পৃথিবীতে এমন কে আছে যে টিউলিপ ফুলের নাম শুনেনি! ছোট গাছ হলেও জগতজুড়ে এর সৌন্দর্যের এত বিশালতা যে তা বর্ণনা করা বড়ই কঠিন।
দীর্ঘদিন স্থায়িত্বের কারণে এর জনপ্রিয়তা সেই আদিকাল থেকেই। বর্তমানে অনেক টবেও টিউলিপ ফুলের চাষ করে থাকে।
আর বৃহৎ আকারে প্রচুর বাণিজ্যিক চাষ তো রয়েছেই।
নামকরণ:
সমগ্রবিশ্বে এই ফুল এক নামে পরিচিত। তা হলো টিউলিপ।
বৈজ্ঞানিক নাম:
টিউলিপের বৈজ্ঞানিক নাম Tulipa.
পরিবাব:
টিউলিপ লিলিয়াসিয়ে পরিবারের অন্তর্গত একপ্রকার বর্ষজীবি ও কন্দযুক্ত সপুষ্পক উদ্ভিদ।
প্রজাতি:
টিউলিপ ফুলের অনেক প্রজাতি রয়েছে। আকৃতি এবং ফুলের বর্ণ অনুসারে বিভিন্ন প্রজাতির টিউলিপ ফুলের দেখা পাওয়া যায়।
অনুমান করা হয় পৃথিবীতে ১০০ টিরও বেশি টিউলিপের প্রজাতি রয়েছে। তবে এগুলোর মধ্যে অনেকগুলো সংকর জাত রয়েছে।
বিশ্বজুড়ে এত ভিন্ন ভিন্ন রকমের টিউলিপ ফুল ফোটে যে এদের কতটি প্রজাতি রয়েছে তা সঠিকভাবে চিহ্নিত করা মুশকিল।
কিছু টিউলিপের প্রজাতি-
Red Cross Tullip
Tulipa Orphanidea
Flax-Leaved tulip
Garden Tulip
Tulipa Suaveolens
Tulipa Humilis
Lady Tulip
Candia Tulip.
উৎপত্তিস্থান:
জনপ্রিয় বিশ্বাস টিউলিপের উৎপত্তির আদিস্থান নেদারল্যান্ডস। তবে এই বিশ্বাস নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।
অনেকের মতে এই গাছ পামির মালভূমি এবং হিন্দুকুশ পর্বতমালা অঞ্চল থেকে উদ্ভুত হয়ে বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়েছে।
বলা হয়ে থাকে যে, অটোমান সাম্রাজ্যের সময় থেকেই এই ফুলের পরিচিতি রয়েছ।
তবে এটি এশিয়ার দেশীয় ফুল।
বিশাল টিউলিপ বাগান
প্রাপ্তিস্থান:
মূলত মধ্য প্রাচ্য, ইরান, আফগানিস্তান এবং চীনে প্রাকৃতিকভাবে টিউলিপ ফুল ফুটতে দেখা যায়।
বর্তমানে বাংলাদেশেও ক্ষুদ্র পরিসরে এই ফুলের চাষ শুরু হয়েছে।
আকার-আকৃতি:
প্রজাতি অনুসারে টিউলিপ গাছের উচ্চতায় বিভিন্নতা রয়েছে। তবে সাধারণত ৪ ইঞ্চি থেকে শুরু করে ২৮ ইঞ্চি পর্যন্ত উচ্চতাসম্পন্ন টিউলিপ গাছ দেখা যায়।
গঠন ও বৈশিষ্ট্য:
টিউলিপ বর্ষজীবী এক প্রকার পুষ্পজাতীয় উদ্ভিদ। বসন্তকালীন ফুল হিসেবে এটি পরিচিত।
এটি একটি বাল্বস উদ্ভিদ অর্থ্যাৎ বাল্ব বা মুকুল থেকে জন্মায়। অধিকাংশ টিউলিপই ডাঁটা থেকে একটি মাত্র মুকুলের মাধ্যমে জন্মায় এবং বেড়ে উঠে। কিছু ভিন্ন প্রজাতি রয়েছে যেগুলোর একটি ডাঁটায় কয়েকটি ফুল ফোঁটে, তবে তার সংখ্যা খুবই অল্প।
বাল্ব: টিউলিপের বাল্বগুলো প্রায় ৩ সেন্টিমিটার উঁচু এবং প্রশস্ত ব্যাসের হয়ে থাকে। ভূগর্ভস্থ অবস্থাতে এর বৃদ্ধি হয় এবং তুলনামূলক ছোট ছোট শিকড় গজায়।
পাতা: একেকটি পাতার দৈর্ঘ্য ১০ সেন্টিমিটার এবং প্রস্থে ২-৩ সেমি. পর্যন্ত হয়। পাতার রঙ নীলাভ সবুজ বর্ণের। পাতাগুলো প্রান্তযুক্ত হয়ে প্রসারিত।
একটি টিউলিপ গাছের ডাঁটায় ২-৬টি পাতা গজায়। একটি ডাঁটায় খুব বেশি পাতা গজায় না।
প্রজাতিভেদে এ পাতার সংখ্যা সর্বোচ্চ ১২ তে পৌছায়।
ফুল: বসন্তে টিউলিপ ফুল ফোঁটে।
টিউলিপ ফুল বিভিন্ন রঙের হয়ে থাকে। লাল, কমলা, হলুদ, সাদা, গোলাপী ইত্যাদি। তবে খাঁটি নীলাভ রঙের টিউলিপ কখনও দেখা যায় না।
টিউলিপ ফুল বেশ জমকালো এবং আড়ম্বরপূর্ণ। এদের আকার কাপ কিংবা তারার আকৃতির হয়ে থাকে। ফুলে থাকে তিনটি পুষ্পদল। এছাড়াও তিনটি বাহিঃদলও রয়েছে। যার কারণে এর ভেতরের অংশ বাহিরের তুলানায় গাঢ় রঙের দেখায়।
গাছে থাকা অবস্থায় একেকটি টিউলিপ ফুল প্রায় ২ মাস পর্যন্ত টিকে থাকতে পারে। কিন্তু বাসায় এনে যদি টবে রাখা হয় তবে ১০ পর্যন্ত স্থায়ী হয়। তবে এক্ষেত্রে নিয়মিত পানি পরিবর্তন করতে হবে।
ফল: ফুলের পর টিউলিপ ফল জন্মায়। এই ফল অনেকটা ক্যাপসুল আকৃতির। পাতার মোড়কে ঢাকা থাকে এটি।
বীজ: ফলের মোড়কের দুই সারিতে বীজ থাকে। বীজগুলো হালকা বা ঘন বাদামী রঙের হয়ে থাকে। এবং এগুলো খুবই পাতলা আবরণবিশিষ্ট।
টিউলিপ গাছে ফুল ফোঁটা শেষ হয়ে গেলে সাধারণত এটি মরে যায়। সেসময় কান্ড কেটে বাল্বটি মাটিতেই রেখে দিলে পরের শীতে আবার আপনাআপনিই এর প্রতিস্থাপন হয়।
আয়ু:
টিউলিপ বর্ষজীবি উদ্ভিদ। সুতরাং এর আয়ু ১ বছর।
আর টিউলিপ ফুলের আয়ু গাছে থাকা অবস্থায় ২ মাস।
বংশবিস্তার:
সাধানরণত বাল্বসের সাহায্যে টিউলিপ গাছের বংশবৃদ্ধি করা হয়। তবে চাইলে বীজ দিয়েও করা হয়। কিন্তু তা অনেক সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। তাছাড়া বাল্ব এর মাধ্যমেই গাছটি প্রতি বছর প্রতিস্থাপিত হয়।
যেহেতু টিউলিপ বসন্তকালীন ফুল তাই শীতকালে এর বাল্ব রোপন করতে হয়। কয়েক সপ্তাহ পর বসন্ত কালেই টিউলিপ ফুল ফোটা শুরু করে।
টিউলিপ বাল্ব হিম প্রতিরোধী। সর্বনিন্ম -১০° থেকে সর্বোচ্চ ৪০° সেন্টিগ্রেড পর্যন্ত হিম প্রতিরোধ করতে পারে।
টিউলিপ উৎসব:
নেদারল্যান্ডে জাতীয়ভাবে টিউলিপ ফুলের কদর রয়েছে। এমনকি টিউলিপ ফুল দেশটির জাতীয় প্রতীকও। প্রতিবছর দেশটিতে টিউলিপ উৎসব পালন করা হয়।
বসন্তে যখন বিঘা বিঘা জমি টিউলিপ ফুলে ছেয়ে যায় তখন হাজার হাজার দর্শনার্থী ভীড় করে জমিগুলোয়। তখন সারা দেশে এটি উৎসবে পরিণত হয়।
টিউলিপ ফেস্টিভাল বা টিউলিপ উৎসব
এই উৎসবকে সামনে রেখে কোন কোন স্থারে সম্পূর্ণ টিউলিপ বাগান গুলো এমনভাবে সাজানো হয় যেন একেকটি বাগান একেকটি অবয়ব প্রদর্শন করে। অর্থ্যাৎ কোন একটি অবয়ব বা ডিজাইন অনুযায়ী টিউলিপ চারা লাগানো হয়। ফুল ফোঁটার পর তা অপরূপ হয়ে ওঠে।
এছাড়াও এই উৎসবকে ঘিরে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন রকম আয়োজন করা হয়।
প্রচলিত ধারণা:
টিউলিপ ফুল এবং এর বর্ণ নিয়ে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন রকম প্রচলিত ধারণা রয়েছে। এবং এগুলো খুব আড়ম্বরতার সাথে পালন করা হয়।