ঘানা পশ্চিম আফ্রিকার একটি দেশ। দেশটিতে প্রায় শতাধিক জাতিগোষ্ঠীর বাস। এটি এমন একটি দেশ যার ঝুলিতে রয়েছে সমৃদ্ধ সংস্কৃতি বৈচিত্রময় পরিবেশ এবং অপূর্ব সুন্দর সব প্রাকৃতিক দৃশ্য।
গ্লোবাল পিস ইনডেক্স অনুসারে এটি আফ্রিকার সবচেয়ে শান্তিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে একটি।
নামকরণ:
সরকারি নাম রিপাবলিক অব ঘানা।
Ghana/Gana বা ঘানা শব্দটি আসান্তে চুই ভাষার একটি শব্দ। যার অর্থ যোদ্ধা রাজা। মধ্যযুগীয় ঘানা সাম্রাজ্য থেকে এই নামটির উৎপত্তি হয়।
ইতিহাস:
পশ্চিম আফ্রিকার একটি স্বাধীন দেশ ঘানা।
তবে ১৯৫৭ সাল পর্যন্ত দেশিটি ব্রিটিশ উপনিবেশ ছিলো। একই বছরের ৬ই মার্চ সাব সাহারান দেশগুলো মধ্যে ঘানাই প্রথম স্বাধীনতা লাভ করে।
ঔপনিবেশিক শাষন থেকে স্বাধীনতা লাভ করার পরে ১৯৯০ এর দশকে এই দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। এবং আফ্রিকান রাজনীতিতে এটি একটি নেতৃত্বস্থানীয় দেশ হিসেবে আবির্ভুত হয়।
পৃথিবীতে যত দেশে দাস প্রথার ঘৃণ্য অমানবিকতা চালু ছিলো তাদের মধ্যে আফ্রিকা মহাদেশের নাম সর্বদাই চলে আসে সবার আগে। ১৪শ শতকে এই ঘানাতেই হয়েছিল দাস ব্যবসা।
ভৌগলিক অবস্থান:
দেশটির পশ্চিমে আইভরি কোস্ট, উত্তরে বুর্কিনা ফাসো, পূর্বে টোগো এবং দক্ষিণে গিনি উপসাগর এবং আটলান্টিক মহাসাগর অবস্থিত।
আয়তন:
আয়তনে দেশটি ২ লাখ ৩৯ হাজার ৫৬৭ বর্গকিলোমিটার।
জনসংখ্যা:
এই দেশের জনসংখ্যা প্রায় ২ কেটি ৮০ লাখ।
রাজধানী:
ঘানার রাজধানী এবং সর্ববৃহৎ শহর হচ্ছে আক্রা।
২২৫.৬৭ বর্গকিমি. আয়তনের এই শহরটিতে প্রায় ২২ লাখ মানুষের বাস।
বর্তমান আক্রা নগরীটির গোড়াপত্তন ১৫ শতকের কাছাকাছি সময়ে।
রাজনীতি:
রাজনীতিতে ঘানা বেশ সমৃদ্ধশালী। স্বাধীনতার পর দেশটি গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে তাদের দেশ পরিচালনা করে আসছে।
একই সাথে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশগুলোর মধ্যে এই অঞ্চলের রাজনীতি বেশ উঁচুদরের এবং মান্য।
১৯৯৭ সালে দেশটি কূটনীতিক কফি আনান জাতিসংঘের মহাসচিব নির্বাচিত হন।
অর্থনীতি:
ঘানার মোট জিডিপি প্রায় ৬৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এবং মাথাপিছু আয় প্রায় ২ হাজার ২০০ মার্কিন ডলার।
তবে এখানকার বেশিরভাগ লোকই দরিদ্র। ঘানার মাথাপিছু জিডিপি বিশ্বের নিচ থেকে তৃতীয় স্থানে।
কৃষি দেশটির অর্থনীতির মূল ভিত্তি। তবে স্বর্ণত্তোলন, তেলত্তোলন ইত্যাদি নানা দিক থেকেও দেশটি আয় করে থাকে।
২০০৭ সালে ঘানার উপকূলে তেল আবিষ্কৃত হয়।
এছাড়া চকোলেট তৈরির প্রধান উপাদান কোকো বীজ উৎপাদন করেও দেশটি প্রচুর মুদ্রা আয় করে।
কোকো বীজ উৎপাদনের দিক থেকে দেশটি পৃথিবীর দ্বিতীয় দেশ।
স্বর্ণ উৎপাদনে সমৃদ্ধ এক দেশ:
১৫ ও ১৬শ শতকের দিকে ইউরোপীয়রা বিশেষ করে পর্তুগাল, ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ড, জার্মানি এবং ব্রিটেনের লোকেরা স্বর্ণের খোঁজে এই অঞ্চলে এসেছিল।
প্রচুর স্বর্ণের খোঁজ পাওয়ায় তারা এই অঞ্চলটির তখন গোল্ড কোস্ট নাম রেখেছিল।
কয়েকশ বছর আগেও দেশটি স্বর্ণের একটি ভালো উৎস ছিল।
সোনা উৎপাদনের দিক থেকে ঘানা আফ্রিকা মহাদেশে দ্বিতীয় এবং বিশ্বের ১১তম দেশ।
২০১২ সালে দেশটি ১০২ মেট্রিক টন স্বর্ণ উৎপাদন করে।
২০১৬ সালে ৯০ মেট্রিক টন সোনা উৎপাদন করেছিল।
মুদ্রা:
দেশটির মুদ্রার নাম ঘানা সিডি।
সিডি শব্দটি এসেছে এক ধরণের সামুদ্রিক শামুকের নাম থেকে। যার নাম কাউরি শেল শামুক (কড়ি)।
অতীতে এই শামুকের খোলস দিয়ে দেশটির মুদ্রাব্যবস্থা প্রচলিত ছিল।
শিক্ষা:
দেশটির ৭৬.৬ ভাগ লোক শিক্ষিত।
ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি:
উজ্জ্বল এবং রঙিন কেন্ট কাপড়ের তৈরি পোশাক ঘানার ঐতিহ্যবাহী পোশাক।
কেন্ট কাপড়ের তৈরি ঘানার ঐতিহ্যবাহী পোশাক
তবে দেশটির উত্তরে বসবাসরত পুরুষরা গাঢ় রঙ এবং ঢিলেঢালা কাপড় পরিধান করে থাকে।
এই দেশটির ঐতিহ্যবাহী খবারের মধ্যে রয়েছে ওয়াকাই। যা মটরশুঁটি, চাল, মাছ, ডিম, ভাজা মুরগি এবং ভিন্ন প্রজাতির এক প্রকার চালের সঙ্গে তৈরি একটি খাবার।
ফোক এবং পোপ সংগীত ঘানার সংস্কৃতির একটি জনপ্রিয় দিক।
ভাষা:
ঘানার সরকারি ভাষা ইংরেজি।
তবে ইংরেজি সরকারি ভাষা হলেও বেশিরভাগ বসবাসকারীরাই কমপক্ষে একটি আফ্রিকান ভাষায় কথা বলতে পারে।
কম করে হলেও দেশটিতে ৪০টি ভাষা প্রচলিত রয়েছে।
ধর্ম:
দেশটির মোট জনসংখ্যার প্রায় ৭৭ ভাগ মানুষ খ্রীস্ট ধর্মে বিশ্বাসী।
ইসলাম অনুসারী মানুষের সংখ্যা প্রায় ১৬ শতাংশ।
বাকিরা ঐতিহ্যগত আফ্রিকান ধর্মের অনুগত।
খেলাধুলা:
ফুটবল এ দেশের জাতীয় খেলা।
এই খেলাটি দেশটিতে খুবই জনপ্রিয়। ‘ব্লাক স্টার’ ফুটবল দলটি তার অর্জনের জন্য বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়।
ডায়ালিং কোড:
দেশটির ডায়ালিং কোড +২৩৩।
দর্শনীয় স্থান:
এই দেশটির অনন্য সব পশুপাখি, বিচিত্র প্রজাতির প্রজাপতি, পোকামাকড়, গাছপালা যেকোন পর্যটকের মন কেড়ে নিতে সক্ষম।
এর সঙ্গে দেশটির ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলো যোগ করলে বোঝা যায় কেন এটি এই পৃথিবীর এক অনন্য দেশ!
ঘানায় ৬ টি জাতীয় পার্ক বা উদ্যান এবং ছোট ছোট অনেক সংরক্ষিত এলাকা রয়েছে। যেগুলোয় বন্য প্রাণী সংক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
লেক ভোল্টা:
পৃথিবীতে মানুষের হাতে তৈরি সবচেয়ে বড় হ্রদ বা লেক হচ্ছে লেক ভোল্টা। যা দেশটির মোট আয়তনের ৩.৬ শতাংশ জুড়ে বিস্তৃত।
ভোল্টা হ্রদ ২৫০ মাইল দীর্ঘ এবং ৩ হাজার ২শ ৮৩ বর্গমাইল এলাক জুড়ে বিস্তৃত।
কেজেটিয়া:
কেজেটিয়া পশ্চিম আফ্রিকার বৃহত্তম বাজার।
পোশাক থেকে শুরু করে জীবন্ত পশু সবকিছুই এখানে পাওয়া যায়।
কাকম ন্যাশনাল রেইন ফরেস্ট:
এই ফরেস্ট ঘানার অন্যতম দর্শনীয় স্থান। বিভিন্ন প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী এবং পাখি ছাড়াও এখানে আরও কিছু দর্শনীয় রয়েছে।