ট্রাক ড্রাইভারের অভাবে জ্বালানি তেলের সংকটে ব্রিটেন, সেনাবাহিনী মোতায়নের কথা ভাবছে প্রশাসন

ট্রাক ড্রাইভারের অভাবে জ্বালানি তেলের সংকটে ব্রিটেন, সেনাবাহিনী মোতায়নের কথা ভাবছে প্রশাসন
ট্রাক ড্রাইভারের অভাবে জ্বালানি তেলের সংকটে ব্রিটেন, সেনাবাহিনী মোতায়নের কথা ভাবছে প্রশাসন

শুধুমাত্র ট্রাক ড্রাইভারের ঘাটতির কারণে পর্যাপ্ত মজুদ থাকার পরেও জ্বলানি তেলের সংকটে ব্রিটেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে সেনাবাহিনী মোতায়নের কথা ভাবছে প্রশাসন।  

গত কয়েকদিন ধরে এই জ্বালানি তেলের সংকটে ব্রিটেনে নজিরবিহীন সমস্যায় পরিণত হয়েছে।

দীর্ঘদিন যাবত দেশটিতে পণ্য বহনকারী ভারি ট্রাক চালকের সংকট দেখা দিয়েছে।  এর কারণ হিসেবে দেখা গেছে- ব্রেক্সিটের জন্য ইউরোপের অনেক চালক ব্রিটেন থেকে চলে গেছেন।

এর সঙ্গে করোনা মহামারির কারণেও ড্রাইভার সংকট আরও তীব্র হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে- এই মুহূর্তে ব্রিটেনে প্রায় ১ লাখ ট্রাক চালকের অভাব রয়েছে।

ট্রাক ড্রাইভার সংকটে অন্যান্য সমস্যা দিন দিন বিশালাকার ধারণ করছে। সব ধরণের পণ্য সরবরাহের ক্ষেত্রেও দারুণ সমস্যা হচ্ছে। তবে এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়েছে জ্বালানি তেল সরবরাহের ক্ষেত্রে, যেকারণে ইতোমধ্যেই জ্বালানি তেল সংকটে ব্রিটেন।

ব্রিটেনজুড়ে গত কয়েকদিনে শত শত গাড়ি পেট্রোল স্টেশনগুলোর সামনে জ্বালানি তেলের জন্য অপেক্ষা করছে। অনেকেই কয়েক ঘণ্টা পর্যন্তও অপেক্ষা করেছেন।

সোমবার গণমাধ্যমের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জ্বালানি তেলের সংকটে ব্রিটেনের বড় বড় শহরগুলোর বেশিরভাগ পেট্রোল স্টেশন বন্ধ। কখন, কবে নাগাদ পেট্রোল পাম্পগুলোয় নতুন সরবরাহ আসবে তা কেউ বলতে পারছে না।

নতুন জ্বালানির সরবরাহ আসতে না পারায় অনেকগুলো পেট্রোল পাম্প স্টেশন এরই মধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। এদিকে গাড়িতে যথেষ্ট পরিমাণে তেল ভরতে না পারায় অনেকে তাদের কর্মস্থল বা জরুরি কাজে পর্যন্ত যেতে পারছেন না।

ব্রিটিশ সরকার বলছে, দেশে জ্বালানি তেলের কোনো ঘাটতি নেই, যথেষ্ট তেল মজুদ রয়েছে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে জ্বালানি তেলের সরবরাহ সময়মতো পেট্রোল স্টেশনে পৌঁছানো যাচ্ছে না।

সরকারের মন্ত্রীরা বার বার জনসাধারণের কাছে আবেদন জানাচ্ছেন, মানুষ যেন অকারণে আতংকিত হয়ে গাড়ির ট্যাংক ভর্তি করে জ্বালানি কেনার জন্য ভিড় না জমায়। কিন্তু তাতে কোনো লাভই হয়নি।

গাড়ি নিয়ে পেট্রোল স্টেশন অভিমুখে ছুটতে শুরু করে সাধারণ মানুষ। এভাবে চলতে থাকলে খুব দ্রুতই দেশের সব পেট্রোল স্টেশন খালি হয়ে যায়।

ব্রিটেনের পেট্রোল বিক্রেতাদের সমিতি বলছে, গত রবিবারই ৮ হাজার পেট্রোল স্টেশনের অর্ধেক খালি হয়ে যায়।

সাধারণ মানুষ আতংকিত হয়ে যেরকম তাদের গাড়িতে জ্বালানি তেল ভরার জন্য ছুটছে, এখন সেটাকেই অনেকে এই তেলের সংকটের জন্য দোষারোপ করছেন। ধারণা করা হচ্ছে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে আরও কয়েকদিন সময় লাগবে।

আরো পড়ুন:
এসির বিকল্প হিসেবে আবিষ্কৃত হয়েছে বিশ্বের ‘সবচেয়ে সাদা রঙ’ 
গার্দিওলা-মেসির পুনর্মিলন হতে চলেছে চ্যাম্পিয়নস লিগে 
বঙ্গোপসাগরে তৈরি হচ্ছে ঘূর্ণিঝড় গুলাব, রবিবার আঘাত হানতে পারে ওডিশায়

লন্ডনের মেয়র সাদিক খান গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, গণপরিবহন এবং জরুরি সেবা সংস্থাগুলোর জন্য যথেষ্ট পরিমাণ জ্বালানির মওজুদ রয়েছে। তবে মুশকিল হলো হাসপাতাল, জরুরি সেবা কর্মী এবং ট্যাক্সিচালকরা তাদের প্রয়োজনে জ্বালানি সংগ্রহ করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন।

ব্রিটিশ গণমাধ্যমের খবর বলছে, ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন জ্বালানি তেলের সরবরাহ স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে সেনাবাহিনী তলব করার কথা বিবেচনা করছেন।

সরকারের একজন মন্ত্রী স্বীকার করেছেন যে, নতুন ট্রাক চালকদের প্রশিক্ষণ দিতে ব্রিটেন প্রশাসন প্রতিরক্ষা বাহিনীর সাহায্য নিচ্ছে। তবে পেট্রোলবাহী ট্যাংকার চালানোর জন্য সেনাবাহিনী ডাকার পরিকল্পনা এখনো চূড়ান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন পরিবেশ মন্ত্রী জর্জ ইউস্টিস।

প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, এই সংকট মোকাবেলায় সেনাবাহিনীকে ডাকার সম্ভাবনা তারা একেবারেই নাকচ করে দিচ্ছেন না।

এছাড়া সংকট মুক্তিতে জরুরি ভিত্তিতে ইউরোপ থেকে ৫ হাজার ট্রাক চালককে ব্রিটেনে আসার ভিসা প্রদান করার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তবে এতে আদৌ কাজ হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন অনেকে।

শুধু যে জ্বালানি তেলের সংকটে ব্রিটেন তা নয়, ট্রাক ড্রাইভারের অভাবে দেশটিতে আরও অনেক পণ্য সরবরাহের ক্ষেত্রেই সংকট সৃষ্টি হয়েছে, বিশেষ করে খাদ্য পরিবহনে।
সামনেই ক্রিসমাস ডে। একে সামনে রেখে এসব পণ্যের চাহিদা বেড়ে যাবে অনেকগুণ। তখন পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিতে পারে বলে আশংকা করছে ব্রিটেনবাসী।

কিউরিয়াস ইউটিউব চ্যানেল

শেয়ার করুন -

উত্তর দিন

আপনার মন্তব্য লিখুন
আপনার নাম লিখুন