ভিটামিন – ডি গ্রহন,
সূর্যের আলো আমাদের দেহের জন্য অনেক উপকারী। কারণ, আমরা যখন সূর্যের আলো সরাসরি গায়ে লাগাই তখন আমাদের শরীরে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন – ডি তৈরি হয়। তাছাড়া, মাছ, ডিম, দইয়ের মত বিভিন্ন খাবারে পর্যাপ্ত পরিমাণে এই ভিটামিন – ডি রয়েছে।
তবে শুধু খাবার থেকে যথেষ্ট পরিমাণ ভিটামিন-ডি পাওয়া একটু কঠিন। তাই যুক্তরাজ্যের জনস্বাস্থ্য বিভাগ থেকে উপদেশ দেয়া হয়েছে, শীতকালে যেন মানুষ সূর্য থেকে দিনে অন্তত ১০ মাইক্রোগ্রাম করে ভিটামিন-ডি গ্রহণ করে।
সে সময়ে যদি সূর্যের আলো থেকে ভিটামিন-ডি যথেষ্ট সময় ধরে গ্রহন করা সম্ভব না হয়, তাহলে তাদেরকে সারা বছর ধরে ১০ মাইক্রোগ্রাম করে ভিটামিন-ডি খাওয়ার কথাও বলেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। এদিকে, করোনাভাইরাসের কারণে সারা বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চল লকডাউন করায় মানুষকে ঘরে থাকতে বলা হয়েছে।
এর ফলে তারা সূর্যের সংস্পর্শ থেকে বঞ্চিত হওয়ার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় ভিটামিন-ডি থেকে বঞ্চিত হতে পারে বলে মনে করেন ইংল্যান্ডের জনস্বাস্থ্য বিভাগের বিশেষজ্ঞরা।
যারা নিয়মিত ভিত্তিতে ঘরের বাইরে যায় না, বৃদ্ধনিবাসে থাকেন এবং বাইরে গেলে এমন পোশাক পরেন যা শরীরের অধিকাংশই ঢেকে রাখে তাদের জন্য সূর্য থেকে ভিটামিন-ডি গ্রহন করার বিকল্প হিসেবে জনস্বাস্থ্য বিভাগ সারা বছর তাদেরকে ভিটামিন-ডি খাওয়ার উপদেশ দিয়ে থাকে।
আবার, যাদের গায়ের রঙ একটু কৃষ্ণবর্ণের তাদের শরীরের পিগনেন্ট মেলানিন দেহকে সূর্য থেকে যথেষ্ট পরিমাণ রশ্মি শোষণ করতে দেয় না। যার ফলে ত্বক প্রয়োজনীয় পরিমাণ ভিটামিন-ডি তৈরি করতে পারে না। তাই তাদের জন্য জনস্বাস্থ্য বিভাগ একই পরামর্শ দিয়েছে।
স্কটল্যান্ড এবং ওয়েলসের সরকারও তাদের নাগরিকদেরকে একই ধরণের উপদেশ দিয়েছেন বলে জানা গেছে। আসুন এবার জেনে নেওয়া যাক ভিটামিন-ডি এর প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কেঃ –
১. ভিটামিন-ডি সবল হাড়, দাঁত ও পেশীর জন্য খুবই উপকারী।
২. ভিটামিন-ডি এর অভাবে শিশু ও প্রাপ্তবয়স্কদের হাড়ের সমস্যা তৈরি হতে পারে। তাই তাদের জন্য ভিটামিন-ডি গ্রহণ করা অত্যন্ত প্রয়োজন।
৩. কিছু গবেষণায় ধারণা করা হয়েছে যে, শরীরে যথেষ্ট পরিমাণ ভিটামিন-ডি থাকলে সাধারণ সর্দিজ্বর ও ফ্লু’র বিরুদ্ধে এটি প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করতে পারে।
এবার চলুন জেনে নেওয়া যাক এটি আসলে কতটুকু পরিমানে খাওয়া জেতে পারে সে সম্পর্কে, ভিটামিন-ডি সাপ্লিমেন্ট বা ট্যাবলেট খুবই নিরাপদ হলেও প্রতিদিন অতিরিক্ত পরিমাণে এটি খাওয়া যাবে না। কারণ, এতে করে শরীরে দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা তৈরি হতে পারে।
তাই কোন বয়সে কতটুকু পরিমান ভিটামিন-ডি সাপ্লিমেন্ট নেওয়া যেতে পারে তা নিচে দেওয়া হলোঃ
১. দিনে ২৫ মাইক্রোগ্রামের বেশি ভিটামিন-ডি ১২ মাসের নিচের বয়সের শিশুদের নেয়া উচিত নয়।
২. এক থেকে দশ বছরের শিশুদের জন্য দিনে ৫০ মাইক্রোগ্রামের বেশি ভিটামিন-ডি নেওয়া উচিত নয়।
৩. দিনে ১০০ মাইক্রোগ্রামের বেশি ভিটামিন-ডি প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য নেওয়া উচিত নয়।
এছাড়া, যাদের ভিটামিন ডি এর স্বল্পতা রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে অনেক সময় ডাক্তাররা অতিরিক্ত পরিমানে ভিটামিন-ডি গ্রহণ করার কথা বলে থাকেন। আবার, যাদের কিডনির সমস্যার মতো বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা থাকে তাদের জন্য ভিটামিন ডি নেয়ার নিষেধাজ্ঞা থাকে।
করোনাভাইরাসে ভিটামিন-ডি এর কার্যকারীতা সম্পর্কে যুক্তরাজ্যে মেডিসিনের ইমেরিটাস প্রফেসর জন রোডস বলেন, ভিটামিন-ডি শরীরের অভ্যন্তরীণ জ্বালাপোড়া কমাতে সহায়তা করে।
তাছাড়া, এটি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির অভ্যন্তরীণ প্রদাহের কারণে ফুসফুসে যে বড় ধরণের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে সেটিকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে কার্যকর হতে পারে বলে জানান তিনি।
তবে এই বিষয়ে আরো অনেক গবেষণার প্রয়োজন আছে বলে মনে করেন অধ্যাপক রোডস। তাছাড়া, মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কার্যকর রাখতে ভারসাম্যপূর্ণ সুষম খাদ্যই যথেষ্ট বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
আরো পড়ুন –
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির পাঁচটি সহজতর উপায়