলে কি? যেভাবে কাজ করে এটি!

প্লাজমা থেরাপি আসলে কি? যেভাবে কাজ করে এটি!
প্লাজমা থেরাপি আসলে কি? যেভাবে কাজ করে এটি!

প্লাজমা থেরাপি – করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে যারা পুরোপুরিভাবে সুস্থ হয়ে উঠেছেন তাদের শরীরে এক ধরনের অ্যান্টিবডি বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়। আর ওই সকল ব্যক্তির রক্ত থেকেই প্লাজমা সংগ্রহ করে আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে সেই অ্যান্টিবডি প্রয়োগ করা হয়।

এতে করে তার শরীরেও তখন সেই অ্যান্টিবডি তৈরি হতে থাকে, যা আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে করোনাভাইরাসকে মোকাবেলা করে এবং ভাইরাসকে অকেজো করতে সাহায্য করে। পরীক্ষামূলক প্রয়োগের মাধ্যমে দেখা গেছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই প্রক্রিয়া ব্যবহার করে অনেক রোগীই সুস্থ হয়ে উঠেছেন।

তবে এটি সব রোগীদের শরীরে কাজ করার ব্যাপারে সর্বোচ্চ প্রমাণ না থাকায় এটিকে চিকিৎসার উদ্দেশ্যে ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করে শুধুমাত্র পরীক্ষামূলক পর্যায়ে রাখার পরামর্শ দিচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। সেইসাথে একটি অন্তর্বর্তীকালীন গাইডলাইনও দিয়েছে সংস্থাটি।

যেখানে প্লাজমা থেরাপিকে বলা হয়েছে ‘ইনভেষ্টিগেশনাল থেরাপিউটিকস’। সংস্থাটি বলছে, গবেষণার অংশ হিসেবে পরীক্ষামূলক প্রয়োগের বাইরে এটি অংশ নিতে চাইলে সেটির লাভক্ষতি যাচাই করা হবে। এরপর সেটি নৈতিকতা বিষয়ক কমিটি এবং যোগ্যতাসম্পন্ন একটি বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা কমিটির কাছ থেকে অনুমোদিত হতে হবে।

এছাড়া, প্লাজমা থেরাপি ব্যবহারের আগে রোগীর কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে এবং প্লাজমা থেরাপি ব্যবহারের পর সেটির ফলাফল পর্যবেক্ষণ করতে হবে। এরপরে সঠিকভাবে তা নথিভুক্ত করে চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের অবহিত করতে হবে বলেও জানায় সংস্থাটি। কিন্তু এটির বিপরীতে ভিন্ন এক চিত্র দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশে।

কারণ, এই প্লাজমা থেরাপি শুধুমাত্র পরীক্ষার ক্ষেত্রে প্রয়োগের কথা বলা হলেও এদেশের বেশ কিছু বেসরকারি হাসপাতালে এই থেরাপি কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় দেয়া হচ্ছে। এছাড়া, এই থেরাপি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ইদানীং প্রচুর গ্রুপ তৈরি হয়েছে।

তারা কোভিড-১৯ থেকে সুস্থ হয়ে উঠা ব্যক্তিদের প্লাজমা দিয়ে জীবন বাঁচানোর আহবান জানানোর পাশাপাশি সুস্থ হয়ে ওঠা ব্যক্তিদের সাথে আক্রান্ত রোগীদের যোগাযোগের ব্যবস্থা নিশ্চিত করছেন। প্রতি ঘণ্টায় এ গ্রুপগুলোতে প্লাজমা দানকারীর খোঁজে বহু মানুষ ফোন নম্বর সহ হাসপাতালের নাম পোষ্ট করছেন।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এমন একটি গ্রুপের উদ্যোক্তা হলেন, করোনাভাইরাস থেকে সেরে ওঠা টেলিভিশন সাংবাদিক শাহাদাত হোসেন। তার এই গ্রুপে মাত্র তিনদিনে সদস্যসংখ্যা গিয়ে দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজারে। এ ব্যপারে তিনি বলেন, আমি নিজে ভুগেছি তাই বুঝতে পারছি এর যন্ত্রণা।

কারো প্রিয়জন যদি আক্রান্ত হয় সে নিশ্চয়ই শেষ চেষ্টাটি করে দেখতে চাইবে বলে জানান তিনি। এদিকে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দেয়া প্রটোকল তারা কতটা মানছেন সে প্রশ্নে বাংলাদেশ প্রাইভেট ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক ওনার্স এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট ডা. মনিরুজ্জামান ভুঁইয়া বলেন, বিশ্বের অনেক দেশেই এটি ব্যবহৃত হচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশের সব যায়গায় ব্যবহৃত হচ্ছে তা সঠিক নয়। বরং মাত্র কয়েকটি জায়গায় এটি ব্যবহৃত হচ্ছে।

তবে ভাইরাসটি নতুন হওয়ায় যেহেতু এর কোন চিকিৎসা বা ভ্যাকসিন নেই। তাই রোগী ও তাদের আত্মীয়রাই বেশি আগ্রহী এই প্লাজমা থেরাপির ব্যাপারে। এরপর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক নাসিমা সুলতানা বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যেভাবে বলবে আমরা সেভাবেই এগোবো। এতে আমাদের নিজেদের কোন গাইডলাইন নেই। সবার জন্যই যে প্লাজমা থেরাপি তা কিন্তু নয়।

এটির জন্য অ্যান্টিবডি ম্যাচিং এরও একটি বিষয় আছে। করোনাভাইরাসের সব চিকিৎসাই এখন পরীক্ষামূলক। প্লাজমা থেরাপিও তাই। এ বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যদি রেকমেন্ড না করে তাহলে আমাদের সরকার বা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ও তা রেকমেন্ড করে না বলে জানান তিনি।

অপরদিকে, প্লাজমা থেরাপি প্রয়োগ সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞ কমিটির প্রধান ও ঢাকা মেডিকেল কলেজের হেমাটোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মহিউদ্দিন আহমেদ খান বলেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো আমরা বৈজ্ঞানিক গবেষণা করছি। যাদের নিউমোনিয়া ও শ্বাসকষ্ট আছে এবং অক্সিজেনের মাত্রা ৯৩ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে এরকম মারাত্মক অসুস্থদের ব্যাপারে একটা গাইডলাইন দেয়া আছে।

এই থেরাপিটি ‘সিভিয়ারলি ইল’ আর ‘ক্রিটিকালি ইল’ এই দুই ধরনের আক্রান্ত ব্যক্তিদেরকে দেয়া হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, করোনাভাইরাস থেকে সেরে ওঠা সকল রোগীর শরীরে একরকম অ্যান্টিবডি থাকে না। রক্তের প্লাজমায় যে অ্যান্টিবডি তৈরি হয় তা একটি নির্দিষ্ট মাত্রা পর্যন্ত হলে তারপর আমরা সেটাকে নেই।

আর এই প্লাজমা থেরাপির কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া না থাকায় কোভিড-১৯ ধরা পরার পর যত দ্রুত সম্ভব প্লাজমা থেরাপি দেয়ার কথা বলেছেন তিনি। তবে রোগীদের সুস্থ করে তুলতে বাংলাদেশে প্লাজমা থেরাপি কতটা সফল হচ্ছে এবং এ পর্যন্ত কতজন রোগী প্লাজমা থেরাপি পেয়েছে সে সম্পর্কে এখনো কোন তথ্য পাওয়া যায়নি।

আরো পড়ুন –

মাইগ্রেন কি? কেন হয় এবং এর লক্ষন
শেয়ার করুন -

উত্তর দিন

আপনার মন্তব্য লিখুন
আপনার নাম লিখুন