শরতের অপার সৌন্দর্য শুভ্র কাশফুল

শরতের অপার সৌন্দর্য শুভ্র কাশফুল
শরতের অপার সৌন্দর্য শুভ্র কাশফুল

চলছে শরৎ কাল। উপরে আকাশে নীল-সাদা মেঘের ভেলা, আর নিচে শুভ্র কাশফুল। এ যেন এক স্বর্গীয় পরিবেশ। শুধুমাত্র শরৎকালেই এমন পরিবেশ দেখা যায়।

শরতের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হলো কাশফুল।

এই ফুলের কদর সবসময় বেশি। বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর কল্যাণে এখন সেই কদরে বেড়ে হয়েছে দ্বিগুণ।

আজ জানবো বহুল আকাঙ্খিত প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের নিদর্শন কাশফুল সম্পর্কে নানান তথ্য।

নামকরণ:

বাংলায় কাশফুল কিংবা কাঁশফুল। ইংরেজিতে kansh, kansh Grass, Giant Reed এর মতো কিছু নাম রয়েছে।

অসমীয় ভাষায় কঁহুরা খাগরী ডাকা হয়ে থাকে।

বৈজ্ঞানিক নাম:

কাশফুলের বৈজ্ঞানিক নাম Saccharum Spontaneum.

পরিবার:

এই উদ্ভিদটি Gramineae পরিবারের অন্তর্গত তৃণ বা ঘাস জাতীয় ফুলগাছ।

প্রজাতি:

কাশফুলের অন্য একটি প্রজাতির নাম কুশ। এরাও দেখতে প্রায় কাশফুলের মতনই।

উৎপত্তিস্থান:

কাশের আদিনিবাস রোমানিয়া।

তবে ভারত ও বাংলাদেশে বলেও বিতর্ক রয়েছে।

প্রাপ্তিস্থান:

কাশ একপ্রকার ঘাসজাতীয় জলজ উদ্ভিদ।

নদীর তীর, হাওর-বাওরের তীল, বিল, চরাঞ্চল, অবারিত মাঠ, পাহাড়, উঁচু জমিতে কাশফুল ফোঁটে।

বাংলাদেশেও প্রচুর পরিমাণে কাশ ফোঁটে। ভারতের গয়া অঞ্চলজুড়ে শরৎকাল ঘন কাশের বন দেখা যায়।

আকার-আকৃতি:

কাশ গাছ ১০-১৫ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়।

গঠন ও বৈশিষ্ট্য:

কাশ শরতকালীন একটি ফুল। শরৎ কালেই কাশ গাছে সাদা ও রুপালী রঙের কাশফুল ফোঁটে।

নদীর ধার বা জলাভুমি অঞ্চলে এই ফুল বেশি ফুটে। এর কারণ হচ্ছে নদীর তীরে পলিমাটির আস্তর থাকে। এবং সেই মাটিতে কাশগাছের মূল সহজে এবং খুব দ্রুত সম্প্রসারিত হতে পারে।

কাণ্ড: কাশের কাণ্ড একদম চিকন এবং নরম। চিরল কাণ্ডের মাথায় ফুল ফোঁটে।

গোছায় গোছায় এ উদ্ভিদের জন্ম হয়।

পাতা:  কাশ গাছ চিরলআকৃতির। পাতা লম্বা কিছুটা রুক্ষ, সরু সোজা রেখার মতো। এবং দুই পাশ খুবই ধারালো।

বেখেয়ালে ধরলে হাত বা আঙ্গুল কেটে যাওয়ারও সম্ভাবনা আছে।

এই পাতার উচ্চতা ৩ থেকে সাড়ে ৩ মিটার পর্যন্ত হতে পারে।

ফুল: ঘাসের মতো চিরল লম্বা গাছে সাদা লোমের মতো শুভ্র রঙ নিয়ে ফোঁটে কাশফুল। পালকের মতো নরম এই লোম।

ফুলের মঞ্জুরি ১৫-২০ সেন্টি মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়।

আয়ু:

এটি একটি বহুবর্ষজীবি উদ্ভিদ।

উপকারিতা:

কাশফুল কেবলমাত্র প্রাকৃতিক শোভাবর্ধকই নয়, এর প্রচুর উপকারিতাও রয়েছে। যেমন-

  • কাশগাছের পাতা এবং কাণ্ড থেকে কাগজ তৈরি করা যায়।

  • কাশ শুকিয়ে গেলে এর কাণ্ড দিয়ে মাদুর ঘরের বেড়া এবং চালার ছাউনি দেওয়ার কাজে প্রচুর ব্যবহৃত হয়।

কাশ দিয়ে তৈরি জিনিসপত্র
কাশ দিয়ে তৈরি জিনিসপত্র
  • কাশবন থেকে পাওয়া শুকনো কাণ্ড বা খড় এবং ঝাটি পানের বরজের জন্য প্রয়োজনীয়। এগুলো দিয়ে বরজের ছাউনি দেওয়া হয়।

  • কাশ গরু-মহিশের বিশেষ খাদ্য।

  • শীতকালে কাশবন কেটে তা শুকিয়ে প্রকৃয়াজাত করা হয়। যেগুলো দিয়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজ সমাধা করা হয়।

এছাড়াও এই গাছের কিছু্ ঔষধী গুণাবলীও আছে। যেমন-

  • পিত্তথলীতে পাথর হলে নিয়ম করে গাছের মূলসহ অন্যান্য উপাদানগুলি বেটে সেবন করলে পাথর দূর হয়।

  • শরীরের ব্যথানাশক ফোঁড়ার চিকিৎসায় কাশগাছের মূল ব্যবহার করা হয়।

ঢাকা শহরে কাশফুলের খোঁজ:

শহরের ইট-কাঠের দেওয়ালে কাশফুলের ছোঁয়া পাওয়া যায় না বললেই চলে। তারপরও ভাগ্য ভালো থাকলে খন্ড খন্ড কিছু জায়গায় পেয়ে যেতে পারেন কাশ বন। আপনাদের সুবিধার্থে এমনই কিছু জায়গার নাম জানিয়ে রাখি-

ডিয়া বাড়ি (উত্তরা)

আফতাব নগর (রামপুরা)

বসুন্ধরা ৩০০ ফিট সড়ক

নতুন বাজার ১০০ ফিট সড়ক

মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ

গ্রীন মডেল টাউন (মুগদা-মান্ডা)

সারিঘাট (কেরানীগঞ্জ)

আরো পড়ুন:
বসন্তকালীন বর্ষজীবি উদ্ভিদ – টিউলিপ ফুল 
বাংলার ঐতিহ্যমন্ডিত উদ্ভিদ – পান পাতা গাছ 
বাসক গাছ – বাংলার অতি পরিচিত ভেষজ উদ্ভিদ

সতর্কতা:

যেহেতু বর্তমানে অনেক দর্শনার্থী কাশবন দেখতে যাচ্ছে তাই কিছু কিছু ক্ষেত্রে অবশ্যই সতর্ক থাকা জরুরি। যেমন-

  • কাশবনগুলো সাধারণত জনবিচ্ছিন্ন স্থানে হয়ে থাকে। তাই কাশবনে গেলে অবশ্যই পরিচিত এবং নিজ এলাকায় যাবেন।

  • নিরাপত্তার জন্য দলবদ্ধভাবে ভ্রমণ করা উচিত।

  • কাশফুলের লোম প্রতিনিয়ত ছড়াতে থাকে। পরিধেয় পোশাকে লোম জড়ানো থেকে মুক্তি পেতে সিন্থেটিক পোশাক বাছাই করুন।

  • এলার্জি বা এজমা জাতীয় সমস্যা থাকলে কাশবন থেকে দূরে থাকুন।

  • যে স্থানে যাবেন বলে ঠিক করেছেন, সেখানে ফুল ফোটেছে কি না নিশ্চিত হয়ে নিন।

  • ঘুরতে যাওয়ার দিন বা বিগত ২-৩ দিনের মধ্যে কাশবনে যদি বৃষ্টি হয়ে থাকে তবে যাওয়া বাতিল করুন। কারণ বৃষ্টির কারণে কাশফুল গুটিয়ে তার আসল সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যায়।

কাশ গাছ সহজে নষ্ট হয় না। একারণে উদ্ভিদটি শরৎকালে যেমন প্রকৃতিকে নান্দনিক করে তুলে তেমনি আবার বাণিজ্যিকভাবেও এর অনেক গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। একারণে এখন অনেক কৃষকই কাশের চাষ করতে শুরু করেছে।

তবে বর্তমানে কাশ অনেকটা বিলুপ্তির পথে রয়েছে। বাংলাদেশের উপকূলীয় নদী তীরবর্তী এলাকায় আগে প্রচুর কাশবন দেখা যেত। কিন্ত এখন তার পরিমাণ অনেকটাই কমে গেছে।

কিউরিয়াস ইউটিউব চ্যানেল

শেয়ার করুন -

উত্তর দিন

আপনার মন্তব্য লিখুন
আপনার নাম লিখুন