আদা খাওয়ার উপকারিতা এবং অপকারিতা

আদা খাওয়ার উপকারিতা এবং অপকারিতা
আদা খাওয়ার উপকারিতা এবং অপকারিতা

আদা খাওয়ার উপকারিতা  –  আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে প্রতিনিয়তই আদাকে মসলা হিসেবে ব্যবহার করে থাকি। তাছাড়া, আদা শরীরের জন্য খুবই উপকারী। এতে রয়েছে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এজেন্ট, যা শরীরের রোগ-জীবাণুকে ধ্বংস করে। সেই সাথে রয়েছে ক্রোমিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও জিঙ্ক, লবণ, পটাশিয়াম, ভোলাটাইল, অয়েল ইত্যাদি।

আদা খাদ্যশিল্পে বিভিন্ন পানীয়, আচার, ওষুধ ও সুগন্ধি তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। এটি একটি ভেষজ ওষুধ। আদা শুকনো অথবা ভেজা দুভাবেই খাওয়া যায়। আদা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একটি স্থানীয় প্রজাতি এবং এটির রয়েছে অসংখ্য গুণাগুণ ও উপকারিতা। নিচে তা দেওয়া হলো –

প্রতি ১০০ গ্রাম আদায় যা যা রয়েছেঃ

১. এনার্জিঃ ৮০ ক্যালরি, ২. কার্বোহাইড্রেটঃ ১৭ গ্রাম, ৩. ফ্যাটঃ ০.৭৫ গ্রাম, ৪.পটাশিয়ামঃ ৪১৫ মিলিগ্রাম ও ৫. ফসফরাস।

৩৪ মিলিগ্রাম আদা খাওয়ার উপকারিতা :

১. জ্বর, ঠাণ্ডা, কাশি,শরীরের যে কোন ব্যথা ইত্যাদিতে আদা খুবই উপকারী। কারণ আদায় রয়েছে এমন কিছু উপাদান যা শরীরের তাপমমাত্রার ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। তাই শীতকালে ঠাণ্ডার সময় আদা চা খাওয়া যেতে পারে।

২. ঋতু পরিবর্তনের সময় অ্যাজমা, মাইগ্রেনের মতো সমস্যা প্রায়শই দেখা যায়। এই সময়ে ডায়েটে আদা রাখা ভালো। সর্দি-কাশির প্রকোপের সময় মুখে আদা রাখলে আরাম পাওয়া যায়।

৩. গা গোলানো ও বমিভাব থেকে রেহাই পেতে কয়েক কুচি আদা চিবিয়ে খেলে এ সকল সমস্যা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

৪. আর্টারি ওয়ালে খারাপ কোলেস্টেরল ও ফ্যাটি অ্যাসিড জমে করোনারি হার্ট ডিজিজের সমস্যা দেখা দেয়। ফলে শরীরের রক্ত চলাচলে অসুবিধা দেখা যায়। আদা রক্ত চলাচলে এবং লিভার ও ব্লাডে কোলেস্টেরল অ্যাবজর্বশন কম রাখতে সাহায্য করে।

৫. অতিরিক্ত ওজন ঝরাতেও আদা সাহায্য করে। কারণ, এতে করে টিস্যু বেশি পরিমানে এনার্জি ব্যবহার করে। যার ফলে বেশি ক্যালরি বার্ন হয়।

৬. অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর আদা ক্যান্সার ও হার্টের সমস্যা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। বিশেষ করে ওভারিয়ান ক্যান্সার প্রতিরোধে আদা খুবই উপকারী।

৭. আদা হজমে সাহায্য করে।গ্যাস্ট্রিক সমস্যাতেও আদা বেশ কার্যকর।

৮. গর্ভবতী মহিলাদের সকালে খারাপ লাগার সমস্যা কমাতে সাহায্য করে আদা।

৯. যারা আর্থ্রাইটিসের সমস্যায় ভুগছে তারা সারা দিনের খাবারে অল্প পরিমাণে আদা রাখার চেষ্টা করতে হবে। এতে করে আর্থ্রাইটিসের সমস্যা আস্তে আস্তে দূর হয়ে যাবে। তাছাড়া, আর্থ্রাইটিসের ব্যথা কমাতে জিঞ্জার অয়েল উপকারী।

১০. আদা যে কারো পেটের অস্বস্তিদায়ক যন্ত্রণা থেকে বাঁচিয়ে তাকে সুস্থ রাখে।

১১. প্রতিদিন কাঁচা আদা চিবিয়ে খাওয়ার অভ্যাস করলে ত্বকে সহজে বয়সের ছাপ পড়বে না এবং কারো ফুড পয়জনিং ও পেটের সমস্যা থাকলে বার বার আদার রস খেলে তা খুব সহজেই ভালো হয়ে যাবে।

১২. আদা খেলে শরীরের অতিরিক্ত ঘামের সমস্যা দূর হয়।

১৩. আদাতে রয়েছে ম্যাগনেশিয়াম ও জিঙ্ক যা শরীরের রক্তপ্রবাহ স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে।

১৪. আদা খেলে কোলন ক্যান্সার এবং জরায়ুর ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে।

১৫. আদা প্রাকৃতিক পেইন কিলার যা ব্যথানাশকের কাজ করে। বাতজনিত গাঁটে ও মাথাব্যথায় আদা বেশ কার্যকর।

১৬. আদায় অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এজেন্ট রয়েছে, যা শরীরের রোগজীবাণু ধ্বংস করে প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

১৭. আদা শরীরের প্রয়োজনীয় পুষ্টির শোষণ ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলে।

১৮. নিয়মিত আদা খেলে শরীরের হাড়ের জয়েন্টের ব্যথা দূর করে।

১৯. আদা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ ও রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আদার নির্যাস শরীরের কোষে গ্লুকোজের শোষণক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এতে করে ডায়াবেটিস রোগীর রক্তে দীর্ঘমেয়াদে সুগারের স্তর ঠিক রাখতে ভূমিকা রাখে এবং কোষগুলোতে নির্বিগ্নে ইনসুলিনের চলাচল ঠিক রাখে।

২০. আমাশয়, জন্ডিস, পেট ফাঁপা রোধে আদার রসে খুব উপকার পাওয়া যায়।

২১. আদার রস দাঁতের মাড়িকে শক্ত করে এবং দাঁতের ফাঁকে জমে থাকা জীবাণুকে ধ্বংস করে।

২২. আদায় থাকা অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটরি এজেন্ট দেহের যে কোনো কাটাছেঁড়া বা ক্ষতস্থান দ্রুত শুকাতে সাহায্য করে।

২৩. আদা সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেমকে উত্তেজিত করে রক্ত পরিসঞ্চালন বৃদ্ধি করে এবং রক্তনালীকে প্রসারিত করে। ফলে শীতকালেও শরীর বেশ গরম থাকে।

২৪. আদার রস রক্তশূন্যতা দূর করে।

২৫. আদায় থাকা ভিটামিন-ই, ভিটামিন-এবি ও সি চুল পড়া রোধ করে। নিয়মিত কাঁচা আদা খাওয়ার অভ্যাস করলে চুলের গোড়া মজবুত হয়।

২৬. আদা পেট পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে।

২৭. এটি ত্বকের জন্যও বেশ উপকারী। নিয়মিত আদা খেলে ত্বকের ব্রণ ওঠা বন্ধ হয় এবং ত্বক পরিষ্কার ও মসৃণ থাকে।

২৮. যারা গলার চর্চা করেন তাদের গলা পরিষ্কার রাখার জন্য আদা আর লবণ খুবই উপকারী।

২৯. হিক্কা বা হেঁচকির জন্য এককাপ ছাগলের দুধের সাথে ১ চামচ আদার রস মিশিয়ে খেলে সঙ্গে সঙ্গে ঘন ঘন হেঁচকি সমস্যা কমে যাবে।

৩০. বসন্ত গুটি হলে ১ চামচ আদার রসের সাথে ১ চামচ তুলসী পাতার রস মিশিয়ে খেলেই বসন্ত গুটি বের হয়ে যাবে।

এছাড়াও, আদার আরও অনেক ধরনের উপকারী দিক রয়েছে যা বলে শেষ করা যাবে না। তাই আমাদের প্রত্যেকের নিয়মিত অল্প করে হলেও আদা খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা উচিৎ। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে এর জন্য সতর্কতা মেনে চলতে হবে।

যেমনঃ সতর্কতা – ১. কারো গলস্টোনের সমস্যা থাকলে দিনে কত পরিমাণ আদা খাওয়া যেতে পারে তা ডাক্তারের থেকে জেনে নিতে হবে।

২.গর্ভাবস্থায় সারা দিনে ২৫০ গ্রামের বেশি আদা খাওয়া যাবে না। এ ক্ষেত্রেও ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া আবশ্যক।

আমাদের ইউটিউব চ্যানেল- 

আরো পড়ুন –

কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতা এবং অপকারিতা
শেয়ার করুন -

2 মন্তব্য

  1. আমি নিজে অনেক উপকার পাচ্ছি আদা খেয়ে। আট টাকা মূল্যের গ্যাসের ওষুধের চেয়ে বেশি কাজ করে।

উত্তর দিন

আপনার মন্তব্য লিখুন
আপনার নাম লিখুন