মার্কিন সেনাদের নির্যাতনের স্মৃতি এখনও পোড়ায় তালেবান বন্দীদের!

মার্কিন সেনাদের নির্যাতনের স্মৃতি এখনও পোড়ায় তালেবান বন্দীদের!
বাগরাম জেল

আফগানিস্তানে মার্কিন সেনাদের শক্তির অন্যতম প্রধান কেন্দ্র বাগরাম এখন পরিত্যক্ত এক ঘাঁটি। ভাঙ্গা-চুড়া স্থাপনা, ধ্বংসপ্রাপ্ত অস্ত্র, সরঞ্জামের টুকরো চারদিকে। এক সময়ের মার্কিন সেনাদের নির্যাতনের ভয়ংকর সামরিক কারাগারে নেই কোন বন্দী।

তালেবান ক্ষমতা নেওয়ার পর মুক্তি দেওয়া হয়েছে সবাইকে। আফগানিস্তানের গুয়ান্তানামো নামের পরিচিত জেলের বিভিষিকাময় স্মৃতি এখনো তাড়া করে বেরাচ্ছে সাবেক বন্দীদের।

দুই দশক ধরে আফগনিস্তানের মার্কিন বাহিনীর শক্ত ঘাঁটি ছিল এই গুয়ান্তানামো। মার্কিন সেনাদের নির্যাতনের কবলে পরে প্রতিনিয়ত ধুকতো তালেবান বন্দীরা।

এখন চারদিকে কেবল ধ্বংসস্তুপ। ছড়িয়েছিটিয়ে রয়েছে পরিত্যক্ত জিনিসপত্র। এখানে সেখানে পড়ে আছে বন্দীদের ফাইল পত্র।

বাগরামের সামরিক কারাগারকে তুলনা করা হতো কিউবার গুয়ান্তানামো বে’র সাথে।

বিনা বিচারে আটকে রাখা বা মার্কিন সেনাদের নির্যাতনের বহু ইতিহাসের সাক্ষী এই কারাগার।

সেসব স্মৃতি মনে করে এখন যুক্তরাষ্ট্রের উপর ক্ষোভ ঝাড়ছেন সাবেক বন্দীরা। যাদের অনেকেই সক্রীয় সদস্য।

এক বন্দী তার বন্দীদশার অভিজ্ঞতা ব্যক্ত করে বলেছেন, “একা একটি ঘরে ১ মাস রেখেছে আমাকে। প্রচন্ড ঠাণ্ডা ছিলো সে ঘরটি। ছাড়া পাওয়ার পরও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত আমি। ঠিকঠাক কাজ করতে পারি না। আড়াই বছর এখানে থাকার সময় মস্তিষ্কের অনেক ক্ষতি হয়েছে।”

আরেক জন বলছেন, “সব তালেবান সদস্যই জীবন দেওয়ার জন্য প্রস্তুত। আল্লাহ্’র নামে তারা কিছুতেই ভয় পায় না। মার্কিনীদের অনেক অর্থ থাকলেও নিজেদের প্রাণ বিসর্জনের সাহস নেই।”

রাজধানী কাবুল থেকে মাত্র এক ঘন্টার দূরত্বে ১৯৫০ এর দশকে বাগরাম ঘাঁটি তৈরি করে সোভিয়েত বাহিনী।

২০০১ সালে আফগানিস্তান অভিযান শুরু সময় থেকেই যুক্তরাষ্ট্র আর ন্যাটোর প্রধান ঘাঁটি হয়ে ওঠে এটি।

প্রায় ৭৭ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত বিশাল এই ঘাঁটির অবকাঠামো উন্নয়নে কোটি কোটি ডলার খরচ করে পেন্টাগন। সেনাদের জন্য ব্যবস্থা করা হয় আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধার।

আরো পড়ুন:
আফগানিস্তানে গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার সম্ভাবনা: যুক্তরাষ্ট্রের জেনারেলের বার্তা 
দশকের পর দশক ধরে আফগানিস্তানে যুদ্ধ কেন চলছে? 
তালেবান সাম্রাজ্যে হঠাৎ আসা মূর্তিমান আতঙ্ক আহমেদ মাসুদ – কে এই মাসুদ!

তবে অবকাঠামো বা বিশালত্ব নয় বরং বিশ্বজুড়ে বাগরাম পরিচিতি পায় এখানকার অকথ্য নিপীড়নের কারণে।

অনেকেই মনে করেন মার্কিন সেনাদের নির্যাতন-নিপীড়নের এই কৌশলে হিতে বিপরীত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য। আফগানদের মধ্যে বেড়েছে পশ্চিমা বিদ্বেষ।

জনৈক এক ব্যক্তি ক্ষোভের সুরে বলেন, ‘আমেরিকা আর তাদের পুতুল সরকার দেশকে ধ্বংস করে দিয়েছে। আমার মুসলিম ভাইদের আর ইসলামকে হত্যা করেছে। তাদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে চাই।”

জুলাইয়ের শুরুতে রাতের আধারে বাগরাম ছেড়ে যায় মার্কিন সেনারা। তখনো প্রায় ৭ হাজার বন্দী ছিলো ঘাঁটির কারাগারে।

তালেবান কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর বন্দীরা যে যেভাবে পেরেছে কারাগার থেকে বেরিয়ে গেছে। আর বাকিদের মুক্ত করে দিয়েছে তালেবান।

কিউরিয়াস ইউটিউব চ্যানেল

শেয়ার করুন -

উত্তর দিন

আপনার মন্তব্য লিখুন
আপনার নাম লিখুন