দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একটি স্বাধীন দেশ হলো রোমানিয়া। এটি ইউরোপের মহাদেশের সুন্দর একটি দেশ।
দেশটিকে পূর্ব ইউরোপের টাইগার বলা হয়।
অনেকে এই দেশকে ‘কান্ট্রি অব ড্রাকুলা’ কিংবা ভ্যাম্পায়ারের দেশ নামেও চিনে থাকে।
নামকরণ:
রোমানিয়া নামটি এসেছে ল্যাটিন শব্দ রোমানাস থেকে। যার অর্থ রোমান সম্রাজ্যের নাগরিক।
ইতিহাস:
আধুনিক রোমানিয়ার গোড়াপত্তন হয় ১৮৫৯ সালে।
দেশ হিসেবে ‘রোমানিয়া’ নাম নিয়ে এর যাত্রা শুরু হয় ১৯৬৬ সাল থেকে।
দেশটি উসমানীয় সাম্রাজ্য থেকে স্বাধীনতা লাভ করে ১৯৭৭ সালে।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের শেষের দিকে ট্রান্সসিলভানিয়া, বুকোভিনা ও বেসারাবিয়া যুক্ত হয়ে ‘কিংডম অব রোমানিয়া’ গঠন করে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শুরুর দিকে নাৎসি জার্মানির সহায়ক বাহিনী ছিল রোমানিয়া। তবে ১৯৪৪ সালে তারা পক্ষ পাল্টে মিত্র বাহিনীতে যোগ দেয়। ঐ সময় জার্মান বাহিনী এই দেশের বহু এলাকা দখল করে নেয়। তবে যুদ্ধ শেষ হলে অঞ্চলগুলো আবার ফেরত পায় তারা।
যুদ্ধের পর দেশটি সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রে পরিণত হয়।
আর দেশটির গণতান্ত্রিক যাত্রা শুরু হয় ১৯৮৯ সালের বিপ্লবের পর থেকে।
ভৌগলিক অবস্থান:
রোমানিয়ার অবস্থান দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়। দেশটির সঙ্গে কৃষ্ণসাগর, বুলগেরিয়া, সার্বিয়া, হাঙ্গেরি, মলদোভা ও ইউক্রেনের সীমান্ত রয়েছে।
দেশটির উত্তর-পূর্ব সীমান্তে রয়েছে ইউক্রেন ও মলদোভা, দক্ষিণে বুলগেরিয়া এবং দানিউব নদী, পশ্চিমে হাঙ্গেরি ও সার্বিয়া রয়েছে। পূর্বদিকে কৃষ্ণসাগর অবস্থিত। এবং কার্পেথিয়ান পর্বতমালার পূর্ব ও দক্ষিণাংশ দেশটির মধ্যভাগে পরেছে।
দানিউব নদী জার্মানি থেকে শুরু হয়ে ১০ টি দেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে রোমানিয়ার দানিউব ব-দ্বীপে গিয়ে শেষ হয়েছে।
জলবায়ু:
রোমানিয়াতে ৪টি স্বতন্ত্র ঋতুসহ সমৃদ্ধ ও মহাদেশীয় জলবায়ু বিদ্যমান।
দেশটির গড় বার্ষিক তাপমাত্রা দক্ষিণে ১১° সেলসিয়াস। এবং উত্তরে ৮° সেলসিয়াস।
গ্রীষ্মে রাজধানী বুখারেস্টের ২৮° সেলসিয়াস পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। এবং দেশটির নিন্মভূমির তাপমাত্রা ৩৫° সেলসিয়াসের মতো থাকে।
এবং শীতকালে দেশটির তাপমাত্রা ২° সেলসিয়াসেরও কম থাকে।
আয়তন:
রোমানিয়ার মোট আয়তন ২ লাখ ৩৮ হাজার ৩৯৭ বর্গকিলোমিটার।
আয়তনের দিক থেকে এটি ইউরোপ মহাদেশে দ্বাদশ।
জনসংখ্যা:
২০১৯ সালের হিসাব অনুযায়ী দেশটির জনসংখ্যা ১ কোটি ৯৫ লাখ ১৮ হাজার।
রাজধানী:
রোমানিয়ার রাজধানী হলো বুখারেস্ট। একইসঙ্গে এটি দেশটির সবচেয়ে বড় শহর। শহরটি বৈচিত্র্যপূর্ণ এই দেশের সাহিত্য-শিল্প-সংস্কৃতি ও বাণিজ্যের কেন্দ্রবিন্দু।
বুখারিস্টকে লিটল প্যারিসও বলা হয়।
পৌরাণিক কাহিনী অনুযায়ী দেশটির রাজধানীর বুখারিস্ট নামকরণ করা হয়েছিল কোন একজন মেষ পালকের নামানুসারে।
দেশটির সংসদ ভবন সম্পূর্ণ ইউরোপ মহাদেশের মধ্যে দ্বিতীয় বৃহত্তম ভবন। যা রাজধানী বুখারিস্টের পেন্টাগনের পেছনে অবস্থিত। ভবনটির উচ্চতা ৮৪ মিটার। যা বিশ্বের সবচেয়ে ভারি ভবন।
অন্যান্য শহর সমুহ:
ছোট-বড় মিলিয়ে দেশটিতে প্রায় ৩০০টি শহর এবং ১৩ হাজারের মতো গ্রাম রয়েছে। এদেশের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ শহরে বসবাস করে।
অর্থনীতি:
২০১৯ সালের এক হিসাব অনুযায়ী দেশটির মোট জিডিপি ৫৪১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
রোমানিয়া একটি উচ্চ-মধ্যবিত্ত দেশ। এখানে অনেক কাজের সুযোগ-সুবিধা রয়েছে।
ব্যবসায়ের জন্য রয়েছে অপার সম্ভাবনা। এছাড়াও অটোমোবাইল, ইলেক্ট্রনিক্স, চামড়া শিল্প, আইটিসহ প্রভৃতি কাজের ব্যপক চাহিদা রয়েছে এই দেশে।
দেশটিতে প্রচুর খনিজ তেল এবং সোনা-রূপা পাওয়া যায়। যে কারণে এগুলোর মাধ্যমে দেশটির অর্থনীতি খুব সমৃদ্ধশালী।
মুদ্রাব্যবস্থা:
এদেশের রাষ্ট্রীয় মুদ্রা রোমানিয়ন লিও। লিও অর্থ সিংহ।
১ রোমানিয়ান লিও বাংলাদেশী ২০.৩২ টাকার সমান।
রাজনীতি:
দেশটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় পরিচালিত হয়।
শিক্ষা ও সংস্কৃতি:
উচ্চশিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে ইউরোপের এই দেশে প্রচুর সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। এ দেশে ইউরোপীয় নয় এমন ছাত্রদের জন্য থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ করে থাকে।
দেশটি শিক্ষা-দীক্ষার দিক থেকে অনেক উন্নত। এখানে ৪ জন নোবেল পুরষ্কার বিজয়ী রয়েছেন।
ভাষা:
দেশটির সরকারি ভাষা রোমানিয়ান। এই ভাষা ১৭’শ বছরেরও বেশি পুরানো।
ধর্ম:
দেশটির প্রধান ধর্ম খ্রীষ্টধর্ম। এই দেশের প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ খ্রীষ্টধর্ম পালন করে।
বাকি ১০ শতাংশ অন্যান্য ধর্ম পালন করে থাকে।
পরিবহন:
রোমানিয়ায় রেল, বাস, বিমান প্রভৃতি পরিবহন চালু থাকে।
দেশটির ২২ হাজার ২২৪ কিলোমিটার রেল নেটওয়ার্ক বিশ্বের ১৫তম বৃহত্তম।
খেলাধুলা:
ইউরোপের অন্যান্য দেশগুলো মতো রোমানিয়াতেও ফুটবল খেলা অত্যধিক জনপ্রিয়।
জীবন বৈচিত্র:
রোমানিয়ার জনসংখ্যার ৮৮ শতাংশ রোমানীয় এবং ৬.১ শতাংশ হাঙ্গেরীয়।
রোমানিয়া একটি উন্নয়নশীল দেশ। মূলত এই সহস্রাব্দের শুরু থেকেই দেশটির উত্থান শুরু হয়।
দেশটি বিদ্যুৎশক্তি ও যন্ত্রাংশ রপ্তানি করে।
এটি ২০০৭ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নে অন্তর্ভূক্ত হয়।
সাগর ও পর্বতমালাবেষ্টিত সুন্দর এই দেশটিতে উন্নয়শীল দেশ থেকে প্রচুর ছাত্র-কর্মী-ব্যবসায়ী ও পর্যটক আসেন। এর প্রধান কারণ হলো ইউরোপীয় ইউনিয়নের যেকোন একটি দেশে কোন প্রবাসী একবার প্রবেশ করতে পারলে ইউএ-ভুক্ত ২৭ টি দেশে প্রবেশ করা ও সেখানে স্থায়ী হবার সুযোগ পাওয়া যায়। আর প্রবাসীদের প্রধান লক্ষ্য থাকে এই দেশগুলোতে প্রবেশ করা।
রোমানিয়া এমন একটি দেশ যেখানে কালো জাদুকে সেদেশের সরকার বৈধ করে দিয়েছে। আইন করে এখানে এটির স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।
দর্শনীয় স্থানসমুহ:
দেশটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যে অপরূপ একটি দেশ। দেশটিতে অনেক সুন্দর সুন্দর দর্শনীয় স্থান রয়েছে। এগুলো প্রাচীন তেমনি দেশটির ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির পরিচায়ক।
পেলস ক্যাসল
নিও-রেনেসাঁ আর্কিটেকচারের এক ব্যতিক্রমী উদাহরণ এই পেলস ক্যাসল। এটি দেশের শীর্ষ আকর্ষণীয় স্থান।
যা অলঙ্কৃত হয়েছে ছোট-বড় বিভিন্ন পাথরের কাজ, ভাস্করিত কাঠ দিয়ে। কাঁচের জানালায় সুন্দর দাগ কাটা নকশায় সজ্জিত এক দুর্গ।
কিং ক্যারল প্রথম উনিশ শতকের শেষদিকে গ্রীষ্মের বাড়ি হিসাবে এই দুর্গটি নির্মাণ করেছিলেন। যা বর্তমানে যাদুঘর হিসাবে দর্শনীয়।
এখানে প্রাচীনকালের বহু শিল্পকর্ম, বর্ম এবং অস্ত্রশস্ত্রের সংগ্রহ রাখা হয়েছে।
ড্যানুব ডেল্টা
ড্যানুব ডেল্টা সমগ্র ইউরোপের বৃহত্তম এবং সর্বাধিক সংরক্ষিত ব-দ্বীপগুলির মধ্যে অন্যতম একটি। এখানে ২৩ টি বাস্তুতন্ত্র রয়েছে যা বিপুল সংখ্যক উদ্ভিদ এবং বন্যজীবের আবাসস্থল।
সম্পূর্ণ ব-দ্বীপটি ৫,১৬৫ বর্গকিলোমিটার দীর্ঘ। এটি ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্য হিসাবে তালিকাভুক্ত।
সংস্কৃতি প্রাসাদ
এটি একটি প্রাসাদ যেখানে সংস্কৃতি হিসেব রয়েছে সুন্দর নব্য-গঠিত বিল্ডিং এর ভিতরে ৩,৯০,০০০ বর্গফুট জুড়ে ২৯৮টি কক্ষ সহ, ৪টি যাদুঘর রয়েছে।
এই যাদুঘরগুলি হলো বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি যাদুঘর, মোলডাভিয়ার এথনোগ্রাফি যাদুঘর, আর্ট মিউজিয়াম এবং মোলডাভিয়ার ইতিহাস জাদুঘর।
রেড কালা
দ্য রেড মেরিন বা রেপা রোজি হলো সেবেস শহরের অদূরে সেকাসেলর মালভূমির দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত একটি ভূতাত্ত্বিক রিজার্ভ।
এছাড়াও দেশটিতে আরও রয়েছে- স্পিনিক্স এবং বাবেলে, আঁকা মঠ, ক্লুজ-নাপোকা, ব্রান ক্যাসেল, সরমিজেটুস রেজিয়া, সিঘিসোয়ারা, সিবিউ প্রভৃতি দর্শনীয় স্থান।