এই পৃথিবীতে কত বিচিত্র প্রজাতির প্রাণ রয়েছে। প্রতিটি স্থানেই দেখা যায় পরিবেশের সাথে মানানসই প্রচুর প্রাণী, উদ্ভিদ রয়েছে। তেমনই এক উদ্ভিদ কেয়া গাছ।
এটি লবণাক্ত পরিবেশের উদ্ভিদ। সমুদ্রের উপকূলীয় লবণাক্ত অঞ্চলে বসবাসের জন্যই যেন এদের জন্ম। তাই তো অন্যসব সাধারণ গাছ লবণ পেলেই মারা গেলেও এসব গাছ টিকে থাকে বছরের পর বছর।
আজ আমরা তেমনই এক উদ্ভিদ কেয়া সম্পর্কে সবিস্তারে জানবো-
নামকরণ:
বিভিন্ন স্থানে কেয়া গাছ বিভিন্ন নামে পরিচিত। কেতকী, কেয়া, কেওড়া এগুলো হচ্ছে এই উদ্ভিদের স্থানীয় নাম। সংস্কৃতিতে এই গাছকে কেতকী বলা হয়।
ইংরেজী Thatch Screwpine, Tahitian Screwpin, hala tree.
বৈজ্ঞানিক নাম:
গাছটির বৈজ্ঞানিক নাম Pandanus Fascicularis.
পরিবার:
কেয়া গাছ Pandanaceae গোত্রের একটি উদ্ভিদ।
উৎপত্তির আদিস্থান:
কেয়া গাছ মূলত পূর্ব অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জের স্থানীয় উদ্ভিদ।
তবে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াতেও এই গাছ জন্মাতে দেখা যায়। সেই অর্থে বাংলাদেশ, ভারত, জাপান, মায়ানমার, ইন্দোনেশিয়ায় প্রচুর জন্মে।
ইতিহাস ঘেটে জানা যায়, আজ থেকে প্রায় আড়াই হাজার বছর আগেও হিমালয়ের উঁচু স্থানে কেয়ার বিস্তৃতি ছিল।
হিন্দু পুরাণ, লোককাহিনী এবং আমাদের প্রাচীন সাহিত্যেও কেয়ার কথা রয়েছে।
প্রাপ্তিস্থান:
বাংলাদেশের কক্সবাজার, সেন্টমার্টিনে কেয়া গাছ প্রচুর দেখা যায়। সুন্দর বনেও এই উদ্ভিদের বিস্তৃতি রয়েছে।
আকার-আকৃতি:
লম্বায় একেকটি কেয়া গাছ ৩-৪ মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে।
পাতা লম্বায় ৩-৪ মিটার এবং চওড়া ৫-৬ সেন্টিমিটার হয়।
গঠন ও বৈশিষ্ট্য:
কেয়া গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ। খুব বেশি বড় হয় না। এটি একলিঙ্গীক উদ্ভিদ।
পুরুষ কেয়া গাছকে বলা হয় সিত কেতকী এবং স্ত্রী কেয়াকে স্বর্ণ কেতকী বা হেম কেতকী বলা হয়।
কাণ্ড:
গাছটির কাণ্ড হয় গোলাকার এবং কাটাযুক্ত। সেই কাণ্ড থেকেই গাছের শাখা-প্রশাখা বের হয়।
পাতা:
কেয়া পাতা লম্বাটে চিরল। অগ্রভাগ সরু, মাটির দিকে পাতাগুলো অবনত অবস্থায় থাকে। পাতার কিনারে করাতের মতো কাঁটা থাকে, অনেকটা আনারস গাছের পাতার মতো। পাতার রঙ হয় সবুজ। কেয়া পাতার উভয় তল মসৃণ।
কেয়া পাতা সরাসরি গাছের কাণ্ড থেকে বের হয়, পত্রমূল ছাড়াই। এবং পাতার গোড়ার অংশ কাণ্ডের সাথে জড়িয়ে থাকে।
মূল (ঠেসমূল):
কেয়া গাছের নিম্নদেশ থেকে মোটা শাখা পর্যন্ত বেশ কিছু মূল বের হয়ে মাটিতে ভিত সৃষ্টি করে। এই মূলগুলোকে বলা হয় ঠেস মূল। এগুলো গাছের কাণ্ডকে দৃঢ়ভাবে মাটির সঙ্গে আবদ্ধ করে রাখে এবং গাছের ভার বহনে সাহায্য করে।
ঠেসমূল
কেয়া পরস্পরের সঙ্গে জড়াজড়ি করে বেড়ে ওঠে এবং সেখানে একটি দুর্গম পরিবেশ সৃষ্টি করে।
সুন্দরবন, সেন্ট মার্টিন দ্বীপ বা যেকোন লবণাক্ত অঞ্চলে এই গাছ জন্মায়।
কেয়া ফুল:
গাছে কেয়া ফুল হতে দেখা যায়। আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে এই ফুল ফোটে। তাই বাংলাদেশে কেয়া ফুলকে বর্ষার ফুল বলা হয়।
ফুলের রঙ সাদা এবং সুগন্ধযুক্ত। এর থেকে সুগন্ধিও তৈরি করা হয়।
যার ব্যবহার চলে আসছে সেই প্রাচীন কাল থেকে।
ফল:
ফুলের পর গাছে আসে কেয়া ফল। অনেকে একে হালা ফলও বলে থাকে।
আশ্বিন-কার্তিক মাস চলাকালে কেয়ার ফল হয়। এগুলো গুচ্ছাকারের হয়ে থাকে।
একটি কেয়া গাছে ৫-২০ টি পর্যন্ত কেয়া ফল হয়। কেয়া ফল ১৫-১৮ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা।
ফলের গাত্র বেশ শক্ত হয়ে থাকে। কাঁচা অবস্থায় হলুদাভ সবুজ বর্ণের হলেও পাকলে কেয়া ফলের রঙ হয় কমলা, পীত কিংবা ধূসর। দূর থেকে দেখলে কেয়া ফলকে আনারসের মতো মনে হয়।