যেভাবে শরীরের ক্ষতিকরে থাকে করোনাভাইরাস

যেভাবে শরীরের ক্ষতিকরে থাকে করোনাভাইরাস
যেভাবে শরীরের ক্ষতিকরে থাকে করোনাভাইরাস

যেভাবে শরীরের ক্ষতিকরে থাকে করোনাভাইরাস – আমরা প্রায় অনেকদিন ধরেই করোনাভাইরাস সম্পর্কিত অনেক কথা এবং তথ্য জেনে আসছি। এই ভাইরাসটিকে চেনে না এমন কেউ নেই বললেই চলে।

কিন্তু কিভাবে এটি শরীরের ক্ষতি করে সে সম্পর্কে অনেকেই হয়তো জানে না। তাই আজ সে সম্পর্কে আলোচনা করবো।

যেভাবে শরীরের ক্ষতিকরে করোনাভাইরাস – 

ভাইরাসটি শুরুতেই মানবদেহের শ্বাসনালীগুলো, গলা এবং ফুসফুসের কোষে আঘাত করে সেসব জায়গায় করোনার আস্তানা তৈরি করে থাকে। এরপর এটি শরীরের বিভিন্ন জায়গায় নতুন নতুন ভাইরাস ছড়িয়ে দিয়ে অন্যান্য কোষকে আক্রান্ত করে ফেলে।

অধিকাংশ মানুষের অভিজ্ঞতায় অর্থাৎ প্রতি দশজন মানুষের মধ্যে আটজন মানুষই করোনাকে একটি নিরীহ সংক্রমণ ব্যাধি বলে মনে করে থাকেন। আর কাশি ও জ্বর হলো এর প্রধান উপসর্গ।

পরবর্তীতে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা ভাইরাসটিকে শত্রুভাবাপন্ন একটি ভাইরাস হিসেবে শনাক্ত করে এবং কিছু একটা যে ঠিক নেই তা পুরো শরীরে সাইটোকাইনস নামক কেমিক্যাল পাঠিয়ে দিয়ে বুঝিয়ে দেয়।

এরপর যে কেমিক্যালগুলো শরীরে বার্তা পাঠাতে থাকে, সেগুলোর প্রতিক্রিয়া তখন শরীরের বিভিন্ন জায়গায় প্রদাহ সৃষ্টি করে। আর এর কারণেই শরীরে ব্যাথা ও জ্বরের মত উপসর্গ দেখা দেয়।

এ ধাপটি এক সপ্তাহের মত স্থায়ী হয় এবং অধিকাংশ মানুষ এই ধাপের মধ্যেই আরোগ্য লাভ করে থাকে। কারণ, মানব শরীরে উপস্থিত রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাটি ততদিনে ভাইরাসের সাথে লড়াই করে সেটিকে প্রতিহত করে ফেলে।

লন্ডনের কিংস কলেজের ডক্টর নাথালি ম্যাকডরমেট বলেন, ভাইরাসটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থায় ভারসাম্য নষ্ট করে দেয়। এর ফলে শরীর অতিরিক্ত মাত্রায় ফুলে যেতে শুরু হয়। তবে কীভাবে এটি ঘটছে তা আমরা এখনো নিশ্চিতভাবে জানি না বলে জানান তিনি।

এছাড়া ফুসফুসে যে কোনো প্রদাহ তৈরি হওয়াকে নিউমোনিয়া বলে। মুখের ভেতরের শ্বাসনালী দিয়ে ফুসফুসের ছোট টিউবগুলোয় গেলে দেখা যায় ক্ষুদ্র আকারের বায়ুথলি।

আর এই থলিগুলোর মাধ্যমেই রক্তে অক্সিজেন যায় এবং কার্বন ডাই অক্সাইড বের হয়। কিন্তু এই ক্ষুদ্র থলিগুলো নিউমোনিয়ার ক্ষেত্রে পানি দিয়ে ভর্তি হতে শুরু করে এবং শ্বাস নিতে বাঁধা সৃষ্টি করে। এর ফলে শ্বাসপ্রশ্বাসে বিভিন্ন উপসর্গ তৈরি করে। তখন কিছু মানুষের শ্বাস নিতে ভেন্টিলেটরও প্রয়োজন হয়ে পড়ে।

চীন থেকে পাওয়া তথ্য উপাত্ত অনুযায়ী, এই ধাপে প্রায় ১৪% মানুষ আক্রান্ত হয়ে থাকে। এদিকে এখন পর্যন্ত ধারণা করা হচ্ছে যে অতি জটিল পর্যায়ে যায় প্রায় ৬% করোনাআক্রান্ত ব্যক্তির রোগ। এই ধাপে শরীর স্বাভাবিক কার্যক্রম চালাতে অসক্ষম হয়ে পড়ে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে শুরু করে।

এছাড়া সারা শরীরেই বিভিন্ন রকম ক্ষয়ক্ষতি তৈরি হতে থাকে। ফলে মৃত্যুর মতো বড় ধরনের সম্ভাবনা তৈরি হয় রোগীর মধ্যে। এরপর শরীরের রক্তচাপ যখন মারাত্মকভাবে নেমে যায় তখন আক্রান্ত ব্যক্তি পেতে পারেন সেপটিক শক। এমনকি সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কাজ করা বন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো সম্ভাবনা থাকে তার।

এছাড়া ফুসফুসে প্রদাহ ছড়িয়ে পড়লে শ্বাস-প্রশ্বাসে তীব্র সমস্যা হওয়ার উপসর্গ দেখা দেয়। কারণ সেসময় শরীরকে টিকিয়ে রাখার জন্য পুরো শরীরে যথেষ্ট অক্সিজেন প্রবাহিত হতে পারে না।

এর ফলে কিডনি রক্ত পরিশোধন ছেড়ে দেওয়ার পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে অন্ত্রের দেয়াল। ডাক্তার ভারত পঙ্খানিয়া বলেন, ভাইরাসটি এত বড় পরিসরে প্রদাহ তৈরি করে যে শরীর পুরোপুরি ভেঙ্গে পড়ে এবং একসাথে একাধিক অঙ্গ প্রত্যঙ্গ ফেইল করে।

এ পর্যায়ে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা যদি ভাইরাসের সাথে পেরে না ওঠে তাহলে তা শরীরের সব প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে আরো বড় ধরনের ক্ষতির সম্ভাবনা তৈরি করে বলে জানান তিনি।

এছাড়াও, আক্রান্ত ব্যক্তিকে এ পর্যায়ে চিকিৎসা দেওয়ার ক্ষেত্রে ইসিএমও বা এক্সট্রা-কোর্পোরেয়াল মেমব্রেন অক্সিজেনেশন পদ্ধতি ব্যবহার করা হতে পারে।

এই পদ্ধতিতে টিউবের মাধ্যমে একটি কৃত্রিম ফুসফুস দ্বারা শরীর থেকে রক্ত বের করে নিয়ে সেই রক্তকে অক্সিজেনপূর্ণ করে আবার শরীরে প্রবেশ করানো হয়। তবে কখনো কখনো অঙ্গ প্রত্যঙ্গ শরীরকে আর বাঁচিয়ে রাখতে সক্ষম হয় না যখন ক্ষতির মাত্রা অতিরিক্ত হয়ে যায়।

আমাদের ইউটুব চ্যানেল – 

করোনাভাইরাস লাইভ আপডেট দেখুন ভিডিওতে –

শেয়ার করুন -

উত্তর দিন

আপনার মন্তব্য লিখুন
আপনার নাম লিখুন