মাইক্রোভেন ছাড়াই খুব সহজে চুলায় সুস্বাদু পুডিং তৈরি    

মাইক্রোভেন ছাড়াই খুব সহজে চুলায় সুস্বাদু পুডিং তৈরি    
মাইক্রোভেন ছাড়াই খুব সহজে চুলায় সুস্বাদু পুডিং তৈরি    

ছোট-থেকে বড় সকলের পছন্দের খাবারের তালিকায় সবচেয়ে জনপ্রিয় একটি খাবার পুডিং। মাইক্রোওয়েভ ওভেনে পুডিং তৈরি করা খুবই সহজ এবং কম সময় লাগলেও উচ্চ মূল্যের কারণে এই যন্ত্রটি সবার বাসায় থাকে না।

সেক্ষেত্রে চুলাই একমাত্র ভরসা। আজ আমরা আপনাদের জানাবো কিভাবে চুলাতেই খুব সহজে সুস্বাদু পুডিং তৈরি করা যায় সে ব্যাপারে।

তো চলুন জেনে নিই-

উপকরণ:

দুধ ১ লিটার

ডিম ৩ টি

চিনি

এলাচ

লবঙ্গ

ভ্যানিলা এ্যাসেন্স (বা পছন্দীয় যেকোন ফ্ল্যাভার) ১চা চামচ

লবণ

পুডিং তৈরির প্রস্তুত প্রণালী:

দুধ তৈরি:

প্রথমে চুলায় দুধ গরম করে নিতে হবে। এবং ১ লিটার দুধকে জ্বাল দিয়ে ঘন করে অর্ধেক করে নিতে হবে।

মনে রাখতে হবে দুধের ঘনত্বের ‍উপর নির্ভর করে ডিমের পরিমাণ নির্ধারণ করতে হবে। কারণ এই দুইয়ের সঠিক টেক্সচারেই পারফেক্ট পুডিং তৈরি হবে। তা না হলে পুডিং নরম হয়ে যাবে এবং ভেঙ্গে যাবে।

মানে আপনি যদি দুধ বেশি ঘন করতে না চান ৩/১ ভাগ রাখতে চান সে ক্ষেত্রে আপনাকে ডিমের পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে হবে, যেমন ৪ থেকে ৫টি। আবার দুধ যদি বেশি ঘন হয়ে যায় তখন কম ডিম দিলেও চলবে।

এখন আধা লিটার দুধের জন্য আমরা ৩টি ডিম ব্যবহার করবো।

দুধ ভালো ভাবে গরম হওয়ার পর চুলা থেকে নামিয়ে ঠান্ডা হওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। চাইলে দুধে এলাচ, লবঙ্গ দিতে পারেন। এতে পুডিং এ সুন্দর একটি ফ্লেভার যুক্ত হবে।

ততক্ষণে আমরা পুডিং বসানোর জন্য পাত্রটিকে তৈরি করে ফেলি। এজন্য এমন একটি পাত্র বাছাই করুন যেটি দস্তা, স্টিলের তবে মুখবন্ধ। অর্থ্যাৎ পাত্রটি এমন হবে যেন বাইরের গরম তাপমাত্রায় পাত্রের তাপমাত্রাও বাড়তে থাকে। এবং পাত্রটিতে যেন বায়ুরোধী হয়।

কেরামেল তৈরি:

কেরামেল তৈরির জন্য চুলায় একটি পাত্র গরম করে তাতে ৪টেবিল চামচ পরিমাণ চিনি এবং ২টেবিল চামচ পরিমাণ পানি দিয়ে দিতে হবে। এবার এই মিশ্রণটি গলতে শুরু করবে এবং রঙ পরিবর্তন করতে থাকবে। এই সময়টায় অনবরত নারতে থাকুন, যাতে সবদিকে একই রঙ আসে।

রঙ পরিবর্তন হতে শুরু করলে হালকা খয়েরী রঙ ধারণ করার পর পাত্রটি চুলা থেকে সরিয়ে ফেলতে হব্ তানাহলে আগুনের তাপ আর পাত্রে তাপে কেরামেল পুড়ে যাবে এবং পুডিং খেতে তেতো স্বাদ হবে।

এখন তরল থাকা অবস্থাতেই কেরামেল তারাতারি যে পাত্রে পুডিং তৈরি করা হবে তাতে ঢেলে দিতে হবে এবং পাত্রের চার পাশে ছড়িয়ে দিতে হবে।

দেরি করা যাবে না কারণ কেরামেল যত ঠান্ডা হতে থাকবে ততই এটি শক্ত হতে শুরু করবে। এবার কেরামেল ঠান্ডা এবং বসে যাওয়ার জন্য পাত্রটি কিছুক্ষণ রেখে দিতে হবে।

পুডিং এর মিশ্রণ তৈরি:

পুডিং এর মিশ্রণ তৈরির জন্য একটি পাত্রে ৩ টি স্বাভাবিক তাপমাত্রার ডিম ভেঙ্গে নিতে হবে। এরপর এখানে দিয়ে দিতে হবে ১ চা চামচ পরিমাণ ভ্যানিলা এ্যাসেন্স। এই এ্যাসেন্সটি দেওয়া হয় মূলত ডিমের গন্ধ দূরীকরণের জন্য।

এবার এই মিশ্রণে আধা কাপ চিনি দিয়ে দিতে হবে। কিংবা স্বাদমতো দিলেও হবে।

চাইলে সামান্য লবণ দিতে পারেন। সাধারণত মিষ্টি জাতীয় খাবারে লবণ দেওয়া হয় না।

এখন ডিম-চিনির এই মিশ্রণকে ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত চিনি সম্পূর্ণ গলে না যায় ততক্ষণ পর্যন্ত মিশ্রণটি নেরে যেতে হবে। এক্ষেত্রে আপনারা হেন্ড বিটার কিংবা ইলেক্ট্রিক বিটারও ব্যবহার করতে পারেন।

মিশ্রণটি ভালোভাবে তৈরি হয়ে যাওয়ার পর এর মধ্যে আগে থেকে জ্বাল করে রাখা ঘন দুধ দিয়ে দিতে হবে।

ডিমে দুধ দেওয়ার আগে অবশ্যই নিশ্চিত হয়ে নিবেন যে, দুধ ঠান্ডা হয়েছে কি না। কারণ ডিমের সঙ্গে গরম দুধ মেশালে তা জমাট বেধে যায়।

এবার ডিম-দুধের মিশ্রণটি ভালোভাবে মিশিয়ে নিলেই এটি পুডিং তৈরির জন্য একদম প্রস্তুত।

পুডিং সেট করা:

যে পাত্রে কেরামেল তৈরি করে রাখা হয়েছে এবার সেখানে পুডিং সেট করার পালা।

এজন্য প্রথমেই দেখে নিতে হবে পাত্রে কেরামেলটি ভালোভাবে সেট হয়েছে কি না।

সব ঠিক থাকলে পাত্রে ডিম-দুধের সংমিশ্রণ ঢেলে দিতে হবে।

এক্ষেত্রে একটি ছাঁকনি ব্যবহার করলে ভালো, তাহলে দুধে বা ডিমে থাকা যেকোন ফেলনা অংশ বাইরেই থেকে যাবে। এটি পুডিংয়ের মিশ্রণে গিয়ে পুডিংয়ের টেক্সচার নষ্ট করতে পারবে না। এবং পুডিংয়ের ভিতরটা অনেক বেশি মসৃণ হবে।

এবার পাত্রটিকে অবশ্যই ঢেকে দিতে হবে। নাহলে ভাপে রান্না করার সময় এর ভিতরে পানি ঢুকে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

আরো পড়ুন:
পুরান ঢাকার বাকরখানি তৈরি করে ফেলুন ঘরেই 
ডাব চিংড়ি রেসিপি তৈরির পদ্ধতি 
গ্রাম-বাংলার জনপ্রিয় ইলিশ খিচুড়ি রেসিপি

এবার একটি ননস্টিক কড়াই বা প্রেশার কুকার চুলায় রেখে তাতে কিচেন টাওয়াল, কিচেন টিস্যু, পাতলা কাপড় বা কাগজ বিছিয়ে দিতে হবে। এটা দেওয়া হয় কারণ কড়াইয়ের পানি যখন ফুটে উঠবে তখন যাতে পাত্রটি আর নড়াচাড়া না করে। এবং এর ফলে পুডিং এর নিচে কোন দাগ লাগার ভয়ও থাকবে না।

এখন ভাপে পুডিং বসার জন্য কড়াইয়ে পানি ঢালতে হবে। পুডিং এর মিশ্রণ রাখা পাত্রের অর্ধেক পর্যন্ত পানি ঢেলে ভাল করে কড়াইয়ের ঢাকনা লাগিয়ে দিতে হবে। যাতে বাইরের বাতাস ভিতরে প্রবেশ করতে না পারে।

চুলার মিডিয়াম বা লো মিডিয়ামে রেখে ২৫-৩০ মিনিট মিশ্রণটিকে ভাপিয়ে নিতে হবে।

২৫-৩০ মিনিট পরেই পুডিং তৈরি হয়ে যাবে এবং ঠিক মতো পাত্রে সেট হয়ে যাবে।

তারপর চুলা থেকে নামিয়ে পুডিং ঠান্ডা করে নিতে হবে, ১-২ ঘন্টা বাইরে অথবা ফ্রিজে স্বাভাবিক তাপমাত্রায় রেখে।

পুডিং মোল্ড আউট:

ঠান্ডা হলেই এটি মোল্ড আউট করতে হবে। এই কাজটি কখনই গরম অবস্থায় করা যাবে না, তাহলে পুডিং ভেঙে যাবে।

মোল্ড আউট করার জন্য প্রথমে পাত্রের চারধারে ছুরি দিয়ে কেটে একটু ছাড়িয়ে নিতে হবে। তারপর পাত্রের উপরে থালা রেখে পুডিং তৈরির পাত্রটি উল্টে দিলেই পুডিংটি মোল্ড আউট হয়ে যাবে।

এবার পুডিং পরিবেশনের জন্য একদম প্রস্তুত।

পুডিং তৈরির ক্ষেত্রে অনেকের অনেক অভিযোগ থাকে। যেমন- ক্যারামেলের রং সঠিক আসে না, পুডিং খুবই নরম থাকে, ভেঙ্গে যায়, পুডিং থেকে ডিমের গন্ধ বের হয় ইত্যাদি।

এটা ঠিক পুডিং খুবই সংবেদনশীল একটি খাবার। তাই পুডিং  তৈরি করতে বেশ কিছু নিয়ম একদম ঠিকঠাক পালন করতে হয়।

আশা করছি আমাদের রেসিপিটি অনুসরণ করে, সবকিছু মাপমতো পরিবেশন করলে আপনার পুডিং নষ্ট হবে না। বরং এর স্বাদ দ্বিগুণ বেড়ে যাবে।

কিউরিয়াস চ্যানেল

শেয়ার করুন -

উত্তর দিন

আপনার মন্তব্য লিখুন
আপনার নাম লিখুন