ওজন কমানোর জন্য ডায়েট ও শরীরচর্চা কতটা কার্যকর

ওজন কমানোর জন্য ডায়েট ও শরীরচর্চা কতটা কার্যকর
ওজন কমানোর জন্য ডায়েট ও শরীরচর্চা কতটা কার্যকর

দৈনন্দিন জীবনে আমাদের প্রত্যেকেরই উচিৎ একটি ডায়েট চার্ট মেনে চলা। আমরা হয়তো অনেকেই ওজন কমানোর জন্য প্রতিদিন ডায়েট ও শরীরচর্চা করে থাকি কিন্তু এর কোনো যথাযথ ফল পাই না।

মূলত ডায়েট এবং শরীর চর্চায় নানান ধরনের ভুলের কারণেই আমাদেরকে এ ধরনের সমস্যায় পড়তে হয়। তাই ডায়েটে যেসব ভুলের কারনে আমরা যথাযথ ফল পাই না অর্থাৎ আমাদের ওজন কমানোর জন্য আমাদের ঠিক কি করা উচিত সে সম্পর্কে আজ আলোচনা করবো।

কী করে মানসিক দৃঢ়তা বজায় রেখে ডায়েট এবং শরীর চর্চা করা যায় সে সম্পর্কে লাইফস্টাইল মডিফাই চিকিৎসক জাহাঙ্গীর কবির বলেন, আমরা হয়তাে কথার কথায় বলছি যে ওজন কমাতে চাই। আসলে আমরা শরীরের চর্বি গলাতে চাই। আর চর্বি গলানোর প্রধান বাধা হচ্ছে ইন্সুলিন।

এই ইনসুলিনের কাজ হচ্ছে লাইপোজেনেসিস করা অর্থাৎ চর্বিটাকে জমিয়ে রাখা। যাতে জরুরি মুহূর্তে আমরা এই চর্বি দিয়ে চলতে পারি। এর জন্য প্রতিদিন খাবার টাকে আমাদের এমন ভাবে খেতে হবে যেন শরীরে ইনসুলিনের পরিমানটা কম জমে। আর আপনি যদি খালি পেটে ব্যায়াম করেন তাহলে সে সময় ইনসুলিনটা না থাকায় শরীরের এই চর্বিটা বিনা বাঁধায় গলতে শুরু করবে।

অর্থাৎ শরীর তখন জমানো চর্বিটাকে অতি সহজেই গলাতে পারবে। এছাড়া, ওজন নিয়ন্ত্রণে সবার আগে দরকার মানসিক দৃঢ়তা। জাহাঙ্গীর কবির বলেন, অনেকে বলে যে আমি পানি খেয়েও মোটা হয়ে যাচ্ছি। আবার অনেকে বলে, কিছু না খেয়েই আমার ওজন কমার বদলে দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে এবং আমি মোটা হয়ে যাচ্ছি।

আর এ সকল সমস্যার সমাধান হিসেবে ডাঃ জাহাঙ্গীর কবির কিছু নিয়ম মেনে চলতে চলার পরামর্শ দিয়েছেন। নিচে তা দেওয়া হলোঃ

নাম্বার – ১. ওজন নিয়ন্ত্রণে নজর দিতে হবে খাবারেঃ ডাক্তার জাহাঙ্গীর কবির বলেন, আমাদেরকে এমন খাবার খেতে হবে যেখানে শর্করার পরিমাণ কম থাকবে অর্থাৎ ১০% এর মতো। আর আমিষের পরিমাণ থাকবে ২০% এবং উপকারী চর্বি থাকবে ৭০%। শরীর তখন তার আগের জমে থাকা চিনি এবং গ্লাইকোজেন গুলোকে খরচ করে ফেলে। আর এর পর পরেই সে চর্বি গলানো শুরু করতে বাধ্য হয়।

নাম্বার – ২. শরীরকে তৈরি করতে হবে চর্বি গলানোর জন্যঃ এ নিয়ে ডাক্তার জাহাঙ্গীর কবির বলেন, আমরা কখনই আমিষ বা প্রোটিন বেশি খেতে পারব না। কারন এতে শরীরে ইনসুলিনের মাত্রা বেড়ে যাবে। তাই একটা ডায়েট চার্ট ধরে রাখতে আপনি একটু ডিম, একটু মাছ, একটু শাকসবজি, একটু বাদাম ইত্যাদি এই জাতীয় খাবার প্রতিদিন খেতে পারেন। আর এর জন্য আমরা বলি প্রতিদিন দুই বেলা খেতে।

যেমনঃ সকালের খাবার টা একটু দেরি করে ১১ টার দিকে আর রাতের খাবারটা সন্ধ্যে সাতটার দিকে খেয়ে নিবেন। এতে করে আপনার শরীরের চর্বিগুলো তখন গলা শুরু করবে এবং আপনি তা বুঝতেও পারবেন। দেখবেন ক্ষুধা লাগছে না। তখন না খেয়ে শরীরকে সুযোগ করে দিতে হবে চর্বি গলানোর জন্য। আর তখনো যদি আপনি চর্বি জাতীয় খাবার খেতে থাকেন তাহলে কিন্তু কোনই উপকার পাবেন না।

নাম্বার – ৩. সূর্যের আলোতে শরীরচর্চা দিবে বাড়তি সুবিধাঃ ডাক্তার জাহাঙ্গীর কবির বলেন, সূর্যের আলো সরাসরি গায়ে লাগালে ভিটামিন-ডি তৈরি হয়। আমরা অনেকে চাই পেটের মেদ কমাতে। আর এর জন্য সূর্যের এই ভিটামিন-ডি সরাসরি প্রভাব ফেলে।

নাম্বার – ৪. ওজন নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে চারটি বিষয়ঃ

ক) ভালো বিশ্রাম বা ঘুম,

খ) সঠিক এবং ভালো খাবার,

গ) উপবাস করা অর্থাৎ না খেয়ে থেকে চর্বি গলানোর জন্য শরীরকে সুযোগ করে দেওয়া,

ঘ) নিয়মিত ব্যায়াম করা।

নাম্বার – ৫. দ্রুত ওজন কমাতে সম্প্রতি বেশ জনপ্রিয় কিটো ডায়েটঃ এটি কতটা স্বাস্থ্যসম্মত তা নিয়ে জাহাঙ্গীর কবির বলেন, কিটো আসলে কোন ডায়েট না। মূলত এটা একটা শারীরিক প্রক্রিয়া। কিন্তু কিটোর ভেতরেও রয়েছে ২টি ধরন, যথাঃ খারাপ কিটো ও ভালো কিটো।

অনেকে মনে করে আমি ইচ্ছামত প্রোটিন বা আমিষ জাতীয় খাবার মাছ, মাংস, ভাজা-পোড়া ইত্যাদি খাবো। এটিই হচ্ছে খারাপ কিটো। আর আমাদের কথা হচ্ছে, আপনি শুধুমাত্র উপকারী চর্বি খাবেন ও আমিষকে সীমিত রাখবেন। আর এটি হচ্ছে ভালো কিটো।

কিন্তু অনেকে আছেন প্রচুর আমিষ খাওয়া যাবে বলে মনে করছেন। আসলে তা করা একদমই যাবে না। কারণ ২০% এর বেশি আমিষ খেলে আপনার কিডনির ওপর চাপ পড়বে। এছাড়া স্বাস্থ্য ঝুঁকি এড়াতে ডায়েট শুরুর আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে বলেও জানান ডাঃ জাহাঙ্গীর কবির।

আমাদের ইউতুব চ্যানেল – 

আরো পড়ুন –

সৌন্দর্যচর্চায় বিট এর ব্যবহারিক গুনাবলি
শেয়ার করুন -

উত্তর দিন

আপনার মন্তব্য লিখুন
আপনার নাম লিখুন