কে ছিলেন দানবীর হাজী মুহাম্মদ মুহসীন? চলুন জেনে নিই তার সম্পর্কে অবাক করা কিছু তথ্য

কে ছিলেন দানবীর হাজী মুহাম্মদ মুহসীন? চলুন জেনে নিই তার সম্পর্কে অবাক করা কিছু তথ্য
কে ছিলেন দানবীর হাজী মুহাম্মদ মুহসীন? চলুন জেনে নিই তার সম্পর্কে অবাক করা কিছু তথ্য

আমাদের এই অঞ্চলের শিক্ষা ও সামাজিক, দাতব্য কর্মকাণ্ডে যাদের অবদান সবচেয়ে বেশি- সেই তালিকার শীর্ষে থাকা একটি নাম হচ্ছে হাজী মুহাম্মদ মুহসীন।

নিজের সকল সম্পত্তি দান করা থেকে শুরু করে শিক্ষা ও সামাজিক সংস্কারে প্রভৃতি কাজে নিজস্ব অর্থ ব্যয় করার জন্য এই অঞ্চলে ‘দানবীর’ হিসাবে ব্যাপক খ্যাতি পেয়েছেন হাজী মুহাম্মদ মুহসীন।

অকৃতদার কিংবা অবৈষয়িক যেকোনো উপমা দিয়েই মহিমাণ্বিত করা যায় এই ব্যাক্তিটিকে।

হাজী মুহাম্মদ মুহসীন তার জীবনে বহু দেশ ঘুরেছেন। একারণে জীবনবোধ সম্পর্কে তার এক আলাদা ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে উঠেছিল।

ফলে তিনি বোনের কাছ থেকে বিপুল সম্পত্তির মালিক হওয়া সত্ত্বেও, কয়েক বছরের মধ্যে সব সম্পত্তির দানপত্র লিখে দিয়ে বাকি জীবন কাটিয়ে দিয়েছেন কোরান শরীফ কপি করে করে।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক মুহম্মদ মহসিন বলছেন, ”আইনি বিভিন্ন জটিলতা কাটিয়ে ওঠার পর সেই ফান্ডের তহবিল তখনকার সরকার বাঙ্গালিদের, বিশষত বর্তমান বাংলাদেশ অঞ্চলের মানুষের শিক্ষা-দীক্ষার কাজে খরচ করতে শুরু করে। এর ফলে আমাদের একদম প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্তও বড় রকমের শিক্ষার একটি রেনেসাঁ আরম্ভ হয়। বিশেষ করে অবহেলিত মুসলিম সমাজের জন্য এটি বেশি ফলপ্রসূ হয়।”

”যদিও হাজী মুহাম্মদ মুহসীনের নামটা তেমন ভাবে উচ্চারিত হয় না। কিন্তু মূলত তার অবদানের ফলেই মুসলমানদের লেখাপড়ার প্রতি যে আগ্রহটা বেড়েছে। এই আগ্রহের একটা বড় অবদান হচ্ছে মহসিনের সেই তহবিলের,” তিনি বলছেন।

জন্ম:

হাজী মুহাম্মদ মুহসীন ১৭৩২ সালের পহেলা আগস্ট জন্মগ্রহণ করে। জন্মস্থান বর্তমান পশ্চিমবঙ্গের হুগলিতে। কিন্তু হুগলিস্থ ইমামবাড়ার তথ্য অনুসারে, তার জন্মসাল ১৭৩০।

অবশ্য তখনো তিনি হাজী হয়ে ওঠেননি, হজ্ব করার কারণে হাজী পদবিটি লাভ করেছেন আরও প্রায় ২৮ বছর পরে।

ইরান হয়ে বাঙ্গাল মুলুকে কেন?

মূলত বহু বছর পূর্বেই তার পূর্বপুরুষরা পারস্য বা ইরান থেকে ভারতবর্ষে এসেছিলেন।

সে সূত্রে তিনিও বাঙালীতে পরিণত হন।

হাজী মুহাম্মদ মুহসীনের দানের ইতিহাস জানতে হলে আমাদের ফিরে যেতে হবে সতেরোশ শতকের গোড়ার দিকে।

‘দি মহসিন এনডাউমেন্ট অ্যান্ড দ্যা প্রোসেস অফ এডুকেশন ইন কলোনিয়াল বেঙ্গল’ গ্রন্থে কলকাতার আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় এর অধ্যাপক আমজাদ হোসেন লিখেছেন, সতেরোশো শতকের মাঝামাঝি কোন এক সময়ে মুহসীনের পিতামহ আগা ফজলুল্লাহ তার তরুণ পুত্র ফয়জুল্লাহকে নিয়ে ইরান থেকে বাণিজ্য করতে দেশত্যাগ করেন। এবং তারা মুর্শিদাবাদে এসে বসবাস করতে শুরু করেন।

তার কিছুদিন পরে তিনি হুগলির বাণিজ্যিক গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পেরে ছেলেকে মুর্শিদাবাদের দায়িত্ব দিয়ে হুগলিতে চলে আসেন। পরবর্তীতে সেখানে ব্যবসা বেড়ে যাওয়ায় তিনি ছেলেকেও হুগলিতে নিজের কাছে নিয়ে আসেন।

অন্যদিকে প্রায় একই সময়েই দিল্লির মুঘল দরবার থেকে হুগলিতে আসেন আগা মুহাম্মদ মোতাহার। ইতিহাসের বইগুলোতে উল্লেখ করা হয়েছে, তিনিও পারস্য থেকে এসেছিলেন। হাজী ফয়জুল্লাহ তার বোনের ছেলে ছিল বলে ইতিহাসের একাধিক বইয়ে উল্লেখ করা হয়েছে।

অধ্যাপক আমজাদ হোসেন লেখনি থেকে জানা যায়, তৎকালীন বাদশাহ আওরঙ্গজেব তার বুদ্ধিমত্তা ও দক্ষতায় খুশি হয়ে তাকে উক্ত অঞ্চলের রাজস্ব আদায়ের দায়িত্ব দিয়ে পাঠিয়েছিলেন। একইসঙ্গে সেই সময় তাকে জমিদারির অধিকারও দেয়া হয়।

রাজস্ব আদায়ের পাশাপাশি আগা মোতাহার লবণ ব্যবসার মতো নানা খাতে বিনিয়োগ করতে শুরু করেন। এভাবে তিনি অনেক সম্পত্তির মালিক হয়েছিলেন।

তার ৩ জন স্ত্রী ছিল। তবে কোন পুত্র সন্তান ছিল না। আগা মোতাহার যখন মৃত্যুবরণ করেন, তখন তার স্ত্রী জয়নাব খাতুনের গর্ভে জন্ম নেয়া ৭ বছর বয়সী একটি মেয়ে সন্তান ছিল। তার নাম মরিয়ম খাতুন ওরফে মুন্নুজান। আগা মোতাহার তার সকল সম্পত্তি মেয়ের নামে লিখে দিয়ে যান।

আগা মোতাহারের মৃত্যুবরণের পর তার স্ত্রী জয়নাব খাতুনকে বিয়ে করেন হাজী ফয়জুল্লাহ। সেই ঘরেই হাজী মুহাম্মদ মুহসীন জন্মলাভ করেন।

বড় বোনের প্রশ্রয়েই ছোট ভাই মুহসীনের দাতব্য কর্মকাণ্ড শুরু

মুন্নুজান এবং মুহসীনের পিতা আলাদা হলেও ৭ বছরের ছোট ভাইয়ের প্রতি মুন্নুজানের ভালোবাসা ছিল অসীম। তারা ২ জনই একই বাড়িতে বেড়ে ওঠেন।

আগা মোতাহার এবং হাজী ফয়জুল্লাহ- উভয়েই ছিলেন অত্যন্ত ধার্মিক ছিলেন এবং তারা প্রচুর দান-খয়রাত করতেন। জাকাত তো দিতেনই এর পাশাপাশিও তারা নানারকম দাতব্য কর্মকাণ্ডে অর্থ ব্যয় করতেন।

যারফলে মরিয়ম ওরফে মুন্নুজান ও মুহসীন- উভয়েই ছোটবেলা থেকেই পরিবারের ধর্মীয় ও দাতব্য কর্মকাণ্ড দেখতে দেখতে বড় হয়ে উঠেন।

হুগলী মুহসীন কলেজ, হুগলী
হুগলী মুহসীন কলেজ, হুগলী

অধ্যাপক আমজাদ হোসেন লিখেছেন, সেই সময়কার নিয়ম-রীতি অনুযায়ী, উভয়েই বাড়িতে থেকে শিক্ষকের সানিধ্যে পড়াশোনা শিখতে আরম্ভ করেন।

তাদের একজন শিক্ষক ছিলেন ইরান থেকে আসা আগা সিরাজি। ইসলামি শিক্ষার পাশাপাশি তিনি নানা দেশ ভ্রমণের মাধ্যমে মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির অধিকারী হয়ে উঠেছিলেন। ইতিহাসবিদরা ধারণা করেন যে, মুন্নুজান এবং মুহসীনের ওপর এই শিক্ষকেরই উদার দৃষ্টিভঙ্গির প্রভাব পড়েছিল।

ছোটবেলা থেকেই মুহাম্মদ মুহসীন শিক্ষা গ্রহণের পাশাপাশি কুস্তি, তরবারি লড়াই এবং অন্যান্য খেলাধুলা করতেন। এমনকি ইসলামী পরিবারে জন্ম হয়েও তারা ২ ভাইবোন সঙ্গীতের শিক্ষাও পেয়েছিলেন, যেমন তারা সেতার বাজাতেন এবং গজল গাইতেন।

হুগলির পড়াশোনার পাঠ শেষ করার পর মাদ্রাসায় উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য মুহসীনকে মুর্শিদাবাদে পাঠানো হয়। পড়াশোনা শেষ করার পর মুর্শিদাবাদ থেকে ভারত ভ্রমণের উদ্দেশ্যে বের হয়ে পরেন তরুণ মুহসীন।

হাজী মুহাম্মদ মুহসীন যখন ভারত সফরে গিয়েছেন, তখন তাদের বিপুল সম্পত্তি গ্রাস করার উদ্দেশ্যে অনেকেই তার বোন মুন্নুজানকে বিবাহ করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছিলেন।

এমনকি সেই সময় তাকে বিষ প্রয়োগের মাধ্যমে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল বলেও ধারণা করা হয়। একারণে অতি শীঘ্রই মুন্নুজান মির্জা সালেহ অথবা সালেহ-উদ-দিনকে বিয়ে করেন। তিনিও একজন জমিদার ছিলেন একইসঙ্গে অনেক ধনসম্পত্তির মালিক ছিলেন।

কিন্তু এই দম্পতি ছিলেন নিঃসন্তান। তাই নিজেদের জমিদারির আয়ের অধিকাংশই তারা দাতব্য কাজে ব্যয় করতেন।

১৭৬৩ সালে সালেহ-উদ-দিন মৃত্যুবরণ করেন। স্বামীর মৃত্যুর পরে মু্ন্নুজান তার দাতব্য কর্মকাণ্ড আরও বাড়িয়ে দেন।

অধ্যাপক আমজাদ হোসেন লিখেছেন তিনি মনে করেন, তাদের যেহেতু কোন সন্তান ছিল না, তাই মুন্নুজান প্রজাদেরই সন্তান বলে মনে করতেন।

বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জন্য অনুদান, মসজিদ তৈরি, রাস্তাঘাট ও বাজার তৈরি, কুয়া ও বিশাল পুকুর খনন করতে শুরু করেন।

একইসঙ্গে তিনি চেয়েছিলেন, তার মৃত্যুর পরও যেন এসব দাতব্য কর্মকাণ্ড অব্যাহত থাকে। আর তিনি বিশ্বাস করেন, এজন্য একমাত্র তার ভাই মুহাম্মদ মুহসীনের ওপর নির্ভর করা যায়। হুগলিতে ফিরে গিয়ে তিনি নিজের বিষয় সম্পত্তির দায়িত্ব নেয়ার জন্য ছোট ভাইকে চিঠি লিখে পাঠান।

ধারণা করা হয়, বোনের এসব দাতব্য কর্মকাণ্ডই মুহাম্মদ মুহসীনকে দানবীর হতে অনুপ্রাণিত করেছিল।

দেশ-বিদেশ ভ্রমণ করে হাজী মুহাম্মদ মুহসীনের ফিরে আসা

অধ্যাপক আমজাদ হোসেনের বই পড়ে আরও জানা যাচ্ছে, বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করে মুহসিনের দৃষ্টিভঙ্গি কিছুটা ভিন্নভাবে গড়ে ওঠে। এরফলে মুহসীনের সংসার জীবনে প্রবেশ করার কোন ইচ্ছাই ছিল না।

তবে দেশে ফিরে এসে তিনি সত্তরের দুর্ভিক্ষে মানুষজনকে সহায়তা করেন। এই উদ্দেশ্য সেই সময় ‘জনতার রান্নাঘর’ চালু করেছিলেন মুহসীন।

দুর্ভিক্ষ কেটে যাওয়ার পরপরই মুহাম্মদ মুহসীন হজ্বের উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পড়েন। ধর্মীয় স্কলারদের সঙ্গে তিনি মক্কা, মদিনা, নাজাফ, কারবালার মতো স্থান ভ্রমণ করেন। তারপর মিশরে যান এবং সেখান থেকে তুরস্কে।

এরপর তিনি পারি জমান পূর্বপুরুষদের ভিটে ইরানে। তারপর ফিরে আসেন ভারতে। ফিরে এসে অনেক বছর তিনি লক্ষ্মৌতে কাটান।

এবং প্রায় ২৮ বছর পরে আবার হুগলিতে নিজের জন্মস্থানে ফিরে আসে হাজী মুহাম্মদ মুহসীন। যদিও এতদিন যাবৎ তার বোন মুন্নুজান ফিরে আসার জন্য তাকে অনেক চিঠি পাঠিয়েছিলেন।

কিন্তু নানান দেশ ভ্রমণ করে আসা হাজী মুহাম্মদ মুহসীনের ব্যক্তিগত চাহিদা বলতে তেমন কিছুই ছিল না। একারণে বোনের দেয়া জমিদারির বিপুল আয়কে তিনি আল্লাহর দান বলে মেনে নিয়ে সেগুলো সামাজিক ও জনগণের কাজে ব্যয় করতে শুরু করেন।

আরো পড়ুন:
ইবনে সিনা – মধ্যযুগের জ্ঞান সাধনার শ্রেষ্ঠ নক্ষত্র 
নারী জাগরণের অগ্রদূত – বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন

”তার ধারণা ব্রিটিশদের কাছে ভারতীয়দের বঞ্চনার একমাত্র কারণ অশিক্ষা। ১৭৫৭ সালে ব্রিটিশদের কাছে স্বাধীনতা চলে যাওয়ার পর একটি স্বাধীন জাতি যেভাবে ঔপনিবেশিক শাসকদের কাছ থেকে প্রতি পদে পদে নিগৃহীত হয়েছে, তার কারণ জাতীয়তাবোধ না থাকা, তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর মতো স্পৃহা সৃষ্টি না হওয়ার পেছনে তিনি অশিক্ষাকেই প্রধান বিষয় বলে দায়ী করেছিলেন। এই কারণেই তিনি চেয়েছিলেন দানের বেশিরভাগ অংশ যেন শিক্ষার পেছনেই বেশি ব্যয় হয়।” এমনটা বলছেন গবেষক ও বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মহসিন।

মুন্নুজান তার স্থাবর-অস্থাবর সমস্ত সম্পত্তি হাজী মুহাম্মদ মুহসীনের নামে লিখে দেন। এরপর তার মৃত্যু হয় ১৮০৩ সালে। যে সময় হাজী মুহসীনের বয়স কমপক্ষে ৭০ বছর।

অধ্যাপক আমজাদ হোসেন আরও লিখেছেন, হাজী মুহাম্মদ মুহসীনেরও একসময় নিশ্চয়ই চিন্তা এসেছিল যে, তার মৃত্যুর পর এই বিপুল সম্পত্তির কি হবে? এ কথা চিন্তা করেই ১৮০৬ সালে তিনি তার সম্পূর্ণ সম্পত্তির ওয়াকফ বা দানপত্র করে দেন। সেসব দানপত্রে এই বিপুল সম্পত্তির আয় কীভাবে বিলি-বণ্টন করা হবে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত নির্দেশনা দিয়ে দেন তিনি।

সেখানে বলা হয়েছে, ধর্মীয় স্থাপনার পাশাপাশি শিক্ষা, জনকল্যাণেও অর্জিত এসব অর্থ ব্যয় করা হবে।

এর ৬ বছর পরেই, ১৮১২ সালে হাজী মুহাম্মদ মুহসীন মারা যান। কিন্তু এই ৬ বছরের মধ্যে তিনি দান করা সম্পত্তি থেকে একটি টাকাও গ্রহণ করেননি। উপরন্তু তার চমৎকার হাতের লেখা দিয়ে কোরান শরিফ কপি করে তিনি নিজের ব্যক্তিগত খরচ মিটিয়েছেন।

হুগলি ইমামবাড়াতে এখনো তার হাতের লিখা একটি কপি সংরক্ষিত রয়েছে।

শিক্ষায় হাজী মুহাম্মদ মুহসীনের অবদান

মুন্নুজান অথবা হাজী মুহাম্মদ মুহসীনের দান করা সেসব সম্পত্তির পরিচালনা নিয়ে পরবর্তীতে বেশকিছু মামলা-মোকদ্দমার সৃষ্টি হয়।

কারণ যাদেরকে পরিচালনার দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল, তাদের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ ওঠে।

অবশেষ ১৮৩৪ সালের দিকে সেই তহবিল ব্যবহারের ক্ষমতাপ্রাপ্ত হয় তৎকালীন ব্রিটিশ শাসকেরা।

সেই সময়েই এই তহবিলের আকার ছিল ৫% সুদে সরকারি বন্ডে বিনিয়োগ করা ৮ লাখ ৯৮ হাজার ৪ শো রুপি। এবং নগদ ৫ হাজার ২৪৩ রুপি। যে সরকারি বন্ড থেকে বছরের মোট আয় ছিল ৪৪ হাজার ৩৯৪ রুপি। যেটি সেই সময়ের হিসাব অনুযায়ী অনেক টাকা।

১৮৩৫ সাল নাগাদ এই তহবিল দিয়ে ‘মহসীন এডুকেশনাল এনডাউমেন্ট ফান্ড’ তৈরি করে ব্রিটিশ সরকার।

তবে হাজী মোহাম্মদ মুহসীন যেভাবে দানপত্র লিখে গেছিলেন, তাতে কিছুটা পরিবর্তন এনে ব্রিটিশরা ২টি পৃথক তহবিল গঠন করে। এগুলোর একটিতে হাজী মহসিনের ইচ্ছা অনুযায়ী ধর্মীয় কর্মকাণ্ডে ব্যয় করা হয়, যেমন শিয়া ধর্মকেন্দ্র ইমামবাড়ার খরচ, পেনশন প্রদান ও মোতোয়ালির বেতন ইত্যাদি খাতে। এবং সাধারণ ফান্ড নামের আরেকটি গঠন করা হয় যে ফান্ড থেকে শিক্ষার পেছনে ব্যয় হবে।

পরবর্তীতে, ১৮৩৬ সালে সেই তহবিল থেকেই প্রতিষ্ঠিত হয় হুগলি মহসীন কলেজ। এরপরে একে একে হুগলি কলেজিয়েট স্কুল, হুগলি ব্রাঞ্চ স্কুল, হুগলি মাদ্রাসা, সিতাপুর মাদ্রাসা, এছাড়াও ঢাকা চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও খুলনায় বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হয়।

এই তহবিল থেকে একটি শিক্ষাবৃত্তিও চালু করা হয়। এই তহবিল থেকে মেধাবী কিন্তু দরিদ্র শিক্ষার্থীদের জন্য আজও সহায়তা দিয়ে আসছে।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মুহাম্মদ মহসিন জনিয়েছেন, ”নবাব আব্দুল লতিফ, খাজা আব্দুল গনি, এদের প্রচেষ্টায় ১৮৭৩ সালে এই ফান্ড থেকে এই স্কলারশিপ চালু করা হয়। শুধু এটাই নয়, তখনকার স্কুলগুলোয় একজন আরবি শিক্ষকসহ, মুসলিম ছাত্রদের শিক্ষার ব্যাপারে একই ফান্ড থেকে সহযোগিতা আসতো। ”

”তবে ওনার অর্থে এই তহবিল থেকে প্রথম যে কলেজটি চালু করা হয়, হুগলি মহসীন কলেজ- সেখানে কিন্তু নির্বিশেষে সকলেই পড়তে পারতেন। যেমন- বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, দিজেন্দ্রনাল রায়, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, গুরুদেব মুখোপাধ্যায়, অক্ষয় চন্দ্র সরকার, স্যার উপেন্দ্র নাথ ব্রহ্মচারী-দের মতো বিখ্যাত বাঙ্গালিরা এই কলেজ থেকে পড়াশোনা করেছেন।”

ইউটিউব লিংক

শেয়ার করুন -

উত্তর দিন

আপনার মন্তব্য লিখুন
আপনার নাম লিখুন