ভেন্টিলেটর কি ?
বিশ্বজুড়ে চলছে এখন করোনাভাইরাসের এক মহামারী আতঙ্ক। এই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের জন্য সবচাইতে কার্যকর যন্ত্রটি হচ্ছে ভেন্টিলেটর। যার মাধ্যমে করোনায় আক্রান্ত রোগীরা কৃত্তিম ভাবে শ্বাস প্রশ্বাস নিতে পারে।
তাই আজ আমরা যানবো এই ভেন্টিলেটর আসলে কি ? এছাড়াও ঠিক কি ভাবে কাজ করে থাকে এই ভেন্টিলেটর যন্ত্রটি।
ভেন্টিলেটর –
ভেন্টিলেটর হচ্ছে একটি যন্ত্র। যা কিনা মানুষকে কৃত্তিম ভাবে শ্বাস প্রশ্বাসের চলাচল ঠিক রাখতে সাহায্য করে থাকে। মূলত স্বাভাবিক ভাবে যখন কোন মানুষের ফুসফুস যথাযত কাজ না করে তখন এই ভেন্টিলেটরের প্রয়োজন হয়।
এ ক্ষেত্রে সেই ভেন্টিলেটরটি ফুসফুসের কাজ অর্থাৎ হিমগ্লোভিনের সাথে অক্সিজেন মেশাতে সাহায্য করে থাকে। এই ভেন্টিলেটরের আগের স্টেপে অবশ্য নিভুলাইজার বা অক্সিজেনের ফ্লোর মাধ্যমে রোগীকে নিশ্বাস নেবার ব্যাবস্থা করা হয়।
কিন্তু যখন কোন রোগীর ফুসফুস অনেকটাই কাজ না করে তখনি ভেন্টিলেটরে প্রয়োজন হয়।
ভেন্টিলেটর দিয়ে মূলত দুটি ভাবে কৃত্রিম শ্বাস প্রশ্বাস নেয়ার ব্যাবস্থা করা হয়ে থাকে যেগুল হচ্ছে –
১ গলায় ছিদ্র করে।
২ মুখের ভেতর দিয়ে নল ঢুকিয়ে।
বর্তমানে সারা বিশ্বের আতঙ্ক করোনাভাইরাসের প্রধান আক্রমন হচ্ছে মানুষের ফুসফুসে উপরে,
শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা যখন নিশ্বাসের ব্যাপারটি টের পায় তখন সেখানে রক্তের শিরা-উপশিরাগুলোকে বেশি করে খুলে দেয় –
যার ফলে রোগ প্রতিরোধকারী কণিকাগুলো আরও বেশি হারে ফুসফুসে ঢুকতে পারে। আর এর জন্যই মানুষের শরীরের ফুসফুসের ভেতরে পানি জমে যায়। তখন থেকেই যেকনো রোগীর শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা শুরু হয়।
এবং দেহে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাওয়ার পাশাপাশি কার্বন ডাইঅক্সাইডের মাত্রাও বেড়ে যায়।
যেকারনে রোগীর মস্তিষ্ক ও হৃদপিণ্ডের মতো গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ প্রত্যঙ্গও অচল হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থেকে থাকে। এই সকল দিক বিবেচনা করেই করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগিকে এই ভেন্টিলেটরের সেবা দেয়া হয়।
অবশ্য যেসব রোগীদের দেহে সংক্রমণ কম হয়, তাদের নেবুলাইজার বা কৃত্রিম ভাবে অক্সিজেন নেবার ব্যাবস্থা করা হয়।
এ ক্ষেত্রে ফেস মাস্ক কিংবা নাকের উপরে ছোট নলের মাধ্যমে এই কাজটি পরিচালিত হয় ।
এর মধ্য দিয়ে বাতাস এবং অক্সিজেনের মিশ্রণ চাপ দিয়ে রোগীদের ফুসফুসে ঢোকানো হয়।
বর্তমানে করনোভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের সেবায় এক ধরনের হুডের ব্যবহার করা হচ্ছে – যেখানে ভালভের মাধ্যমে অক্সিজেনকে শরীরে ঢুকানো হয়।
এই পদ্ধটিকে বলা হয় ‘নন-ইনভেসিভ’ ভেন্টিলেশন। এতে রোগীর দেহে কোন টিউব ঢোকাতে হয় না। শুধুমাত্র মুখে উপরে প্লাস্টিকের একটি ভালবের মাধ্যমে এই প্রক্রিয়াটি করা হয়।

যে ভাবে কাজ করে এই ভেন্টিলেটর –
এই ভেন্টিলেটর যন্ত্রতি পুরটাই পরিচালিত হয় কম্পিউটারের সাহায্যে। কম্পিটার দিয়ে রোগীর শরীরে অক্সিজেনর মাত্রা বাড়ানো বা কমানোর বিষয়তিকে নিয়ন্ত্রন করা হয়।
এর জন্য সেই কম্পিউটারের সাথে লাগানো থাকে অনেকটাই লম্বা দুটি নল। যার একটির মধ্যে দিয়ে রোগীর শরীরের অক্সিজেন প্রবেশ করানো হয় এবং অপরটি হচ্ছে দুষিত কার্বনডাই অক্সাইড বের করে নেবার জন্য।
এবার চলুন এখন পর্যন্ত আমাদের বিশ্বে কোন কোন দেশে কত পরিমানে ভেন্টিলেটর রয়েছে এই বিষয়টিকে দেখে নেয়া যাক।
বিভিন্ন সংবাদ পত্রের প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে এখন পর্যন্ত আমাদের বিশ্বের প্রধান দেশ গুলতে ভেন্টিলেটর রয়েছে যথাক্রমে –
যুক্তরাষ্ট্রে এখন পর্যন্ত ১ লাখ ষাট হাজার এবং জরুরী প্রয়োজনের জন্য আরো মজুদ রয়েছে প্রায় ১২৭০০ টি ভেন্টিলেটর।
ব্রিটেনে সব মিলিয়ে মজুদ রয়েছে প্রায় ছয় হাজার ভেন্টিলেটর।
জার্মানিতে রয়েছে আনুমানিক ২৫ হাজার।
রাশিয়াতে রয়েছে ৪০০০ হাজার ভেন্টিলেটর। ভারতে রয়েছে ১৫ থেকে ২৫ হাজারের মত ভেন্টিলেটর।
এবং আমাদের দেশে রয়েছে মাত্র ৫০০ টি ভেন্টিলেটর।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে করোনাভাইরাসের প্রয়োজনের তুলনায় এই সংখ্যা অনেক সামান্য।
তবে আসার বানী হচ্ছে বিভিন্ন টেকনিকাল কম্পানি কিংবা গাড়ি নির্মান কারি প্রতিষ্ঠানি এখন তাদের সকল কাজ বাদ দিয়ে এই ভেন্টিলেটর বানানো শুরু করেছে।
কিছু কিছু দেশে আবার এই বিষয়টিকে অনেকটা বাধ্যতা মুলক করা হয়েছে সেই সকল কম্পানির জন্য।
তাই বর্তমানে দেখা যাচ্ছে মার্সিডিজ, ল্যাম্বরগিনি,টয়োটা, নিসান কম্পানির মত সেরা গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান গুল এখন সবাই ভেন্টিলেটর নির্মানে ব্যাস্ত।
এর পরিপেক্ষিতে অবশ্য আমাদের বাংলাদেশের বেসরকারী প্রতিষ্ঠান ওয়ালটন গ্রুপ এই ভেন্টিলেটর বানানোর উদ্যোগ নিয়েছে।
এ সম্পর্কিত আমাদের ভিডিও –
আরো পড়ুন –
কৃত্রিম পদ্ধতিতে হিরে তৈরি করা হয় যেভাবে